Sunday, December 31, 2006

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালাঃ কুয়াশা


কয়েক বছর আগের ঘটনা, বছরের শেষাশেষি কোথায় যাওয়া যায় ভাবছিলাম৷ ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার অনেকগুলো বন্ধ একসাথে৷ তখন একটু অর্থ সংকটে ছিলাম, প্লেনে উঠে দুরে যাবো না তাই, ধারে কাছেই বা কোথায় যাই চিন্তা করতে করতে দুদিন নষ্ট হয়ে গেল৷ মাঝে মাঝে আমি খুব সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি৷ প্রায় দেড়শ মাইল দুরে (আড়াইশ কিমি) মাউন্টেন রেঞ্জের অপর পাশে একটা ভ্যালী আছে, মুলত আপেল বা চেরী চাষ হয়, আর কিছু কিছু ছোট ছোট শহর আছে৷ জার্মান ইমিগ্রান্টদের একটা শহরের খ্যাতি আগে শুনেছি, কিন্তু কখনও যাওয়া হয় নি৷ ভাবলাম এবেলা ওখান থেকেই ঘুরে আসি, বিশেষ করে আমার বাজেট যেহেতু সংক্ষিপ্ত৷

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম অংশে বড় বড় কিছু পর্বতমালা আছে, নর্থ আমেরিকান টেকটোনিক প্লেটের সাথে, প্যাসিফিক, হুয়ান ডি ফুকা ইত্যাদি প্লেটের যেখানে সংঘর্ষ হচ্ছে৷ অনেকগুলো জীবন্ত আগ্নেয়গিরিও আছে এখানে৷ এর মধ্যে মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স এ ১৯৮০ তে বেশ বড় বিস্ফোরণ হয়েছিল৷ আমি তখন থাকতাম যেখানে ওটা ছিল প্লেটের পশ্চিমাংশে, আর জার্মান শহরটা পুর্বাংশে৷ মাঝে ক্যাসকেড পর্বতমালা৷ পর্বতমালার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি গিরিপথ তৈরী করেছে এরা, (যেমন ভুগোল বইয়ে আমরা পড়তাম পাকিস্তানের খাইবার গিরিপথ), গিরিপথগুলো বেশীরভাগই পুর্ব-পশ্চিম হাইওয়ের ওপরে৷ কত বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে কে জানে, কারণ একটা স্টপেজে সাইনবোর্ড দেখলাম লেখা, আগে মাইন্টেন পাস থেকে কাছের শহরে যেতে লাগত একদিন, এখন হাইওয়ে আর পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর পর লাগে এক ঘন্টা৷

সকালে ক্যামেরা, কিছু কাপড়-চোপড় নিয়ে রওনা হওয়ার প্ল্যান ছিল৷ নানা আলসেমীতে রওনা দিতে দিতে দুপুর হয়ে গেল৷ এমনিতেই বেশ শীত, তার ওপর গিরিপথের ওপাশে আরও বেশী ঠান্ডা৷ পাহাড়ের ওপর শীতকালে মেঘগুলো একটু কম উচুতে থাকে, প্রায়ই রাস্তার ওপরে মেঘের কুয়াশা তৈরী হয়৷ ঘন্টাখানেক গাড়ি চালানোর পর যখন পাহাড় চড়তে শুরু করলাম, দেখি কুয়াশায় অবস্থা খারাপ৷ রাস্তার পাশে অল্প বিস্তর শক্ত হয়ে যাওয়া বরফ৷ তুষারের চেয়ে শক্ত বরফ বেশী বিপদজনক, কারন চাকা পিছলে যেতে পারে৷ আর আমার গাড়ি 4WDও না যে একচাকা আটকে গেলেও অসুবিধা নাই৷ ডিসেম্বরের হলিডে সিজনে এখানে সবচেয়ে বেশী এক্সিডেন্ট হয়, কারন বোঝাই যাচ্ছিল, এত কুয়াশার মধ্যেও স্থানীয় লোকজন বেশ দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছে৷

ঠান্ডায় চারপাশে কেমন একটা মৃত অবস্থা, মাঝে মাঝে ছোট শহর, গ্যাস স্টেশন দেখা যায়, তারাও জীবন্মৃত৷ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখব ভাবছিলাম, কিন্তু প্রকৃতির মনে হয় মন ভালো নাই৷ ভ্যালীতে আসতে আসতে সন্ধ্যা নেমে এল, এখানে শীতকালে ৪টার মধ্যেই রাত হয়ে যায়, আর ওইদিন কুয়াশা আর মেঘের জন্য মনে হয় রাত একটু তাড়াহুড়া করেই চলে এল৷ রাস্তার ওপরে বেশ ভালই বরফ পড়েছিল, দেখলাম কিছুটা পরিস্কার করেছে, তবে প্রতি রাতেই মনে হয় নতুন করে পড়ে৷ বেশ ভয় ভয় করছিল ফেরত যাবো কিভাবে এটা চিন্তা করে৷

গন্তব্যে পৌছলাম রাত নামার পরেই৷ শহরের লোকজন বেশ নিরাসক্ত মনে হল৷ আমারও আগ্রহ শেষ, বিশেষ করে প্রথম ৫০ মাইল রাস্তার যে দশা, কেন আসলাম, আর কেন দেরী করে আসলাম এই ভেবে নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছিল৷ এরকম বেঘোরে দুর্ঘটনায় পড়ার কোন মানেই হয় না৷ ১০-১৫ মিনিট এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে জার্মান টাউন দেখা শেষ, গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার পথ ধরলাম৷ মাইল বিশেক আসতে আসতেই ঘন কুয়াশা চেপে ধরল৷ হেডলাইটের আলোতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, ফগ লাইট জ্বালালেও তেমন উন্নতি নাই৷ এদিকে রাস্তার স্পিড লিমিট ৫০ মাইল৷ সাথে যেসব গাড়ি ছিল তারা বহু আগে আমাকে পার হয়ে গেছে, বিরান এলাকায় আমি একা৷ ১৫-২০ মাইলের মধ্যে কোন জনবসতি আছে কিনা সন্দেহ৷ অনেকক্ষন পরপর উল্টো দিক থেকে দুএকটা গাড়ি আসে, তখন আরো ভয় লাগে যে ভালোমতো না দেখে না মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়ে যায়৷ কুয়াশায় যে পরিস্থিতি এত খারাপ হতে পারে কোন অনুমান ছিল না৷ এর মধ্যে দেখি উপরে ঘোলাটে পুর্নিমার চাদ দেখা যাচ্ছে, ভয়াবহ চেহারা৷ ৪০ মিনিটের রাস্তা ঘন্টাখানেকের বেশী লাগল, লোকালয়ে পৌছে কি যে ভালো লাগলো৷ কুয়াশাও এদিকে হালকা৷ তাও দেখলাম অনেক পুলিশের গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স, জায়গায় জায়গায় গাড়ি উল্টে আছে৷ আমার সাথের গাড়ি গুলোর কোনটা কি না কে জানে, এরা তো আমাকে কুয়াশার মধ্যে একা ফেলে এসেছিল৷ ফ্রিওয়েতে উঠে বেশ ভালো লাগলো, ফ্রিওয়েতে অনেক গাড়ি, কুয়াশা কিছুটা থাকলেও নির্জন না অন্তত৷

আরও ঘন্টাখানেক পর বাসায় ফিরলাম, আহত-নিহত না হয়ে যে ফিরলাম এজন্য নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছিল৷ কুয়াশায় ড্রাইভিং আর না, পাহাড়ে তো নাই৷ ঘরের ছেলে ছুটিতে ঘরেই ভালো আছি৷

Saturday, December 30, 2006

দাঁতাল বাঘ


হিমু মন্তব্য করেছে একটা পোস্টে আবার বিবর্তন নিয়ে লেখা শুরু করতে, সেও লিখবে বলেছে৷ আসলে বিবর্তনবাদ নিয়ে লেখাগুলোর একটা বড় অংশ কেবল মানুষের বিবর্তন নিয়ে আমরা আলোচনা করি, অথচ বিবর্তন মেকানিজমের দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে মানুষের বিবর্তনের এমন কোন বিশেষত্ব নেই আর দশটা জীবের চেয়ে৷ মানুষকে তৈরী করা বিবর্তনের টার্গেট ছিল না, এখনও নয়, ন্যাচারাল এভ্যুল্যুশনের কোন টার্গেট নেই৷ বিবর্তন এখনও থেমে নেই, প্রতি জেনারেশনেই আমরা, এবং অন্যান্য জীব একটু একটু করে বদলে যাচ্ছি, ন্যাচারাল সিলেকশন (survival of fittest) যেসব জীব তুলনামূলক ভাবে ভালো বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মেছে তাদেরকে টিকিয়ে রাখবে, বাকীরা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাবে৷ সমস্যা হচ্ছে ভালো বৈশিষ্ট্যের কোন ইউনিভার্সাল সংজ্ঞা নেই, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে কখন কোনটা সুবিধা পাবে৷ যেমন সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ক্রেটাশাস যুগে ডায়নোসররা তাদের অতিকায় আকৃতির (আরো বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য সহ)কারনে অন্যান্য প্রানীর চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশী সুবিধা পাচ্ছিল৷ তখনকার যুগে তারাই সবচেয়ে সফল প্রানী, অথচ যখন একটা গ্রহানু বা ধুমকেতু এসে পৃথিবীকে আঘাত করল (মেক্সিকোর ইউকাটানে) তখন অতিকায় আকৃতি, খাদ্য পিরামিডের চুড়ায় থাকাই তাদের জন্য কাল হল৷ সুবিধা হঠাত্ করে বদলে গেল অসুবিধায়৷ ডায়নোসর সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়, প্রায় তের কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করার পর৷



বেশীরভাগ জীব অবশ্য ডাইনোসরদের মতো নাটকীয় বিলোপের (Mass Extinction) সুবিধা পায় নি৷ Ice Age 2 মুভিটা দেখলাম ওইদিন, প্রথমটাও ভালো লেগেছিল আমার কাছে৷ এই মুভিতে যেসব প্রানী দেখানো হয় এর অনেক গুলোই কিন্তু এখন বিলুপ্ত৷ যেমন হাতির মতো দেখতে চরিত্র Manny আসলে এখনকার সময়ের আফ্রিকান বা ভারতীয় হাতি নয়, বরং বরফ যুগের উলী ম্যামথ (Wooly Mammoth); ম্যামথ আরো ছয় হাজার বছর আগে থেকেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ এই সিনেমার কাহিনী অবশ্য বিশ হাজার বছর আগের৷ অথবা বিরক্তিকর চরিত্র Sid হচ্ছে স্লথ, সম্ভবত মেগাথিরীয়াম (Megatherium) বা জায়ান্ট স্লথ, মূলত উত্তর এবং দক্ষিন আমেরিকার অধিবাসী৷ আর Diego হচ্ছে Saber Toothed Tiger (দাঁতাল বাঘ ) এবং খুব সম্ভব আমেরিকার স্মাইলোডন (Smilodon) প্রজাতি৷




দাঁতাল বাঘের বিশেষত্ব হচ্ছে এদের উপরের চোয়ালের বিশালাকৃতির দুটি দাঁত৷ অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এরকম দাঁতওয়ালা বাঘের বেশ কয়েকবার আলাদা ভাবে উদ্ভব হয়েছে, অর্থাত্ একবার এরকম প্রানী উদ্ভব হয়ে তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, বহু লক্ষ বছর পরে আবার কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের দাঁতওয়ালা প্রানীর উদ্ভব হয়েছে, সময়ের সাথে আবার তারাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ পৃথিবীর বিবর্তনের ইতিহাসে এটা ভীষন স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়, এরকম বারবার একই বৈশিষ্ট্য আলাদা প্রানীতে উদ্ভব হওয়া৷ যেমন ৫০ থেকে ১৫ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা এবং এশিয়ায় একরকম দাঁতাল বাঘ ছিল যাদের নাম দেয়া হয়েছে ডাইনোফীলিস (Dinofelis)৷ ডাইনোফীলিস প্রায় আড়াই ফুট লম্বা বাঘ (তার মানে বেশী বড় নয়)৷ আফ্রিকায় এদের অনেক ফসিল (জীবাশ্ম) পাওয়া গেছে, দুঃখজনক হচ্ছে এদের ফসিলের আশে পাশে অনেক অস্ট্রালোপিথেকাসের ফসিলও আছে৷ অস্ট্রালোপিথেকাস ৪০ থেকে ৩০ লক্ষ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ, আকারে আমাদের এখনকার আকৃতির চেয়ে একটু ছোট৷ অস্ট্রালোপিথেকাসের নামকরা ফসিল হচ্ছে “লুসি”, বিজ্ঞানী ডনাল্ড ইয়োহানসন (Donald Johanson) ১৯৭৪ সালে ইথিওপিয়ার হাডার এলাকায় ফসিলটি খুজে পান৷ গৃহযুদ্ধের কারনে অবশ্য লুসির পরে আর খুব বেশী খোজাখুজি চালানো যায় নি ইথিওপিয়ায়৷ পূর্ব আফ্রিকার এই দেশগুলো এক অর্থে আমাদের মাতৃভুমি, আমাদের পুর্বপুরুষরা লক্ষ বছর আগে এখানেই ছিলেন৷ ফসিল আবিস্কারের ধরন, এবং কয়েকটি ফসিলে দাঁতের দাগ দেখে মনে হয় লুসির মতো প্রানীরা ওই সময় ডাইনোফীলিসের সহজ শিকার ছিল৷


প্রায় পচিশ লাখ বছর আগে আমেরিকায় আরেক ধরনের বিশাল আকৃতির দাঁতালো বাঘের উদ্ভব হয়, আগেই উল্লেখ করেছি এর নাম স্মাইলোডন৷ স্মাইলোডনের অসংখ্য ফসিল আছে আমেরিকা জুড়ে৷ গড়ে এদের দাঁতের দৈর্ঘ্য সাড়ে আট ইঞ্চির মতো৷ এত বড় দাঁত ঠিক কি কাজে লাগত বলা মুস্কিল৷ কারন আকারে বড় হওয়ার জন্য এরকম দাঁত ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী, বিশেষ করে কামড়াতে গিয়ে যদি হাড়ের সাথে সংঘর্ষ হয়৷ স্মাইলোডনের সময় পৃথিবীতে বরফ যুগ চলছিল, এসময় মোটা চামড়া বা পশমী অনেক প্রানীর উদ্ভব ঘটে, যেমন উলী ম্যামথ বা উলী রাইনো (গন্ডার), হতে পারে আট ইঞ্চি লম্বা ধারালো দাত এসব মোটা চামড়ার প্রানী শিকারে সাহায্য করত৷ মানুষ আমেরিকা মহাদেশে পা দেয়ার আগেই সম্ভবত স্মাইলোডন বিলুপ্ত হয়ে যায়, যদিও অনেক সিনেমায় দেখানো হয় স্মাইলোডনের সাথে গুহমানবরা মুখোমুখি হচ্ছে৷

এ মুহুর্তে পৃথিবীতে কোন দাঁতাল বাঘ নেই, তবে ওরা যেহেতু ঘুরে ফিরে বারবার ফিরে আসে, কে জানে পরবর্তি বরফযুগে হয়তো আবার দেখা যাবে৷



ছবিঃ সংগৃহিত

Thursday, December 28, 2006

একটা দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় আইলো

ইংরেজী ২০০৬ সাল শেষ হয়ে যায় যায় অবস্থা৷ হিমু সেরা ব্লগার নিয়ে লেখা ছেড়েছে৷ আরও দুচারজনে এই নিয়ে লেখা দিয়েছেন বা দিবেন৷ এক বছরে অনেক বন্ধু-শত্রু তৈরী করছি আমরা এই ব্লগে৷ নানা মান অভিমান, দলবাজী, ঠাট্টা মস্করা হয়েছে৷ তো এখন বত্সরান্তে আমরা একজন আরেকজনের নামকরণ করলে কেমন হয়৷ নামকরণ খেলাটার বিশেষত্ব হইতেছে যে আরেকজনকে খোচা দিয়া মজা পাওয়া যায়, যেহেতু ব্লগে খোচাখুচির অভাব নাই, এই বহুমুখী যুদ্ধে যাতে বেশী বিশৃঙ্খলা না হয় সে জন্য একটা কাজ করা যেতে পারে৷ ব্লগাররা অলরেডী দুইটা বড় ক্যাম্পে বিভক্ত, একদল ব্রাদার্স ইউনিয়ন আছে বটে, তারা একটু বেশী স্বচ্ছ৷ সুতরাং যারা দলবাজী করেন না, তাদের অংশগ্রহন না করাই ভাল বরং তামাশা দেখেন৷ নিয়মটা এমন করতে পারি, একদলের ব্লগাররা শুধু অন্যদলের নামকরণ করবে, যেমন ক-দলে থাকতে পারে হিমু, অরূপ, মুখফোড়, সুমন চৌ, সাধক প্রমুখ, আবার খ-দলে ত্রিভুজ, শাওন, আস্ত, কেরফা ইত্যাদি৷ নামকরণের সাথে দুইলাইন ছড়িতা দেয়া যায়, অশালীন নামকরণ করলে (‘চ’ অক্ষর যুক্ত) চার লাইন ছড়িতা দিতে হবে৷ ইত্যাদি৷

See - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/28692163

Monday, December 25, 2006

অশ্লীল পোস্টঃ খাদ্যের অভাবে ক্ষুধা তৈরী হয়, প্রাচুর্যে নয়



শ্লীলতা নিয়ে আমি মাঝে মধ্যে কনফিউজড হবার ভান করি৷ অনেক সময় ঠিকমত কনটেক্সট সুইচ করতে পারি না৷ না পারার জন্য অবশ্য নিজেকে দোষ দেই না, কারন নিজেই ভুলে যাই কখন কোন চরিত্রে অভিনয় করা উচিত৷ যখন কলেজে যেতাম ঢাকায় থাকতে, শুক্রাবাদ রাজাবাজার এলাকায় একটা নেংটা পাগলী দেখাতাম মাঝে মধ্যে৷ আমার বয়সী আরও অনেকেই দেখত, বড়রাও দেখত নিঃসন্দেহে, ওই রাস্তার দোকানদাররা নিশ্চয়ই আরো বেশী পরিচিত ছিল পাগলীর সাথে৷ মাঝে মাঝে পাগলীর পিউবিক হেয়ার খুব ভালভাবে কাটা থাকত, বন্ধু-বান্ধবরা আলোচনা করেছি কাজটা আসলে কে করে৷ কে একজন বলছিল পাগলী নাকি গোয়েন্দা, হলেও হতে পারে, নাও হতে পারে, আসলে মনে হয় না হওয়ারই কথা, বাংলাদেশে বেতনভুক মহিলা গোয়েন্দা নেংটো হয়ে ঘুরে বেরাবে বিশ্বাস হয় না৷ পাগলদের নগ্নতা আমাদের দেশে অশ্লীল না বলেই মনে হয় (মহিলা পাগল সহ)৷ আবার শিশুরাও অনেক বয়স পর্যন্ত নগ্ন থাকে, একবার গ্রামে গিয়ে প্রাক-কিশোরী মেয়েদেরকেও নগ্ন হয়ে পুকুরে গোসল করতে দেখেছি৷ আর কিশোরদের কথা বলাই বাহুল্য৷ মামাবাড়িতে গিয়ে একবার দেখি ১৪-১৫ বছরের এক মামাতো ভাই মুসলমানী হয়ে বিছানায় জনসমক্ষে উথ্থিত হয়ে শুয়ে আছে৷ এরকম আরো উদাহরণ দেয়া যেতে পারে৷ এগুলোর কোনটাই আমাদের দেশে মনে হয় না অশ্লীলতা৷


আবার এদের অনেকগুলোই পশ্চিমে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে অশ্লীলতা এবং অপরাধ৷ ঠিক এজন্যই কনফিউজড হবার ভান করতে হয়৷ আমার তো ধারনা নিরাভরণ থাকতে আসলে ভালই লাগে, সভ্যতার অনেকটা ওজন এক ধাপেই কমিয়ে দেয়া যায়৷ সমমনা বন্ধু-বান্ধবী সহ পোশাকবিহীন পার্টি করতে ভাল লাগারই কথা৷ অবশ্য কোনদিন অংশগ্রহন না করে থাকলে কেবল শুনে অনুভূতিটা ধরা কঠিন৷ শোমচৌ একবার প্রকৃতিবাদ নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন৷ ন্যুডিস্টদের দাবী তাদের ক্লাব/বীচ অশ্লীল নয়, হয়তো সত্যি, ওদের ক্লাবগুলোতে সাধারনত যৌনতা নিষিদ্ধ থাকে৷ বেশীরভাগ ন্যুডিস্ট ক্লাব ফ্যামিলি ওরিয়েন্টেড, বাবা-মা ছেলে মেয়েরা এক সাথে ন্যুড থাকে৷


আমার কাছে অবশ্য ন্যুড কিন্তু চিত্রিত শরীর সরাসরি চামড়া দেখানোর চেয়ে আকর্ষনীয় মনে হয়৷ বডি পেইন্টিং নতুন কিছু না, মানুষ বহু যুগ ধরেই এটা করছে যেমন ঠোটে লিপস্টিক, কপালে টিপ, মুখে মেকআপ দেয়া, উল্কি আকা ইত্যাদি৷ আমাদের পাশের শহরে বছরে একবার এরকম একটা বডি পেইন্টিং নিয়ে স্ট্রীট ফেস্টিভাল হয়৷ সবার জন্য উন্মুক্ত, ছোট বাচ্চারা থেকে শুরু করে বুড়ো-বুড়ি সবাই দর্শক৷ গত বছর আমি আর আমার বন্ধু-বান্ধবরা গিয়েছিলাম দর্শক হিসেবে৷ ভালোমত খোজ খবর নিয়ে না যাওয়ায় যখন বডি পেইন্ট হচ্ছিল ঐ অংশটা মিস করেছি৷ আসলে ভীড়ের জন্য ঠিক কোথায় কি হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছিলাম না৷ কোনমতে রাস্তার পাশে দাড়ানোর জায়গা পাওয়া গেল৷ ওখানে দাড়িয়েই ছবিগুলো তুলেছি৷ এর আগে একবার মার্ডি গ্রা তে গিয়েছিলাম, মার্ডি গ্রার সাথে মিল আছে ওভালঅল থীমে৷ পেইন্টেড সাইক্লিস্টরা নানা বয়সের, তরুন-তরুনী থেকে দুএকজন বুড়োও আছে৷ বেশ কিছু ছবি দিলাম এখানে, ব্লগস্পট সাইটে আরও আছে৷



বাংলাদেশী হিজাবী পর্ন ডাউনলোডাররা এ ধরনের উত্সবে অশ্লীলতা পাবেন নিঃসন্দেহে, এর আগেও একটা পোস্টে লিখেছিলাম ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশী অশ্লীল শব্দ সার্চ হয় ইসলামী দেশগুলো থেকে৷ যে শহরে গিয়েছিলাম ওটা অবশ্য ইসলামী দেশের কোন শহর না, এবং পেইন্টেড সাইক্লিস্টরা নিষিদ্ধও না, ওদেরকে দেখে কোন কামুক দেড়েল ঝাপিয়েও পড়ে না৷ সুতরাং দেখা যাচ্ছে অশ্লীতার ঠিক কোন সার্বজনীন গাইডলাইন নেই, দেশ, কাল, সমাজ, ধর্মীয় অনুশাসন ভেদে আলাদা৷ ইউনিভার্সাল ডেফিনিশনের অভাব থাকায় আমার বিশ্বাস, “অশ্লীলতা” আসলে একটা বানানো শব্দ, আসলে এর কোন অস্তিত্ব নেই৷


আমার শুধু কৌতুহল হয় বোরকা পড়িয়ে, যত্রতত্র অশ্লীলতা নিয়ে ফতোয়া দিয়ে মোল্লা মজিদরা আসলে ঠিক কি গেইন করতে চায়৷ না কি আসলে এটা একধরনের ক্ষুধা বাড়ানোর ফন্দি, যেন বেশী খাওয়া যায়৷

Saturday, December 23, 2006

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালাঃ হলদেপাথর

সেবার গ্রীষ্মে হঠাত্ করেই ডিসিশন নিলাম ইয়োলোস্টোন যাবো, ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে প্রায় ১৪০০ মাইল (২,২০০ কিমি) দুরে, অন্তত ২০ ঘন্টার ড্রাইভ৷ একটু ঝুকি ছিল দুরত্ব বেশী হওয়ায়, তখন পর্যন্ত এতদুর একটানা ড্রাইভ করি নি৷ একটু খোজাখুজি করতে দুচারজন সঙ্গী জুটে গেল, আমি ছাড়া একজন ছেলে (চাপাতা), তিনজন মেয়ে (সর্ষে, ক্যাপসিকাম, আর টমেটো), আসল নাম দিতে পারলাম না দুঃখিত৷ তখনও ট্র্যাভেল প্ল্যানিং এ ঠিক পেকে উঠিনি, অনেক ওভারএস্টিমেশন ছিল নিজেদের দক্ষতা নিয়ে, বিশেষ করে সময়ের বাফার ছিল খুব কম৷ এখন পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় পুরো ট্রিপটাই অন্যভাবে করা উচিত ছিল৷

সময় সংকোচন করতে গিয়ে রওনা হলাম সন্ধ্যার পর পরই, চাপাতা মেইন ড্রাইভার, আমি ব্যাকআপ, রাতে কম ঝিমাই বলে সুনাম ছিল, সুতরাং ঠিক হলো মাঝরাতের পর থেকে আমি চালাব৷ স্বার্থপর তিন মেয়ে গাড়ি চলা শুরু করার আধ ঘন্টার মধ্যে ভ্যানের পেছনের সিটে ঘুমিয়ে গেল৷ কি আর করা আমরা ছেলে দুজন টুকটাক কথা বলতে লাগলাম, ঘন্টা দুয়েক পরে ড্রাইভার বদলে আমি স্টীয়ারিং এর পেছনে, ততক্ষনে গাড়ির ভেতরটা নিদ্রিতাদের নিঃশ্বাসের শব্দে-গন্ধে বেশ ভারী হয়ে উঠেছে৷ রাত একটার দিকে আমাদের স্টেট পার হয়ে পাশের স্টেটের মোটামুটি সাইজের একটা শহরে পৌছলাম, আর চালাতে পারব না, এখানেই রাতে থাকতে হবে৷ এত রাতে মোটেলওয়ালারা দেখি আকাশচুম্বি ভাড়া চেয়ে বসছে, ঠিক করলাম কি আর করা সবাই একরুমেই থাকব৷

একটা মতলব ছিল মাঝরাতে সবার আগে উঠে একমাত্র বাথরুমটাতে গিয়ে একটু পেট খালি করে নেব, রুমের এটাচড বাথরুম হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে খুব একটা সাউন্ডপ্রুফ না৷ সাতপাচ ভেবে আর ঝুকিটা নিলাম না, যদিও আগ্নেয়গিরি তখন ফুসছে৷ আমাদের সাথের মেয়েরা গতানুগতিক বাঙালী মেয়েদের চেয়ে অনেক চটপটে, অন্তত সময়ের ব্যাপারে, সকালে আমি আড়মোড়া ভাঙ্গতেই দেখি ওরা সেজে গুজে বিছানায় বসে গল্প মারছে৷ আরও ঘন্টাখানেক ঘুমাতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু এখনও ১০০০ মাইল বাকী, নিজের ওপরই রাগ হলো এত টাইট প্ল্যান করার জন্য৷

মোটেলের ফ্রী মাফিন, আর জুস খেয়ে আমার কাজ হবে না, বের হয়ে ম্যাকডোনাল্ডসে সস্তা মারলাম, তখন তেমন স্বাস্থ্য সচেতন ছিলাম না, সুতরাং ম্যাক আমার ভালই চলতো৷ চাপাতা দেখি সারারাত ঘুমিয়েও আমাকে ড্রাইভ করতে বলে, যদিও মেয়েদের সামনে বীরত্ব ফোটানোর বয়স চলে গেছে, তাও মুখ ফুটে না করতে পারলাম না৷ মেয়েরা দেখি বেশ জলি মুডে আছে, গাড়ি চলতে হাসাহাসি, কথাবার্তা অচিরেই চেচামেচিতে পরিনত হলো৷ এক জায়গায় পড়েছিলাম মেয়েরা গসিপ করে অর্গাজমের সমান মজা পায়, কে জানে, হলেও হতে পারে৷ আর না হলেই কি বেশ মজা যে পাচ্ছে তা তো বোঝাই যায়৷ আমার সবচেয়ে ভালো লাগে ওদের পরচর্চা পর্ব শুনতে৷ পরিচিত, অর্ধ পরিচিত, অপরিচিত বহু কাহিনী শুনলাম৷ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বহুত কিছু মিস করেছি আরেকবার উপলব্ধি হল৷

ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ায়োমিঙ (Wyoming) রাজ্যে৷ পার্কটা আসলে পৃথিবীর ক্রাস্টের ভেতরে ভলকানিক হটস্পটের ওপর, বিশাল আকারের একটা ক্যালডেরা (বাংলা অর্থটা মনে করতে পারছি না)৷ প্রায় সাড়ে ছয় লাখ বছর আগে বড় আকারের অগ্ন্যুত্পাতে এই ক্যালডেরা তৈরী হয়েছে, ওরা এজন্য একে বলে “Super Volcano”৷ মাটির নীচে এখনও লাভা থাকায় ইয়োলোস্টোনে অসংখ্য জিওথার্মাল গাইজার (Geysers) এবং উষ্ঞ প্রস্রবন আছে (বিশ্বের ৬২% এখানে)৷ এগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে কিচ্ছুক্ষন পরপর এরা বেশ গরম ফুটন্ত পানি এবং বাষ্প ছুড়ে দিচ্ছে ওপরে৷

মন্টানার মধ্যে দিয়ে যাবার সময় দিগন্তের উত্তর ধার দিয়ে দেখা যাচ্ছিল গ্লেসিয়ার ন্যাশনাল পার্ক৷ গ্লোবাল ওয়ার্মিং সত্যি না মিথ্যা এই নিয়ে মিডিয়াতে অনেক তর্ক হয়৷ গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর একটা সরাসরি প্রমান গ্লেসিয়ার পার্ক, গত কয়েক দশকে অল্প সময়েই এর বেশীরভাগ গ্লেসিয়ার (হিমবাহ) গলে গেছে৷ আর কিছুদিন পর গ্লেসিয়ার পার্কে কোন গ্লেসিয়ারই থাকবে না৷ তবুও অপরাহ্নের আলোতে বরফের সাদা টুপী পড়া নীলাভ পর্বতগুলোকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল৷

ইয়োলোস্টোনে পৌছুতে পৌছুতে রাত নেমে গেল৷ মাথা ব্যাথায় তখন আমার অবস্থা কাহিল, তাড়াতাড়ি টুকটাক কিছু খেয়ে একটা টাইলেনল (প্যারাসিটামল) খেলাম৷ ট্যুরিস্টে ছেয়ে গেছে আশে পাশের ছোট শহর গুলো৷ এর মধ্যে আমাদের গাড়ি পড়ল একপাল বাইসনের মধ্যে৷ বাইসনগুলো একটু বুঝদার মনে হয়, কারন চাইলে ওরা ভ্যানটাকে উল্টে দিতে পারত, কিন্তু সেরকম চেষ্টা আছে বলে মনে হয় না, ঢিমেতালে ওরা রাস্তা পার হলে ছাড়া পেলাম, আরও অনেক গাড়ি আমাদের মত আটকে ছিল৷ বাইসন কিন্তু উত্তর আমেরিকা থেকে একরকম নিশ্চিহ্নই হয়ে গিয়েছিল, পরে আবার রি-ইন্ট্রোডিউস করা হয়েছে৷ খুজে পেতে সস্তায় একটা মোটেল পাওয়া গেল, গোটা বিশেক ফোন করতে হয়েছে এটা পেতে, আবার সবাই মিলে একরুমে, তবে আজ আমার রাতে বাথরুমে যেতেই হবে, নইলে…

সকালে তাড়াহুড়ো করে সবাই বেড়িয়ে পড়লাম৷ বহু লোক দেখলাম ক্যাম্পিং করছে পার্কের মধ্যেই, অনেকে আবার আরভি নিয়ে এসেছে, বউ-বাল-বাচ্চা সহ৷ পার্কের সাইজ বেশ বড় ৮৮৭৯ বর্গ কিমি, মানে বাংলাদেশের পুরোনো ময়মনসিংহ-জামালপুর জেলার সমান৷ গাইজারগুলো অদ্ভুত, পানি যেমন ফুটন্ত তেমন আবার সালফার মিশ্রিত৷ পুরো জায়গাটা একরকম বারূদের গন্ধে ভরা৷ একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে এত প্রতিকুল পরিবেশেও গাইজার বা উষ্ঞপ্রস্রবন একদম প্রানহীন নয়৷ সালফার খেকো ব্যাক্টেরিয়া বেচে থাকতে পারে এত তাপমাত্রায়৷ এসব ব্যক্টেরিয়ার শক্তির উত্স জিওথার্মাল এনার্জি, যেখানে জীবজগতের বাকী অংশ ঘুরে ফিরে সুর্যের আলোর ওপর নির্ভরশীল৷ পৃথিবী সৃষ্টির আদি অবস্থায় তার মানে এসব ব্যক্টেরিয়ার বেচে থাকতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়, বিশেষত তখন যেহেতু আগ্নেয়গিরি আরও বেশী ছিল৷

রাস্তায় বের হতেই একটু দুরে একটা ভালুক দেখলাম, সম্ভবত ব্ল্যাক বিয়ার৷ দুরবীন না থাকায় খালি চোখে দেখেই সন্তষ্ট হতে হল৷ ভালুককে অবশ্য আবার খুব পছন্দ হয় না, লোক ভালো মনে হয় না ওদের, বরং কিছু পরে একটা কায়োটি (Coyote, শেয়াল টাইপের) দেখে তাড়াতাড়ি অনেক ছবি তুলে নিলাম৷ রাস্তার ধারে প্রংহর্ণ (হরিণ), এল্ক (হরিণ) দেখলাম অনেক, ভালুক বদমাশ মনে হয় এগুলো মেরে খায়৷ হরিন গুলোর অনেকের পশ্চাতদেশ আবার আলাদা রঙের (সাদা), উদ্দ্যেশ্য কি ঠিক বুঝলাম না৷ হরিন সমাজের একটা ব্যপার ভাল লাগলো ছেলে হরিন প্রতি বহু মেয়ে হরিণ আছে (অনেকটা আরবদের মত হারেম পদ্ধতি)৷ গাড়িতে ছেলেরা আমরা দুঃখ করলাম আহারে, মানুষের যদি এমন হত৷

টেকটোনিক প্লেটগুলোর মুভমেন্টের কারনে ইয়োলোস্টোনের আগ্নেয় হটস্পট আসলে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে, একসময় একই হটস্পট ছিল আইডাহোর (Idaho) রাজধানী বইসির (Boise) কাছে৷ ইয়োলোস্টোন পার্কের মধ্যেই এই টেকটোনিক প্লেটের কন্টিনেন্টাল ডিভাইড দেখা যায়৷ জিওলজিক এ্যাক্টিভিটির কারনে অনেক জায়গায় স্তরীভুত পাথর উপরে উঠে এসেছে৷ পৃথিবীর ভুতাত্ত্বিক ইতিহাসের একটা সরল পাঠ হয়ে যায় নিজের চোখের সামনে৷ অবশ্য একটা পাথর দেখালাম কি কারনে যেন পুরুষদের মুল্যবান অঙ্গের মতো দেখতে, বহু লোক ছবি তুলছে তার (পাশের ছবি), দলের মেয়েরাও নেচে উঠল, এই পাথরের সাথে ছবি মাস্ট৷

ইয়োলোস্টোনের সবচেয়ে নামকরা গাইজার মনে হয় ওল্ড ফেইথফুল, মোটামুটি প্রতি নব্বই মিনিট পরপর গাইজারটি পানি ছুড়ে মারে৷ ভীড়ের কারনে ঠিকমত ছবি তুলতে পারলাম না, যখন ওল্ড ফেইথফুল ইরাপ্ট করছিল৷ টুকটাক স্যুভেনীর কিনলাম আমরা এর পর৷ আমাদের গাড়ির পর্যটকরা অবশ্য এর মধ্যে বেশ টায়ার্ড, সারাদিন গাইজার, ঝর্না, বাইসন, এল্ক আর ট্যুরিস্ট দেখতে দেখতে৷ আমার প্ল্যানের আরেকটা গুরুত্বপুর্ন ভুল ছিল, ঠিকমতো খাবারের সময় এবং স্থান লিখে না নিয়ে আসা৷ কারন পেটে ক্ষুধা থাকলে পেট্রিফাইড ফরেস্ট বা জুরাসিক-ট্রায়াসিক স্ট্রাটা কোনটাই ভালো লাগে না৷ তাই শেষমেশ দর্শনীয় তালিকার অনেক কিছু বাদ থাকল৷

ফেরার পথটা ছিল বোরিং৷ আমি বেশী বুদ্ধি করতে গিয়ে অল্টারনেট রুট নিলাম, প্রায় দুইঘন্টা নষ্ট হলো ওখানে৷ সারারাত বদলাবদলি করে ড্রাইভ করতে হল৷ ১৪০০ মাইল এখন মনে হচ্ছিল ১৪ হাজার মাইল৷ মেয়েরাও ক্লান্ত হয়ে এখন ঘুমাচ্ছে৷ পরের সারাদিন ড্রাইভ করে বাসায় ফিরে মনে হল অবশেষে মুক্তি, এখন শুধু গোসল করে দিতে হবে একটা লম্বা ঘুম, তারপর অন্যকথা৷

আল্লাতু এবং দেবতাদের মৃত্যু


ব্যবিলনীয়দের মৃতের দেবী আল্লাতু, অনেকদিন পর নামটা খেয়াল হল দশদিনের ছুটিতে পড়ার জন্য বই ঘাটতে গিয়ে৷ বাংলাদেশ শিশু একাডেমী আশির দশকে শিশুদের জন্য একটা ভালো, বেশ মোটাসোটা বই বের করেছিল, নাম রেখেছিল “জ্ঞানের কথা”, এরশাদ সরকার পরে অবশ্য বইটা ব্যান্ড করে দেয়, সম্ভবত বিবর্তনবাদ নিয়ে তথ্য ছিল বলে৷ এর আগে পরে বাংলা ভাষায় ওরকম বই চোখে পড়ে নি৷ যাহোক ব্যান্ড করার আগেই আমার কেনা ছিল ওই বইটা, ওখানে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো মহাকাব্য গিলগামেশ সংক্ষেপে গদ্য আকারে ছিল৷ উরুকের (এখনকার দক্ষিন পূর্ব ইরাকে) রাজা গিলগামেশকে নিয়ে চমত্কার কাহিনী৷ আরেকটা সমসাময়িক কাব্য যেটা গিলগামেশের মত পপুলার নয়, সেটা হচ্ছে “ইসথারের অবতরণ”৷ ইসথারের কাহিনীটা তার সাথে মৃতের দেবী আল্লাতুর শত্রুতা নিয়ে৷ ইসথার আল্লাতুর সাথে পাতালে দেখা করতে গেলে আল্লাতু তাকে নানাভাবে অপমানের চেষ্টা করে শেষমেশ ব্যর্থ হয় ইত্যাদি ইত্যাদি৷

ব্যবিলনীয়দের (অথবা ইরাকীদের পুর্বপুরুষদের) ধর্ম বিশ্বাসের সাথে এসব কাহিনী জড়িয়ে ছিল৷ কোন সন্দেহ নেই আজকের যুগের ধর্মীয় কাহিনী আমরা যেভাবে বিশ্বাস করি পাচ হাজার বছর আগে উরুক, বা সুমেরের লোকজন সেভাবেই গিলগামেশ, ইসথার বা আল্লাতুর কাহিনী বিশ্বাস করত৷ ধর্মীয় এসব কাহিনী মজাদার এবং যথেষ্ট কৌতুহলোদ্দিপক সন্দেহ নেই৷ অনেক ক্ষেত্রে কাহিনীর পেছনে বেশ কিছু বক্তব্যও লুকিয়ে আছে৷ কিন্তু বক্তব্যের বাইরেও সুমের বা উরুকের লোকেরা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করত পাতালে আল্লাতুর সত্যই অস্তিত্ব আছে৷ সে মৃতদেরকে পাহারা দিচ্ছে৷ গ্রীক বা রোমানদেরও এরকম অসংখ্য কাহিনী, দেব দেবী ছিল৷ দেবরাজ জিউস ছিলেন (এখনও আছেন কি?) বজ্রের দেবতা, ভীনাস ভালোবাসার, অথবা পসাইডন সমুদ্রের ইত্যাদি৷

তো এসব দেবদেবীরা এখন কোথায়৷ জিউস কি এখনও ঝড়বৃষ্টি নিয়ন্ত্রন করছেন, নাকি সময়ের পরিবর্তনে এসব দ্বায়িত্ব এখন মাইকেল (মিকাইল?), গ্যাব্রিয়েলদের হাতে৷ ক্ষমতার এই হাত বদল কবে হল, এই কাহিনী কোথায়, অন্তত কোন ধর্মগ্রন্থে জিউসের কাছ থেকে মাইকেল দ্বায়িত্ব নিচ্ছে এমন বৃত্তান্ত চোখে পড়ে নি৷ আর পাচ হাজার বছর পর আল্লাতু এখন কোথায়, পাতালে কি সে এখনও মৃত্যুর দেবী, না কি আজরাইল সেই দ্বায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে৷

আমার কেন যেন মনে হয় এসব অজস্র দেব-দেবী-দেবদুতদের অনেকেরই আসলে মৃত্যু হয়েছে৷ মৃতের দেবী আল্লাতু বহু আগে নিজেই মারা গেছে৷ আর ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে যখন শেষ সুমেরিয় আল্লাতুর পূজা বাদ দিয়ে মাইকেল-গ্যাব্রিয়েলের কাহিনীতে নাম লিখিয়েছে৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে দেবতারাও আসলে অমর নন, দেবরাজ জিউসকেও ইতিহাস রেহাই দেয় নি, আজকে আর পূজা মন্ডপে, টেম্পলে জায়গা হয় না জিউসের, গল্পের বইয়ের কল্পকাহিনীতেই জিউস সীমাবদ্ধ৷

কিন্তু দেবতারা কেন মরল? আমার
একটা লেখা ছিল মিম নিয়ে৷ মিম, ঠিক জিনের মত, তার একরকম জীবন আছে৷ হোস্টকে এক্সপ্লয়েট করে সে বাচে৷ কোন হোস্ট না পেলে মরে যায় (যেমন “গুজব”, একসময় হারিয়ে যায়)৷ পরাক্রমশালী জিউস বা আল্লাতুর দূর্দশার কারন আসলে মিম৷ আল্লাতু, ইসথার আর গিলগামেশের ঘটনা বেচে ছিল মানুষের মনে মিম হয়ে৷ হাজার বছর তাদের মেমেটিক বিস্তার হয়েছে, সংখ্যায় বেড়েছে, কমেছে৷ এক সময় আরও শক্তিশালী মিম ছড়ালে তারা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, দেব-দেবী সমেত৷ ক্রিশ্চিয়ানিটি (মতান্তরে এর মিম) রোমান সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লে জিউসের মিমের মরে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না৷

আসলে এইসব দেব-দেবী-দেবদুতরা আগেও কখনই ছিলেন না, এখনও নেই, এরা কেবলই বেচে ছিলেন/আছেন মানুষের মনে কাহিনী হয়ে৷ আজকের যুগেও তাই, কাহিনী উপকাহিনী শুনেই আমরা উরুকবাসীদের মতো নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করে বসি, এর পেছনে সত্যতার যৌক্তিক বিশ্লেষনের প্রয়োজন বোধ করি না৷ তবে শুধু এটুকু মনে রাখতে পারি, পাচ হাজার বছর পরে আজকে যেমন আল্লাতুকে আর আমরা ভয় পাই না মৃত্যুর দেবী হিসেবে, ভবিষ্যতে একদিন আসবে যখন আজকের মহাপরাক্রমশালীকেও এমন ফুত্কারে উড়িয়ে দেয়া যাবে৷

ছবিঃ গিলগামেশ৷


Friday, December 22, 2006

সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন

মাস দুয়েক আগে বিশ্বায়ন নিয়ে লেখা দিয়েছিলাম, সুমন, হিমু বেশ কিছু চমত্কার মন্তব্য রেখেছিলেন৷ ওই আলোচনার সূত্র ধরে আজকে লিখতে বসেছি৷ সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা আর সভ্যতার অগ্রগতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, আর্ট আর সিভিলাইজেশন নিয়ে আরেকদিন ভালোভাবে লেখার ইচ্ছা আছে৷ মিশরীয়, ব্যবিলনীয় সভ্যতা থেকে শুরু করে গ্রীক, রোমান, ভারতীয়, চৈনিক, কিংবা আমেরিকার মায়া, ইনকা সভ্যতার প্রত্যেকেই তাদের সাংস্কৃতিক সাফল্যের চিহ্ন রেখে গেছে৷ সবার ক্ষেত্রেই টেকনোলজিকাল এবং অর্থনৈতিক প্রগতির সাথে সাথে তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক প্রগতিও হয়েছে৷ ভালোমতো খেয়াল করলে দেখব আজকের যুগেও ঘুরে ফিরে একই অবস্থা চলছে৷ আমরা পশ্চিম ইউরোপীয়-মার্কিন পপ গান শুনি, দেশীয় ব্যান্ডগুলো ঘুরে ফিরে ওদের সুর, ভাব ভঙ্গি নকল করে, পোশাকে পড়ি জিন্স, স্কার্ট, এক প্যারা বাংলা লিখতে কয়েক ডজন ইংলিশ শব্দ ব্যবহার করি ইত্যাদি ইত্যাদি এরকম হাজারো উদাহরণ আছে৷ হয়ত স্বীকার করতে চাইব না, তবে আসলে কিন্তু এখন মার্কিন সভ্যতা চলছে৷ আর বাইরের পৃথিবী মোটের ওপর ভোক্তার ভুমিকা নিচ্ছে৷

মার্কিন সংস্কৃতির এই ব্যপকতা আসলে বিশ্বায়নের ফসল৷ দুই হাজার বছর আগে প্রযুক্তি আর যোগাযোগ ব্যবস্থা এত ভালো ছিল না, এ কারনে গ্রীক-রোমান সংস্কৃতি বেশী দুরে ছড়ায়নি, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন৷ আজকে ব্রিটনী স্পিয়ার্স নতুন গান বের করলে কালকেই এমটিভিতে বাকী দুনিয়ার সবাই দেখতে পাব, বহু হলিউডি মুভি এখন সারা পৃথিবীতে একসাথে মুক্তি দেয়া হয়৷ আসলে সংস্কৃতি একটা পন্য, ঠিক যেমন গার্মেন্টস এর কাপড়, কম্পিউটার চিপ বা ব্রাজিলের চিনি৷ যার দাম কম, মানে ভালো হবে ভোক্তা সেটাই ভোগ করবে৷ শাকিরার মিউজিক ভিডিও যে কোন দেশী তিশমার ভিডিওর চেয়ে অনেক প্রফেশনালী বানানো, দেখেও বেশী তৃপ্তি আসে, সুতরাং না দেখে উপায় নেই৷ ঢালিউডি-বলিউডি সিনেমা হলিউডের কাছে মানের দিক থেকে পাত্তা পাওয়া কঠিন, বিশেষ করে এন্টারটেইনমেন্ট ভ্যাল্যু চিন্তা করলে৷ আমরা বেশীরভাগই সচেতনভাবে এই সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নে অংশগ্রহন করছি এবং না করার কোন কারণও নেই৷

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এই বিশ্বায়ন ভালো না খারাপ৷ সমস্যা হচ্ছে ভালো-খারাপ অনেক ক্ষেত্রেই আপেক্ষিক, কিসের ওপর ভিত্তি করে মুল্যায়ন করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে৷ সভ্যতার প্রগতি যদি মাপকাঠি হয় তাহলে এমন সাংস্কৃতিক পরিবর্তন যেখানে যার কোয়ালিটি ভাল সে বেশী সুবিধা পাচ্ছে আর নিম্নমানেরগুলো প্রতিযোগীতায় টিকতে না পারে বাদ পড়ে যাচ্ছে এমন পরিবর্তন অবশ্যই ভালো৷ আসলে এরকম বহুযুগ ধরেই হয়েছে, সংস্কৃতি আগাগোড়া পরিবর্তনশীলই ছিল৷ পুরোনো সংস্কার সরে দাড়িয়েছে নতুনকে জায়গা দেয়ার জন্য৷ এমনকি এক হাজার বছর আগে আমাদের বাংলা ভাষাও ছিল না, চর্যাপদের ভাষার সাথে এখনকার ভাষা একটু তুলনা করলেই বোঝা যাবে কতটা পরিবর্তন হয়েছে৷ আসলে এখন যে বিশ্বায়ন হচ্ছে তাকে আটকানোর কোন রাস্তাও নেই৷ সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের একটা চমত্কার পরিণতি হচ্ছে ক্রমশ আমরা সবাই একটা অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চলে আসছি৷ আজকে বাংলাদেশের একজন কিশোর, আর একজন মার্কিন কিশোর একই গান শোনে, একই সিনেমা দেখে, ঘুরে ফিরে অনেকটা কাছাকাছি চিন্তাভাবনা করে, অন্য যে কেনো দেশের কিশোর কিশোরীরাও এক দশক আগের চেয়ে অনেক কাছাকাছি, এক শতক আগের চেয়ে তো অবশ্যই৷ মানুষে মানুষে পার্থক্য ঘুচিয়ে একিভূত বিশ্ব যা রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতারা পারেন নি (অথবা ঠিক করে বললে উল্টোটাই করেছেন) প্রযুক্তির কারনে অবশেষে তা সম্ভব হচ্ছে৷ সুতরাং সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নকে বাধা দেয়ার প্রশ্নই আসে না৷

কিন্তু তাহলে আমাদের বাংলা ভাষার, বাঙালী সংস্কৃতির কি হবে৷ আমরা কি বিশ্বায়নের কাছে আত্মসমর্পন করে হারিয়ে যাবো? হারিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে৷ হিন্দী সিরিয়াল, হিন্দি মুভি বহুদিন ধরেই আমাদের ড্রইংরুম দখল করে আছে, পোশাকে ফ্যশনেও তাই৷ ভালোমতো খেয়াল করলে দেখব হিন্দী নিজেও কিন্তু আবার আমেরিকান আগ্রাসনে আক্রান্ত৷ আসলে এই সমস্যার সমাধানও বিশ্বায়নের মধ্যেই আছে৷ বিশ্বায়ন যেহেতু একটা বিশাল মেল্টিং পট, সুতরাং আমাদের যদি সত্যিই এমন কিছু থাকে যা টিকে থাকার দাবী করে (যেমন হয়তো রবীন্দ্র সঙ্গীত) তাহলে আমাদের উচিত তাদের গ্লোবালাইজ করা৷ যদি গ্লোবালাইজ না করতে পারি, এবং বিশ্বায়নের ধাক্কায় বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে দোষ কিন্তু আমাদেরই৷ ওইদিন টিভিতে ইউটিউবের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাইরাল ভিডিওগুলোর একটা তালিকা দেখাচ্ছিল, হঠাত্ খেয়াল করলাম এর মধ্যে তালিকার প্রথম দিকের একটা হচ্ছে
রজনিকান্তের একটা সিনেমা থেকে নেয়া দৃশ্য৷ এরকম আরো উদাহরন আছে, দক্ষিন কোরিয়ার রেইন বা কলম্বিয়ার শাকিরা যেমন বিশ্বমঞ্চে পারফর্ম করছে, বাঙালীপনা ধরে রাখতে আমরাও সেরকম চেষ্টা করে দেখতে পারি৷ আমাদের সত্যিই যদি বিশ্বকে কিছু দেয়ার থাকে তাহলে বিশ্বের নিতে আপত্তি নেই, সুতরাং সমস্যাটা দাড়াচ্ছে খুজে বের করা, দেয়ার মতো বিশ্বমানের আসলেই কিছু আছে কিনা, না থাকলে তৈরী করতে পারি কি না৷


Original post and comments - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/28691494

Thursday, December 21, 2006

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা


একটা ভ্রমন কাহিনী ভিত্তিক সিরিজ চালু করব ভাবতেছি৷ অনেক আগে বিটিভিতে একটা সিরিজ দেখাত “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া”, বাংলাদেশের বিভিন্ন পুরাকীর্তি, দর্শনীয় স্থান নিয়ে৷ বাংলাদেশ আমি মোটামুটি ভালোই চোখ মেলে দেখেছি, ৬৪ জেলার প্রায় ৫০ টিতে কখনো না কখনো গিয়েছি, যদিও সবগুলো ঠিক ঘুরে দেখা হয়েছে তা নয়, তবে অনেকগুলোই দেখা হয়েছে৷ এত জেলায় যাওয়ার একটা কারন আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজন চাকরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিলেন, আবার বাবা নিজে ঘোরাঘুরি পছন্দ করতেন এজন্য অনেক জায়গায় যাওয়া হয়েছে৷ তবে আমার এই সিরিজ অবশ্য “ঘর হতে দুই পা ফেলে শিশির বিন্দুর” জন্য নয়, বরং ঘটা করে দেশের বাইরে যেসব পর্বতমালা, সিন্ধু দেখতে গিয়েছি তা নিয়ে৷

অনেক জায়গায় গেলেও কখনও ভ্রমন কাহিনী লিখে রাখিনি৷ ছবি, ভিডিও আছে; ইদানিং মনে হচ্ছে লিখে রাখলে মন্দ হয় না৷ রাসেল, হিমু আর শোমচৌর ভ্রমন নিয়ে লেখা পড়ার পর লিখতে একটু ভয়ই লাগে৷ আমার সমস্যা হচ্ছে আমার নিজের সাহিত্যিক মন নেই, অথবা জন্মাতে পারিনি, এজন্য চেষ্টা করেও কোন লাভ হয় না৷ সুতরাং লেখাগুলো নিরস হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী৷

বেশীরভাগ ভ্রমনেই অনেক সঙ্গী ছিল আমার সাথে, যেহেতু সবার অনুমতি নেয়া সম্ভব না, এজন্য খুব বেশী ছবি হয়তো দেব না, তবে কিছু দেয়া যেতে পারে অবশ্যই৷ সামহ্য়্যার এর ব্লগের সমস্যা হচ্ছে একাধিক ছবি দিলে প্রথমটা ছাড়া বাকীগুলো নীচে পড়ে থাকে, সুতরাং আগ্রহীদের বিকল্প হচ্ছে আমার
ইউনিকোড সাইটে ঢু মেরে আসা৷

আজকের ছবিঃ আলাস্কায় রাতে তোলা অরোরা’র (Aurora) ছবি ৷ বৃষ রাশি মন্ডলে অরোরা দেখা যাচ্ছে, উপরে সাত ভাই (Pleiades) ওপেন ক্লাস্টার৷ ৫৫ মিমি SLR এ ৩০ সেকেন্ড এক্সপোজারে তোলা৷

Tuesday, December 19, 2006

ঐতিহাসিক ইতিহাস

বিষয় হিসেবে ইতিহাসের দিকে আমার সেরকম আগ্রহ নেই, আবার বিতৃ্ষ্ণাও নেই৷ টিভির কল্যানে অনেক সময় জোর করে হলেও বেশ পরিমান ইতিহাস গিলতে হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে এরকম একটা আলোচনা শুনছিলাম বেশ আগে, এক পর্যায়ে একজন বক্তা উল্লেখ করলেন, জার্মানী-জাপানের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটেনও অনেকটা পরাস্ত হয়েছিল! বৃটেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাস্ত হয়েছিল শুনে নড়েচড়ে বসলাম, আলোচকের যুক্তি ছিল বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতিতেই বৃটেনকে একে একে উপনিবেশগুলো হারাতে হয়৷ বিশ্বের এক চতুর্থাংশের অধিকর্তা শেষমেশ তার দ্বীপরাজ্যে গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়৷ হমম, একদিক থেকে চিন্তা করলে কথায় যুক্তি আছে, আসলে শুধু বৃটেন না, ইউরোপের ঔপনেবেশিক দেশগুলোর হাত থেকে তাদের অধিকৃত পরের কয়েক দশকে মুক্তি পেয়ে যায়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী, জাপানের পরাজয় যতটা দৃশ্যমান তৃতীয় বিশ্বের শোষিত জনগোষ্ঠির মুক্তি ততটা প্রচার পায় না৷ আবার যেমন বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের উথ্থানও বিশ্বযুদ্ধের কারনে সম্ভব হয়েছে৷ সুতরাং ইতিহাসের মোড়ঘোরানো এসব ঘটনায় জয় পরাজয় নির্ধারন আসলে এতটা সহজ না৷ জার্মানী আর জাপান যেমন যুদ্ধের ২০ বছরেই বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিনত হয়েছে, কিন্তু বৃটেন, ফ্রান্স বা হল্যান্ড তাদের হারানো অবস্থান আর ফিরে পায় নি৷

তবে এরকমটা হয়ত নতুন কিছু না৷ আমি বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে একবার এনালজি খোজার চেষ্টা করলাম৷ হয়ত অনেক আছে৷ যেমন আমার ধারনা ৭৫ এর পট পরিবর্তনে আসলে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশের বামপন্থি শক্তি৷ আপাত দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ আক্রান্ত হলেও, নিশ্চিহ্ন হয় নি, বরং বিশ বছরের মাথায় আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে৷ অন্যদিকে স্বাধীনতার পর থেকে বামপন্থী শক্তিদের ভুমিকা সন্দেহজনক৷ পরবর্তি মিলিটারী সরকার গুলোতে বামওয়ালাদের অনেকেই অংশ নিয়েছেন, সামরিক শাসকদের পা চেটেছেন৷ আজকে ৩০ বছর পর এসবদলের নেতা পাওয়া যায়, সমর্থক পাওয়া মুস্কিল৷

৭৫ এর আরেকটা ফসল হচ্ছে মুসলীম লীগের রূপান্তর৷ পাকিস্তানীদের সমর্থক হিসেবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটা বাজে অবস্থায় পড়ে যায় ওরা৷ কৌশলে ব্র্যান্ড নেইম বদলে মুসলীম লীগ আসলে আজকের বিএনপি৷ মুসলিম লীগ নেতাদের অথবা তাদের ছেলেপেলে নাতি-নাতনীদের খুজলে এখন বিএনপিতে পাওয়া যাবে৷ জিয়াউর রহমান আমার ধারনা একটা উপলক্ষ্য কেবল এসব মুসলীম লীগ সমর্থকদের জন্য৷

তো আজকে ২০০৬ এ যা ঘটছে ২০২৬ এ গিয়ে বা ২০৩৬ গিয়ে আমরা কিভাবে বিশ্লেষন করব৷ সব দেশে বেশীরভাগ সময় অন্তত একটা রক্ষনশীল, একটা উদারপন্থী মোর্চা থাকে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান (রক্ষনশীল), আর ডেমোক্র্যাটিক (উদারপন্থী) পার্টি৷ কারন দেশের মানুষকে মোটামুটি ভাবে এই দুই কাতারে ভাগ করা যায়৷ স্কুল-কলেজে বসে যারা উদারপন্থী তারাই আবার এক জেনারেশন পরে যখন চাকরীজীবি, ছেলেমেয়ের বাবা-মা হয়ে বসে রক্ষনশীল দলে নাম লেখায়৷ বাংলাদেশে এজন্য ক্যু বা অন্য কোন ভাবে এই ধারার কোন একটাকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না৷ ৭১ এ মুসলীম লীগ মরে গিয়ে যেমন ৭৫ এর পটভুমিতে বিএনপি হয়েছে, তেমন ৭৫ এ আওয়ামী লীগ আহত হলেও কয়েক বছরেই আবার ফিরে এসেছে৷ ২০০৬ এ এসে মনে হয় বিএনপি দুর্নীতি নিয়ে একটু বেশী খারাপ রেকর্ড করে ফেলেছে৷ বিশেষ করে তারেক রহমানের ট্র্যাক রেকর্ড ফিক্স করতে বহুদিন লাগবে, যদি আদৌ সম্ভব হয়৷ যেমন আওয়ামী লীগের ২১ বছর লেগেছে বাকশালী দুর্গন্ধ ছাড়াতে৷ সেক্ষেত্রে এলডিপির একটা সুযোগ আছে, যদি তারা পলিটিক্যাল ভ্যাকুয়ামটা ঠিকমত ব্যবহার করতে পারে৷ কারন রক্ষনশীল সমর্থক সব সময়ই আছে, সংখ্যায় বেশীই আছে প্রশ্ন হচ্ছে ২০২৬ এ লীড দেবে কারা? জামায়াত ৭০ বছরে যেহেতু পারে নাই, আরো ২০ বছর যোগ করে লাভ হবে বলে মনে হয় না৷

Thursday, December 14, 2006

ফ্র্যাক্টাল



ফ্র্যাক্টালের দিকে আমার আগ্রহ একটু পুরানো। আন্ডারগ্রাডে থাকতেই তখনকার ডস অপারেটিং সিস্টেমে বোরল্যান্ডের বিজিআই গ্রাফিক্স ব্যবহার করে 2D জুলিয়া সেট, ম্যন্ডেলবªট সেট একেছি। তখন অবশ্য স্রেফ দেখতে কৌতুহলোদ্দিপক বলে জুলিয়া সেট নিয়ে হালকা ঘাটাঘাটি করেছিলাম। সেদিন আবার অনেক দিন পর Chaos Theory কথাটা শুনলাম, ইদানিং এই গোলমেলে তত্ত্বটা বেশ গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। Chaos Theory ঠিক কে কবে মাথায় এনেছেন ব্যপারটা ঠিক পরিষ্কার না, তবে ফ্রেঞ্চ গনিতবিদ Jacques Hadamard সাধারনত এর জনক বলে ধরে নেয়া হয়। গোলমাল তত্ত্ব নিয়ে আরেকদিন বিস্তারিত লিখব, তবে এই তত্ত্বের গুরুত্ব এজন্য যে আবহাওয়া থেকে শুরু করে অর্থনীতি, জনসংখ্যার বৃদ্ধি, ভূতত্ত্ব এসব সমস্যায় একে ব্যবহার করা সম্ভব। গোলমাল তত্ত্বের সাথে ফ্র্যাক্টালের একটা অদ্ভুত সম্পর্ক আছে। আসলে ফ্র্যক্টাল নিজেই গোলমেলে।

সংক্ষেপে কোন জ্যামিতিক আকারকে যদি অনেক ভাগে ভাগ করা যায়, এবং প্রত্যেক ভাগকে মুল জ্যামিতিক আকারের মত বানানো হয় (এবং এই প্রক্রিয়া বারবার চালাতে থাকলে) তাহলে শেষমেশ ফ্র্যাক্টাল পাওয়া যাবে। যেমন পাশে ছবিতে ত্রিভুজের ফ্র্যাক্টাল। মজার ব্যাপার হচ্ছে বহু প্রাকৃতিক আকৃতি কিভাবে যেন ফ্র্যাক্টাল দিয়ে তৈরী, যেমন গাছের পাতা, শামুকের খোলস, বিভিন্ন ফল। ফ্র্যাক্টাল অবশ্য কেবল দুই মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আসলে মাত্রা বাড়িয়ে এর চেহারা আরও অদ্ভুত করা সম্ভব।

গ্র্যাড কোর্সের অংশ হিসেবে চতুর্মাত্রিক ফ্র্যাক্টালের Ray Tracing করেছিলাম। যদিও চার মাত্রা ভিজুয়ালাইজ করার কোন উপায় নেই, তবে যেটা করা যেতে পারে তা হলো চারমাত্রার বস্তুর একটা স্লাইস নেয়া যেতে পারে, যেটা হবে ত্রিমাত্রিক। ব্যপারটা অনেকটা এরকম যে একটা গোলক (Sphere) থেকে যদি একটা স্লাইস কেটে নেয়া হয় তাহলে মোটামুটি ভাবে একটা বৃত্ত পাব, গোলকের মাত্রা তিনটি কিন্তু বৃত্তের মাত্রা দুইটি। চতুর্মাত্রিক ফ্র্যাক্টালের উদাহরন Quaternion Julia set। উপরের ছবি এরকম একটা স্লাইসের, আমার প্রোগ্রাম দিয়ে রে ট্রেস করেছি। প্রোগ্রাম ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে
http://utsablogger.googlepages.com/ray.exe । অনেকগুলো রে ফাইল আপলোড করেছি –
-
http://utsablogger.googlepages.com/julia.ray
- http://utsablogger.googlepages.com/julia2.ray
- http://utsablogger.googlepages.com/julia3.ray
- http://utsablogger.googlepages.com/julia4.ray
- http://utsablogger.googlepages.com/julia5.ray

প্রোগ্রাম ডাউনলোড করে একটা রে ফাইল ওপেন করুন, এরপর ট্রেস করতে দিলেই কোয়াটারনিয়ন পাবেন। চাইলে রে ফাইল গুলোতে প্যারামিটার চেঞ্জ করে দেখতে পারেন কি হয়

Wednesday, December 13, 2006

ইহুদিরা কি বেশী বুদ্ধিমান?

ঐদিন নিকোলাস ওয়েডের Before the dawn পড়ছিলাম৷ খুব অল্প কথায় অনেক তথ্য আছে বইটাতে৷ এক জায়গায় উনি প্রসঙ্গটা তুলেছেন ইহুদিরা আসলেই বেশী বুদ্ধিমান কি না? এরকম একটা সন্দেহ আমার নিজেরও অনেক দিন ধরে ছিল৷ পৃথিবীতে ইহুদি ধর্মালম্বী মানুষের সংখ্যা ১ কোটির কিছু বেশী, অথচ কেবল গত এক শতকে সভ্যতায় ইহুদিদের কন্ট্রিবিউশন আনুপাতিক ভাবে অনেক বেশী৷ যেমন আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩% ইহুদি, অথচ আমেরিকায় যত জন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন তার ২৭% ইহুদি ধর্মাবলম্বি অথবা অনুসারী৷ এ পর্যন্ত মোট সাড়ে সাতশর কিছু বেশী মানুষ নোবেল পেয়েছেন তার মধ্যে প্রায় দেড়শজন ইহুদি বংশোদ্ভুত (মানে দাড়াচ্ছে প্রায় ২০%) অথচ পৃথিবীর ৬০০ কোটি লোকের মাত্র ০.২% ইহুদি বা আধা ইহুদি৷ আর পুরস্কার গুলোর বেশীর ভাগই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নে৷ এমনিতে আমেরিকানরা প্রচুর পরিসংখ্যান রাখে, এর একটাতে দেখা যায় ইহুদি বংশোদ্ভুতদের আই কিউ স্কোর গড়ে অন্যান্যদের চেয়ে ১ পয়েন্ট বেশী (সে অর্থে খুব একটা পার্থক্য নেই)৷ তবে যাদের আই কিউ ১৪০ এর চেয়ে বেশী এরকম লোক হিসাব করলে আনুপাতিকভাবে ইহুদিদের সংখ্যা বেশী৷

তো কি এমন বিশেষত্ব আছে ওদের যে ওরা এত মেধাবী? ঠিক সরাসরি কোন জেনেটিক প্রমান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি এর পেছনে৷ তবে ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Utah) হেনরি হার্পেন্ডিং এবং গ্রেগরী কক্রান (Gregory Cochran) কিছুদিন আগে বেশ কিছু সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ ওরা দেখিয়েছেন গত এক হাজার বছরের ডারউনিয়ান ন্যাচারাল সিলেকশনের একটা ভুমিকা থাকতে পারে বা আছে এর পেছনে৷ অনেকগুলো জেনেটিক রোগ আছে যেগুলো ইহুদিদের মধ্যে অনেক বেশী দেখা যায় (যেমন Sphingolipid), ক্ষেত্র বিশেষে ১৫% আশকেনাযিম (Ashkenazim) ইহুদিদের এই রোগের মিউটেশন আছে, ৬০% এর কোন না কোন রোগের অন্তত একটা জিন আছে৷ আশকেনাযি ইহুদি কারা ইন্টারনেটে খুজলে পাবেন, মোটামুটি ইউরোপিয়ান ইহুদিদেরকে আশকেনাযি ধরে নেয়া যায়৷ এবং নোবেল প্রাইজ গুলো মুলত আশকেনাযি ইহুদিরাই পেয়েছে, অন্যান্যরা যেমন মধ্যপ্রাচ্যের বা ঊত্তর আফ্রিকার ইহুদিদের মধ্যে বিশেষ মেধার উপস্থিতি তেমন দেখা যায় না৷


কক্রান এবং হার্পেন্ডিং দেখিয়েছেন ইহুদিদের মধ্যে জেনেটিক রোগগুলোর ব্যপকতা কেবল ফাঊন্ডার ইফেক্ট (founder effect) দিয়ে ব্যখ্যা করা সম্ভব নয়৷ কারন ফাউন্ডার ইফেক্টের জন্য পপুলেশন খুব কমে যাওয়া দরকার, গত এক হাজার বছরে এরকম কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই৷ সুতরাং এই জেনেটিক রোগগুলোর নিশ্চয়ই কোন সুবিধা আছে যে কারনে ন্যাচারাল সিলেকশন এদেরকে ধরে রেখেছে, এবং ক্রমশ সংখ্যা বাড়িয়েছে৷ কক্রান আরও প্রমান দেখিয়েছেন যে Sphingolipid রোগ থাকলে বা একটা মিউটেশন থাকলে মস্তিষ্কের নিউরনের গ্রোথ এবং ইন্টারকানেকশন ভালোভাবে হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে নিউরাল রেস্ট্রিকশন গুলো কমাতে সাহায্য করে৷ কক্রানের ধারনা ইহুদীদের বাকী রোগগুলোরও এরকম দরকারী ভুমিকা থাকতে পারে৷


কিন্তু এই রোগগুলো কেন শুধু ইহুদিদের মধ্যে বেশী দেখা যায়? কক্রানের ধারনা কারনটা ঐতিহাসিক৷ ৯০০ খৃষ্টাব্দে আশকেনাযিরা ফ্রান্সে ঊত্তরাঞ্চলে বসতি স্থাপন করে৷ ১১০০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে তারা টাকা পয়সা ধার দেয়া, ট্যাক্স কালেকশেনের পেশায় জড়িত হয়৷ এর কারন তখনকার খৃষ্টীয় ইউরোপে ইহুদিদের সব কাজের অধিকার ছিল না৷ ক্রিশ্চিয়ানরা টাকা-পয়সা সংক্রান্ত কাজগুলোকে নিচু চোখে দেখত এজন্য ইহুদিদেরকে দিয়ে ওগুলো করাত৷ মধ্যযুগের সামাজিক ব্যবস্থা ইহুদিদের জন্য খুবই hostile ছিল, সুতরাং বেশ খানিকটা চতুর না হলে ঐরকম পরিবেশে টিকে থাকা কঠিন৷ পরবর্তি ৯০০ বছর তাই ইহুদিদের মধ্যে যারা একটু বেশী বুদ্ধিমান বা স্টার পারফর্মার তাদেরকে বেশী সুবিধা দিয়েছে৷ আরকেটা কথা সে সময় ইঊরোপে ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি চালু ছিল না, সুতরাং আশকেনাযিরা ট্যাক্স হিসাব করত রোমান নিউমেরাল দিয়ে যেমন cccl টাকার xvii পার্সেন্ট কত ইত্যাদি৷ বেশ পরিমান স্কিল না থাকলে রোমান নিঊমেরাল দিয়ে পার্সেন্ট হিসাব করা বেশ কঠিন৷ কক্রানের মতে এসব কারনে জেনেটিক রোগগুলোর অসুবিধা থাকলেও সুবিধা বেশী হওয়াতে এগুলো আশকেনাযিদের মধ্যে গত এক হাজার বছরে ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে (ন্যাচারাল সিলেকশন)৷ যার ফলাফল হিসেবে আজকের যুগের ইহুদি বংশোদ্ভুতরা অন্যান্য এথনিক গ্রুপের চেয়ে বেশী মেধাবী বলে মনে হয়৷


নিকোলাস ওয়েডের বইয়ে এ অংশটি পড়ার পর আমার মনে হল, আচ্ছা আমাদের বাঙালীদের পুর্বপুরুষরাও তো ২০০ বছর ইউরোপীয়ান, আর তার আগে ৮০০ বছর আরব-তুর্কি ঊপনিবেশে কষ্ট-সৃষ্টে ছিলেন৷ এর বিনিময়ে তাদের ঊত্তরাধিকার হিসেবে আমাদের তো এমন দুচারটা সুবিধা এখন পাওয়া ঊচিত৷ কে জানে আসলেই আমাদের কোন বিশেষত্ব আছে কি না, যা এখন ব্যবহার করা যেতে পারে৷

Posted here in somewhereinblog - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/27908

Monday, December 11, 2006

One more blog account

That's right, I already have one, and still I have created this one just to get the blogger beta features. I really dislike Google's long beta phase, is this really working? Anyway, will repost most of the old stuff for now ...
 
eXTReMe Tracker