Thursday, July 12, 2007

আমিত্ব বনাম প্যাটার্ন

এরকম বিষয় নিয়ে লেখা দেব প্ল্যান করছিলাম অনেক দিন ধরে৷ ভেতরটা ঠিক সাজানোর সুযোগ হয় নি৷ আজকে বেশ কিছুটা randomized হয়ে আছি, সেভাবে লেখার মত কোন কিছু মাথায় আসছে না৷ এক অর্থে বিষয়টা (topic) অনেক ভালো ছিল৷ ভালো মতো লিখতে পারলে একটা গূঢ় সত্য নিয়ে ভালো আলোচনার সুত্রপাত করা যায়৷ মানুষের ভাষার (natural language) একটা সমস্যা হচ্ছে এর ডাটা ট্রান্সফার রেট এখনকার যুগের জন্য যথেষ্ট নয়৷ হওয়ার কথাও না৷ ভাষা প্রস্তরযুগের হাতিয়ার (tool), অনেকখানি বিস্তৃত করে ইনফরমেশন যুগেও এর ব্যবহার হচ্ছে৷ এজন্য লিখতে চাই একরকম, লেখার পর যারা পড়বে তাদের মনের মধ্যে বিষয়টা ধরা দেবে হয়তো আরেকভাবে৷ Copy fideltity বেশ খারাপ বলতে হয়৷ আমার ধারনা এসব কারনে শীঘ্রই ভাষার একটা আপগ্রেড দরকার৷

প্রসঙ্গটা ছিল, আমিত্ব নিয়ে৷ মানে “আমি” আসলে কোথায় থাকে৷ নানা রকম ভাববাদী চিন্তাভাবনা আছে এ নিয়ে, তবে এখন ওপথ মাড়াচ্ছি না৷ সায়েন্টিফিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমাদের মাথায় থাকে “আমি”৷ সমস্যা হচ্ছে সচরাচর “আমি”কে যেরকম কেন্দ্রিভুত একটা সত্তা ভাবতে আমরা অভ্যস্ত, আমাদের মস্তিষ্কে ঠিক সেরকম কেন্দ্রীভুত কোনকিছুর অস্তিত্ব নেই৷ এরকম কোন বিশেষ স্থান বলা যাবে না যেখান থেকে সমস্ত সিদ্ধান্ত, চিন্তাভাবনা বের হয়ে আসছে৷ “আমি” আসলে একটা illusion, “আমি” কোথাও নেই৷

মস্তিষ্কের নিউরনগুলো অটোমেটিক “আমি”কে তৈরী করে৷ যেমন কোন কারনে যদি ব্রেইনের মধ্যে একটা পার্টিশন তৈরী হয় (এক্সিডেন্ট কিংবা টিউমার অপারেশনের পর) তখন একাধিক “আমি” তৈরী হয়ে বসতে পারে৷ বেশ বাজে অবস্থা, এক মাথার ভেতর দুজন “আমি”৷ কিন্তু “আমি”র ইল্যুশনটা এত চমৎকার যে হঠাৎ করে বোঝা মুস্কিল৷

মস্তিষ্কের নিউরন (কোষ) গুলো সবসময় পরিবর্তন হচ্ছে৷ প্রতিটা চিন্তা নিউরন গুলোর কানেকশনের physical পরিবর্তন করছে৷ ব্যাপারটা এরকম যে এই এক লাইন যখন পড়ছেন তখন পড়ার জন্য বেশ কিছু কোষ তাদের কানেকশনের অবস্থান বদলে নিল৷ চিন্তাগুলো যতই দ্রুত, আর হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার মতো মনে হোক না কেন তাদের বাস্তব অস্তিত্ব আছে মাথার ভেতর৷ কে জানে অচিরেই হয়তো এমন যন্ত্র আবিস্কার হবে যা বাইরে থেকে স্ক্যান করতে পারবে আপনি কি ভাবছেন৷ মনে মনে গালি দিয়ে পার যাওয়ার সুবিধাটা হয়তো তখন নাও থাকতে পারে৷

আবার স্মৃতি (memory) গুলোও নিউরনের কানেকশনের মাধ্যমে রক্ষিত৷ যেমন পুরোনো ঘটনা, লোকজনের চেহারা এসব৷ আমি যেমন ২০ বছর আগের দুএকটা ঘটনা এখনও বেশ নিখুত ভাবে মনে করতে পারি৷ কিন্তু ২০ বছর আগের যেসব অনুপরমানু দিয়ে আমার স্মৃতিটা তৈরী হয়েছিল, সেগুলোর কোনটাই এখন আর নেই৷ সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে স্মৃতিটা থাকলো কিভাবে৷ আসলে যেটা হচ্ছে প্রতি নিয়ত আমাদের শরীরে পার্টসগুলো বদলানো হচ্ছে৷ পুরোনো কোষ মরে গিয়ে নতুন কোষ জন্মাচ্ছে৷ এজন্য পুরোনো নিউরন আর তাদের কানেকশনের উপাদানগুলো কোনটাই নেই৷

ঘটনাটা তুলনা করা যায় এভাবে, ধরা যাক আপনাকে এক পাতা লেখা দিলাম আমি৷ আপনি সেটা ফটোকপি করলেন৷ এখন আমার দেয়া লেখা আর আপনার ফটোকপি করা লেখার ভেতরের বক্তব্য হবহু এক৷ অথচ তারা ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরী৷ অর্থাৎ দুটোর মধ্যে মিল হচ্ছে তাদের প্যাটার্ন একই, একটাতে যে প্যাটার্ন আছে অন্যটাতেও তাই৷ যদিও উপাদান আলাদা৷

স্মৃতির ব্যপারটাও তাই৷ ২০ বছরে বহুবার উপাদান বদলেছে আমার নিউরন গুলোর৷ যেটা রয়ে গেছে সেটা হচ্ছে ওদের কানেকশনের প্যাটার্নটা৷ ব্রেইনের মধ্যে নিউরনের প্যাটার্নগুলোই আমাদের স্মৃতি, আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার মেকানিজম, আমাদের চিন্তাভাবনা অথবা আমাদের “আমি”৷ “আমি” অবশ্য অনেকগুলো প্যাটার্নের একটা জটিল কম্বিনেশন৷ আর দশটা প্যাটার্নের মতো এটাও ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে৷ যেমন ২০ বছর আগের “আমি” আর এখনকার “আমি”তে ভীষন তফাৎ৷ এক বছর আগের “আমি”র সাথেও অনেক পার্থক্য৷ “আমি”র প্যাটার্নটা কিছুটা বদলে দেওয়া তেমন কঠিন না৷ এই যেমন এই লেখাটা পুরো যদি পড়ে থাকেন, তাহলে আমি আমার মাথা থেকে বেশ কিছু প্যাটার্ন আপনাদের মাথায় ট্রান্সফার করলাম, তাতে আপনাদের মাথার ভেতরের প্যাটার্ন একটু হলেও বদলে গেল৷ (তবে বিশেষ কোন প্রক্রিয়ার প্যাটার্নটা বেশী বদলালে তাকে বোধহয় বলে ব্রেইনওয়াশ)৷

লিখতে লিখতে ভালো মাথা ধরে গেল, জ্বর আসতে পারে, বাকী বক্তব্য পরে আসছে৷

No comments:

 
eXTReMe Tracker