Monday, January 22, 2007

নিয়ান্ডার্টালদের কি পরকালে বিচার হবে?


অনেকগুলো ধর্মে মৃত্যুর পরে কোন একসময়ে বিচারের ব্যবস্থা আছে৷ চুলচেরা বিশ্লেষনের পরে পাপ-পুন্যের ওপর ভিত্তি করে মানুষকে স্বর্গ বা নরকের টিকেট ধরিয়ে দেয়া হবে৷ এখন ঘটনা হচ্ছে অন্যান্য বিলুপ্ত প্রজাতির মানুষ যেমন নিয়ান্ডার্টাল, হোমো ইরেকটাস, এমনকি এবু গোগোদের ব্যপারে ঠিক কি করা হবে বুঝতে পারছি না৷ আরেকটা লেখায় লিখেছিলাম জেনেটিক বিশ্লেষন থেকে বোঝা যায় নিয়ান্ডার্টাল আর আমরা আলাদা প্রজাতি, সেক্ষেত্রে পরকালের বিচারের খড়্গ ওদের ঘাড়ে আছে কি না পরিস্কার নয়৷ নিয়ান্ডার্টালরা কগনিটিভ স্কিলের দিক থেকে মানুষের চেয়ে পিছিয়ে থাকতে পারে, হয়তো ওদের ভাষা ছিল না, বা থাকলেও মানুষের ভাষার মতো সফিস্টিকেটেড হয়তো ছিল না৷ সুতরাং ওদেরকে এদিক থেকে নির্বোধ প্রানীর দলে ফেলা যায়৷ তাই বলে অপরাধ প্রবনতায় আমাদের চেয়ে ভীষন পিছিয়ে থাকার কারন নেই৷ হালের প্রচলিত সৃষ্টিকর্তার উপাসনা ওরা করত বলেও মনে হয় না, অন্তত এরকম কোন প্রমান নেই৷

সমস্যা হচ্ছে কয়েকদিন আগে পুর্ব ইউরোপের রোমানিয়াতে ৪০ হাজার বছর আগের মাথার খুলি পাওয়া গেছে, যেটাতে নিয়ান্ডার্টাল এবং আধুনিক মানুষ দুইরকম বৈশিষ্ট্যই আছে৷ দেখা যাচ্ছে এই মাথার খুলি যার সে নিয়ান্ডার্টাল এবং আধুনিক মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স) দুটোই এক সাথে৷ তাহলে এই লোকের বিচার কে করবে?

ভালোবাসা, শোক, সহমর্মিতা, ঈর্ষা, অপরাধ প্রবনতা এগুলোকে সচরাচর আমরা মানবীয় গুনাবলি (মতান্তরে দোষাবলী সহ) ভাবি৷ ঘটনা হচ্ছে এগুলোর কোনটাই শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে আছে তা নয়৷ অন্যান্য প্রানীর মধ্যেও এগুলো কমবেশী আছে৷ মা-বাবা মরলে আমরা যেমন শোক করি, দুঃখ পাই; শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বনোবোও তাই করে৷ শোকে কান্নাকাটি করে, একটা টিভি প্রোগ্রামে দেখেছিলাম মা মরার পর বাচ্চা শিম্পাঞ্জি না খেয়ে ৪/৫ দিন মায়ের মৃতদেহের আশে পাশে গাছে বসেছিল৷ ঈর্ষা তুলনামুলক ভাবে আরও সহজলভ্য৷ সামাজিক প্রাইমেটগুলোর মধ্যে ঈর্ষা নিয়ে গোলমাল লেগেই আছে৷ মানুষ যেমন গলা টিপে একজন আরেকজনকে মেরে ফেলে শিম্পাঞ্জিরাও একদম একই কৌশলে খুন করে৷ অনেকসময় কে দলনেতা হবে এই নিয়ে যখন মারামারি হয়, তখন সবাই মিলে একজোট হয়ে গনপিটুনি দিয়ে অন্যদেরকে মেরে ফেলে৷ মানুষের মতই সাইকোলজি কাজ করে ওদের ভেতর, এই নিয়ে অনেক ডকুমেন্টারি আছে, দেখলে বিশ্বাস হয় না যে মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রানী এরকম সিস্টেমেটিক ওয়েতে অপরাধ করতে পারে৷

তাহলে অপরাধ করলে মানুষকে যদি দোজখে যেতে হয়, শিম্পাঞ্জিকে কেন ছাড় দেয়া হচ্ছে৷ আরো গুরুতর হচ্ছে নিয়ান্ডার্টাল, হোমো ইরেকটাসকে ছাড় দেয়া হলে তো বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয়৷

Friday, January 19, 2007

মৃত্যুর অনিবার্যতা কতখানি গ্রহনযোগ্য?


মৃত্যু নিয়ে একটা আবেগী পরিবেশ তৈরী হয়েছিল ব্লগে তখন পোস্টটা দেব ভাবছিলাম, আসলে হিমুর সাথে কথা বলতে গিয়ে সে বলছিল এই নিয়ে পোস্টাতে৷ যাইহোক দেরী হয়ে গেল, পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিয়ে এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে৷ একটা সময় ছিল যখন পরিচিত কাউকে আমি মরে যেতে দেখিনি, মৃত্যকে বেশ দুরের এবং দুর্লভ ঘটনা মনে হতো৷ স্কুলে থাকতে ট্রাকের নিচে পড়ে একজনকে মরতে দেখেছিলাম, এত বড় শক পেয়েছিলাম যে দুই বছর ওই রাস্তায় আর যাই নি৷ কেন যাই নি অনেকদিন পর এখন বিশ্লেষন করলে মনে হয় আসলে ভয় পেয়েছিলাম যে আমি নিজেও ওরকম ট্রাকের নীচে পড়ে বসতে পারি ইত্যাদি (সংক্ষেপিত), একধরনের স্বার্থপর চিন্তা থেকে আসলে আর যাওয়া হয় নি৷ আরও পড়ে বেশ বড় হয়ে যাওয়ার পর আমার নানা মারা গেলেন বার্ধক্যজনিত কারনে ৯৩ বছর বয়সে৷ বাবা মার পরে মনে হয় নানা আত্মীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্লোজ ছিলেন আমার৷ মাত্র কয়েকবছর আগের ঘটনা হওয়ায় পরিস্কার মনে আছে, আমার মা পালস দেখছিলেন সকাল বেলা, তখনই আমার মার হাতের মধ্যে বসেই নানার হার্ট শেষবারের মতো ধ্বক করে উঠে থেমে গেল৷ আমি তাড়াতাড়ি নানার গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম গা তো এখনও গরম, কিন্তু কোন কারনে নানা আর নিঃশ্বাস নিচ্ছেন না, এমনিতেও গত কয়েকদিন খুব আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলেন৷ কিন্তু এত সহজে চোখের সামনে নিঃশব্দে মরে যাওয়া যায় বিশ্বাস হচ্ছিল না৷ এর কয়েক বছর পর বাবাও সামনাসামনি মারা গেলেন ক্লিনিকের বেডে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে৷ ঘন্টাখানেক আগেও আমার মায়ের সাথে সামান্য কথা হচ্ছিল বাবার৷ এর পর থেকে মানুষের মরে যাওয়াটাকে বেশ সহজলভ্য মনে হয়৷ প্রসেসটা আসলে স্রেফ একটা সুইচ অন অফ করার মতই সরল৷

বাবা মার মৃত্য একটা ভীষন ইমোশনাল প্রক্রিয়া, নিজে এর ভেতর না দিয়ে গেলে বোঝা অসম্ভব বলেই মনে হয়৷ বাবা যখন কোমায় যাচ্ছিলেন আমরা ধরে নিতাম আর হয়তো বেচে উঠবেন না৷ যেকোন কারনেই হোক আমি বাবাকে একা পেলে জেনে নিতাম আসলে কেমন লাগছে, কি মনে হয় আসলে স্রষ্টা আছে, মৃত্যুর পরে কি কিছু আছে৷ শুরুতে বাবা খুব মাইন্ড করেছিলেন৷ আসলে প্রথমবার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পর বাবা বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমরা ধরে নিয়েছিলাম এ যাত্রা বোধহয় বাবা বেচেই গেলেন৷ বাসার অন্যরা ভালো চোখে না দেখলেও বাবা ফিরে আসার পর মৃত্য, কোমায় যাওয়া ইত্যাদি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতাম৷ আসলে একটা টিভি প্রোগ্রামে একবার দেখাচ্ছিল অনেকে কোমায় গিয়ে একটা টানেল দেখতে পায়, অনেকে দেখে একপ্রান্তে একটা তীব্র উজ্জল আলো৷ আশ্চর্য্যজনক ভাবে বাবা টানেল বা আলো কোনটাই দেখতে পান নি৷ টানেল রহস্যের অবশ্য এখন সমাধান হয়েছে, এর কারন মস্তিষ্কে অক্সিজেন ডেফিসিয়েন্সি, সুপার সনিক জেটের পাইলটরাও অনেক সময় এরকম দেখে থাকেন৷ মৃত্যুর অবব্যহিত পুর্বে ঠিক কি হয় এটা জানার কৌতুহল ছিল৷ অনেকে ফেরেশতা দেখে, কেউ ভয় পায়, কেউ দুঃস্বপ্ন দেখে৷ দুঃখজনক ভাবে মারা যাওয়ার কয়েকঘন্টা আগেও আমি খোজ নিয়েছি বাবার কাছে কোন কিছু সন্দেহজনক মনে হয় কিনা, বা এনিথিং সুপার ন্যাচারাল৷ কোনটাই না৷ বরং আগের দিন বিশ্বকাপ নিয়ে আমি একতরফা আলোচনা করলাম, বাবা টুকটাক মন্তব্য করলেন৷ এবং কয়েকঘন্টা পরে উনি নেই৷

এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কোন প্রমান দেখিনি মৃত্যুর পরের জীবন বা প্রক্রিয়া নিয়ে৷ তবে মৃত্যু যেহেতু এখনো রিভার্সিবল নয়, সুতরাং মৃত্যুকে গুরুত্বের সাথে না নিয়ে উপায় নেই৷ মানুষের ইতিহাস ঘাটলে দেখব মৃত্যু নিয়ে মানুষের কৌতুহল খুবই পুরোনো৷ নিয়ান্ডার্টাল, ক্রোম্যানিয়ন দের আমলে ওরাও মৃত্যুকে আলাদাভাবে দেখেছে৷ এবং সভ্যতার শুরু থেকেই একটা চেষ্টা ছিল কিভাবে না মরে থাকা যায়৷ এই চেষ্টার ওপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছে নানা কাহিনী, এবং বিশেষভাবে বেশীরভাগ, হয়তো, সমস্ত ধর্ম৷ মিশরীয়রা যেমন বিশ্বাস করত মামি বানিয়ে রাখলে আবার বেচে ওঠা যাবে৷ আবার অনেক ধর্মের কাহিনীতে আছে অমৃত পান করলে আর মরতে হবে না৷ উপমহাদেশের অনেক ধর্মে আছে জন্মান্তরবাদ, অমর থাকার একরকম অল্টারনেট৷ মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মগুলোতে আছে মৃত্যুর পর বিচার ব্যবস্থা, তারপর অনন্ত উদ্দ্যেশ্যহীন জীবন৷ এসব কাহিনীর সত্যমিথ্যা প্রমান করা বেশ সহজ৷ কিন্তু লক্ষ্যনীয় হচ্ছে সবগুলোতেই কোন না কোনভাবে অনন্তকাল বেচে থাকার হাতছানি আছে৷

কয়েকবছর হয়ে যাওয়ায় এতদিনে আমার বাবা, নানা, দাদা সবাই মোটামুটি রিসাইকেল্ড হয়ে গেছেন ধরা যায়৷ হাড়গুলো ছাড়া বেশীরভাগ বায়োলজিকাল অংশগুলো প্রকৃতি এর মধ্যেই নিশ্চয়ই রিক্লেইম করে নিয়েছে৷ হয়তো মাংসগুলো ইদুর, সাপ, ওয়র্ম, ব্যক্টেরিয়া খেয়ে ফেলেছে৷ আবার তাদেরকে খেয়েছে ফুড পিরামিডে এদের ওপরে যারা আছে, শেষমেশ অনেককিছুই হয়তো ফুড পিরমিডের মাথায় আছে মানুষ তাদের কোন সদস্যের শরীরে গিয়ে জমা হয়েছে৷ হয়তো আমার গায়েই আছে৷ আত্মার কি হয়েছে, বা আদৌ কিছু হয়েছে কি না আমার জানা নেই৷ ওনাদের আত্মাদের কেউ আমার সাথে কোন যোগাযোগ করে নি এখনও৷ আসলে আত্মা নামে আদৌ কিছু আছে কি না সন্দেহ৷ বায়োলজিকাল রিসোর্সগুলো না হয় পুনব্যবহ্ৃত হচ্ছে, কিন্তু বাবার যে বিশাল স্মৃতি ভান্ডার ছিল সেগুলো কোথায়৷ শেষ ২০ বছরে লেখা ডায়েরীগুলো আছে, কিন্তু ডায়েরী তো আর পুরো স্মৃতি, অভিজ্ঞতাগুলো নয়৷ মৃত্যু এইদিক থেকে চিন্তা করলে একটা বিশাল অপচয়৷ সভ্যতার জন্য একটা বড়সড় লোকসানী ঘটনা৷ আর ব্যক্তিজীবনে তো অবশ্যই৷ পরকালে আরেকটা জীবন আছে এটা হয়তো স্রেফ স্বান্তনা৷ নো ওয়ান্ডার অমৃতের এত ডিমান্ড কাহিনী-উপকাহিনীতে৷

আরো কিছু অনিবার্য বিষয় ছিল আগে৷ যেমন যক্ষা, কুষ্ঠ, গুটি বসন্ত হলে রক্ষা ছিল না৷ বিভিন্ন কারনে এগুলো আর অনিবার্য নয়৷ রোমানদের আমলে মানুষের গড় আয়ু ছিল ১৮৷ একশতক আগেও ছিল ৪০ এর নীচে৷ এখন অনেক দেশেই ৮০র ওপরে৷ বলাবাহুল্য দোয়াদুরুদ, ঝাড়ফুকের কারনে মানুষের জীবন এত লম্বা হয়ে যায় নি৷ যদি এসব মন্ত্র পড়লে লাভ হতো তাহলে সপ্তম শতাব্দিতে বা এরকম যখন নতুন ধর্ম এসেছে তার পরপরই মানুষের আয়ুতে তার একটা প্রভাব দেখা যেত৷ সেরকম কোন প্রমান নেই৷ প্রমান যা আছে তাহলো পেনিসিলিন বা এরকম এ্যান্টাইবায়োটিক আবিস্কারের পর হঠাত্ করে মানুষের আয়ু বেড়ে যাওয়া৷ বিজ্ঞানের উন্নতির কারনে মানুষ এখন বেশিদিন বাচে ঝাড়ফুক, দোয়াদুরুদের জন্য নয়৷

কিন্তু মৃত্যু প্রসঙ্গে বিজ্ঞান কি করতে পারে? এই অংশটুকু পরের লেখায়৷ শুধু এটুকু বলে রাখি আজকে, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বেচে থাকা খুবই জরুরী, যদি মৃত্যুকে পাশ কাটাতে চান৷ হয়তো ২০৩০ এই হবে৷ ঠিক মেইনস্ট্রীম মিডিয়ায় আসার মত ঘটা করে এসব গবেষনা হচ্ছে না অবশ্য৷ মৃত্যু থেমে গেলে আমাদেরকে দ্রুত আশেপাশের গ্রহগুলো কলোনাইজ করতে হবে৷ অনেক জিনিষই আছে যেগুলো মরে যায় না, অথবা যাদের জীবনকাল ভীষন দীর্ঘ শত মিলিয়ন বছর, যেমন জিন৷ কিন্তু কিভাবে মানুষের জন্য এরকম কৌশল প্রয়োগ করা যেতে৷

হিমু, আপনার কথা ছিল সিঙ্গুলারিটির বাংলা একটা সমার্থক বের করে আমাকে দেবেন৷ এখন লাগবে আমার৷
Post refers to some of the events of last week in somewhereinblog.net. See original - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/28694578

Sunday, January 14, 2007

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালাঃ আলাস্কা-১



আলাস্কা কয়েক পর্বে লিখব, অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা আছে, যদিও ভ্রমন কাহিনী গুলো পাঠক টানতে পারছে না৷ আলাস্কা যাওয়ার আগ্রহ আমার অনেক পুরোনো৷ এরকম বেশ কয়েকটা জায়গা আছে তরুন থাকতে থাকতে ঘুরতে চাই, যেমন মঙ্গোলিয়া, ইস্টার দ্বীপ, তাঞ্জানিয়ার সেরেঙ্গেটি, আমাজন, এ্যান্টার্কটিকা আরও অনেক৷ কবে যাব বা আদৌ সবগুলো ঘোরা হবে কি না জানি না৷ আশা রাখতে দোষ কি!

এক সপ্তাহের ট্রিপের জন্যে আমি প্ল্যান করি তিন মাস ধরে৷ কে জানে অপচয় কি না, হয়তো অন্যরা অন্যভাবে করে, কিন্তু আমার কাছে ঘাটাঘাটি করতে ভালই লাগে৷ আলাস্কা যুক্তরাস্ট্রের একটা প্রদেশ হলেও সাইজে বেশ বড়৷ আয়তনে মোটামুটি ভারতের অর্ধেক, বাংলাদেশের ১০গুনেরও বেশী৷ জনসংখ্যা ৬ লক্ষ, মানে ঢাকার মিরপুরের চেয়েও কম৷ এদের অনেকেই আবার পর্যটক৷ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় রাস্তা ঘাট কম৷ এক সময় আলাস্কা রাশিয়ার অধীনে ছিল, পরে রাশিয়ার জার মাত্র সাত মিলিয়ন ডলারে আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেচে দেয় (১৮৬৭ সালে)৷ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে যাওয়ায় অবশ্য আলাস্কার ভাগ্য বদলে গেছে বলতে হবে, নাইলে হয়তো সাইবেরিয়ার মত হয়ে বসে থাকত৷


আলাস্কা কিন্তু সাইবেরিয়ার ঠিক পাশে, ম্যাপ নিয়ে বসলে দেখবেন রাশিয়া ইউরোপ থেকে শুরু হয়ে এশিয়া হয়ে আমেরিকায় এসে ঠিক আলাস্কার আগে শেষ হয়েছে৷ আলাস্কা আর সাইবেরিয়ার মাঝে বেরিং প্রনালী৷ বেরিং প্রনালী আগে ছিল না, আগে মানে বেশ আগে, ১৬ হাজার বছর আগে বরফ যুগের সময়৷ তখন ওখানে একটা মহাদেশ ছিল বেরিঞ্জিয়া৷ এশিয়া আর আমেরিকা বেরিঞ্জিয়ার কারনে সংযুক্ত ছিল৷ ঐ সময় সাইবেরিয়ানরা হেটেই পুর্ব এশিয়া থেকে আমেরিকায় এসেছে৷ আজকের যুগের নেটিভ আমেরিকান বা রেড ইন্ডিয়ান বলতে যাদের বুঝি তারা আসলে ওই সাইবেরিয়ানদের বংশধর৷ একটু খেয়াল করলেই অবশ্য নেটিভ আমেরিকানদের সাথে সাইবেরিয়ান এমনকি চিন বা কোরিয়ানদের চেহারার মিল খুজে পাওয়া যায়৷ মানুষের ইতিহাসে একটা গ্রেট জার্নি হচ্ছে বরফ যুগে এশিয়া থেকে আমেরিকায় যাওয়া৷ এরপর বরফ যুগ শেষ হয়ে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকলে বেরিঞ্জিয়া পানির নীচে তলিয়ে যায়, আলাস্কা এক পর্যায়ে সাইবেরিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে৷

ঠিক কোন সময়ে যাওয়া যায় ভেবে পাচ্ছিলাম না৷ শীতে অরোরা দেখা যায় সহজে, একটা নামকরা ডগ স্লেডিং রেস হয় ঐ সময়৷ অনেক সিনেমাতে আলাস্কার গোল্ডমাইন, স্লেডিং আর মাইনারদের নিয়ে কাহিনী দেখেছি৷ কিন্তু শীতে ঠান্ডাটা একটা বিরাট সমস্যা, বিশেষত আলাস্কার ঠান্ডা৷ জুনে গেলে গরমের সময় সুবিধা হচ্ছে ২২-২৪ ঘন্টা দিন পাওয়া যায়৷ সংক্ষিপ্ত গ্রীষ্মে গাছপালা আর পশুপাখী দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়৷ গ্রীষ্মের তিন মাস ছাড়া বাকী সময় ন্যাশনাল পার্কগুলো বন্ধ থাকে৷ কিন্তু দিনের আলোর কারনে অরোরা দেখার কোন রাস্তা নেই৷ অরোরা আমার লিস্টে খুব হাই প্রায়োরিটি, ফাইভ থেকে অপেক্ষা করছি অরোরা দেখব বলে৷ শরতকালে (অথবা এখানকার ভাষায় ফল) কয়েক ঘন্টার জন্য রাত হয়, সুতরাং অরোরা দেখার একটা সুযোগ আছে, আবার সেপ্টেম্বর ১৫র আগে যেতে পারলে ন্যাশনাল পার্ক খোলা থাকার একটা সম্ভাবনা আছে৷ সমস্যা হচ্ছে ঐ সময় আলাস্কাতে সবচেয়ে বেশী বৃষ্টি হয়৷ আকাশ মেঘলা থাকলে অরোরা দেখার চান্স শুন্য৷ আবার বৃষ্টি থাকলে ন্যাশনাল পার্কে গিয়েও যে খুব একটা ওয়াইল্ড লাইফ দেখা যাবে এমন আশা কম৷ অনেক ভেবে চিন্তে বাজেটের কথা হিসাব করে সেপ্টেম্বরেই যাব ঠিক করলাম, গ্যাম্বল, কিন্তু যদি পে অফ করে তাহলে দুই ট্যুরের দেখা একবারে হয়ে যাবে৷

আরেকটা সম্ভাবনা মাথায় আসলো যে প্লেন যেহেতু ৩০,০০০ ফুট ওপর দিয়ে যাবে, সুতরাং আবহাওয়া মেঘলা হলেও প্লেন মেঘের ওপরেই থাকবে৷ সুতরাং যদি আমি এমনভাবে টিকেট কাটি যে প্লেন যখন আলাস্কার ওপর দিয়ে যাবে তখন রাত, তাহলে প্লেনে বসেই অরোরা দেখতে পাবো বা পাওয়া উচিত৷ কিন্তু অনেক ওয়েব ঘেটেও কেউ এভাবে অরোরা দেখেছে তার প্রমান পেলাম না৷ মাথায় ঢুকছিল না যে প্লেন থেকে কেন অরোরা দেখা যাবে না৷

আবার একটা টাইট প্ল্যান করলাম, বহু ব্রাঞ্চ তার৷ মানে একটা n-ary ট্রি এর মতো, যদি অমুক তারিখে আবহাওয়া এমন হয় তাহলে এই কাজ করব, যদি অমুক জায়গায় গিয়ে এরকম দেখি তাহলে এরকম ব্যবস্থা নেব৷ এর মধ্যে আরও অনেক ট্রাভেল প্ল্যান করে হাত পেকে গেছে, ট্রাভেলে কি কি সমস্যা হতে পারে, কোথায় কি অল্টারনেট রাখতে হবে৷ একটা বড় সমস্যা হচ্ছে পিপল ম্যানেজমেন্ট৷ সবাই সব জিনিস সমান ভাবে উপভোগ করবে না৷ দলে আবার বেশ কয়েকজন মেয়ে আছে, তাদের মেজাজ মর্জির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে৷ সমস্যা হচ্ছে ন্যাকা মেয়ে কম, ন্যকা মেয়েদের সহজে নিয়ন্ত্রন করা যায়, কিন্তু আমার সঙ্গিরা টুকটাক ভুজুং ভাজুঙে মানবে না৷ কয়েকটা স্লট রাখলাম সহযাত্রি তোষনের জন্য, এছাড়া আগেই সবাইকে আলাস্কা নিয়ে নানা কাহিনী শুনিয়ে ত্যাক্তবিরক্ত করে ফেললাম৷

ফল এর সময়টাতে প্লেন ভাড়া সামারের চেয়ে একটু কম৷ ভালই হয়েছে অন্য খাতে ব্যায় বেশী করা যাবে৷ কাপড় চোপড় কিনতে একটু বেশী খরচ হয়ে গেল আবার৷ পরে বুঝতে পেরেছি একটু বেশী কিনে ফেলেছিলাম আমি, আসলে শীত অত বেশী না৷ অবশ্য যাওয়ার আগে পারলে আমি প্রায় তোষক কিনে ফেলি গায়ে দেয়ার জন্য৷ টাইম জোন চেঞ্জ হবে, তবে যেহেতু পশ্চিমে যাচ্ছি টাইম গেইন করব আমরা৷ যুক্তরাষ্ট্র পার হয়ে প্লেনে ক্যানাডিয়ান রকির ওপরে আসতেই দেখলাম নীচে ঘন অন্ধকার৷ কোন শহর দেখা যায় না৷ মনে মনে বললাম, খাইছে, প্লেন ভেঙ্গে পড়লে না শেষে ঐ সিনেমার মত মানুষের মাংস খেয়ে থাকতে হয়৷পুরো বৃটিশ কলম্বিয়া আর ইউকন টেরিটরিজে শহর খুব কম মনে হলো৷ পুরোটাই ঘোলাটে অন্ধকার৷

এয়ারপোর্টে যখন অপেক্ষা করছিলাম, এক কোরিয়ান পরিবার দেখি যাচ্ছে আমাদের সাথেই আলাস্কায়৷ সাথে ১০/১২ বছরের ছেলে৷ আরেক আমেরিকান ফ্যামিলির সাথে দেখলাম ভাল খাতির জমে গেল ওদের৷ আমেরিকাদের দলে অনেক লোক মনে হলো, বাবা, মা, ছেলে, দাদা, দাদী, আরো মনে হয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ওয়েটিং রুমে৷ তো সেই আমেরিকান লোক গল্প করছে কোরিয়ানের সাথে, যে সে মোট ৬ বার আলাস্কা গেছে কখনও অরোরা দেখেনি৷ এমনকি ফেয়ারব্যাংকসে গিয়েও দেখে নি৷ শুনে তো আমার মাথায় হাত৷ বলে কি এই লোক৷ অরোরা এত দূর্লভ?

কানাডা পার হয়ে আলাস্কার প্যান হ্যান্ডেলের ওপর আসতেই উত্তর দিগন্তে মনে হল সবুজ আভা ফুটে উঠেছে৷ প্রথমে ভাবলাম হয়তো মেঘ, কিন্তু রাতের বেলায় মেঘ সবুজ কেন? এয়ার হোস্টেসের কাছে জানতে চাইলাম, নাহ, ঠিকই আছে “অরোরা” দেখা যাচ্ছে৷ প্লেনটা এসময় নাক ঘুরিয়ে পশ্চিমমুখী যাচ্ছিল৷ আমি আগে থেকেই হিসাব করে ডান পাশের সারিতে জানালার পাশে সিট নিয়েছি৷ যদিও এয়ারপোর্টের আলোচনা শুনে একটু দমে গিয়েছিলাম, এখন ওভার এক্সাইটেড না হওয়ার চেষ্টা করলাম৷ কোরিয়ানরা পাশের সারিতে ঘুমাচ্ছে, একবার ভাবলাম ধাক্কা দিয়ে তুলে ফেলি, যে অরোরা দেখা যাচ্ছে৷ পরে ভাবলাম থাক, শেষে না ক্ষেপে যায়৷ প্লেনে গন্ডগোল করলে এয়ার মার্শাল এসে আবার ঘাপলা করতে পারে৷ অরোরা মেরু বরাবর সেমি সার্কেল তৈরী করে দেখা যাচ্ছিল৷ সার্কেলের অন্য অংশ সাইবেরিয়া, স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে দেখা যাবে৷ অরোরা কিন্তু চলমান, “ব্রাদার বেয়ার” মুভিটা দেখে থাকলে ওখানে যেমন দেখায় অনেকটা সেরকম৷ ছবি তুললাম অনেকগুলো, কিন্তু আমার ক্যামকর্ডারটা অত ভালো ছিল না, এজন্য ভিডিওতে আসে নি৷

(আরো আছে …)

Friday, January 5, 2007

বছর শেষের পোস্টঃ কি পেলাম, কি হারালাম

This post actually refers to my blog in http://www.somewhereinblog.net/utsablog.

বছর শেষ নিয়ে কোন পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা ছিল না, ঈদের ছুটির কারনে এমনিতেই লোকজনের আনাগোনা কম, তাও লিখতেছি, কারণ ১০ মিনিটেই লেখা শেষ করা যাবে৷

শুরুতেই সামহয়্যারের ক্রুদের অসংখ্য অভিনন্দন এরকম উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মের সুযোগ করে দেয়ার জন্য৷ আমাদের দেশের সামাজিক, পারিবারিক পরিবেশে মুক্ত চিন্তা, নির্ভয়ে মনের কথা প্রকাশ করতে অভ্যস্ত নই৷ কিন্তু মুক্তচিন্তা যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে সামহয়্যার তা দেখিয়ে দিল, এজন্য আমি এবং আমার মতো অনেকেই কৃতজ্ঞ৷ ব্লগে গত নয়/দশ মাসে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন বেশ কিছু সমমনা বন্ধু বান্ধব খুজে পাওয়া৷ দু-একজনকে আগে থেকে চিনলেও এক ফ্রিকোয়েন্সীতে কখনই ছিলাম না৷ হিমু, রাসেল, সুমন চৌ, শোমচৌ, অমি ভাই, ধুসর গোধুলী, হযবরল, চোর, আড্ডাবাজ, অরূপের সাথে বন্ধুত্ব এখন সম্পদে পরিনত হয়েছে৷ ভিন্ন পেশার, ভিন্ন গন্তব্যের এরকম চমত্কার কিছু মেধাবী এবং প্রতিভাবান মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য সামহ্য়্যার টীম অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য৷

আমার দ্বিতীয় অর্জন হচ্ছে সাহস করে লেখা লেখি করা৷ সিক্সে থাকতে একবার স্কুলের বার্ষিকীতে লিখেছিলাম, তারপর কোনদিন কোথাও লিখিনি (পরীক্ষার খাতায় ছাড়া)৷ খোলা ফোরামে লিখতে গিয়ে নিজের দুর্বলতা গুলো বুঝতে পারলাম৷ পাঠকের মন্তব্যেও বোঝা যায় কোনটা ভালো হচ্ছে আর কোনটা খারাপ হচ্ছে৷ এজন্য গল্প কবিতা লেখার চেষ্টা করি নি৷ এমনকি ভ্রমনকাহিনী লিখেও এই লাইনে নিজের সৃজনশীলতার অভাব বুঝতে পারছি৷

সামহয়্যারে আরেকটা অর্জন কোন মডারেশন না থাকা৷ ভয় না করেই লেখা যায়, মন্তব্য করা যায়৷ শত শত ফোরাম ইয়াহু গ্রুপ আছে বাঙালীদের৷ আমি যেগুলোর সদস্য কোনটাই এত জনপ্রিয় না, আর কোনটাতেই এত ভাল মানের লেখা পাওয়া যায় না৷ যদিও ভাল ব্যপারটা আপেক্ষিক, তবে স্রেফ পোশাকি ভাল লেখার চেয়ে, সত্যিকার সৃষ্টিশীল লেখাও এখানে অনেক৷ মুখফোড় বা রাসেলের স্যাটায়ার সমসাময়িক যে কোন পত্রিকার লেখার চেয়ে উপভোগ্য৷ অনেক ব্লগে মন্তব্যও (যেমন চোরের) যে কোন রম্য রচনাকে হার মানায়৷

এক বছরে যা হারালাম তার মধ্যে প্রথমেই হচ্ছে সময় নষ্ট হওয়া৷ ব্লগ যে কত শত ঘন্টা খেয়ে ফেলেছে আমার তার হিসাব নেই৷ তারপর না চাইলেও বেশ কিছু বিপজ্জনক শত্রু তৈরী হয়েছে, তাদের অনেকে প্রতিক্রিয়াশীল মুভমেন্টের সাথে জড়িত৷ দেখা যাক শেষমেশ কি হয়৷

সার্বিকভাবে আমি হিসাব করি নি, লাভ বেশী হলো, না ক্ষতি বেশী হল ব্লগিং করে৷ যেটাই হোক ব্লগিং করে মজা পাচ্ছি যতক্ষন ততক্ষন করবো, তাতে খরচ না হয় কিছুটা হলই৷

আমার নিয়মিত পাঠকদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা, এবং ধন্যবাদ৷
 
eXTReMe Tracker