আলাস্কা কয়েক পর্বে লিখব, অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা আছে, যদিও ভ্রমন কাহিনী গুলো পাঠক টানতে পারছে না৷ আলাস্কা যাওয়ার আগ্রহ আমার অনেক পুরোনো৷ এরকম বেশ কয়েকটা জায়গা আছে তরুন থাকতে থাকতে ঘুরতে চাই, যেমন মঙ্গোলিয়া, ইস্টার দ্বীপ, তাঞ্জানিয়ার সেরেঙ্গেটি, আমাজন, এ্যান্টার্কটিকা আরও অনেক৷ কবে যাব বা আদৌ সবগুলো ঘোরা হবে কি না জানি না৷ আশা রাখতে দোষ কি!
এক সপ্তাহের ট্রিপের জন্যে আমি প্ল্যান করি তিন মাস ধরে৷ কে জানে অপচয় কি না, হয়তো অন্যরা অন্যভাবে করে, কিন্তু আমার কাছে ঘাটাঘাটি করতে ভালই লাগে৷ আলাস্কা যুক্তরাস্ট্রের একটা প্রদেশ হলেও সাইজে বেশ বড়৷ আয়তনে মোটামুটি ভারতের অর্ধেক, বাংলাদেশের ১০গুনেরও বেশী৷ জনসংখ্যা ৬ লক্ষ, মানে ঢাকার মিরপুরের চেয়েও কম৷ এদের অনেকেই আবার পর্যটক৷ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় রাস্তা ঘাট কম৷ এক সময় আলাস্কা রাশিয়ার অধীনে ছিল, পরে রাশিয়ার জার মাত্র সাত মিলিয়ন ডলারে আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেচে দেয় (১৮৬৭ সালে)৷ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে যাওয়ায় অবশ্য আলাস্কার ভাগ্য বদলে গেছে বলতে হবে, নাইলে হয়তো সাইবেরিয়ার মত হয়ে বসে থাকত৷
এক সপ্তাহের ট্রিপের জন্যে আমি প্ল্যান করি তিন মাস ধরে৷ কে জানে অপচয় কি না, হয়তো অন্যরা অন্যভাবে করে, কিন্তু আমার কাছে ঘাটাঘাটি করতে ভালই লাগে৷ আলাস্কা যুক্তরাস্ট্রের একটা প্রদেশ হলেও সাইজে বেশ বড়৷ আয়তনে মোটামুটি ভারতের অর্ধেক, বাংলাদেশের ১০গুনেরও বেশী৷ জনসংখ্যা ৬ লক্ষ, মানে ঢাকার মিরপুরের চেয়েও কম৷ এদের অনেকেই আবার পর্যটক৷ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় রাস্তা ঘাট কম৷ এক সময় আলাস্কা রাশিয়ার অধীনে ছিল, পরে রাশিয়ার জার মাত্র সাত মিলিয়ন ডলারে আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেচে দেয় (১৮৬৭ সালে)৷ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে যাওয়ায় অবশ্য আলাস্কার ভাগ্য বদলে গেছে বলতে হবে, নাইলে হয়তো সাইবেরিয়ার মত হয়ে বসে থাকত৷
আলাস্কা কিন্তু সাইবেরিয়ার ঠিক পাশে, ম্যাপ নিয়ে বসলে দেখবেন রাশিয়া ইউরোপ থেকে শুরু হয়ে এশিয়া হয়ে আমেরিকায় এসে ঠিক আলাস্কার আগে শেষ হয়েছে৷ আলাস্কা আর সাইবেরিয়ার মাঝে বেরিং প্রনালী৷ বেরিং প্রনালী আগে ছিল না, আগে মানে বেশ আগে, ১৬ হাজার বছর আগে বরফ যুগের সময়৷ তখন ওখানে একটা মহাদেশ ছিল বেরিঞ্জিয়া৷ এশিয়া আর আমেরিকা বেরিঞ্জিয়ার কারনে সংযুক্ত ছিল৷ ঐ সময় সাইবেরিয়ানরা হেটেই পুর্ব এশিয়া থেকে আমেরিকায় এসেছে৷ আজকের যুগের নেটিভ আমেরিকান বা রেড ইন্ডিয়ান বলতে যাদের বুঝি তারা আসলে ওই সাইবেরিয়ানদের বংশধর৷ একটু খেয়াল করলেই অবশ্য নেটিভ আমেরিকানদের সাথে সাইবেরিয়ান এমনকি চিন বা কোরিয়ানদের চেহারার মিল খুজে পাওয়া যায়৷ মানুষের ইতিহাসে একটা গ্রেট জার্নি হচ্ছে বরফ যুগে এশিয়া থেকে আমেরিকায় যাওয়া৷ এরপর বরফ যুগ শেষ হয়ে গিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকলে বেরিঞ্জিয়া পানির নীচে তলিয়ে যায়, আলাস্কা এক পর্যায়ে সাইবেরিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে৷
ঠিক কোন সময়ে যাওয়া যায় ভেবে পাচ্ছিলাম না৷ শীতে অরোরা দেখা যায় সহজে, একটা নামকরা ডগ স্লেডিং রেস হয় ঐ সময়৷ অনেক সিনেমাতে আলাস্কার গোল্ডমাইন, স্লেডিং আর মাইনারদের নিয়ে কাহিনী দেখেছি৷ কিন্তু শীতে ঠান্ডাটা একটা বিরাট সমস্যা, বিশেষত আলাস্কার ঠান্ডা৷ জুনে গেলে গরমের সময় সুবিধা হচ্ছে ২২-২৪ ঘন্টা দিন পাওয়া যায়৷ সংক্ষিপ্ত গ্রীষ্মে গাছপালা আর পশুপাখী দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়৷ গ্রীষ্মের তিন মাস ছাড়া বাকী সময় ন্যাশনাল পার্কগুলো বন্ধ থাকে৷ কিন্তু দিনের আলোর কারনে অরোরা দেখার কোন রাস্তা নেই৷ অরোরা আমার লিস্টে খুব হাই প্রায়োরিটি, ফাইভ থেকে অপেক্ষা করছি অরোরা দেখব বলে৷ শরতকালে (অথবা এখানকার ভাষায় ফল) কয়েক ঘন্টার জন্য রাত হয়, সুতরাং অরোরা দেখার একটা সুযোগ আছে, আবার সেপ্টেম্বর ১৫র আগে যেতে পারলে ন্যাশনাল পার্ক খোলা থাকার একটা সম্ভাবনা আছে৷ সমস্যা হচ্ছে ঐ সময় আলাস্কাতে সবচেয়ে বেশী বৃষ্টি হয়৷ আকাশ মেঘলা থাকলে অরোরা দেখার চান্স শুন্য৷ আবার বৃষ্টি থাকলে ন্যাশনাল পার্কে গিয়েও যে খুব একটা ওয়াইল্ড লাইফ দেখা যাবে এমন আশা কম৷ অনেক ভেবে চিন্তে বাজেটের কথা হিসাব করে সেপ্টেম্বরেই যাব ঠিক করলাম, গ্যাম্বল, কিন্তু যদি পে অফ করে তাহলে দুই ট্যুরের দেখা একবারে হয়ে যাবে৷
আরেকটা সম্ভাবনা মাথায় আসলো যে প্লেন যেহেতু ৩০,০০০ ফুট ওপর দিয়ে যাবে, সুতরাং আবহাওয়া মেঘলা হলেও প্লেন মেঘের ওপরেই থাকবে৷ সুতরাং যদি আমি এমনভাবে টিকেট কাটি যে প্লেন যখন আলাস্কার ওপর দিয়ে যাবে তখন রাত, তাহলে প্লেনে বসেই অরোরা দেখতে পাবো বা পাওয়া উচিত৷ কিন্তু অনেক ওয়েব ঘেটেও কেউ এভাবে অরোরা দেখেছে তার প্রমান পেলাম না৷ মাথায় ঢুকছিল না যে প্লেন থেকে কেন অরোরা দেখা যাবে না৷
আবার একটা টাইট প্ল্যান করলাম, বহু ব্রাঞ্চ তার৷ মানে একটা n-ary ট্রি এর মতো, যদি অমুক তারিখে আবহাওয়া এমন হয় তাহলে এই কাজ করব, যদি অমুক জায়গায় গিয়ে এরকম দেখি তাহলে এরকম ব্যবস্থা নেব৷ এর মধ্যে আরও অনেক ট্রাভেল প্ল্যান করে হাত পেকে গেছে, ট্রাভেলে কি কি সমস্যা হতে পারে, কোথায় কি অল্টারনেট রাখতে হবে৷ একটা বড় সমস্যা হচ্ছে পিপল ম্যানেজমেন্ট৷ সবাই সব জিনিস সমান ভাবে উপভোগ করবে না৷ দলে আবার বেশ কয়েকজন মেয়ে আছে, তাদের মেজাজ মর্জির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে৷ সমস্যা হচ্ছে ন্যাকা মেয়ে কম, ন্যকা মেয়েদের সহজে নিয়ন্ত্রন করা যায়, কিন্তু আমার সঙ্গিরা টুকটাক ভুজুং ভাজুঙে মানবে না৷ কয়েকটা স্লট রাখলাম সহযাত্রি তোষনের জন্য, এছাড়া আগেই সবাইকে আলাস্কা নিয়ে নানা কাহিনী শুনিয়ে ত্যাক্তবিরক্ত করে ফেললাম৷
ফল এর সময়টাতে প্লেন ভাড়া সামারের চেয়ে একটু কম৷ ভালই হয়েছে অন্য খাতে ব্যায় বেশী করা যাবে৷ কাপড় চোপড় কিনতে একটু বেশী খরচ হয়ে গেল আবার৷ পরে বুঝতে পেরেছি একটু বেশী কিনে ফেলেছিলাম আমি, আসলে শীত অত বেশী না৷ অবশ্য যাওয়ার আগে পারলে আমি প্রায় তোষক কিনে ফেলি গায়ে দেয়ার জন্য৷ টাইম জোন চেঞ্জ হবে, তবে যেহেতু পশ্চিমে যাচ্ছি টাইম গেইন করব আমরা৷ যুক্তরাষ্ট্র পার হয়ে প্লেনে ক্যানাডিয়ান রকির ওপরে আসতেই দেখলাম নীচে ঘন অন্ধকার৷ কোন শহর দেখা যায় না৷ মনে মনে বললাম, খাইছে, প্লেন ভেঙ্গে পড়লে না শেষে ঐ সিনেমার মত মানুষের মাংস খেয়ে থাকতে হয়৷পুরো বৃটিশ কলম্বিয়া আর ইউকন টেরিটরিজে শহর খুব কম মনে হলো৷ পুরোটাই ঘোলাটে অন্ধকার৷
এয়ারপোর্টে যখন অপেক্ষা করছিলাম, এক কোরিয়ান পরিবার দেখি যাচ্ছে আমাদের সাথেই আলাস্কায়৷ সাথে ১০/১২ বছরের ছেলে৷ আরেক আমেরিকান ফ্যামিলির সাথে দেখলাম ভাল খাতির জমে গেল ওদের৷ আমেরিকাদের দলে অনেক লোক মনে হলো, বাবা, মা, ছেলে, দাদা, দাদী, আরো মনে হয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ওয়েটিং রুমে৷ তো সেই আমেরিকান লোক গল্প করছে কোরিয়ানের সাথে, যে সে মোট ৬ বার আলাস্কা গেছে কখনও অরোরা দেখেনি৷ এমনকি ফেয়ারব্যাংকসে গিয়েও দেখে নি৷ শুনে তো আমার মাথায় হাত৷ বলে কি এই লোক৷ অরোরা এত দূর্লভ?
কানাডা পার হয়ে আলাস্কার প্যান হ্যান্ডেলের ওপর আসতেই উত্তর দিগন্তে মনে হল সবুজ আভা ফুটে উঠেছে৷ প্রথমে ভাবলাম হয়তো মেঘ, কিন্তু রাতের বেলায় মেঘ সবুজ কেন? এয়ার হোস্টেসের কাছে জানতে চাইলাম, নাহ, ঠিকই আছে “অরোরা” দেখা যাচ্ছে৷ প্লেনটা এসময় নাক ঘুরিয়ে পশ্চিমমুখী যাচ্ছিল৷ আমি আগে থেকেই হিসাব করে ডান পাশের সারিতে জানালার পাশে সিট নিয়েছি৷ যদিও এয়ারপোর্টের আলোচনা শুনে একটু দমে গিয়েছিলাম, এখন ওভার এক্সাইটেড না হওয়ার চেষ্টা করলাম৷ কোরিয়ানরা পাশের সারিতে ঘুমাচ্ছে, একবার ভাবলাম ধাক্কা দিয়ে তুলে ফেলি, যে অরোরা দেখা যাচ্ছে৷ পরে ভাবলাম থাক, শেষে না ক্ষেপে যায়৷ প্লেনে গন্ডগোল করলে এয়ার মার্শাল এসে আবার ঘাপলা করতে পারে৷ অরোরা মেরু বরাবর সেমি সার্কেল তৈরী করে দেখা যাচ্ছিল৷ সার্কেলের অন্য অংশ সাইবেরিয়া, স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে দেখা যাবে৷ অরোরা কিন্তু চলমান, “ব্রাদার বেয়ার” মুভিটা দেখে থাকলে ওখানে যেমন দেখায় অনেকটা সেরকম৷ ছবি তুললাম অনেকগুলো, কিন্তু আমার ক্যামকর্ডারটা অত ভালো ছিল না, এজন্য ভিডিওতে আসে নি৷
(আরো আছে …)
1 comment:
ভাল লাগছে; আপনার লেখার বাকি অংশের অপেক্ষায় রইলাম। আপনি চাইলে এই লেখা নিসর্গ পত্রিকায় দিতে পারেন। এটি প্রকৃতি বিষয়ক অ-বানিজ্যিক একটি উদ্যোগ। ওয়েবসাইট www.nature.com.bd
Post a Comment