Friday, January 19, 2007

মৃত্যুর অনিবার্যতা কতখানি গ্রহনযোগ্য?


মৃত্যু নিয়ে একটা আবেগী পরিবেশ তৈরী হয়েছিল ব্লগে তখন পোস্টটা দেব ভাবছিলাম, আসলে হিমুর সাথে কথা বলতে গিয়ে সে বলছিল এই নিয়ে পোস্টাতে৷ যাইহোক দেরী হয়ে গেল, পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিয়ে এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে৷ একটা সময় ছিল যখন পরিচিত কাউকে আমি মরে যেতে দেখিনি, মৃত্যকে বেশ দুরের এবং দুর্লভ ঘটনা মনে হতো৷ স্কুলে থাকতে ট্রাকের নিচে পড়ে একজনকে মরতে দেখেছিলাম, এত বড় শক পেয়েছিলাম যে দুই বছর ওই রাস্তায় আর যাই নি৷ কেন যাই নি অনেকদিন পর এখন বিশ্লেষন করলে মনে হয় আসলে ভয় পেয়েছিলাম যে আমি নিজেও ওরকম ট্রাকের নীচে পড়ে বসতে পারি ইত্যাদি (সংক্ষেপিত), একধরনের স্বার্থপর চিন্তা থেকে আসলে আর যাওয়া হয় নি৷ আরও পড়ে বেশ বড় হয়ে যাওয়ার পর আমার নানা মারা গেলেন বার্ধক্যজনিত কারনে ৯৩ বছর বয়সে৷ বাবা মার পরে মনে হয় নানা আত্মীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্লোজ ছিলেন আমার৷ মাত্র কয়েকবছর আগের ঘটনা হওয়ায় পরিস্কার মনে আছে, আমার মা পালস দেখছিলেন সকাল বেলা, তখনই আমার মার হাতের মধ্যে বসেই নানার হার্ট শেষবারের মতো ধ্বক করে উঠে থেমে গেল৷ আমি তাড়াতাড়ি নানার গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম গা তো এখনও গরম, কিন্তু কোন কারনে নানা আর নিঃশ্বাস নিচ্ছেন না, এমনিতেও গত কয়েকদিন খুব আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলেন৷ কিন্তু এত সহজে চোখের সামনে নিঃশব্দে মরে যাওয়া যায় বিশ্বাস হচ্ছিল না৷ এর কয়েক বছর পর বাবাও সামনাসামনি মারা গেলেন ক্লিনিকের বেডে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে৷ ঘন্টাখানেক আগেও আমার মায়ের সাথে সামান্য কথা হচ্ছিল বাবার৷ এর পর থেকে মানুষের মরে যাওয়াটাকে বেশ সহজলভ্য মনে হয়৷ প্রসেসটা আসলে স্রেফ একটা সুইচ অন অফ করার মতই সরল৷

বাবা মার মৃত্য একটা ভীষন ইমোশনাল প্রক্রিয়া, নিজে এর ভেতর না দিয়ে গেলে বোঝা অসম্ভব বলেই মনে হয়৷ বাবা যখন কোমায় যাচ্ছিলেন আমরা ধরে নিতাম আর হয়তো বেচে উঠবেন না৷ যেকোন কারনেই হোক আমি বাবাকে একা পেলে জেনে নিতাম আসলে কেমন লাগছে, কি মনে হয় আসলে স্রষ্টা আছে, মৃত্যুর পরে কি কিছু আছে৷ শুরুতে বাবা খুব মাইন্ড করেছিলেন৷ আসলে প্রথমবার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পর বাবা বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমরা ধরে নিয়েছিলাম এ যাত্রা বোধহয় বাবা বেচেই গেলেন৷ বাসার অন্যরা ভালো চোখে না দেখলেও বাবা ফিরে আসার পর মৃত্য, কোমায় যাওয়া ইত্যাদি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতাম৷ আসলে একটা টিভি প্রোগ্রামে একবার দেখাচ্ছিল অনেকে কোমায় গিয়ে একটা টানেল দেখতে পায়, অনেকে দেখে একপ্রান্তে একটা তীব্র উজ্জল আলো৷ আশ্চর্য্যজনক ভাবে বাবা টানেল বা আলো কোনটাই দেখতে পান নি৷ টানেল রহস্যের অবশ্য এখন সমাধান হয়েছে, এর কারন মস্তিষ্কে অক্সিজেন ডেফিসিয়েন্সি, সুপার সনিক জেটের পাইলটরাও অনেক সময় এরকম দেখে থাকেন৷ মৃত্যুর অবব্যহিত পুর্বে ঠিক কি হয় এটা জানার কৌতুহল ছিল৷ অনেকে ফেরেশতা দেখে, কেউ ভয় পায়, কেউ দুঃস্বপ্ন দেখে৷ দুঃখজনক ভাবে মারা যাওয়ার কয়েকঘন্টা আগেও আমি খোজ নিয়েছি বাবার কাছে কোন কিছু সন্দেহজনক মনে হয় কিনা, বা এনিথিং সুপার ন্যাচারাল৷ কোনটাই না৷ বরং আগের দিন বিশ্বকাপ নিয়ে আমি একতরফা আলোচনা করলাম, বাবা টুকটাক মন্তব্য করলেন৷ এবং কয়েকঘন্টা পরে উনি নেই৷

এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কোন প্রমান দেখিনি মৃত্যুর পরের জীবন বা প্রক্রিয়া নিয়ে৷ তবে মৃত্যু যেহেতু এখনো রিভার্সিবল নয়, সুতরাং মৃত্যুকে গুরুত্বের সাথে না নিয়ে উপায় নেই৷ মানুষের ইতিহাস ঘাটলে দেখব মৃত্যু নিয়ে মানুষের কৌতুহল খুবই পুরোনো৷ নিয়ান্ডার্টাল, ক্রোম্যানিয়ন দের আমলে ওরাও মৃত্যুকে আলাদাভাবে দেখেছে৷ এবং সভ্যতার শুরু থেকেই একটা চেষ্টা ছিল কিভাবে না মরে থাকা যায়৷ এই চেষ্টার ওপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছে নানা কাহিনী, এবং বিশেষভাবে বেশীরভাগ, হয়তো, সমস্ত ধর্ম৷ মিশরীয়রা যেমন বিশ্বাস করত মামি বানিয়ে রাখলে আবার বেচে ওঠা যাবে৷ আবার অনেক ধর্মের কাহিনীতে আছে অমৃত পান করলে আর মরতে হবে না৷ উপমহাদেশের অনেক ধর্মে আছে জন্মান্তরবাদ, অমর থাকার একরকম অল্টারনেট৷ মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মগুলোতে আছে মৃত্যুর পর বিচার ব্যবস্থা, তারপর অনন্ত উদ্দ্যেশ্যহীন জীবন৷ এসব কাহিনীর সত্যমিথ্যা প্রমান করা বেশ সহজ৷ কিন্তু লক্ষ্যনীয় হচ্ছে সবগুলোতেই কোন না কোনভাবে অনন্তকাল বেচে থাকার হাতছানি আছে৷

কয়েকবছর হয়ে যাওয়ায় এতদিনে আমার বাবা, নানা, দাদা সবাই মোটামুটি রিসাইকেল্ড হয়ে গেছেন ধরা যায়৷ হাড়গুলো ছাড়া বেশীরভাগ বায়োলজিকাল অংশগুলো প্রকৃতি এর মধ্যেই নিশ্চয়ই রিক্লেইম করে নিয়েছে৷ হয়তো মাংসগুলো ইদুর, সাপ, ওয়র্ম, ব্যক্টেরিয়া খেয়ে ফেলেছে৷ আবার তাদেরকে খেয়েছে ফুড পিরামিডে এদের ওপরে যারা আছে, শেষমেশ অনেককিছুই হয়তো ফুড পিরমিডের মাথায় আছে মানুষ তাদের কোন সদস্যের শরীরে গিয়ে জমা হয়েছে৷ হয়তো আমার গায়েই আছে৷ আত্মার কি হয়েছে, বা আদৌ কিছু হয়েছে কি না আমার জানা নেই৷ ওনাদের আত্মাদের কেউ আমার সাথে কোন যোগাযোগ করে নি এখনও৷ আসলে আত্মা নামে আদৌ কিছু আছে কি না সন্দেহ৷ বায়োলজিকাল রিসোর্সগুলো না হয় পুনব্যবহ্ৃত হচ্ছে, কিন্তু বাবার যে বিশাল স্মৃতি ভান্ডার ছিল সেগুলো কোথায়৷ শেষ ২০ বছরে লেখা ডায়েরীগুলো আছে, কিন্তু ডায়েরী তো আর পুরো স্মৃতি, অভিজ্ঞতাগুলো নয়৷ মৃত্যু এইদিক থেকে চিন্তা করলে একটা বিশাল অপচয়৷ সভ্যতার জন্য একটা বড়সড় লোকসানী ঘটনা৷ আর ব্যক্তিজীবনে তো অবশ্যই৷ পরকালে আরেকটা জীবন আছে এটা হয়তো স্রেফ স্বান্তনা৷ নো ওয়ান্ডার অমৃতের এত ডিমান্ড কাহিনী-উপকাহিনীতে৷

আরো কিছু অনিবার্য বিষয় ছিল আগে৷ যেমন যক্ষা, কুষ্ঠ, গুটি বসন্ত হলে রক্ষা ছিল না৷ বিভিন্ন কারনে এগুলো আর অনিবার্য নয়৷ রোমানদের আমলে মানুষের গড় আয়ু ছিল ১৮৷ একশতক আগেও ছিল ৪০ এর নীচে৷ এখন অনেক দেশেই ৮০র ওপরে৷ বলাবাহুল্য দোয়াদুরুদ, ঝাড়ফুকের কারনে মানুষের জীবন এত লম্বা হয়ে যায় নি৷ যদি এসব মন্ত্র পড়লে লাভ হতো তাহলে সপ্তম শতাব্দিতে বা এরকম যখন নতুন ধর্ম এসেছে তার পরপরই মানুষের আয়ুতে তার একটা প্রভাব দেখা যেত৷ সেরকম কোন প্রমান নেই৷ প্রমান যা আছে তাহলো পেনিসিলিন বা এরকম এ্যান্টাইবায়োটিক আবিস্কারের পর হঠাত্ করে মানুষের আয়ু বেড়ে যাওয়া৷ বিজ্ঞানের উন্নতির কারনে মানুষ এখন বেশিদিন বাচে ঝাড়ফুক, দোয়াদুরুদের জন্য নয়৷

কিন্তু মৃত্যু প্রসঙ্গে বিজ্ঞান কি করতে পারে? এই অংশটুকু পরের লেখায়৷ শুধু এটুকু বলে রাখি আজকে, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বেচে থাকা খুবই জরুরী, যদি মৃত্যুকে পাশ কাটাতে চান৷ হয়তো ২০৩০ এই হবে৷ ঠিক মেইনস্ট্রীম মিডিয়ায় আসার মত ঘটা করে এসব গবেষনা হচ্ছে না অবশ্য৷ মৃত্যু থেমে গেলে আমাদেরকে দ্রুত আশেপাশের গ্রহগুলো কলোনাইজ করতে হবে৷ অনেক জিনিষই আছে যেগুলো মরে যায় না, অথবা যাদের জীবনকাল ভীষন দীর্ঘ শত মিলিয়ন বছর, যেমন জিন৷ কিন্তু কিভাবে মানুষের জন্য এরকম কৌশল প্রয়োগ করা যেতে৷

হিমু, আপনার কথা ছিল সিঙ্গুলারিটির বাংলা একটা সমার্থক বের করে আমাকে দেবেন৷ এখন লাগবে আমার৷
Post refers to some of the events of last week in somewhereinblog.net. See original - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/28694578

No comments:

 
eXTReMe Tracker