দেশের খ্যাতনামা কিছু বুদ্ধিজীবি, প্রাক্তন আমলা, কলামিস্টরা মিলে একটা প্ল্যাটফর্ম করে এর নাম দিয়েছেন সুশীল সমাজ৷ বোঝা মুস্কিল ঠিক কারা এর সদস্য আর এর বাইরে কারা, মানে যারা সুশীল সমাজের বাইরে তারা কুশীল বা অন্য কিছু কি না৷ তো সুশীল সমাজের মুখপাত্রদের একটা দাবী ছিল সত্ ও যোগ্য প্রার্থী খুজে বের করতে হবে, তাদেরকে নির্বাচিত করতে হবে, তাহলে যদি দেশের ভাগ্য ফেরে৷ সুশীল সমাজের সমর্থক/বিরোধী নির্বিশেষে মোটামুটি আমরা এই স্টেটমেন্ট (সত্ ও যোগ্য প্রার্থীই বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান) মেনে নেই বা নিয়েছি৷
কিন্তু আসলেই কি তাই৷ সত্ আর যোগ্য প্রার্থী হলেই সমস্যার সমাধান হবে৷ তারওপর সত্ আর যোগ্য বিচারের মাপকাঠি কি? যদি দুজন প্রার্থী পাই একজন ৯০% সত্ কিন্তু ৫০% যোগ্য, আর আরেকজন ৫০% সত্ এবং ৯০% যোগ্য কাকে বেছে নেব৷ মতিয়া চৌধুরী আর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কে বেশী সত্ আর কে বেশী যোগ্য? কিভাবে বেছে নেব৷ আসলে এসব প্রশ্নের কোন সোজা সাপ্টা সমাধান নেই, পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক৷ আবার পারসেপশনের ব্যাপারও আছে৷ তারেক রহমান যে এত বড় দুর্নীতিবাজ হবে ২০০১ এ কয়জন ভবিষ্যদ্বানী করেছিল? এজন্য সত্ আর যোগ্য প্রার্থীর পিছনে দৌড়ঝাপ করাকে কেন যেন আমার মনে হয় পরশ পাথরের পেছনে দৌড়ানোর মতো৷
যেসব দেশ গনতান্ত্রায়নের মাধ্যমে উন্নতির মুখ দেখেছে, এবং সে উন্নতি ধরে রেখেছে, ধরা যাক যুক্তরাষ্ট্র, জাপান বা জার্মানী, এদের উন্নতির পেছনে সত্ বা যোগ্য লোকের নির্বাচিত হয়ে আসা কতটা ভুমিকা রেখেছে৷ ঠিক জানি না সুশীল সমাজ এসব কেস স্টাডি করেছে কি না৷ একটা ব্যাপার পরিস্কার যে যুক্তরাষ্ট্রের যে ইকোনমিক এঞ্জিন তা আসলে কে কোথায় নির্বাচিত হলো তার ওপর ভীষন ভাবে নির্ভর করে না৷ কিছু নির্ভরশীলতা তো আছেই, কিন্তু মোটের ওপর যেই আসুক না কেন দেশটা চলতেই থাকবে৷ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশকে চালাতে মোটেই হাই আই কিউ, নোবেল লরেট বা রকেট সায়েন্টিস্টের দরকার হয় না৷ কারন দেশটা আসলে চালায় সিস্টেম, কোন এক ব্যাক্তি বা ব্যক্তি গোস্ঠি না৷ দেশের ব্যবস্থাটা এমন যে কোন খারাপ লোক ক্ষমতায় গেলেও নিয়মের খুব বেশী বাইরে যাওয়া কঠিন৷
আর কংগ্রেসম্যান, সিনেটরদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এসব লেগেই আছে, তাই বলে দেশের চাকা ঘোরা বন্ধ নেই যুক্তরাষ্ট্রে৷ ভিশনারী কোন নেতা থাকলে ভালো, না থাকলেও, বা ভিশনটা যদি ভুলও হয় দেশের ভীষন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম, বা আসলে এখন যেমন দেখতে পাচ্ছি এত বড় ইরাক যুদ্ধের পরও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ধ্বসে পড়ে নি৷ আসলে ভালই চলছে৷
তো এসব কারনে আমার মতামত হচ্ছে সত্ আর যোগ্য প্রার্থী খোজার মতো গোলমেলে, গোজামিলে ভরা লক্ষ্যের চেয়ে জরূরী হচ্ছে এমন একটা সিস্টেম দাড় করানো যেখানে অসত্ আর অযোগ্য লোকও যদি নির্বাচিত হয়ে আসে তাহলেও দেশের যেন বিচ্যুতি না ঘটে, যেমন গত ৫ বছর হয়েছে৷ ভিশনওয়ালা নেতা খোজার আসলে কোন দরকার নেই, নেতার ভিশনে কিছু যায় আসে না, কারন গনতন্ত্রের লক্ষ্য জনগনের ভিশন বাস্তবায়ন করা, কোন নেতা কোন আমলে কি স্বপ্ন দেখে রেখেছেন তা নিয়ে আমাদের নষ্ট করার মত সময় নেই৷ ভিশনবাজ নেতা ঘুরে ফিরে আবার সেই ব্যক্তিপুজার জন্ম দেবে, নিকট অতীতে ড ইউনুসকে নিয়েও তো আমরা সেরকমই দেখলাম৷
আসলে আমাদের দেশের ব্যবস্থা যদি এরকম করা যায় যে, পুরো প্রশাসনিক, এবং বিচার প্রক্রিয়া ভীষনভাবে স্বচ্ছ, এবং রেসপন্সিভ হয় তাহলে ঠিক কে দেশ চালাচ্ছে সেটা কোন ব্যপারই না৷ জবাবদীহীতার প্রক্রিয়াটা ৫ বছরের মতো বড় সাইকেলে আটকে আছে বলেই পিন্টু/লালু/ফালু রা দুর্নীতি করার সুযোগ পায়৷ কারন যদি এমন হতো ফালুকে প্রতি সপ্তাহে তার কর্মকান্ডের জন্য সরাসরি জনগনের প্রশ্নোত্তরের মুখোমুখি হতে হতো এবং সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে সাংসদকে সাময়িক অব্যহতি দেয়া হতো, তাহলে আমার সন্দেহ হয় ফালুর পক্ষে কতটা দুর্নীতি করা সম্ভব হতো৷
ঠিক কি কি পরিবর্তন করলে বাংলাদেশকে সামন্ততান্ত্রিক ফাদ থেকে মুক্ত করা যাবে বলা মুস্কিল, তবে উপরে যেমন বল্লাম সরকারের ভেতর স্বচ্ছতা এবং যেকোন সময় দ্রুততার সাথে (ধরা যাক ২৪ ঘন্টা টার্নএরাউন্ড টাইম) জনগনের কাছে উত্তর দিতে পারার যোগ্যতাটা আসলে খুব জরুরী৷ হিমু বেশ কিছু প্রস্তাব রাখছে তার লেখায় ইদানিং, হাতে সময় থাকলে আপনাদের পড়ে দেখা উচিত, এবং বিতর্কে অংশ নেয়া উচিত৷ হিমুর লেখার লিংক - http://jongli.wordpress.com/
Friday, April 27, 2007
দিন্কালঃ যদি প্রধান উপদেষ্টা বা জেনারেল হইতাম তাইলে কি করতাম
তিন মাসের বেশী হয়ে গেল নতুন তত্ত্বাবধায়ক চলছে৷ প্রথম দু-মাস চমক দিলেও গত কিছুদিন ধরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে৷ বলা বাহুল্য জনসমর্থনও হয়তো কমে যাচ্ছে৷ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানে সবার মধ্যে যেমন একটা আশার সঞ্চার হয়েছিল, এখন আবার নানা কারনে সেটা নিরাশা হয়ে দুরাশায় পরিনত হচ্ছে৷ আসলে দর্শকদের তুষ্ট করা এত সহজ না, একই জোকস দ্বিতীয়বার শুনলে যেমন কেউ হাসে না, সেরকম এখন আর নেতা ধরে জেলে পুরলেও পাবলিক সন্তষ্ট হতে পারছে না৷ পত্র-পত্রিকায়, ব্লগে ধীরে ধীরে সমালোচনার ধারাটাই জোরালো হচ্ছে প্রশংসার চেয়ে, হয়তো ঠিকই আছে, কারন নীতি নির্ধারকরা ঠিক কি করতে চাইছেন পরিস্কার না, আমরা কয়েকবারের ঘর পোড়া গরু, মেঘ দেখতে হয় না, অন্য কেউ দেখছে শুনলেও ভয় পাই৷
ঐদিন সাধক, আর মুখফোড় MSN-এ আসছিল৷ কথা হচ্ছিল সরকার আসলে এরকম অবস্থায় কি করতে পারে৷ কারন বাঙালী আমরা সহজেই সমালোচনা করি, কোনটা ভুল তা ধরিয়ে দিতে লোকের অভাব নেই, কিন্তু কোনটা সঠিক, বা কি করলে সঠিক হবে সেই পরামর্শ দেয়ার মতো লোক কম৷ আসলে হয়তো দর্শকের ভুমিকায় থাকতে থাকতে হাততালি আর দুয়ো ধ্বনি দিতেই আমরা অভ্যস্ত, স্টেজে উঠে অভ্যস্ত নই৷ তো মুখফোড় আর শঙ্কুকে বল্লাম, যদি আপনাদেরকে দ্বায়িত্ব দেয়ার হতো বাংলাদেশের ঠিক এই মুহুর্তে তাহলে কি করতেন৷
সাধক আর মুখফোড় দুইজনের জানাশোনা যেমন বেশী, আবার ওরা মেধাবীও৷ ওদের লেখা থেকেই বোঝা যায়৷ তো আমার প্রশ্ন একটু হঠাত্ করেই ছিল, ওরা বিভিন্ন সমাধানের কথা বললো, আমিও বললাম কি করা যেতে পারে৷ ইন্টারেস্টিং হচ্ছে প্রাথমিক যে সমাধান গুলো বলতে লাগলাম সেগুলো ঘুরে ফিরে পরিচিত একনায়কদের কাজের মতো মনে হতে লাগলো৷ একজন আরেকজনের প্রস্তাবে সহসাই অনেক দুর্বলতা খুজে পেলাম, যেমন ঠিক কি ভাবে রাজনীতিতে শুদ্ধিকরন অভিযান চালানো যায়, দেখা গেল আমরা যেসব সমাধান দিচ্ছি এগুলো স্টালিন, বা হিটলারের মতো লোকেরা আরও ৫০ বছর আগে করে গেছে, এবং আমরা সবাই এখন জানি তার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হয়েছিল৷
আসলে ঘটনা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার কোন সহজ সমাধান নেই৷ যত সহজে আমরা সমালোচনা করি, তত সহজে এর সমাধান বের করা সম্ভব না৷ তো এখন ব্লগারদের কাছে প্রশ্ন, আপনি যদি ফখরুদ্দিন বা জে মঈনের জায়গায় থাকতেন তাহলে কি করতেন? চলুন বিতর্ক করি৷ একজন আরেকজনের প্ল্যানের দুর্বল দিকগুলো বের করি৷ হয়তো কোন সমাধান বের হয়েও আসতে পারে৷
ঐদিন সাধক, আর মুখফোড় MSN-এ আসছিল৷ কথা হচ্ছিল সরকার আসলে এরকম অবস্থায় কি করতে পারে৷ কারন বাঙালী আমরা সহজেই সমালোচনা করি, কোনটা ভুল তা ধরিয়ে দিতে লোকের অভাব নেই, কিন্তু কোনটা সঠিক, বা কি করলে সঠিক হবে সেই পরামর্শ দেয়ার মতো লোক কম৷ আসলে হয়তো দর্শকের ভুমিকায় থাকতে থাকতে হাততালি আর দুয়ো ধ্বনি দিতেই আমরা অভ্যস্ত, স্টেজে উঠে অভ্যস্ত নই৷ তো মুখফোড় আর শঙ্কুকে বল্লাম, যদি আপনাদেরকে দ্বায়িত্ব দেয়ার হতো বাংলাদেশের ঠিক এই মুহুর্তে তাহলে কি করতেন৷
সাধক আর মুখফোড় দুইজনের জানাশোনা যেমন বেশী, আবার ওরা মেধাবীও৷ ওদের লেখা থেকেই বোঝা যায়৷ তো আমার প্রশ্ন একটু হঠাত্ করেই ছিল, ওরা বিভিন্ন সমাধানের কথা বললো, আমিও বললাম কি করা যেতে পারে৷ ইন্টারেস্টিং হচ্ছে প্রাথমিক যে সমাধান গুলো বলতে লাগলাম সেগুলো ঘুরে ফিরে পরিচিত একনায়কদের কাজের মতো মনে হতে লাগলো৷ একজন আরেকজনের প্রস্তাবে সহসাই অনেক দুর্বলতা খুজে পেলাম, যেমন ঠিক কি ভাবে রাজনীতিতে শুদ্ধিকরন অভিযান চালানো যায়, দেখা গেল আমরা যেসব সমাধান দিচ্ছি এগুলো স্টালিন, বা হিটলারের মতো লোকেরা আরও ৫০ বছর আগে করে গেছে, এবং আমরা সবাই এখন জানি তার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হয়েছিল৷
আসলে ঘটনা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার কোন সহজ সমাধান নেই৷ যত সহজে আমরা সমালোচনা করি, তত সহজে এর সমাধান বের করা সম্ভব না৷ তো এখন ব্লগারদের কাছে প্রশ্ন, আপনি যদি ফখরুদ্দিন বা জে মঈনের জায়গায় থাকতেন তাহলে কি করতেন? চলুন বিতর্ক করি৷ একজন আরেকজনের প্ল্যানের দুর্বল দিকগুলো বের করি৷ হয়তো কোন সমাধান বের হয়েও আসতে পারে৷
Friday, April 20, 2007
প্যারাডাইম শিফট
হাইটেকের একটা ব্যাপার আমার কাছে ভালো লাগে যে এখানে পরিবর্তন খুব দ্্রুত, আর বেশীরভাগ সময়ই যুগান্তকারী। বছর ঘুরতেই অনেক সময় ব্যপক পরিবর্তন হয়ে যায়, গত বছরের লেখা কোড এবছর হয়ে যায় লিগ্যাসী। তবে কোন কোন পরিবর্তন এত মৌলিক যে পুরো ইন্ডাস্ট্রী নিজেকে রিশাফল করতে বাধ্য হয়। নব্বই এর শেষে যেমন ডেস্কটপ মার্কেট থেকে ওয়েবভিত্তিক অর্থনীতি, আবার এর পাচ বছরেই আবার সার্ভিস ওরিয়েন্টেড বিজনেস মডেল, সোশাল নেটওয়ার্কিং মডেল, প্রত্যকেটাই বড় বড় পরিবর্তন। ইন্টারনেট আসার পর একসময় যেমন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ওয়েব ডেভেলপারদের ভীষন চাহিদা ছিল, আবার ডটকম বাস্টের পর এরাই হাজারে হাজারে বেকার হয়ে পড়ল। ওয়েবডেভেলপমেন্ট এক অর্থে এখানে আর কখনই চাঙা হয় নি। সবচেয়ে অদ্ভুত হচ্ছে এসব প্যারাডাইম শিফট যখন হয় তখন গতবারের বিদ্্রোহী এবারের স্বৈরশাসক হয়ে বসে।
আমাদের লাইফস্টাইলেও প্যারাডাইম শিফট হচ্ছে। সবচেয়ে মজার হচ্ছে মুল্যবোধের পরিবর্তন। 60 এর দশকে আমাদের বাবা-মারা তাদের বাবা মায়ের সাথে যুদ্ধ করেছেন তখনকার পরিবর্তনের অধিকার নিয়ে। আবার 90 এ এসে তারাই আবার তাদের ছেলেমেয়েদের ওপর 30 বছরের পুরোনো মুল্যবোধ চাপিয়ে দিতে চাইলেন। কে জানে এক প্রজন্ম পরে আমরাও হয়তো তাই করব, বেকে বসব নতুনকে মেনে নিতে।
এজন্য ইদানিং মনে হয় গ্যালিলিওকে যে পোপ ইনকুইজিশনের সামনে দাড়াতে বাধ্য করেছিলেন, হয়তো পোপ মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলেন না। কেবল প্যারাডাইম শিফট টা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। গ্যালিলিও প্রমান করলেন যে পৃথিবী আসলে বিশ্বের কেন্দ ্রথাক দুরের কথা সৌরজগতের সেন্টারেও না। এতদিনের বিশ্বাস স্রেফ গ্যালিলিওর প্রমানের ওপর ভিত্তি করে ছুড়ে ফেলা মুস্কিল, হয়তো একদিক থেকে ঠিকও আছে। আসলে মানুষ নিজেকে যেমন সৃষ্টির সেরা ভাবে সেখান থেকে তাকে সরালে মেনে নেবেই বা কেন। একই অবস্থা হলো কয়েকশ বছর পর ডারউইন যখন বললেন বানর আর মানুষের পূর্বপূরুষ একই ছিল। আবার মানুষকে তার অবস্থান থেকে সরানোর চেষ্টা। দেড়শ বছর পর এখনও বহু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ডারউইনের সুত্রের সরাসরি প্রমান থাকার পরও মেনে নিতে পারছে না। আসলে মানুষ তার বিশ্বাসকে সত্যের সাথে গুলিয়ে ফেলে, বিশ্বাস যে কেউ যত খুশী করতে পারে, এক বিলিয়ন লোক নিয়ে করতে পারে, কিন্তু তাই বলে বিশ্বাস করলেই সত্য হয় না। এই নিয়ে আমার একটা পোস্টও আছে, গ্যালিলিওর সময় কোটি কোটি লোক বিশ্বাস করত সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, তাই বলে মানুষের বিশ্বাসকে মুল্য দিয়ে সূর্য কিন্তু পৃথিবীর চারদিকে ঘোরা শুরু করে নি। সত্যি কথা বলতে কয়জন কিভাবে কি বিশ্বাস করছে এর সাথে সত্যমিথ্যার কোন সম্পর্ক নেই।
ঐদিন মুখফোড়ের সাথে চ্যাট হচ্ছিল। মুখফোড় ব্লগের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড ব্লগার সন্দেহ নেই। তাকে বল্লাম 25 বছর পর মানুষের তৈরী যন্ত্রের বুদ্ধি মানুষের চেয়ে বেশী হবে। কিন্তু এই ঘটনা হঠাৎ করে ঘটবে না। তার আগে আমরা নিজেরাই যন্ত্রের সাথে ইন্টিগ্রেটেড হয়ে যাব। এ প্রক্রিয়া এখন অল্প অল্প করে শুরু হয়েছে। যেমন পকেটে আইপড বা পিডিএ হচ্ছে এর প্রথম ধাপ। উন্নতবিশ্বে মোবাইল ডিভাইস এখন এমন পার্ভেসিভ যে ক্রমশ ডেস্কটপের ওপর নির্ভশীলতা কমে যাচ্ছে। 2009 এ মোবাইল কম্পিউটারের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ডেস্কটপের চেয়ে বেশী হবে। তবে 2030 এর পরিবর্তনের তুলনায় এগুলো এখনও আদিম যুগে আছে। এখনও কম্পিউটারের সাথে মানুষ বায়োলজিকালী ইন্টিগ্রেট করে নি। হয়তো আর 5/7 বছর লাগবে তার জন্য। এর একটা সুবিধা হচ্ছে আমরা সিলিকন চিপ ইম্প্ল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। শরীরের ভেতর এরকম মেমরী চিপ থাকলে যেমন কোন কিছু মনে রাখার জন্য শুধু বায়োলজিকাল নিউরনের ওপর নির্ভর না করে চিপে ঘটনা স্মৃতি সেভ করে রাখা যাবে। যেমন হঠাৎ কিছু দেখলাম, ডিজিটাল ক্যামেরা নেই সাথে, কিন্তু তাতে কি, যা দেখছি সরাসরি চোখ থেকে ইম্প্ল্যান্টেড চিপে লিখে রাখব, পরে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারব। সবচেয়ে মজার হচ্ছে অনুভুতি সেভ করে রাখা গেলে কি হবে। যেমন কেউ যদি তার প্রেমিকাকে চুমু দিয়ে কেমন লাগছে এটা সেভ করে রাখে, তাহলে পরে অন্যরা একই অনুভুতি তাদের ব্রেইনে রিলোড করতে পারবে। আসলে সবচেয়ে বড় যে সামাজিক পরিবর্তন সে টা আসছে, 2020 দশক থেকে শুরু হয়ে যাবে।
মুখফোড়কে ব্লল্লাম একটা পর্যায়ের পরে আমাদের শরীরকে রিডিজাইন করতে হবে। কারন প্রকৃতির দেয়া শরীরটার ডিজাইন ভুলে ভরা। এজন্য আমরা বেশীদিন বাচতে পারি না। কিন্তু রিডিজাইন করেও বেশীদুর যাওয়া যাবে না। বড় জোড় 200 বছর বেচে থাকা সম্ভব। এর চেয়ে বেশী চাইলে শরীরটা ফেলেই দিয়ে পুরোপুরি সিলিকন সাবস্ট্রেটে ট্রান্সফার হয়ে যেতে হবে। মুখফোর এটুকু শুনে বেশ দুঃখ পেল, এক পর্যায়ে বলেই বসল "future looks grim"।
তবে মুখফোড় আসলে খুব স্মার্ট মুহুর্তেই সামলে নিয়ে বল্লো , আসলে আমাকে যদি কেউ বলে জেনেটিক অস্তিত্ব চাও, না কি মেমেটিক অস্তিত্ব চাও, তাহলে আমি মেমেটিক টাই নেব। আসলেই তাই। 2030 বেশ দুরে এখনও। তখন আমাদের বেশীরভাগই মেমেটিক অস্তিত্বের জন্য পাগল হয়ে যাবো। ঠিক যেমন আজকের সাইবার ওয়ার্লড 25 বছর আগে অকল্পনীয় ছিল, অথচ এখন এক মুহুর্ত ইন্টারনেট ছাড়া থাকলে মনে হয় কি যেন নেই।
কিন্তু গ্যালিলিও বা ডারউইনের মতো 2030 এর দশকেও একটা ম্যাসিভ প্যারাডাইম শিফট হতে যাচ্ছে। মানুষের তৈরী যন্ত্র মানুষকে বিদ্যা, বুদ্ধি আর ক্ষমতায় মানুষকেই হারিয়ে দেবে, তবে ভয়ের কোন কারন নেই, ঘটনাটা ম্যাট্রিক্সের মতো হবে না, বরঞ্চ আমরাই transcend করব সিলিকন সাবস্ট্রেটে।
আমাদের লাইফস্টাইলেও প্যারাডাইম শিফট হচ্ছে। সবচেয়ে মজার হচ্ছে মুল্যবোধের পরিবর্তন। 60 এর দশকে আমাদের বাবা-মারা তাদের বাবা মায়ের সাথে যুদ্ধ করেছেন তখনকার পরিবর্তনের অধিকার নিয়ে। আবার 90 এ এসে তারাই আবার তাদের ছেলেমেয়েদের ওপর 30 বছরের পুরোনো মুল্যবোধ চাপিয়ে দিতে চাইলেন। কে জানে এক প্রজন্ম পরে আমরাও হয়তো তাই করব, বেকে বসব নতুনকে মেনে নিতে।
এজন্য ইদানিং মনে হয় গ্যালিলিওকে যে পোপ ইনকুইজিশনের সামনে দাড়াতে বাধ্য করেছিলেন, হয়তো পোপ মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলেন না। কেবল প্যারাডাইম শিফট টা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। গ্যালিলিও প্রমান করলেন যে পৃথিবী আসলে বিশ্বের কেন্দ ্রথাক দুরের কথা সৌরজগতের সেন্টারেও না। এতদিনের বিশ্বাস স্রেফ গ্যালিলিওর প্রমানের ওপর ভিত্তি করে ছুড়ে ফেলা মুস্কিল, হয়তো একদিক থেকে ঠিকও আছে। আসলে মানুষ নিজেকে যেমন সৃষ্টির সেরা ভাবে সেখান থেকে তাকে সরালে মেনে নেবেই বা কেন। একই অবস্থা হলো কয়েকশ বছর পর ডারউইন যখন বললেন বানর আর মানুষের পূর্বপূরুষ একই ছিল। আবার মানুষকে তার অবস্থান থেকে সরানোর চেষ্টা। দেড়শ বছর পর এখনও বহু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ডারউইনের সুত্রের সরাসরি প্রমান থাকার পরও মেনে নিতে পারছে না। আসলে মানুষ তার বিশ্বাসকে সত্যের সাথে গুলিয়ে ফেলে, বিশ্বাস যে কেউ যত খুশী করতে পারে, এক বিলিয়ন লোক নিয়ে করতে পারে, কিন্তু তাই বলে বিশ্বাস করলেই সত্য হয় না। এই নিয়ে আমার একটা পোস্টও আছে, গ্যালিলিওর সময় কোটি কোটি লোক বিশ্বাস করত সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, তাই বলে মানুষের বিশ্বাসকে মুল্য দিয়ে সূর্য কিন্তু পৃথিবীর চারদিকে ঘোরা শুরু করে নি। সত্যি কথা বলতে কয়জন কিভাবে কি বিশ্বাস করছে এর সাথে সত্যমিথ্যার কোন সম্পর্ক নেই।
ঐদিন মুখফোড়ের সাথে চ্যাট হচ্ছিল। মুখফোড় ব্লগের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড ব্লগার সন্দেহ নেই। তাকে বল্লাম 25 বছর পর মানুষের তৈরী যন্ত্রের বুদ্ধি মানুষের চেয়ে বেশী হবে। কিন্তু এই ঘটনা হঠাৎ করে ঘটবে না। তার আগে আমরা নিজেরাই যন্ত্রের সাথে ইন্টিগ্রেটেড হয়ে যাব। এ প্রক্রিয়া এখন অল্প অল্প করে শুরু হয়েছে। যেমন পকেটে আইপড বা পিডিএ হচ্ছে এর প্রথম ধাপ। উন্নতবিশ্বে মোবাইল ডিভাইস এখন এমন পার্ভেসিভ যে ক্রমশ ডেস্কটপের ওপর নির্ভশীলতা কমে যাচ্ছে। 2009 এ মোবাইল কম্পিউটারের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ডেস্কটপের চেয়ে বেশী হবে। তবে 2030 এর পরিবর্তনের তুলনায় এগুলো এখনও আদিম যুগে আছে। এখনও কম্পিউটারের সাথে মানুষ বায়োলজিকালী ইন্টিগ্রেট করে নি। হয়তো আর 5/7 বছর লাগবে তার জন্য। এর একটা সুবিধা হচ্ছে আমরা সিলিকন চিপ ইম্প্ল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। শরীরের ভেতর এরকম মেমরী চিপ থাকলে যেমন কোন কিছু মনে রাখার জন্য শুধু বায়োলজিকাল নিউরনের ওপর নির্ভর না করে চিপে ঘটনা স্মৃতি সেভ করে রাখা যাবে। যেমন হঠাৎ কিছু দেখলাম, ডিজিটাল ক্যামেরা নেই সাথে, কিন্তু তাতে কি, যা দেখছি সরাসরি চোখ থেকে ইম্প্ল্যান্টেড চিপে লিখে রাখব, পরে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারব। সবচেয়ে মজার হচ্ছে অনুভুতি সেভ করে রাখা গেলে কি হবে। যেমন কেউ যদি তার প্রেমিকাকে চুমু দিয়ে কেমন লাগছে এটা সেভ করে রাখে, তাহলে পরে অন্যরা একই অনুভুতি তাদের ব্রেইনে রিলোড করতে পারবে। আসলে সবচেয়ে বড় যে সামাজিক পরিবর্তন সে টা আসছে, 2020 দশক থেকে শুরু হয়ে যাবে।
মুখফোড়কে ব্লল্লাম একটা পর্যায়ের পরে আমাদের শরীরকে রিডিজাইন করতে হবে। কারন প্রকৃতির দেয়া শরীরটার ডিজাইন ভুলে ভরা। এজন্য আমরা বেশীদিন বাচতে পারি না। কিন্তু রিডিজাইন করেও বেশীদুর যাওয়া যাবে না। বড় জোড় 200 বছর বেচে থাকা সম্ভব। এর চেয়ে বেশী চাইলে শরীরটা ফেলেই দিয়ে পুরোপুরি সিলিকন সাবস্ট্রেটে ট্রান্সফার হয়ে যেতে হবে। মুখফোর এটুকু শুনে বেশ দুঃখ পেল, এক পর্যায়ে বলেই বসল "future looks grim"।
তবে মুখফোড় আসলে খুব স্মার্ট মুহুর্তেই সামলে নিয়ে বল্লো , আসলে আমাকে যদি কেউ বলে জেনেটিক অস্তিত্ব চাও, না কি মেমেটিক অস্তিত্ব চাও, তাহলে আমি মেমেটিক টাই নেব। আসলেই তাই। 2030 বেশ দুরে এখনও। তখন আমাদের বেশীরভাগই মেমেটিক অস্তিত্বের জন্য পাগল হয়ে যাবো। ঠিক যেমন আজকের সাইবার ওয়ার্লড 25 বছর আগে অকল্পনীয় ছিল, অথচ এখন এক মুহুর্ত ইন্টারনেট ছাড়া থাকলে মনে হয় কি যেন নেই।
কিন্তু গ্যালিলিও বা ডারউইনের মতো 2030 এর দশকেও একটা ম্যাসিভ প্যারাডাইম শিফট হতে যাচ্ছে। মানুষের তৈরী যন্ত্র মানুষকে বিদ্যা, বুদ্ধি আর ক্ষমতায় মানুষকেই হারিয়ে দেবে, তবে ভয়ের কোন কারন নেই, ঘটনাটা ম্যাট্রিক্সের মতো হবে না, বরঞ্চ আমরাই transcend করব সিলিকন সাবস্ট্রেটে।
Monday, April 9, 2007
বাংলাদেশ ২.০ (নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অথবা অপ্রয়োজনীয়তা)
সকালে তর্ক হচ্ছিল এমএসএনএ, এক পর্যায়ে বাংলাদেশের নেক্সট ভার্শনে নেতা আর নেতৃত্বের কতখানি গুরুত্ব থাকবে বা থাকা উচিত এই নিয়ে প্রসঙ্গ গড়াল৷ বেশ গুরুত্বপুর্ন বিষয়, কারন নির্বাচন ভিত্তিক যে গনতন্ত্র এখন বিশ্বে প্রচলিত তার একটা মূল লক্ষ্য থাকে নেতা খুজে বের করা৷ আবার যেমন বাংলাদেশের ব্যর্থতার জন্য সুযোগ পেলেই আমরা নেতা-নেত্রীদের অযোগ্যতা, সুযোগসন্ধানী চরিত্র এবং দুর্ণীতিপরায়নতাকে দায়ী করে বসি৷ আমার মনে প্রশ্ন জাগে গনতন্ত্র নিজে কতখানি নেতৃত্বভিত্তিক, অথবা নেতার প্রয়োজনীয়তা গনতন্ত্রে কতটুকু৷
লিংকন বা এ্যরিষ্টটলের সংজ্ঞায় ঠিক নেতা নেতৃত্বের সাথে গনতন্ত্রের সম্পর্কটা পরিস্কার হয় না, অথবা যতটুকু হয় তাতে মনে হয় নেতা বিহীন অবস্থাই বরং বেশী গনতান্ত্রিক৷ যেমন যেখানে নেতার গুরুত্ব বেশী সবচেয়ে বেশী তাদের মধ্যে আছে রাজতন্ত্র/স্বৈরতন্ত্র বা বিভিন্ন ধরনের ধর্মভিত্তিক তন্ত্র৷ এগুলোতে একজন বিশেষ ব্যক্তির মতামতের গুরুত্ব অন্য সবার চেয়ে বেশী, অনেক ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত৷ আবার এরিস্টোক্র্যাসিতে যেমন একদল কূলীন লোকের মতামতের গুরুত্ব বেশী, কার্যক্ষেত্রে তারা নেতৃস্থানীয়৷ অন্যদিকে গনতন্ত্রে সবাই সমান, এবং সবার মতামতের গুরুত্বও সমান হওয়ার কথা, আর তাই যদি হয় তাহলে গনতন্ত্রে নেতার প্রয়োজনীয়তা তো না থাকারই কথা৷ কারন এমন যদি হয় নেতা গাড়ি ছুটিয়ে বাসায় যাবেন বলে সব রাস্তা বন্ধ রাখতে হবে, এমনকি মরনাপন্ন যাত্রিকে নিয়ে এম্বুলেন্সও নড়তে পারবে না, তাহলে ঠিক কিভাবে গনতন্ত্র হলো বোঝা মুস্কিল (এই ঘটনাটা ঘটেছিল কয়েক মাস আগে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর যাওয়ার সময়)৷ রাজার রথ যাত্রা রাজতন্ত্রে মানানসই, কিন্তু গনতন্ত্রে নয়৷
এটুকু ভেবে আমার মনে হলো যে, গনতন্ত্রের ১০০% প্রয়োগে আসলে কোন নেতা থাকার কথা নয়৷ বরং নেতা না থাকাটাই (নিদেনপক্ষে এইসব নেতাদের গুরুত্ব কম থাকা) গনতন্ত্রের লক্ষন৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অবশ্য ভিন্ন৷ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সব গনতান্ত্রিক দেশেই নেতা নির্বাচন গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটা অংশ৷ কিন্তু কেন? এতে কি গনতান্ত্রিক চেতনা ব্যহত হচ্ছে না৷ হচ্ছে বলেই তো মনে হয়৷ যেমন বৃটেনের জনগোষ্ঠির একটা বড় অংশ ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করলেও ওদের নেতা ব্লেয়ার ইরাকে সৈন্য পাঠান৷ দেখা যাচ্ছে নেতার ইচ্ছা অনিচ্ছার গুরুত্ব সাধারনের ইচ্ছার চেয়ে বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে, যেটা গনতন্ত্রে হওয়ার কথা নয়৷ এরকম আরো উদাহরন দেয়া যেতে পারে৷
তাহলে গনতান্ত্রিক দেশগুলোতে কেন নেতা নির্বাচনের ব্যাপারটা আছে, যদি নেতা থাকলে ঘুরে ফিরে গনতান্ত্রিক চেতনা ব্যহতই হয়৷ আমার ধারনা এর একটা কারন টেকনিকাল প্রবলেম৷ যখন দেশের জনসংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে লক্ষ বা কোটিতে যায় তখন সমস্ত সিদ্ধান্তের জন্য বারবার জনগনের কাছে যাওয়া মুস্কিল৷ আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, যেমন বৃটেনে তাদের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা কয়েকশ বছরের পুরোনো৷ সুতরাং যুদ্ধে যাবো কি না এর জন্য, জনে জনে ভোট নেয়া কঠিন, অন্তত দুশ বছর আগে চিন্তা করলে কঠিন বা অসম্ভব ছিল৷ সুতরাং ব্লেয়ার সম্ভবত পার্লামেন্ট থেকে অনুমোদন নিয়েই তার কাজ সেরেছেন৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে জনে জনে মতামত নেয়ার সমস্যা থেকে ঊদ্ধার পাওয়ার জন্য যে সমাধান তা ঘুরে ফিরে গনতন্ত্রের মৌলিক চেতনাকে আঘাত করছে৷
আমাদের দেশের ইতিহাসে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ৷ সাংসদরা প্রথম অধিবেশনেই নিজেদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে নেন৷ তারপর ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি আমাদানী থেকে শুরু করে রিলিফের বন্দোবস্ত কোনটাই বাদ যায় না৷ দু’দলের মধ্যে সব ক্ষেত্রে সাপে-নেঊলে সম্পর্ক থাকলেও এসব ব্যাপারে ভিন্নমত দেখা যায় না৷ সুতরাং দেখা যাচ্ছে টেকনিকালিটির সে সমস্যা আছে তার বর্তমান সমাধান (নেতা নির্বাচন) গনতন্ত্রকেই ধ্বংস করছে৷
কিন্তু অন্য আর কি সমাধান আছে, বা আদৌ কোন সমাধান কি আছে৷ আমার ধারনা আছে৷ আসলে নেতাবিহীন ব্যবস্থা খুবই সম্ভব৷ তবে তার জন্য বেশ কিছু ইনফ্রাস্ট্রাকচার দরকার যা একবিংশ শতাব্দিতে মানুষের পুরোটাই আছে৷ আমাদের ব্যাক্তিপুজা মানসিকতা যে আমাদের কত ক্ষতি করছে আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না৷ দেশের দুর্নীতি যে এরকম মহামারী আকার নিল তার পেছনেও নেতাভক্তি দায়ী, যে দল সমর্থন করি সে দলের নেতাদের দোষ দেখেও দেখতে চাই না, ঠিক এ কারনেই নেতারা মাথায় উঠে বসেছে৷ আরেকটা আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা হচ্ছে সত্যই যদি এরকম অধিকতর গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা যেতে পারি আমরা অদুর ভবিষ্যতে পাশ্চাত্যকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার একটা রিয়েলিস্টিক প্ল্যান করতে পারি৷ কারন আগের লেখাতেই আমি দেখিয়েছি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রগতির জন্য গনতন্ত্র একটা পুর্বশর্ত৷ যত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা যেতে পারব তত বেশী আমাদের উন্নয়নের চাকা ঘুরতে থাকবে৷ আসলে ৫ বছরে একবার ৩০০ আসনে ইলেকশন হলেই যে দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না এটা এতদিনে নিশ্চয়ই পরিস্কার হয়েছে৷
বাংলাদেশে পদে পদে যে কত ধরনের অসাম্য/বর্ণবাদ তা আমাদের চোখে সহজে ধরা পড়তে চায় না৷ আমাদের অনেকে যারা ভাগ্যক্রমে অবস্থাপন্ন পরিবারে জন্মেছি তাদের হয়তো কমই এসবের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ আমার মনে আছে শিক্ষা বোর্ড অফিসে একবার মার্কশিট ইংরেজীতে ট্রান্সলেট করতে গিয়েছিলাম৷ কোথায় পড়ি শুনে বোর্ডের কর্মকর্তা লাইন ভেঙ্গে আরো ৫০ জনের আগে আমার মার্কশীট দিয়ে দিলেন৷ অথচ জামালপুর, নেত্রকোনার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেকে সকাল থেকে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে ছিল৷ শুধু খালেদা হাসিনাকে বদলে লাভ হবে বলে মনে হয় না, সমাজে এবং আমাদের মানসিকতায় গনতন্ত্র দরকার৷ এরকম ব্যবস্থা দরকার যেখানে পটুয়াখালীর আমতলী, বা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার একজন তরুন, ঢাকা শহরের একজন তরুনের সমান সুযোগ পায়৷ আর এর শুরুটা করতে হবে বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রথা বাদ দিয়ে, ব্যক্তি পুজা, বংশ পুজা, কৌলিন্যবাদ ছেড়ে দিতে হবে, রাজা-রানী, রাজপুত্র, যুবরাজদের বিদায় দিতে হবে, কারন গনতান্ত্রিক দেশে আমরা সবাই রাজা৷
নেতা বিহীন, অথবা নিদেন পক্ষে নেতাদের গুরুত্ব কমিয়ে ঠিক কি রকম গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্ভব, এসব নিয়ে পরের লেখাগুলোতে লিখব, আর হিমু তো লিখছেই৷
লিংকন বা এ্যরিষ্টটলের সংজ্ঞায় ঠিক নেতা নেতৃত্বের সাথে গনতন্ত্রের সম্পর্কটা পরিস্কার হয় না, অথবা যতটুকু হয় তাতে মনে হয় নেতা বিহীন অবস্থাই বরং বেশী গনতান্ত্রিক৷ যেমন যেখানে নেতার গুরুত্ব বেশী সবচেয়ে বেশী তাদের মধ্যে আছে রাজতন্ত্র/স্বৈরতন্ত্র বা বিভিন্ন ধরনের ধর্মভিত্তিক তন্ত্র৷ এগুলোতে একজন বিশেষ ব্যক্তির মতামতের গুরুত্ব অন্য সবার চেয়ে বেশী, অনেক ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত৷ আবার এরিস্টোক্র্যাসিতে যেমন একদল কূলীন লোকের মতামতের গুরুত্ব বেশী, কার্যক্ষেত্রে তারা নেতৃস্থানীয়৷ অন্যদিকে গনতন্ত্রে সবাই সমান, এবং সবার মতামতের গুরুত্বও সমান হওয়ার কথা, আর তাই যদি হয় তাহলে গনতন্ত্রে নেতার প্রয়োজনীয়তা তো না থাকারই কথা৷ কারন এমন যদি হয় নেতা গাড়ি ছুটিয়ে বাসায় যাবেন বলে সব রাস্তা বন্ধ রাখতে হবে, এমনকি মরনাপন্ন যাত্রিকে নিয়ে এম্বুলেন্সও নড়তে পারবে না, তাহলে ঠিক কিভাবে গনতন্ত্র হলো বোঝা মুস্কিল (এই ঘটনাটা ঘটেছিল কয়েক মাস আগে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর যাওয়ার সময়)৷ রাজার রথ যাত্রা রাজতন্ত্রে মানানসই, কিন্তু গনতন্ত্রে নয়৷
এটুকু ভেবে আমার মনে হলো যে, গনতন্ত্রের ১০০% প্রয়োগে আসলে কোন নেতা থাকার কথা নয়৷ বরং নেতা না থাকাটাই (নিদেনপক্ষে এইসব নেতাদের গুরুত্ব কম থাকা) গনতন্ত্রের লক্ষন৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অবশ্য ভিন্ন৷ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সব গনতান্ত্রিক দেশেই নেতা নির্বাচন গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটা অংশ৷ কিন্তু কেন? এতে কি গনতান্ত্রিক চেতনা ব্যহত হচ্ছে না৷ হচ্ছে বলেই তো মনে হয়৷ যেমন বৃটেনের জনগোষ্ঠির একটা বড় অংশ ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করলেও ওদের নেতা ব্লেয়ার ইরাকে সৈন্য পাঠান৷ দেখা যাচ্ছে নেতার ইচ্ছা অনিচ্ছার গুরুত্ব সাধারনের ইচ্ছার চেয়ে বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে, যেটা গনতন্ত্রে হওয়ার কথা নয়৷ এরকম আরো উদাহরন দেয়া যেতে পারে৷
তাহলে গনতান্ত্রিক দেশগুলোতে কেন নেতা নির্বাচনের ব্যাপারটা আছে, যদি নেতা থাকলে ঘুরে ফিরে গনতান্ত্রিক চেতনা ব্যহতই হয়৷ আমার ধারনা এর একটা কারন টেকনিকাল প্রবলেম৷ যখন দেশের জনসংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে লক্ষ বা কোটিতে যায় তখন সমস্ত সিদ্ধান্তের জন্য বারবার জনগনের কাছে যাওয়া মুস্কিল৷ আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, যেমন বৃটেনে তাদের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা কয়েকশ বছরের পুরোনো৷ সুতরাং যুদ্ধে যাবো কি না এর জন্য, জনে জনে ভোট নেয়া কঠিন, অন্তত দুশ বছর আগে চিন্তা করলে কঠিন বা অসম্ভব ছিল৷ সুতরাং ব্লেয়ার সম্ভবত পার্লামেন্ট থেকে অনুমোদন নিয়েই তার কাজ সেরেছেন৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে জনে জনে মতামত নেয়ার সমস্যা থেকে ঊদ্ধার পাওয়ার জন্য যে সমাধান তা ঘুরে ফিরে গনতন্ত্রের মৌলিক চেতনাকে আঘাত করছে৷
আমাদের দেশের ইতিহাসে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ৷ সাংসদরা প্রথম অধিবেশনেই নিজেদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে নেন৷ তারপর ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি আমাদানী থেকে শুরু করে রিলিফের বন্দোবস্ত কোনটাই বাদ যায় না৷ দু’দলের মধ্যে সব ক্ষেত্রে সাপে-নেঊলে সম্পর্ক থাকলেও এসব ব্যাপারে ভিন্নমত দেখা যায় না৷ সুতরাং দেখা যাচ্ছে টেকনিকালিটির সে সমস্যা আছে তার বর্তমান সমাধান (নেতা নির্বাচন) গনতন্ত্রকেই ধ্বংস করছে৷
কিন্তু অন্য আর কি সমাধান আছে, বা আদৌ কোন সমাধান কি আছে৷ আমার ধারনা আছে৷ আসলে নেতাবিহীন ব্যবস্থা খুবই সম্ভব৷ তবে তার জন্য বেশ কিছু ইনফ্রাস্ট্রাকচার দরকার যা একবিংশ শতাব্দিতে মানুষের পুরোটাই আছে৷ আমাদের ব্যাক্তিপুজা মানসিকতা যে আমাদের কত ক্ষতি করছে আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না৷ দেশের দুর্নীতি যে এরকম মহামারী আকার নিল তার পেছনেও নেতাভক্তি দায়ী, যে দল সমর্থন করি সে দলের নেতাদের দোষ দেখেও দেখতে চাই না, ঠিক এ কারনেই নেতারা মাথায় উঠে বসেছে৷ আরেকটা আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা হচ্ছে সত্যই যদি এরকম অধিকতর গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা যেতে পারি আমরা অদুর ভবিষ্যতে পাশ্চাত্যকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার একটা রিয়েলিস্টিক প্ল্যান করতে পারি৷ কারন আগের লেখাতেই আমি দেখিয়েছি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রগতির জন্য গনতন্ত্র একটা পুর্বশর্ত৷ যত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা যেতে পারব তত বেশী আমাদের উন্নয়নের চাকা ঘুরতে থাকবে৷ আসলে ৫ বছরে একবার ৩০০ আসনে ইলেকশন হলেই যে দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না এটা এতদিনে নিশ্চয়ই পরিস্কার হয়েছে৷
বাংলাদেশে পদে পদে যে কত ধরনের অসাম্য/বর্ণবাদ তা আমাদের চোখে সহজে ধরা পড়তে চায় না৷ আমাদের অনেকে যারা ভাগ্যক্রমে অবস্থাপন্ন পরিবারে জন্মেছি তাদের হয়তো কমই এসবের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ আমার মনে আছে শিক্ষা বোর্ড অফিসে একবার মার্কশিট ইংরেজীতে ট্রান্সলেট করতে গিয়েছিলাম৷ কোথায় পড়ি শুনে বোর্ডের কর্মকর্তা লাইন ভেঙ্গে আরো ৫০ জনের আগে আমার মার্কশীট দিয়ে দিলেন৷ অথচ জামালপুর, নেত্রকোনার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেকে সকাল থেকে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে ছিল৷ শুধু খালেদা হাসিনাকে বদলে লাভ হবে বলে মনে হয় না, সমাজে এবং আমাদের মানসিকতায় গনতন্ত্র দরকার৷ এরকম ব্যবস্থা দরকার যেখানে পটুয়াখালীর আমতলী, বা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার একজন তরুন, ঢাকা শহরের একজন তরুনের সমান সুযোগ পায়৷ আর এর শুরুটা করতে হবে বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রথা বাদ দিয়ে, ব্যক্তি পুজা, বংশ পুজা, কৌলিন্যবাদ ছেড়ে দিতে হবে, রাজা-রানী, রাজপুত্র, যুবরাজদের বিদায় দিতে হবে, কারন গনতান্ত্রিক দেশে আমরা সবাই রাজা৷
নেতা বিহীন, অথবা নিদেন পক্ষে নেতাদের গুরুত্ব কমিয়ে ঠিক কি রকম গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্ভব, এসব নিয়ে পরের লেখাগুলোতে লিখব, আর হিমু তো লিখছেই৷
Saturday, April 7, 2007
বাংলাদেশ ২.০ (গনতন্ত্র আর প্রযুক্তি)
বাংলাদেশে গনতন্ত্রের ইম্প্লিমেন্টেশন কেমন হলে ভাল হয়, এ নিয়ে একটা লেখা শুরু করেছিলাম গত সপ্তাহে৷ ঘটনাচক্রে তার কয়েকদিন পরেই দেশের আর্মি প্রধান বললেন বাংলাদেশের জন্য নতুন গনতন্ত্র দরকার৷ তারা ঠিক কি করবেন এটা পরিস্কার না৷ এর আগে সামরিক শাসক জিয়া বা এরশাদ এসেও তাদের ব্র্যন্ডের হ্যা-না ভোট ওয়ালা গনতন্ত্র চালু করেছিলেন, যদিও ফলাফল শুভ হয় নি৷ তবে আপাতত পেসিমিজমে না গিয়ে আরো কিছুদিন দেখা দরকার শেষমেশ কি হয়৷ জিয়া বা এরশাদ যেমন ক্ষমতাদখল করেছিলেন সরাসরি তার চেয়ে এখনকার অবস্থার পার্থক্য আছে৷ পৃথিবী যেমন বদলেছে, বাংলাদেশও ভীষন ভাবে বদলেছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আর মানুষের সচেতনতার কারনে জিয়া/এরশাদ স্টাইল দখলতন্ত্র এখন অসম্ভব৷ আর বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এখন অনেক পেশাদার এজন্য ৭০ বা ৮০র দশকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে একদমই মনে হয় না আমার কাছে৷ আবার অন্যভাবে চিন্তা করলে মনে হয় বেশ ভালো কিছুও বের হয়ে আসার সম্ভাবনা এই প্রচেষ্টা থেকে৷ কারন অস্বীকার করা যাবে না যেভাবে নামকাওয়াস্তে গনতন্ত্র চলছিল দেশে তা বহন করা দেশের মানুষের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে দাড়াচ্ছিল৷
আমরা একটা পোষা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি যে সত্যিই যদি বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা পাল্টানোর সুযোগ আসে তাহলে আমরা ঠিক কি করতাম৷ অথবা আরেকভাবে বললে যদি স্ক্র্যাচ থেকে ডিজাইন করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে বর্তমান অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা কেমন ব্যবস্থা চাই, যেন দেশের প্রগতির চাকাকে ত্বরান্বিত করা যায়, একুশ শতকে প্রথমার্ধেই (যেমন ২০২০ এর আগে) আমরা স্বল্পোন্নত দুর্নাম ঘোচাতে পারি৷ হিমু তার লেখাগুলো এখানে পোস্ট করছে, http://jongli.wordpress.com/, প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে৷
তো আজকের লেখার মূল প্রসঙ্গে আসি৷ বেশ কিছুদিন ধরেই আমার ধারনা হচ্ছে গনতন্ত্র আর প্রযুক্তিগত উন্নতির মধ্যে একটা সিম্বায়োটিক রিলেশনশীপ আছে৷ তার আগে বলে নেই আমরা উন্নয়ন বলতে যা বুঝি তা আসলে ঘুরে ফিরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন৷ যেমন গ্রামে বেড়াতে গিয়ে যদি দেখি গতবছরের কাচা রাস্তা এবার পাকা হয়েছে তখন মনে হয় কিছু উন্নতি হয়েছে, আবার যেমন ৭০ দশকে আমাদের যে খাদ্য ঘাটতি ছিল টা আর এখন নেই, যদিও দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে, এটাও সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির জন্য৷ আসলে মানুষ হিসেবে অন্য প্রানীর সাথে আমাদের একটা মৌলিক পার্থক্য প্রযুক্তির ব্যবহার আর তার মাধ্যমে পরিবেশকে ক্রমশ নিজের অনুকুলে ব্যবহার করার ক্ষমতা৷ জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার আসলে সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি, বা আরো সংক্ষেপে বললে উন্নয়নের মূল ঊপকরন হচ্ছে knowledge৷
খেয়াল করলে দেখব আধুনিক বিশ্বে যেসব দেশ তাদের knowledge base বাড়িয়েছে তারাই আসলে ঊন্নতি করছে৷ উদাহরন দেই, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর ৫% লোক থাকে, কিন্তু বিশ্বের ২৫% বা তারও বেশী রিসার্চ হয় যুক্তরাষ্ট্রে, ফলাফল হিসেবে সমসাময়িক সমস্ত বড় বড় যুগান্তকারী আবিস্কার, আর প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ার ঊদ্ভাবন গুলো ঘুরে ফিরে বেশীরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে হয়৷ যেমন এই যে ইন্টারনেট প্রযুক্তি, ইনফরমেশন টেকনোলজি প্রায় পুরোটার জন্যই কৃতিত্ত্ব পাবে যুক্তরাষ্ট্র আর তার গবেষকরা৷ আমাদের দেশে খাদ্য বিপ্লবের কথা যে বললাম একটু আগে (এবং জেনেটিকালী পরিবর্তিত শস্য), তাও কিন্তু শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পরে তাদের অর্থায়নে৷ বড় বড় টেকনোলজি কম্পানী যেমন ইন্টেল, মাইক্রোসফ্ট বা গুগলও ওখান থেকেই শুরু করে৷ আবার মুসলিম দেশগুলোতে যেমন বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫% বা তারও হয়তো বেশী আছে৷ কিন্তু বর্তমান বিশ্বের অগ্রগতিতে এসব দেশের অবদান ৫%ও কিনা সন্দেহ৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিছু কিছু দেশ কেন সভ্যতার knowledge base অনেক অবদান রাখছে আবার কেউ কেউ কিছুই করছে না৷ যেমন বাংলাদেশ, গত ৩৫ বছরে বিশ্বের দরবারে আমাদের অবদান কি? আমরা যদি এই ৩৫ বছর না থাকতাম দুনিয়ার ভীষন কোন ক্ষতি হতো বলে মনে হয় না৷ আমাদের দেশে কেন টমাস এডিসন, বিল গেটস, বা রিচার্ড ডকিনসরা জন্মায় না, যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি তাও পাশ্চাত্য থেকে ধার করা জ্ঞান দিয়ে৷ আমাদের ঊদ্ভাবনী ক্ষমতা কি এতই কম৷
এর ঊত্তর ঘাটতে গিয়ে মনে হলো, মধ্যযুগে ইউরোপেও বহুদিন সভ্যতা আটকে ছিল৷ আবার ঠিক রেনেসার পরেই ওদের চাকা তরতর করে ঘুরতে লাগলো৷ অসংখ্য নতুন আবিস্কার হলো, নিঊটন, হাইগেন্স, হুক এসময়েরই লোক৷ এর পর একে একে স্টীম এঞ্জিনের আবিস্কার, আর তার পর ম্যাসিভ ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালাইজেশন৷ হঠাত্ করে এই যে ফ্লাড গেট খুললো এর পেছনে আসলে ছিল ইউরোপে মুক্তচিন্তার আবির্ভাব, রেনেসার মাধ্যমে, চার্চের প্রভাব ক্রমশ কমে যেতে থাকলো, ধর্ম যে শেকল দিয়ে মানুষকে বেধে রেখেছিল তা আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যেতে বাধ্য হলো৷ আর মুক্তচিন্তার শেকড় জন্মদিলো গনতন্ত্রের৷ রাজতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র, ঈশ্বরতন্ত্রের তিরোধানে গনতন্ত্রের আবির্ভাবেই কিন্তু ইউরোপ বাকি বিশ্বকে যোজন যোজন পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল৷ আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র গনতন্ত্রের দ্বিতীয় দফার পুরোনো দেশগুলোর একটা (বাকীগুলোর মধ্যে আছে বৃটেন, ফ্রান্স ইত্যাদি)৷
এমনকি এখনকার বিশ্বের ধনী এবং ঊন্নত দেশগুলোর সবগুলোই গনতান্ত্রিক৷ মুসলিম বিশ্বের ঊদাহরন দিলাম যে একটু আগে, এই দেশগুলোতেই গনতন্ত্রের খুব অভাব, আবার এগুলোর অনেকেই বিশ্বের দরিদ্রদেশগুলোর এক একটা৷ অনেকে তেল বিক্রি করে সাময়িকভাবে সম্পদশালী হয়েছে, তেল শেষ হলে এরা যে কোথায় যাবে বলার অপেক্ষা রাখে না৷
তো দেখা যাচ্ছে পরিস্কারভাবেই অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য উন্নতির সাথে মুক্তচিন্তা করার সুযোগ এবং গনতন্ত্রের ভীষন সরাসরি সম্পর্ক৷ আবার ঊল্টোটাও সত্যি৷ কারন গনতন্ত্র একটা ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া৷ রাজতন্ত্র বা হারেমতন্ত্র সে তুলনায় সহজ, এবং অবভিয়াস৷ মানুষ ছাড়া অন্যপ্রানীদের সামাজিক ব্যবস্থাতেও তাই, জোর যার মুল্লুক তার, সবার সমান অধিকারের ধারনা, এবং বাস্তবে সেটা নিশ্চিত করা আসলে অনেক কঠিন৷ একটা নির্দিষ্ট পরিমান প্রযুক্তিগত সাপোর্ট না থাকলে গনতন্ত্র ধরে রাখা কঠিন৷
ঠিক যে রকম হয়েছিল গ্রীক নগর সভ্যতার গনতন্ত্রের যুগে৷ আসলে এমনকি মধ্যযুগেও গনতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য, বিশ্বের করে বড় বড় সাম্রাজ্যে কোন ধরনের ইনফ্রস্ট্রাকচার ছিল না৷ সুতরাং কেউ তখন গনতন্ত্র নিয়ে হাজির হলেও কতদিন ধরে রাখতে পারত সন্দেহ আছে৷ এমনকি দু’শ বছর আগের ইউরোপের গনতন্ত্রের সাথে এখনকার ইউরোপের গনতন্ত্রের গুনগত পার্থক্য আছে৷ বিশেষ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে৷ এখন পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক স্বচ্ছ এবং তার কারন প্রযুক্তির সুবিধা৷ যেমন রেডিও-টিভি একাই গনতন্ত্রের জন্য ভীষন সহায়ক শক্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ বিভিন্ন দেশে যখন ক্যু হয় তখন আর্মি সবার আগে রেডিও টিভি দখল করে৷
সুতরাং দেখা যাচ্ছে গনতন্ত্রের প্রাথমিক সহায়ক শক্তি হচ্ছে প্রযুক্তি৷ প্রযুক্তির যতই প্রসার হচ্ছে গনতন্ত্রও তত ছড়িয়ে পড়ছে, এর একটা কারন বোধহয় প্রযুক্তি সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করে দিচ্ছে, কারন প্রযুক্তির প্রসারের একটা ফলাফল হচ্ছে, এটা সাধারন মানুষের ক্রমশ নাগালের মধ্যে চলে এসে সবাইকে সুযোগ করে দিচ্ছে জানার, বোঝার এবং মতামত প্রকাশ করার৷
এজন্য আমার ধারনা আমরা যখন নতুন কিছু করব বাংলাদেশকে নিয়ে, তখন প্রযুক্তিগত অবস্থানের দিকটা সবার আগে মাথায় রাখতে হবে৷ যেমন গনতন্ত্র নিজে কিন্তু বলে দিচ্ছে না যে ৪/৫ বছর পর পর আমাদেরকে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে, যাদের হাতে আমাদের ভাগ্য সমর্পন করতে হবে৷ বরং ঊল্টোটাই সত্যি গুটিকয়েক লোকের হাতেই যদি আমাদের ভাগ্য নির্ভর করে, তাহলে তো ঘুরে ফিরে সেই জমিদারী প্রথাই হচ্ছে, গনতন্ত্র থাকলো কই৷ পার্লামেন্টারী ব্যবস্থাটা অষ্টাদেশ শতাব্দির জন্য বেশী ঊপযোগী, বিশেষ করে রেডিও, টিভি, ফোন এসব প্রযুক্তি যখন ছিল না৷ ১৪ কোটি লোক নিয়ে তো আর সংসদ বসানো যায় না৷ সংসদ প্রথাটা সেজন্য একধরনের শর্টকাট৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে, সুতরাং কাঊকে প্রতিনিধি বানিয়ে সর্বেসর্বা করার প্রয়োজন নেই৷ গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি বেড়া কিভাবে আমাদের দেশে ক্ষেত খেয়ে ফেলে৷ সুতরাং সময় এসেছে অষ্টাদশ শতাব্দির প্রথা বাদ দিয়ে ২১শতকের ঊপযোগী একটা সিস্টেম দাড় করানো৷
আমরা একটা পোষা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি যে সত্যিই যদি বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা পাল্টানোর সুযোগ আসে তাহলে আমরা ঠিক কি করতাম৷ অথবা আরেকভাবে বললে যদি স্ক্র্যাচ থেকে ডিজাইন করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে বর্তমান অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা কেমন ব্যবস্থা চাই, যেন দেশের প্রগতির চাকাকে ত্বরান্বিত করা যায়, একুশ শতকে প্রথমার্ধেই (যেমন ২০২০ এর আগে) আমরা স্বল্পোন্নত দুর্নাম ঘোচাতে পারি৷ হিমু তার লেখাগুলো এখানে পোস্ট করছে, http://jongli.wordpress.com/, প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে৷
তো আজকের লেখার মূল প্রসঙ্গে আসি৷ বেশ কিছুদিন ধরেই আমার ধারনা হচ্ছে গনতন্ত্র আর প্রযুক্তিগত উন্নতির মধ্যে একটা সিম্বায়োটিক রিলেশনশীপ আছে৷ তার আগে বলে নেই আমরা উন্নয়ন বলতে যা বুঝি তা আসলে ঘুরে ফিরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন৷ যেমন গ্রামে বেড়াতে গিয়ে যদি দেখি গতবছরের কাচা রাস্তা এবার পাকা হয়েছে তখন মনে হয় কিছু উন্নতি হয়েছে, আবার যেমন ৭০ দশকে আমাদের যে খাদ্য ঘাটতি ছিল টা আর এখন নেই, যদিও দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে, এটাও সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির জন্য৷ আসলে মানুষ হিসেবে অন্য প্রানীর সাথে আমাদের একটা মৌলিক পার্থক্য প্রযুক্তির ব্যবহার আর তার মাধ্যমে পরিবেশকে ক্রমশ নিজের অনুকুলে ব্যবহার করার ক্ষমতা৷ জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার আসলে সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি, বা আরো সংক্ষেপে বললে উন্নয়নের মূল ঊপকরন হচ্ছে knowledge৷
খেয়াল করলে দেখব আধুনিক বিশ্বে যেসব দেশ তাদের knowledge base বাড়িয়েছে তারাই আসলে ঊন্নতি করছে৷ উদাহরন দেই, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর ৫% লোক থাকে, কিন্তু বিশ্বের ২৫% বা তারও বেশী রিসার্চ হয় যুক্তরাষ্ট্রে, ফলাফল হিসেবে সমসাময়িক সমস্ত বড় বড় যুগান্তকারী আবিস্কার, আর প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ার ঊদ্ভাবন গুলো ঘুরে ফিরে বেশীরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে হয়৷ যেমন এই যে ইন্টারনেট প্রযুক্তি, ইনফরমেশন টেকনোলজি প্রায় পুরোটার জন্যই কৃতিত্ত্ব পাবে যুক্তরাষ্ট্র আর তার গবেষকরা৷ আমাদের দেশে খাদ্য বিপ্লবের কথা যে বললাম একটু আগে (এবং জেনেটিকালী পরিবর্তিত শস্য), তাও কিন্তু শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পরে তাদের অর্থায়নে৷ বড় বড় টেকনোলজি কম্পানী যেমন ইন্টেল, মাইক্রোসফ্ট বা গুগলও ওখান থেকেই শুরু করে৷ আবার মুসলিম দেশগুলোতে যেমন বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫% বা তারও হয়তো বেশী আছে৷ কিন্তু বর্তমান বিশ্বের অগ্রগতিতে এসব দেশের অবদান ৫%ও কিনা সন্দেহ৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিছু কিছু দেশ কেন সভ্যতার knowledge base অনেক অবদান রাখছে আবার কেউ কেউ কিছুই করছে না৷ যেমন বাংলাদেশ, গত ৩৫ বছরে বিশ্বের দরবারে আমাদের অবদান কি? আমরা যদি এই ৩৫ বছর না থাকতাম দুনিয়ার ভীষন কোন ক্ষতি হতো বলে মনে হয় না৷ আমাদের দেশে কেন টমাস এডিসন, বিল গেটস, বা রিচার্ড ডকিনসরা জন্মায় না, যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি তাও পাশ্চাত্য থেকে ধার করা জ্ঞান দিয়ে৷ আমাদের ঊদ্ভাবনী ক্ষমতা কি এতই কম৷
এর ঊত্তর ঘাটতে গিয়ে মনে হলো, মধ্যযুগে ইউরোপেও বহুদিন সভ্যতা আটকে ছিল৷ আবার ঠিক রেনেসার পরেই ওদের চাকা তরতর করে ঘুরতে লাগলো৷ অসংখ্য নতুন আবিস্কার হলো, নিঊটন, হাইগেন্স, হুক এসময়েরই লোক৷ এর পর একে একে স্টীম এঞ্জিনের আবিস্কার, আর তার পর ম্যাসিভ ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালাইজেশন৷ হঠাত্ করে এই যে ফ্লাড গেট খুললো এর পেছনে আসলে ছিল ইউরোপে মুক্তচিন্তার আবির্ভাব, রেনেসার মাধ্যমে, চার্চের প্রভাব ক্রমশ কমে যেতে থাকলো, ধর্ম যে শেকল দিয়ে মানুষকে বেধে রেখেছিল তা আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যেতে বাধ্য হলো৷ আর মুক্তচিন্তার শেকড় জন্মদিলো গনতন্ত্রের৷ রাজতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র, ঈশ্বরতন্ত্রের তিরোধানে গনতন্ত্রের আবির্ভাবেই কিন্তু ইউরোপ বাকি বিশ্বকে যোজন যোজন পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল৷ আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র গনতন্ত্রের দ্বিতীয় দফার পুরোনো দেশগুলোর একটা (বাকীগুলোর মধ্যে আছে বৃটেন, ফ্রান্স ইত্যাদি)৷
এমনকি এখনকার বিশ্বের ধনী এবং ঊন্নত দেশগুলোর সবগুলোই গনতান্ত্রিক৷ মুসলিম বিশ্বের ঊদাহরন দিলাম যে একটু আগে, এই দেশগুলোতেই গনতন্ত্রের খুব অভাব, আবার এগুলোর অনেকেই বিশ্বের দরিদ্রদেশগুলোর এক একটা৷ অনেকে তেল বিক্রি করে সাময়িকভাবে সম্পদশালী হয়েছে, তেল শেষ হলে এরা যে কোথায় যাবে বলার অপেক্ষা রাখে না৷
তো দেখা যাচ্ছে পরিস্কারভাবেই অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য উন্নতির সাথে মুক্তচিন্তা করার সুযোগ এবং গনতন্ত্রের ভীষন সরাসরি সম্পর্ক৷ আবার ঊল্টোটাও সত্যি৷ কারন গনতন্ত্র একটা ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া৷ রাজতন্ত্র বা হারেমতন্ত্র সে তুলনায় সহজ, এবং অবভিয়াস৷ মানুষ ছাড়া অন্যপ্রানীদের সামাজিক ব্যবস্থাতেও তাই, জোর যার মুল্লুক তার, সবার সমান অধিকারের ধারনা, এবং বাস্তবে সেটা নিশ্চিত করা আসলে অনেক কঠিন৷ একটা নির্দিষ্ট পরিমান প্রযুক্তিগত সাপোর্ট না থাকলে গনতন্ত্র ধরে রাখা কঠিন৷
ঠিক যে রকম হয়েছিল গ্রীক নগর সভ্যতার গনতন্ত্রের যুগে৷ আসলে এমনকি মধ্যযুগেও গনতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য, বিশ্বের করে বড় বড় সাম্রাজ্যে কোন ধরনের ইনফ্রস্ট্রাকচার ছিল না৷ সুতরাং কেউ তখন গনতন্ত্র নিয়ে হাজির হলেও কতদিন ধরে রাখতে পারত সন্দেহ আছে৷ এমনকি দু’শ বছর আগের ইউরোপের গনতন্ত্রের সাথে এখনকার ইউরোপের গনতন্ত্রের গুনগত পার্থক্য আছে৷ বিশেষ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে৷ এখন পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক স্বচ্ছ এবং তার কারন প্রযুক্তির সুবিধা৷ যেমন রেডিও-টিভি একাই গনতন্ত্রের জন্য ভীষন সহায়ক শক্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ বিভিন্ন দেশে যখন ক্যু হয় তখন আর্মি সবার আগে রেডিও টিভি দখল করে৷
সুতরাং দেখা যাচ্ছে গনতন্ত্রের প্রাথমিক সহায়ক শক্তি হচ্ছে প্রযুক্তি৷ প্রযুক্তির যতই প্রসার হচ্ছে গনতন্ত্রও তত ছড়িয়ে পড়ছে, এর একটা কারন বোধহয় প্রযুক্তি সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করে দিচ্ছে, কারন প্রযুক্তির প্রসারের একটা ফলাফল হচ্ছে, এটা সাধারন মানুষের ক্রমশ নাগালের মধ্যে চলে এসে সবাইকে সুযোগ করে দিচ্ছে জানার, বোঝার এবং মতামত প্রকাশ করার৷
এজন্য আমার ধারনা আমরা যখন নতুন কিছু করব বাংলাদেশকে নিয়ে, তখন প্রযুক্তিগত অবস্থানের দিকটা সবার আগে মাথায় রাখতে হবে৷ যেমন গনতন্ত্র নিজে কিন্তু বলে দিচ্ছে না যে ৪/৫ বছর পর পর আমাদেরকে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে, যাদের হাতে আমাদের ভাগ্য সমর্পন করতে হবে৷ বরং ঊল্টোটাই সত্যি গুটিকয়েক লোকের হাতেই যদি আমাদের ভাগ্য নির্ভর করে, তাহলে তো ঘুরে ফিরে সেই জমিদারী প্রথাই হচ্ছে, গনতন্ত্র থাকলো কই৷ পার্লামেন্টারী ব্যবস্থাটা অষ্টাদেশ শতাব্দির জন্য বেশী ঊপযোগী, বিশেষ করে রেডিও, টিভি, ফোন এসব প্রযুক্তি যখন ছিল না৷ ১৪ কোটি লোক নিয়ে তো আর সংসদ বসানো যায় না৷ সংসদ প্রথাটা সেজন্য একধরনের শর্টকাট৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে, সুতরাং কাঊকে প্রতিনিধি বানিয়ে সর্বেসর্বা করার প্রয়োজন নেই৷ গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি বেড়া কিভাবে আমাদের দেশে ক্ষেত খেয়ে ফেলে৷ সুতরাং সময় এসেছে অষ্টাদশ শতাব্দির প্রথা বাদ দিয়ে ২১শতকের ঊপযোগী একটা সিস্টেম দাড় করানো৷
Tuesday, April 3, 2007
আর্ট লাইফ-১
সিঙ্গুলারিটি নিয়ে লেখা শুরু করেছি হালে, কিন্তু পুরো ব্যাপারটা আসলে বেশ জটিল, এখন মনে হচ্ছে টেকনিকাল অংশগুলো বাদ দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে লেখা বেশ কঠিন৷ সে যাক, আগে একটা সময় ছিল ব্লগে আমরা বিবর্তন বাদ নিয়ে প্রচুর ঘাপলা করতাম, এখন সে ধরনের বিতর্ক কম, অনেক নতুন লেখক এসে ফ্রন্টপেজ কেমন বাজারের মতো অবস্থা৷ আর সেই শোমচৌ, অপবাক, মুখফোড়ও নাই, অন্তত দিনান্তে তাদের পোস্ট দেখা যায় না৷ তো যখন ঐ বিতর্ক হতো তখন একটা প্ল্যান ছিল বিবর্তন বাদের প্রক্রিয়াটা হাতে কলমে করে দেখানো, আসলে এটা নতুন কিছু না, আর্টিফিশিয়াল লাইফ নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ হচ্ছে, আর প্রকৃতির বিবর্তনবাদের সূত্র এমন গোপন কিছু না যে রিক্রিয়েট করা যাবে না৷
কার্ল সিমস মনে হয় প্রথম দিককার একজন যারা আর্টিফিশিয়াল লাইফ নিয়ে প্রজেক্ট করেছেন সেই ৮০র দশকে৷ তবে এখনকার সময়ে জেনেটিক আ্যলগরিদমের প্রয়োগ অবশ্য অন্য জায়গায়, যেমন জেট ইঞ্জিন ডিজাইন করা, স্টক মার্কেট এনালাইসিস ইত্যাদি৷ আগের লেখায় লিখছি হিমু আর আমি একটা প্ল্যান করতেছি GA দিয়ে ছড়া লেখানো যায় কি না৷
তবে তার আগে আরও কিছু ছোট প্রজেক্ট করে হাত মকশো করছি৷ যেমন এখানে যেটা দিলাম, চাইলে ডাউনলোড করতে পারবেন এখান থেকে৷ আর্টলাইফ আসলে একটা লিমিটেড এনভায়রনমেন্টে বিবর্তনবাদের এক্সপেরিমেন্ট৷ প্রোগ্রামটা চালিয়ে সিমুলেশন শুরু করলে randomly বেশ কিছু খাবারের সোর্স তৈরী হবে (ধরা যাক এগুলো সালফার প্রস্রবন, ছবিতে বেগুনী রঙের) আর শুরুতে বেশ কয়েকটি প্রানী ছেড়ে দেয়া হবে৷ শুরুর প্রানীগুলো বেশ সহজিয়া একটা মাথা, একটা পাকস্থলী, আর একজোড়া পা৷ ওরা চোখ দিয়ে বেশ কিছু দুর দেখতে পারে৷ শুরুতে সবার ক্রোমোজোম ১০ টি করে, প্রত্যেক ব্লকের জন্য তিনটি আর একটা মাস্টার ক্রোমোজোম৷ খাবার খেয়ে একটা পরিমানের বেশী পেট ভরলে প্রানীগুলো বংশ বিস্তার করে, বংশ বিস্তার অযৌন, মানে ক্লোনিং যেমন ব্যাক্টেরিয়া বা এমিবা করে থাকে৷ তবে প্রতি প্রজন্মেই বেশ কিছু জিন এ মিউটেশন হবে (এখানে আমি ঠিক করেছি ১০%, একটু বেশী অবশ্য)৷ মিউটেশন হচ্ছে বিবর্তনের চালিকাশক্তি৷ আর যেহেতু খাবারের উত্স সীমিত ন্যাচারাল সিলেকশন অটোমেটিক শুরু হয়ে যাবে৷ আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে বেশ কিছুক্ষন না খেয়ে থাকলে প্রানীগুলো মারা যায়৷
তো এভাবে মিনিটখানেক চালালেই দেখা যাবে এভ্যুলুশন ইন এ্যাকশন৷ কখনও এমন প্রানী তৈরী হয় যাদের অনেক জোড়া পা, এরা খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে খাবার খেয়ে আসে, আরেকদল আবার একাধিক পাকস্থলী বানিয়ে নিয়েছে যাতে একবারে অনেক খাবার খাওয়া যায়, আরেক দল একাধিক মাথা বানিয়েছে যেন অনেক দুর থেকে খাবার খুজে পায় ইত্যাদি৷ সবচেয়ে মজার হচ্ছে এর মধ্যে আরেকদল পা ঝেড়ে ফেলে শুধু মাথা আর পেট নিয়ে জন্মেছে, এবং এরা বেশ সফল, এরা যেটা করছে ঠিক একটা প্রস্রবনের সামনে ঘাটি গেরে খাবার খাচ্ছে আর সংখ্যা বাড়াচ্ছে, যেহেতু নড়াচড়ার দরকার নেই তাই পা বাদ দিয়ে দিয়েছে, সুবিধাটা হচ্ছে ছোট শরীর হওয়ায় খাবার লাগে কম, আর জন্মায় তাড়াতাড়ি ইফেক্টিভলি এরা হচ্ছে একধরনের উদ্ভিদ, আসলে আমার অজান্তেই এগুলো তৈরী হয়েছে৷ আমার ধারনা ছিল সবচেয়ে সফল প্রানী হবে ভীষন জটিল কোনটা, দেখা যাচ্ছে আসলে তা না, বরং অনেকে সরলীকৃত হয়ে বেশী সফল হচ্ছে৷
পরের উইকএন্ডে প্ল্যান হচ্ছে আরো জেনেটিক ডাইভার্সিটি যোগ করা, একই সাথে ওদের সারভাইভাল আরো কঠিন করে দিতে হবে যেন জেনেটিক এ্যালগরিদম আরো সৃজনশীল সমাধান বের করতে পারে৷
Monday, April 2, 2007
সিঙ্গুলারিটি
একটা লেখায় আগে মৃত্যু নিয়ে লিখেছিলাম, বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বানী, অথবা আশার কথা ছিল, কিন্তু কিসের ভিত্তিতে লিখলাম সেটা পরিষ্কার ছিল না৷ আসলে পুরোটা সময় নিয়ে লেখা দরকার, ভালভাবে লেখার আগে আশে পাশের আরো কয়েকটা ব্যপার আলোচনা না করলে অসম্পুর্ন থেকে যাবে৷ আপাত দৃষ্টিতে সম্পর্কহীন কয়েকটা বিষয়ের মধ্যে সংযোগটা দেখানো দরকার, তাহলে হয়তো পরবর্তি কয়েক দশকে আমাদের সম্ভাব্য গতিবিধি নিয়ে যেগুলো তুলে ধরব সেটা যুক্তিসঙ্গত মনে হবে৷
সায়েন্সের বেশ কিছু আলাদা ধারা অনেক সময় অভিন্ন লক্ষে গিয়ে পৌছায়, যদিও প্রাথমিক ঊদ্দ্যেশ্য ভিন্ন ছিল৷ ঠিক আজকে ২০০৭ এ যদি বিশ্নেষন করি তাহলে জেনেটিক্স, ন্যানো এঞ্জিনিয়ারিং আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে যথেষ্ট আলাদা মনে হবে৷ সত্যিকার অর্থে খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক্স বিষয়টি এঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে৷ আবার ন্যানোটেকনোলজি যেমন সচরাচর সরাসরি কম্পিউটার সায়েন্সের বিষয় হিসেবে ধরা হয় না৷ রোবোটিক্স সে তুলনায় কম্পিউটার সায়েন্সের পুরোনো বিষয়গুলোর একটা, একসময় বিশেষ করে ৭০ এর দশকে যতটা প্রমিজিং ফিল্ড ছিল হয়তো এখন পাবলিক পারসেপশনে এর জৌলুশ কিছুটা কমে গিয়েছে বলেই মনে হয়৷ পাবলিকের কথা যখন চলেই আসল আরও কিছু কথা না বললেই নয়৷ যেমন স্পেস (মহাশুন্য) এক্সপ্লোরেশন, ষাট আর সত্তুর দশকে আমেরিকা, রাশিয়ার মধ্যে যখন প্রতিযোগিতা যখন তুঙ্গে তখন সাধারন ধারনা ছিল কয়েক দশকেই মানুষ গ্রহে গ্রহে বসতি স্থাপন করবে৷ আজকে ৩০ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি এখনও মঙ্গল গ্রহেই যাওয়া হয়নি৷ আবার ৭০ দশকে ইনফরমেশন টেকনোলজি যে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিল পরের ২০ বছর গোটা পৃথিবী দখলে নেয়ার জন্য সেটা কিন্তু পরিস্কার ছিল না৷
আবার যেমন ইন্টারনেট, ৩০ বছরের বেশী সময় ধরেই আছে, মুলত মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু ইন্টারনেট যে এমন বিপ্লব ঘটাবে গোটা দুনিয়া জুড়ে বেশীরভাগের ধারনায় ছিল না৷ ৭০ বা ৮০র দশকে তৈরী তেমন কোন সায়েন্স ফিকশনেই ইন্টারনেটের উল্লেখ নেই৷ প্রথমে বিপ্লবটা ছিল গবেষকদের জন্য, তারপর ৯০ এর দশকে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য আর এখন ইন্টারনেট স্মরনকালের সবচেয়ে বড় সামাজিক বিপ্লব ঘটাচ্ছে৷ তবে দুএকজন লোক আছেন যারা তাদের ভবিষ্যদ্বানী মিলাতে পেরেছেন৷ অবশ্য এরা কোন ওরাকল নন (ম্যাট্রিক্সে ছিল), যেমন রে কুর্যওয়াইল৷ অবশ্য সিঙ্গুলারিটির সম্ভাব্যতা বোঝার জন্য সবসময় ফুলটাইম গবেষক হওয়ার দরকার নেই৷ রে’র স্পেকুলেশন পুরোটা হয়তো মিলবে না, প্রয়োজনও নেই, কিন্তু যেটা পরিস্কার তা হচ্ছে সিঙ্গুলারিটি আসছে, আমাদের বেশীর ভাগের জীবদ্দশাতেই ঘটবে, হয়তো ২০৩০ এ, হয়তো এর আগেই, নাহলে এর অল্প পরে৷
৯০এর দশকে ঠিক যেমন বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য হঠাত্ করেই কয়েকদশকের পুরোনো ইন্টারনেট দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল, সিঙ্গুলারিটিও ঠিক এরকম সায়েন্সের আলাদা কয়েকটা শাখার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে৷ তার মধ্যে প্রধান তিনটি হচ্ছে Genetics, Nanotechnology, আর Robotics (GNR)৷ আমার ধারনা শেষমেশ GNR এর R মুলধারায় পরিনত হবে৷
এখন বলা যাক সিঙ্গুলারিটি আসলে কি৷ সিঙ্গুলারিটি আসলে আসলে টেকনোলজির এমন একটা পর্যায় যখন মানুষের তৈরী যন্ত্রের বুদ্ধি মানুষের চেয়ে বেশী হবে৷ একটু অস্বাভাবিক শোনায় বটে, তবে ভয়ের কিছু নেই৷ অবশ্য যন্ত্র এর মধ্যেই অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ আমাদের চেয়ে ভালোভাবে করে৷ যেকোন ক্যালকুলেটর আমাদের যে কারও চেয়ে নির্ভুলভাবে এবং দ্রুতগতিতে হিসাব করতে পারে৷ একটা সময় ছিল দাবার মতো বুদ্ধির খেলা শুধু মানুষ করতে পারে বলে কল্পনা করা হতো৷ IBM এই উপলক্ষে একটা বড় প্রজেক্ট হাতে নেয় (Deep Blue), ১৯৯৭ এ তখনকার চ্যাম্পিয়ন গ্যারী কাসপারভ ডীপ ব্লুর কাছে হেরে যান৷ পরিস্থিতি এখন এমন যে পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে দাবাতে কম্পিউটারকে (ডীপ ব্লু) হারাতে পারে৷ কাসপারভ ম্যাচের পরে বলেছিলেন যে মেশিন এমন সব ক্রিয়েটিভ চাল দিচ্ছিল যে কাসপারভ বুঝতে পারছিলেন না৷ এর পর অবশ্য আরও ১০ বছর পার হয়েছে, মুরের সুত্র অনুযায়ী মেশিন জ্যামিতিক গতিতে তার বুদ্ধি বাড়িয়েছে৷ মেশিন নিয়মিত এমন সব সার্কিট ডিজাইন করে যা মানুষের পক্ষে ঊদ্ভাবন করা দুঃসাধ্য৷ তবে সব ব্যাপারে মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে আরও সময় লাগবে, হয়তো আরো ২৫ বছর, ওই সময়টাই আমাদের সভ্যতা সিঙ্গুলারিটিতে পৌছবে৷ মানুষের ১০ হাজার বছরের সভ্যতার সবচেয়ে বড় ঘটনা হবে সিঙ্গুলারিটি৷ মানব সভ্যতার একটা বস্তুগত পরিবর্তন হবে, হয়তো পরবর্তি অংশ বায়োলজিকাল মানুষের চেয়ে যন্ত্রের সভ্যতা হিসেবে অভাবনীয় গতিতে সামনে যেতে থাকবে৷ তবে পরিবর্তনটা হঠাত করে হবে না, আস্তে আস্তে হতে হতে আমাদের গা সহা হয়ে যাবে, যে যেদিন হবে তার আগেই বুঝে যাব যে এটা অবধারিত ছিল৷
পরের লেখা গুলোয় আমি বিস্তৃত করব সিঙ্গুলারিটিতে কিভাবে পৌছানো যায়, আমাদের কি লাভ৷ তার আগ পর্যন্ত অবশ্য বেচে থাকা খুবই জরুরী, ২৫ বছর এমন দুরে নয়, সুতরাং জীবনের যত্ন নেয়া দরকার৷ আর প্রস্তুতিও নেয়া দরকার৷ হিমু আর আমি একটা প্রজেক্ট হাতে নিলাম এবার, মেশিনকে দিয়ে বাংলা ছড়া লেখাব, ৪/৫ লাইনের, সৃজনশীল ছড়া, পুরোপুরি মেশিনের লেখা৷ অবশ্য এখন মনে হচ্ছে ৪/৫ লাইন বের করতে আমার ডুয়াল কোর আড়াই গিগা হার্জের মেশিনের কয়েকদিন লাগবে৷ তাতে অসুবিধা নেই, আমার হাতে সময় আছে৷
সায়েন্সের বেশ কিছু আলাদা ধারা অনেক সময় অভিন্ন লক্ষে গিয়ে পৌছায়, যদিও প্রাথমিক ঊদ্দ্যেশ্য ভিন্ন ছিল৷ ঠিক আজকে ২০০৭ এ যদি বিশ্নেষন করি তাহলে জেনেটিক্স, ন্যানো এঞ্জিনিয়ারিং আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে যথেষ্ট আলাদা মনে হবে৷ সত্যিকার অর্থে খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক্স বিষয়টি এঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে৷ আবার ন্যানোটেকনোলজি যেমন সচরাচর সরাসরি কম্পিউটার সায়েন্সের বিষয় হিসেবে ধরা হয় না৷ রোবোটিক্স সে তুলনায় কম্পিউটার সায়েন্সের পুরোনো বিষয়গুলোর একটা, একসময় বিশেষ করে ৭০ এর দশকে যতটা প্রমিজিং ফিল্ড ছিল হয়তো এখন পাবলিক পারসেপশনে এর জৌলুশ কিছুটা কমে গিয়েছে বলেই মনে হয়৷ পাবলিকের কথা যখন চলেই আসল আরও কিছু কথা না বললেই নয়৷ যেমন স্পেস (মহাশুন্য) এক্সপ্লোরেশন, ষাট আর সত্তুর দশকে আমেরিকা, রাশিয়ার মধ্যে যখন প্রতিযোগিতা যখন তুঙ্গে তখন সাধারন ধারনা ছিল কয়েক দশকেই মানুষ গ্রহে গ্রহে বসতি স্থাপন করবে৷ আজকে ৩০ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি এখনও মঙ্গল গ্রহেই যাওয়া হয়নি৷ আবার ৭০ দশকে ইনফরমেশন টেকনোলজি যে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিল পরের ২০ বছর গোটা পৃথিবী দখলে নেয়ার জন্য সেটা কিন্তু পরিস্কার ছিল না৷
আবার যেমন ইন্টারনেট, ৩০ বছরের বেশী সময় ধরেই আছে, মুলত মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু ইন্টারনেট যে এমন বিপ্লব ঘটাবে গোটা দুনিয়া জুড়ে বেশীরভাগের ধারনায় ছিল না৷ ৭০ বা ৮০র দশকে তৈরী তেমন কোন সায়েন্স ফিকশনেই ইন্টারনেটের উল্লেখ নেই৷ প্রথমে বিপ্লবটা ছিল গবেষকদের জন্য, তারপর ৯০ এর দশকে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য আর এখন ইন্টারনেট স্মরনকালের সবচেয়ে বড় সামাজিক বিপ্লব ঘটাচ্ছে৷ তবে দুএকজন লোক আছেন যারা তাদের ভবিষ্যদ্বানী মিলাতে পেরেছেন৷ অবশ্য এরা কোন ওরাকল নন (ম্যাট্রিক্সে ছিল), যেমন রে কুর্যওয়াইল৷ অবশ্য সিঙ্গুলারিটির সম্ভাব্যতা বোঝার জন্য সবসময় ফুলটাইম গবেষক হওয়ার দরকার নেই৷ রে’র স্পেকুলেশন পুরোটা হয়তো মিলবে না, প্রয়োজনও নেই, কিন্তু যেটা পরিস্কার তা হচ্ছে সিঙ্গুলারিটি আসছে, আমাদের বেশীর ভাগের জীবদ্দশাতেই ঘটবে, হয়তো ২০৩০ এ, হয়তো এর আগেই, নাহলে এর অল্প পরে৷
৯০এর দশকে ঠিক যেমন বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য হঠাত্ করেই কয়েকদশকের পুরোনো ইন্টারনেট দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল, সিঙ্গুলারিটিও ঠিক এরকম সায়েন্সের আলাদা কয়েকটা শাখার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে৷ তার মধ্যে প্রধান তিনটি হচ্ছে Genetics, Nanotechnology, আর Robotics (GNR)৷ আমার ধারনা শেষমেশ GNR এর R মুলধারায় পরিনত হবে৷
এখন বলা যাক সিঙ্গুলারিটি আসলে কি৷ সিঙ্গুলারিটি আসলে আসলে টেকনোলজির এমন একটা পর্যায় যখন মানুষের তৈরী যন্ত্রের বুদ্ধি মানুষের চেয়ে বেশী হবে৷ একটু অস্বাভাবিক শোনায় বটে, তবে ভয়ের কিছু নেই৷ অবশ্য যন্ত্র এর মধ্যেই অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ আমাদের চেয়ে ভালোভাবে করে৷ যেকোন ক্যালকুলেটর আমাদের যে কারও চেয়ে নির্ভুলভাবে এবং দ্রুতগতিতে হিসাব করতে পারে৷ একটা সময় ছিল দাবার মতো বুদ্ধির খেলা শুধু মানুষ করতে পারে বলে কল্পনা করা হতো৷ IBM এই উপলক্ষে একটা বড় প্রজেক্ট হাতে নেয় (Deep Blue), ১৯৯৭ এ তখনকার চ্যাম্পিয়ন গ্যারী কাসপারভ ডীপ ব্লুর কাছে হেরে যান৷ পরিস্থিতি এখন এমন যে পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে দাবাতে কম্পিউটারকে (ডীপ ব্লু) হারাতে পারে৷ কাসপারভ ম্যাচের পরে বলেছিলেন যে মেশিন এমন সব ক্রিয়েটিভ চাল দিচ্ছিল যে কাসপারভ বুঝতে পারছিলেন না৷ এর পর অবশ্য আরও ১০ বছর পার হয়েছে, মুরের সুত্র অনুযায়ী মেশিন জ্যামিতিক গতিতে তার বুদ্ধি বাড়িয়েছে৷ মেশিন নিয়মিত এমন সব সার্কিট ডিজাইন করে যা মানুষের পক্ষে ঊদ্ভাবন করা দুঃসাধ্য৷ তবে সব ব্যাপারে মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে আরও সময় লাগবে, হয়তো আরো ২৫ বছর, ওই সময়টাই আমাদের সভ্যতা সিঙ্গুলারিটিতে পৌছবে৷ মানুষের ১০ হাজার বছরের সভ্যতার সবচেয়ে বড় ঘটনা হবে সিঙ্গুলারিটি৷ মানব সভ্যতার একটা বস্তুগত পরিবর্তন হবে, হয়তো পরবর্তি অংশ বায়োলজিকাল মানুষের চেয়ে যন্ত্রের সভ্যতা হিসেবে অভাবনীয় গতিতে সামনে যেতে থাকবে৷ তবে পরিবর্তনটা হঠাত করে হবে না, আস্তে আস্তে হতে হতে আমাদের গা সহা হয়ে যাবে, যে যেদিন হবে তার আগেই বুঝে যাব যে এটা অবধারিত ছিল৷
পরের লেখা গুলোয় আমি বিস্তৃত করব সিঙ্গুলারিটিতে কিভাবে পৌছানো যায়, আমাদের কি লাভ৷ তার আগ পর্যন্ত অবশ্য বেচে থাকা খুবই জরুরী, ২৫ বছর এমন দুরে নয়, সুতরাং জীবনের যত্ন নেয়া দরকার৷ আর প্রস্তুতিও নেয়া দরকার৷ হিমু আর আমি একটা প্রজেক্ট হাতে নিলাম এবার, মেশিনকে দিয়ে বাংলা ছড়া লেখাব, ৪/৫ লাইনের, সৃজনশীল ছড়া, পুরোপুরি মেশিনের লেখা৷ অবশ্য এখন মনে হচ্ছে ৪/৫ লাইন বের করতে আমার ডুয়াল কোর আড়াই গিগা হার্জের মেশিনের কয়েকদিন লাগবে৷ তাতে অসুবিধা নেই, আমার হাতে সময় আছে৷
Sunday, April 1, 2007
বাংলাদেশের জন্য গনতন্ত্র ২.০
বাংলাদেশ এখন একটা অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, ভালো না খারাপ তা এখন বলা মুস্কিল হয়তো আগামী বছর বা তারও পরের বছর বলতে পারব৷ কিন্তু দেশের জন্য বিশেষ করে সাধারন মানুষের জন্য soul searching এর সুযোগ যে এসেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়৷ ৭১ এ স্বাধীন হয়ে ৩ বছর গনতন্ত্র তার পর ১৫ বছর সামরিক শাসন তারপর আবার ১৫ বছর গনতন্ত্র৷ বিশ্বের অন্যান্য গনতান্ত্রিক দেশগুলো যেমন অর্থনৈতিক, সামাজিক সাফল্যের মুখ দেখেছে, কোন কারনে আমরা ঠিক অতটা পারিনি৷ একদম হয় নি তাও না৷ আসলে এত সমস্যার মধ্যেও গত ১৫ বছরেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে, আগের ২০ বছরে এর ধারে কাছেও হয় নি৷ কিন্তু ১৫ বছরে যখন প্রবৃদ্ধি ৫ রাখতে আমরা হিমশিম খাচ্ছিলাম তখন পাশের দেশ ভারত ১০ ছুই ছুই করছিল৷ অন্যদিকে দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের দ্বিমুখী আক্রমনে জনগন হিসেবে আমরা সন্তষ্ট যে না বলাই বাহুল্য৷
যুক্তরাজ্যের চেয়ে আমাদের গনতন্ত্র সাংবিধানিক ভাবে ভীষনভাবে আলাদা নয়, ভারতের সাথেও মিল আছে৷ আসলে সব গনতান্ত্রিক দেশগুলোর শাসন ব্যবস্থা ঘুরেফিরে কাছাকাছি৷ কিন্তু তাহলে ফলাফলে এত পার্থক্য কেন? আমাদের জনপপ্রতিনিধি হয় পিন্টু, লালু, ফালু, হাজারী, শামীম ওসমানরা৷ এরা নিজেরা গনতন্ত্র কতটুকু বুঝে বা বিশ্বাস করে বলা মুস্কিল৷
আসলে গনতন্ত্রের সংজ্ঞায় ঠিক পরিস্কার করে বলা নেই গনতন্ত্র কিভাবে implement করতে হবে৷ হতে পারে সরাসরি মতামত নিয়ে (যেমন ভোট), হতে পারে প্রতিনিধির মাধ্যমে (যেমন সাংসদ একজন প্রতিনিধি)৷ তার মানে গনতন্ত্রে সাধারন মানুষের মনোভাবের প্রতিফলনটাই ঊদ্দ্যেশ্য হলেও ঠিক কিভাবে সেটা করা হবে তা নিয়ে অনেক টেকনিকাল সমস্যা আছে৷
টেকনিকাল সমস্যা নিয়ে আরেকটু গভীরে যাই৷ যেমন আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো গনতান্ত্রিক দেশগুলোর একটা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, এখানে ২০০০ সালের নির্বাচনে আল গোর সবচেয়ে বেশী ভোট পেলেও ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেমের মার প্যাচে বুশকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়৷ যদিও গনতন্ত্রের সংজ্ঞা অনুযায়ী আল গোরেরই নির্বাচিত হওয়া উচিত ছিল৷ এটা ঠিক নতুন কিছু না বাংলাদেশেও ১৯৯১ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট ভোটে সবচেয়ে বেশী পেয়েছিল, কিন্তু আসন ছিল বিএনপির বেশী৷ অন্যান্য দেশের ঊদাহরণও টানা যেতে পারে৷ আবার নির্বাচন ছাড়াও অনেক সময় টেকনিকালিটির কারনে গনতান্ত্রিক দেশে জনগনের মতামতের বিরুদ্ধে শাসক গোষ্ঠী অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বৈধ ভাবেই৷ আমাদের দেশে তো হরহামেশাই সেটা হয়, বা হয়েছে যেমন সাংসদদের কোটায় শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানীর আইন, আইন হিসেবে সম্পুর্ন বৈধ, কিন্তু দেশের মানুষের সমর্থন কি ছিল? মনে হয় না৷ তাহলে এ ধরনের আইনকে নিশ্চয়ই লিংকনের গনতন্ত্রের মুল চেতনার সাথে সংগতিপুর্ন ধরা যায় না, অথচ সাংবিধানিক ভাবে এসব আইন সম্পুর্ন বৈধ৷ লিংকনের দেশেও এরকম উদাহরন আছে৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এসব আপাত অগনতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুযোগ কেন আছে৷ যেমন যুক্তরাষ্ট্রে কেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি ভোটে না হয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ দিয়ে হচ্ছে৷ কারণ হচ্ছে টেকনিকাল সমস্যা৷ আড়াইশ বছর আগে টেলিফোন, ক্যালকুলেটর বা কম্পিঊটার ছিল না৷ যুক্তরাষ্ট্রের মত বড় দেশে এত রাজ্যের সবার ভোট সরাসরি হিসাব করা কঠিন ছিল৷ সে জন্য শর্টকাট হিসেবে ইলেক্টোরাল কলেজ৷ আবার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য জনগনের মতামত বারবার নেয়া কঠিন ছিল, বিশেষ করে টেলিফোন/কম্পিউটারের অনুপস্থিতিতে, সুতরাং গনতন্ত্র কাটছাট করে এমনভাবে implement করা হল যেখানে সরাসরি জন গনের বদলে তাদের প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নেবেন (যেমন কংগ্রেসম্যান বা সিনেটর)৷
ঠিক এইখানেই সমস্যা৷ বাংলাদেশের মতো দেশে জনপ্রতিনিধি (সাংসদ) নির্বাচিত হয়ে আসলে বুঝতেই পারেন না তার দ্বায়িত্ব কি? তাদের অনেকের ধারনা তারা এলাকার ইজারা পেয়েছেন ৫ বছরের জন্য৷ সুতরাং জন গনের মতামত সংসদে প্রতিফলিত করার প্রয়োজনও বোধ করেন না৷ এমনকি আমরা যদি ভাল সব সাংসদ ভবিষ্যতে খুজেও পাই তাহলেও এর সমাধান হবে না৷ একটা সংসদীয় এলাকায় যদি ৫ লাখ লোক থাকে, আইন প্রনয়নের সময় এই ৫ লাখ লোকের মতামত নেয়া আসলে কঠিন৷ সত্ ও যোগ্য সাংসদ থাকলেও যেটা হবে তারা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের যেটা ভাল মনে হবে সেই সিদ্ধান্তই নেবেন, অথবা পার্টি লাইনে ভোট দেবেন (যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সময়ই যেটা হয়), সুতরাং জন গনের মতামত সরাসরি প্রতিফলনের সুযোগ আসলে কম৷
আসলে ঘটনা হচ্ছে এই জনপ্রতিনিধি ব্যবস্থার মধ্যেই গন্ডগোল আছে৷ যেমন লিখেছি আগে, এখানে এমন টেকনিকাল প্রবলেম আছে যেটা সারিয়ে তোলা অসম্ভব, ভালো লোককে সংসদে পাঠালেও৷ তাহলে কি করা যায়? আমার ধারনা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য যেখানে গনতান্ত্রিক মুল্যবোধ অগভীর, জনগন নিজেই অনেক সময় গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সেখানে হয়তো অন্যভাবে গনতন্ত্রকে implement করতে হবে৷
সমস্যাটা আরেক দিক থেকে যদি দেখি৷ দেশের উন্নতি করা দরকার, lean-mean পাবলিক কম্পানি গুলো যেমন করে৷ ধরে নেই বাংলাদেশ একটা পাবলিক কম্পানি, এর ১৪কোটি শেয়ার হোল্ডার৷ শেয়ার ননট্রান্সফারেবল, দেশের মাটিতে জন্মালে অটোমেটিক একটা শেয়ার পাওয়া যায়, মরলে শেয়ার বাতিল হয়ে যায়, লোকপ্রতি মাত্র একটা শেয়ার৷ যেহেতু দেশের জনগন এর ইনভেস্টর সুতরাঙ তাদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত৷ প্রতিনিধি বা এরকম মধ্যসত্ত্বভোগী কোন দালাল গোষ্ঠির দরকার নেই৷ আরেকটা ব্যাপার, আমরা ধরে নেব এই ব্যবস্থা একবিংশ শতাব্দিতে হচ্ছে, যেখানে টেলিফোন/মোবাইল সুলভ, সবার টেলিভিশন দেখার সুযোগ আছে বা করা যাবে৷ তাহলে যেটা করা যায়ঃ
১৷ প্রতি নববর্ষে আমরা দেশের জন্য CEO নিয়োগ দেব, বা hire করব৷
২৷ আগ্রহী প্রার্থিরা তাদের Resume জমা দেবে আগেই, টিভিতে লাইভ ইন্টারভিউ হবে৷ জনগন, সাংবাদিক এরা প্রশ্ন করবে৷
৩৷ তারপর ঠিক করা কাকে একবছরের জন্য দ্বায়িত্ব দেয়া যায়৷
৪৷ অন্যান্য পোস্টগুলোতেও (এখন যেখানে একজন করে ঊপদেষ্টা আছেন) এভাবে সরাসরি জনগনের সামনে ইন্টারভ্যু দিয়ে নিয়োগ দেয়া হবে৷
৫৷ প্রতি দুমাসে পারফর্মেন্স এভাল্যুয়েট করা হবে, খারাপ CEO যেকোন সময় fire করা যাবে৷ বিশেষ করে যদি দেশ লাভের মুখ না দেখে৷
৬৷ যে কোন ব্যাক্তি পরপর ৪ বছরের বেশী একই পোস্টে আসতে পারবে না৷ আর টোটাল ৮ বছর হয়ে গেলে অটোমেটিক অযোগ্য হয়ে যাবে৷
এসব CEO বা অন্যান্য ঊপদেষ্টারা যেহেতু জনগনের এম্প্লয়ী এবং প্রতি দুমাসে পারফর্মেন্স ঘেটে যেহেতু তাদের সেটা মনে করিয়ে দেয়া হবে, সুতরাং তারা মাথায় চড়ে বসার সুযোগ পাবে না৷
ধরা যেতে পারে এটা হচ্ছে ডেমোক্রেসি ভার্সন ২.0 বাংলাদেশের জন্য৷ আর কোন দালাল সাংসদ চাই না, দেশের মানুষ যেহেতু দেশের মালিক, তারাই সরাসরি তাদের চাকুরেদের নিয়োগ দেবে৷ রানী মৌমাছি প্রথা বাতিল করা দরকার অবিলম্বে৷ আরো কিছু আইডিয়া আছে, লিখব, আগে আপনাদের প্রতিক্রিয়া দেখি তারপর৷
যুক্তরাজ্যের চেয়ে আমাদের গনতন্ত্র সাংবিধানিক ভাবে ভীষনভাবে আলাদা নয়, ভারতের সাথেও মিল আছে৷ আসলে সব গনতান্ত্রিক দেশগুলোর শাসন ব্যবস্থা ঘুরেফিরে কাছাকাছি৷ কিন্তু তাহলে ফলাফলে এত পার্থক্য কেন? আমাদের জনপপ্রতিনিধি হয় পিন্টু, লালু, ফালু, হাজারী, শামীম ওসমানরা৷ এরা নিজেরা গনতন্ত্র কতটুকু বুঝে বা বিশ্বাস করে বলা মুস্কিল৷
আসলে গনতন্ত্রের সংজ্ঞায় ঠিক পরিস্কার করে বলা নেই গনতন্ত্র কিভাবে implement করতে হবে৷ হতে পারে সরাসরি মতামত নিয়ে (যেমন ভোট), হতে পারে প্রতিনিধির মাধ্যমে (যেমন সাংসদ একজন প্রতিনিধি)৷ তার মানে গনতন্ত্রে সাধারন মানুষের মনোভাবের প্রতিফলনটাই ঊদ্দ্যেশ্য হলেও ঠিক কিভাবে সেটা করা হবে তা নিয়ে অনেক টেকনিকাল সমস্যা আছে৷
টেকনিকাল সমস্যা নিয়ে আরেকটু গভীরে যাই৷ যেমন আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো গনতান্ত্রিক দেশগুলোর একটা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, এখানে ২০০০ সালের নির্বাচনে আল গোর সবচেয়ে বেশী ভোট পেলেও ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেমের মার প্যাচে বুশকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়৷ যদিও গনতন্ত্রের সংজ্ঞা অনুযায়ী আল গোরেরই নির্বাচিত হওয়া উচিত ছিল৷ এটা ঠিক নতুন কিছু না বাংলাদেশেও ১৯৯১ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট ভোটে সবচেয়ে বেশী পেয়েছিল, কিন্তু আসন ছিল বিএনপির বেশী৷ অন্যান্য দেশের ঊদাহরণও টানা যেতে পারে৷ আবার নির্বাচন ছাড়াও অনেক সময় টেকনিকালিটির কারনে গনতান্ত্রিক দেশে জনগনের মতামতের বিরুদ্ধে শাসক গোষ্ঠী অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বৈধ ভাবেই৷ আমাদের দেশে তো হরহামেশাই সেটা হয়, বা হয়েছে যেমন সাংসদদের কোটায় শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানীর আইন, আইন হিসেবে সম্পুর্ন বৈধ, কিন্তু দেশের মানুষের সমর্থন কি ছিল? মনে হয় না৷ তাহলে এ ধরনের আইনকে নিশ্চয়ই লিংকনের গনতন্ত্রের মুল চেতনার সাথে সংগতিপুর্ন ধরা যায় না, অথচ সাংবিধানিক ভাবে এসব আইন সম্পুর্ন বৈধ৷ লিংকনের দেশেও এরকম উদাহরন আছে৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এসব আপাত অগনতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুযোগ কেন আছে৷ যেমন যুক্তরাষ্ট্রে কেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি ভোটে না হয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ দিয়ে হচ্ছে৷ কারণ হচ্ছে টেকনিকাল সমস্যা৷ আড়াইশ বছর আগে টেলিফোন, ক্যালকুলেটর বা কম্পিঊটার ছিল না৷ যুক্তরাষ্ট্রের মত বড় দেশে এত রাজ্যের সবার ভোট সরাসরি হিসাব করা কঠিন ছিল৷ সে জন্য শর্টকাট হিসেবে ইলেক্টোরাল কলেজ৷ আবার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য জনগনের মতামত বারবার নেয়া কঠিন ছিল, বিশেষ করে টেলিফোন/কম্পিউটারের অনুপস্থিতিতে, সুতরাং গনতন্ত্র কাটছাট করে এমনভাবে implement করা হল যেখানে সরাসরি জন গনের বদলে তাদের প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নেবেন (যেমন কংগ্রেসম্যান বা সিনেটর)৷
ঠিক এইখানেই সমস্যা৷ বাংলাদেশের মতো দেশে জনপ্রতিনিধি (সাংসদ) নির্বাচিত হয়ে আসলে বুঝতেই পারেন না তার দ্বায়িত্ব কি? তাদের অনেকের ধারনা তারা এলাকার ইজারা পেয়েছেন ৫ বছরের জন্য৷ সুতরাং জন গনের মতামত সংসদে প্রতিফলিত করার প্রয়োজনও বোধ করেন না৷ এমনকি আমরা যদি ভাল সব সাংসদ ভবিষ্যতে খুজেও পাই তাহলেও এর সমাধান হবে না৷ একটা সংসদীয় এলাকায় যদি ৫ লাখ লোক থাকে, আইন প্রনয়নের সময় এই ৫ লাখ লোকের মতামত নেয়া আসলে কঠিন৷ সত্ ও যোগ্য সাংসদ থাকলেও যেটা হবে তারা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের যেটা ভাল মনে হবে সেই সিদ্ধান্তই নেবেন, অথবা পার্টি লাইনে ভোট দেবেন (যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সময়ই যেটা হয়), সুতরাং জন গনের মতামত সরাসরি প্রতিফলনের সুযোগ আসলে কম৷
আসলে ঘটনা হচ্ছে এই জনপ্রতিনিধি ব্যবস্থার মধ্যেই গন্ডগোল আছে৷ যেমন লিখেছি আগে, এখানে এমন টেকনিকাল প্রবলেম আছে যেটা সারিয়ে তোলা অসম্ভব, ভালো লোককে সংসদে পাঠালেও৷ তাহলে কি করা যায়? আমার ধারনা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য যেখানে গনতান্ত্রিক মুল্যবোধ অগভীর, জনগন নিজেই অনেক সময় গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সেখানে হয়তো অন্যভাবে গনতন্ত্রকে implement করতে হবে৷
সমস্যাটা আরেক দিক থেকে যদি দেখি৷ দেশের উন্নতি করা দরকার, lean-mean পাবলিক কম্পানি গুলো যেমন করে৷ ধরে নেই বাংলাদেশ একটা পাবলিক কম্পানি, এর ১৪কোটি শেয়ার হোল্ডার৷ শেয়ার ননট্রান্সফারেবল, দেশের মাটিতে জন্মালে অটোমেটিক একটা শেয়ার পাওয়া যায়, মরলে শেয়ার বাতিল হয়ে যায়, লোকপ্রতি মাত্র একটা শেয়ার৷ যেহেতু দেশের জনগন এর ইনভেস্টর সুতরাঙ তাদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত৷ প্রতিনিধি বা এরকম মধ্যসত্ত্বভোগী কোন দালাল গোষ্ঠির দরকার নেই৷ আরেকটা ব্যাপার, আমরা ধরে নেব এই ব্যবস্থা একবিংশ শতাব্দিতে হচ্ছে, যেখানে টেলিফোন/মোবাইল সুলভ, সবার টেলিভিশন দেখার সুযোগ আছে বা করা যাবে৷ তাহলে যেটা করা যায়ঃ
১৷ প্রতি নববর্ষে আমরা দেশের জন্য CEO নিয়োগ দেব, বা hire করব৷
২৷ আগ্রহী প্রার্থিরা তাদের Resume জমা দেবে আগেই, টিভিতে লাইভ ইন্টারভিউ হবে৷ জনগন, সাংবাদিক এরা প্রশ্ন করবে৷
৩৷ তারপর ঠিক করা কাকে একবছরের জন্য দ্বায়িত্ব দেয়া যায়৷
৪৷ অন্যান্য পোস্টগুলোতেও (এখন যেখানে একজন করে ঊপদেষ্টা আছেন) এভাবে সরাসরি জনগনের সামনে ইন্টারভ্যু দিয়ে নিয়োগ দেয়া হবে৷
৫৷ প্রতি দুমাসে পারফর্মেন্স এভাল্যুয়েট করা হবে, খারাপ CEO যেকোন সময় fire করা যাবে৷ বিশেষ করে যদি দেশ লাভের মুখ না দেখে৷
৬৷ যে কোন ব্যাক্তি পরপর ৪ বছরের বেশী একই পোস্টে আসতে পারবে না৷ আর টোটাল ৮ বছর হয়ে গেলে অটোমেটিক অযোগ্য হয়ে যাবে৷
এসব CEO বা অন্যান্য ঊপদেষ্টারা যেহেতু জনগনের এম্প্লয়ী এবং প্রতি দুমাসে পারফর্মেন্স ঘেটে যেহেতু তাদের সেটা মনে করিয়ে দেয়া হবে, সুতরাং তারা মাথায় চড়ে বসার সুযোগ পাবে না৷
ধরা যেতে পারে এটা হচ্ছে ডেমোক্রেসি ভার্সন ২.0 বাংলাদেশের জন্য৷ আর কোন দালাল সাংসদ চাই না, দেশের মানুষ যেহেতু দেশের মালিক, তারাই সরাসরি তাদের চাকুরেদের নিয়োগ দেবে৷ রানী মৌমাছি প্রথা বাতিল করা দরকার অবিলম্বে৷ আরো কিছু আইডিয়া আছে, লিখব, আগে আপনাদের প্রতিক্রিয়া দেখি তারপর৷
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালাঃ অ্যাংকরেজ, আলাস্কা (২)
মাঝরাতে গিয়ে পৌছলাম অ্যাংকরেজে৷ রেন্টাল কার নিতে গিয়ে দেখি গাড়ি নাই৷ মিড সাইজ গাড়ি রিজার্ভেশন দিয়েছিলাম, অনেক ঘাটাঘাটি করে বললো এত রাতে ৭ সিটের ভ্যান ছাড়া আর কিছু দিতে পারবে না৷ মডেল ডজ ক্যারাভান৷ মনে মনে খুশীই হলাম, যদিও মুখে প্রকাশ করলাম না, কারন বড় গাড়িতে একটু আরাম করে ঘোরা যায়৷ ডজের গাড়ি গাড়িটায় পেছনের সিটে চাইলে একজন শুয়ে ঘুমাতেও পারে৷ একটা সিদ্ধান্ত আমার প্রায়ই ভুল হতো, সেট হচ্ছে খুজে খুজে একদম সস্তা মোটেলে ওঠা৷ আসলে সামান্য একটু বেশী খরচ করলে তুলনামুলক ভাবে অনেক ভাল হোটেলে থাকা যায়৷ যাইহোক অলাস্কায় নির্জন রাতে গাড়ি নিয়ে মোটেলের দিকে রওনা হলাম৷ বেশ একটু ভয় ভয় করছিল৷ এয়ারপোর্ট থেকে মোটেল ৫-৭ মাইল দুরে, রাস্তায় কোন লোকজন থাক দুরের কথা, গাড়িও খুব কম৷
মোটেলের রিসেপশনিস্ট বিরক্তভাবে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল৷ বাইরে যেমন ভাঙাচোরা অবস্থা ভিতরে আরও খারাপ৷ এসব মোটেলে বিছানায় প্রায়ই মানুষের লোম পড়ে থাকে, এজন্য এবার বাসা থেকে চাদর নিয়ে এসেছি৷ ব্যাগ থেকে ক্যামেরা, ফোন, ল্যাপটপ বের করে চার্জে দিয়ে দিলাম৷ প্লেনে তোলা অরোরার ছবিগুলো ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে দেখার চেষ্টা করলাম, পুরান ল্যাপটপের এলসিডিতে দেখাই যাচ্ছিল না, মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল৷ আলাস্কা GMT-9 টাইম জোনে, রাত দুটার দিকে যখন ঘুমাতে যাচ্ছি তখন আমার বায়োলজিকাল ঘড়িতে প্রায় ভোর হয় হয়৷
ফোনের চি্তকারে ঘুম ভাঙ্গলো, আমার বন্ধু তার দল নিয়ে রওনা দিচ্ছে৷ রওনা দেয়ার খবর এত ঘটা করে জানানোর দরকার ছিল না, কাচা ঘুমটা ভেঙ্গে শরীর খারাপ লাগছিল৷ বাথরুমে বসে একটু কসরত করলাম, আসলে এত নোংরা মনে হচ্ছিল যে ছেলে হয়েও খুব বেশীক্ষন বসে থাকতে ভাল লাগছিল না৷ আরেকটু গড়াগড়ি করে গোসল করে ব্যাগট্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলাম৷
এই মোটেলে কোন ব্রেকফাস্ট নেই৷ বিল দিয়ে বের হয়ে আসলাম৷ একটা বিশাল বড় লিস্ট নিয়ে আসছি আলাস্কায় কি কি করব, আসলে বলতে গেলে ৭০-৮০ পৃষ্ঠার চোথা৷ নানা রকম অল্টারনেট হিসাব করা আছে ওখানে৷ অ্যাংকরেজ ঠিক সরাসরি প্যাসিফিকের (এক্ষেত্রে গাল্ফ অফ আলাস্কা) পাড়ে না, বরং বাংলাদেশে বরিশাল যেমন কিছুটা ভেতরে অনেকটা ওরকম৷ ওরা নাম দিয়েছে কুক ইনলেট৷ এর আবার দুটা শাখা নিক আর টার্নএগেইন আর্ম৷ একটা দেড় ঘন্টার লঞ্চ (এখানকার ভাষায় Ferry) ট্যুর আছে আশে পাশের গ্লেসিয়ার গুলোতে, সকালে দেখি ঐটা ধরা যায় কি না৷
প্রচুর ওয়ান ওয়ে রাস্তা এইখানে, এম্নিতেই নতুন জায়গায় আমি পথঘাট চিনতে পারি না৷ আমার চোথা অনুযায়ী যেখানে লঞ্চঘাট হওয়ার কথা সেখানে এসে দেখি একটা বড় হোটেল, আশে পাশে কোন নদী বা এরকম কিছু নেই৷ ব্যপার কি৷ ফোন করার পর টিকেট বিক্রেতা মহিলা বলল আসলে হোটেলটা হচ্ছে টিকেট কাঊন্টার, সত্যিকার লঞ্চঘাট এখান থেকে এক ঘন্টার ড্রাইভ (৫০ মাইল দুরে)৷ বলে কি এই মহিলা৷ ফেরী ছাড়তে আর সময় আছে ১৫ মিনিট৷ মনটা খারাপ হয়ে গেল, প্ল্যান করে আসছি কুক ইনলেট ঘুরে দেখব, ধুত্তোর৷
অ্যংকরেজ মিউজিয়ামে গেলাম৷ চমত্কার করে সাজানো৷ আলাস্কার আদিবাসীদের মধ্যে আছে এস্কিমো (ইনুইট), আথাবাস্কান আর আলিউট৷ ১৫/১৬ হাজার বছর আগে সাইবেরিয়া থেকে বেরিঙ প্রনালী, আলাস্কা হয়ে মানুষ প্রথম আমেরিকা তে আসে৷ এদের বংশধররাই এখনো আলাস্কায় আছে, আর যারা আরো দক্ষিনে গিয়েছিল তাদের থেকে কালক্রমে আজটেক, মায়া, বা ইনকাদের জন্ম হয়েছে৷ যাদুঘরে চমত্কার সব নিদর্শন আছে এই মাইগ্রেশনের৷ প্রাগৈতিহাসিক সময়ে (১০ হাজার বছর বা তার আগে) এসব এলাকায় ম্যামথ, ঊলি রাইনো (লোমশ গন্ডার) ছিল৷ ইনুইটদের তৈরী ম্যমথের (বরফ যুগের লোমশ হাতি) দাত বা হাড় থেকে বানানো অনেক সরঞ্জাম দেখলাম৷
দুপুরে আমাদের দলের বাকীরা এলে আবার এয়ারপোর্ট যেতে হলো৷ পথে যেতে যেতে দিগন্তে চুগাছ (Chugach) পর্বতমালা দেখা যাচ্ছিল, হঠাত্ কেন যেন ঠিক রাঙামাটির পাহাড়গুলোর মতো মনে হচ্ছিল৷ এতদিন এখানে পাহাড় বলতে রকি মাউন্টেইন স্টাইলটাই মনে হতো, আলাস্কার পাহাড়গুলো কোনভাবে মেইনল্যান্ডের চেয়ে আলাদা৷ পরের দিন গুলোতে ডেনালী বা্ Wrangle-St Elias এও একই ব্যাপার খেয়াল করেছি৷ যাহোক পুরো দল একসাথে হয়ে পেট ভরে খেয়ে নিলাম, এক ফাকে আমি ওয়ালমার্ট থেকে ব্ল্যাংক সিডি কিনে নিলাম, প্রতিদিনের ছবি প্রতিদিন সিডিতে লিখে রাখব, নাহলে কখন ল্যাপটপের হার্ডড্রাইভ ক্র্যাশ করে কে জানে৷
এখন গন্তব্য ডেনালী ন্যাশনাল পার্ক৷ ডেনালীতে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে ঊচু পর্বতের চুড়া আছে (মাউন্ট ম্যাকিনলী ২০,৩২০ ফিট, এভারেস্ট ২৯,০০০) কিন্তু ম্যাকিনলী দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার, কারন বছরের বেশীরভাগ সময়েই মেঘে ঢাকা থাকে, বিশেষ করে বছরের এই সময়ে তো দেখা আরো কঠিন৷ আলাস্কাতে ফ্রীওয়ে কম, বা সেভাবে নাই বল্লেই চলে৷ কে চালাবে এই নিয়ে একটু বিতন্ডা হচ্ছিল, সবাই টায়ার্ড, ঝামেলা কমাতে রাজী হয়ে গেলাম৷
বন্ধুদের কারো কারো সাথে বেশ অনেকদিন পরেই দেখা৷ সবাই সবার ব্যাপারে আপডেট নিচ্ছিল, কে কি করল, কদ্দুর এগোলো ক্যারিয়ার, কেউ কেউ সংখ্যা বাড়নোর চেষ্টায় আছে, কিন্তু এক আর একে ঠিক তিন হচ্ছে না ইত্যাদি৷ ওয়েবে অনেক ছবি দেখে এসেছি ডেনালীর এবং ডেনালী যাওয়ার পথের৷ শুরুতে খুব একটা সুবিধা হচ্ছিল না, সেই একই ফার, পাইন গাছের সারি, পার্মা ফ্রস্টে রঙচঙা গুল্মের কোন খোজ নেই৷
এ্যাংকরেজ থেকে ডেনালী ৪০০ কিমি, পাচ ঘন্টার রাস্তা৷ রাতে না ঘুমিয়ে চালাতে একটু খারাপ লাগছিল, আবার রাস্তায় সবজায়গায় ডিভাইডার নেই, বিপরীত দিক থেকে লরী আসতে দেখলে একটু ভয়ই লাগে৷ আড়াইটা-তিনটার দিকে রওনা দিয়েছিলাম, একসময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সেখান থেকে সন্ধ্যা হবার জোগাড়, এখনও না কোন উল্লেখযোগ্য প্রানী না সেই রঙিন বেরী (জাম?) গুল্ম৷ ঠিক তখনই দেখি একটা Moose (তাড়াহুড়ায় ছবি তোলা হয় নি) রাস্তা পার হচ্ছে৷ আমাদের দেখে বেচারা দিল দৌড়, দৌড় দিয়েই ভালো করেছে অবশ্য কারন ধাক্কা লাগলে দুর্ঘটনা হতে পারত৷ একবার হরিনের সাথে ধাক্কা লেগে যে অবস্থা হয়েছিল, এরপর আর কোনদিন এসব বোকারামকে ধাক্কা দিতে চাই না৷ এরপরই যেন ভাগ্য খুলে গেল আমাদের৷ পাইন আর ফারের বন পরিষ্কার হয়ে একটু খোলা জায়গায় চলে আসলাম৷ রাস্তার দুপাশেই বেশ দুরে পাহাড়, তার আগে খোলা মাঠের মতো (meadow), আর মাঠ ভর্তি নানা রঙের বেরী জাতীয় গুল্ম৷ আলাস্কায় ঠান্ডার জন্য মাটির নিচে একটু গভীরে যে বরফ থাকে সেটা কখনই গলে না৷ এরা বলে পার্মাফ্রস্ট৷ বরফের জন্য বড় গাছ জন্মাতে পারে না, সে জন্য জন্মায় ঘাস বা নানা জাতের ছোট উদ্ভিদ৷
কি যে অপার্থিব দৃশ্য খালি চোখে না দেখলে বোঝা মুস্কিল৷ ক্যামেরার সাধ্য নেই এই ছবি তুলে ধরার৷ ডেনালী পর্বতমালার ব্যাকড্রপে মনে হচ্ছিল আলাস্কা আসার ৫০% অলরেডি সার্থক৷
Subscribe to:
Posts (Atom)