Friday, April 27, 2007

বাংলাদেশ ২.০ (সত্ ও যোগ্য প্রার্থীর খোজে)

দেশের খ্যাতনামা কিছু বুদ্ধিজীবি, প্রাক্তন আমলা, কলামিস্টরা মিলে একটা প্ল্যাটফর্ম করে এর নাম দিয়েছেন সুশীল সমাজ৷ বোঝা মুস্কিল ঠিক কারা এর সদস্য আর এর বাইরে কারা, মানে যারা সুশীল সমাজের বাইরে তারা কুশীল বা অন্য কিছু কি না৷ তো সুশীল সমাজের মুখপাত্রদের একটা দাবী ছিল সত্ ও যোগ্য প্রার্থী খুজে বের করতে হবে, তাদেরকে নির্বাচিত করতে হবে, তাহলে যদি দেশের ভাগ্য ফেরে৷ সুশীল সমাজের সমর্থক/বিরোধী নির্বিশেষে মোটামুটি আমরা এই স্টেটমেন্ট (সত্ ও যোগ্য প্রার্থীই বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান) মেনে নেই বা নিয়েছি৷


কিন্তু আসলেই কি তাই৷ সত্ আর যোগ্য প্রার্থী হলেই সমস্যার সমাধান হবে৷ তারওপর সত্ আর যোগ্য বিচারের মাপকাঠি কি? যদি দুজন প্রার্থী পাই একজন ৯০% সত্ কিন্তু ৫০% যোগ্য, আর আরেকজন ৫০% সত্ এবং ৯০% যোগ্য কাকে বেছে নেব৷ মতিয়া চৌধুরী আর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কে বেশী সত্ আর কে বেশী যোগ্য? কিভাবে বেছে নেব৷ আসলে এসব প্রশ্নের কোন সোজা সাপ্টা সমাধান নেই, পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক৷ আবার পারসেপশনের ব্যাপারও আছে৷ তারেক রহমান যে এত বড় দুর্নীতিবাজ হবে ২০০১ এ কয়জন ভবিষ্যদ্বানী করেছিল? এজন্য সত্ আর যোগ্য প্রার্থীর পিছনে দৌড়ঝাপ করাকে কেন যেন আমার মনে হয় পরশ পাথরের পেছনে দৌড়ানোর মতো৷


যেসব দেশ গনতান্ত্রায়নের মাধ্যমে উন্নতির মুখ দেখেছে, এবং সে উন্নতি ধরে রেখেছে, ধরা যাক যুক্তরাষ্ট্র, জাপান বা জার্মানী, এদের উন্নতির পেছনে সত্ বা যোগ্য লোকের নির্বাচিত হয়ে আসা কতটা ভুমিকা রেখেছে৷ ঠিক জানি না সুশীল সমাজ এসব কেস স্টাডি করেছে কি না৷ একটা ব্যাপার পরিস্কার যে যুক্তরাষ্ট্রের যে ইকোনমিক এঞ্জিন তা আসলে কে কোথায় নির্বাচিত হলো তার ওপর ভীষন ভাবে নির্ভর করে না৷ কিছু নির্ভরশীলতা তো আছেই, কিন্তু মোটের ওপর যেই আসুক না কেন দেশটা চলতেই থাকবে৷ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশকে চালাতে মোটেই হাই আই কিউ, নোবেল লরেট বা রকেট সায়েন্টিস্টের দরকার হয় না৷ কারন দেশটা আসলে চালায় সিস্টেম, কোন এক ব্যাক্তি বা ব্যক্তি গোস্ঠি না৷ দেশের ব্যবস্থাটা এমন যে কোন খারাপ লোক ক্ষমতায় গেলেও নিয়মের খুব বেশী বাইরে যাওয়া কঠিন৷


আর কংগ্রেসম্যান, সিনেটরদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এসব লেগেই আছে, তাই বলে দেশের চাকা ঘোরা বন্ধ নেই যুক্তরাষ্ট্রে৷ ভিশনারী কোন নেতা থাকলে ভালো, না থাকলেও, বা ভিশনটা যদি ভুলও হয় দেশের ভীষন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম, বা আসলে এখন যেমন দেখতে পাচ্ছি এত বড় ইরাক যুদ্ধের পরও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ধ্বসে পড়ে নি৷ আসলে ভালই চলছে৷


তো এসব কারনে আমার মতামত হচ্ছে সত্ আর যোগ্য প্রার্থী খোজার মতো গোলমেলে, গোজামিলে ভরা লক্ষ্যের চেয়ে জরূরী হচ্ছে এমন একটা সিস্টেম দাড় করানো যেখানে অসত্ আর অযোগ্য লোকও যদি নির্বাচিত হয়ে আসে তাহলেও দেশের যেন বিচ্যুতি না ঘটে, যেমন গত ৫ বছর হয়েছে৷ ভিশনওয়ালা নেতা খোজার আসলে কোন দরকার নেই, নেতার ভিশনে কিছু যায় আসে না, কারন গনতন্ত্রের লক্ষ্য জনগনের ভিশন বাস্তবায়ন করা, কোন নেতা কোন আমলে কি স্বপ্ন দেখে রেখেছেন তা নিয়ে আমাদের নষ্ট করার মত সময় নেই৷ ভিশনবাজ নেতা ঘুরে ফিরে আবার সেই ব্যক্তিপুজার জন্ম দেবে, নিকট অতীতে ড ইউনুসকে নিয়েও তো আমরা সেরকমই দেখলাম৷


আসলে আমাদের দেশের ব্যবস্থা যদি এরকম করা যায় যে, পুরো প্রশাসনিক, এবং বিচার প্রক্রিয়া ভীষনভাবে স্বচ্ছ, এবং রেসপন্সিভ হয় তাহলে ঠিক কে দেশ চালাচ্ছে সেটা কোন ব্যপারই না৷ জবাবদীহীতার প্রক্রিয়াটা ৫ বছরের মতো বড় সাইকেলে আটকে আছে বলেই পিন্টু/লালু/ফালু রা দুর্নীতি করার সুযোগ পায়৷ কারন যদি এমন হতো ফালুকে প্রতি সপ্তাহে তার কর্মকান্ডের জন্য সরাসরি জনগনের প্রশ্নোত্তরের মুখোমুখি হতে হতো এবং সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে সাংসদকে সাময়িক অব্যহতি দেয়া হতো, তাহলে আমার সন্দেহ হয় ফালুর পক্ষে কতটা দুর্নীতি করা সম্ভব হতো৷


ঠিক কি কি পরিবর্তন করলে বাংলাদেশকে সামন্ততান্ত্রিক ফাদ থেকে মুক্ত করা যাবে বলা মুস্কিল, তবে উপরে যেমন বল্লাম সরকারের ভেতর স্বচ্ছতা এবং যেকোন সময় দ্রুততার সাথে (ধরা যাক ২৪ ঘন্টা টার্নএরাউন্ড টাইম) জনগনের কাছে উত্তর দিতে পারার যোগ্যতাটা আসলে খুব জরুরী৷ হিমু বেশ কিছু প্রস্তাব রাখছে তার লেখায় ইদানিং, হাতে সময় থাকলে আপনাদের পড়ে দেখা উচিত, এবং বিতর্কে অংশ নেয়া উচিত৷ হিমুর লেখার লিংক - http://jongli.wordpress.com/

No comments:

 
eXTReMe Tracker