Friday, April 20, 2007

প্যারাডাইম শিফট

হাইটেকের একটা ব্যাপার আমার কাছে ভালো লাগে যে এখানে পরিবর্তন খুব দ্্রুত, আর বেশীরভাগ সময়ই যুগান্তকারী। বছর ঘুরতেই অনেক সময় ব্যপক পরিবর্তন হয়ে যায়, গত বছরের লেখা কোড এবছর হয়ে যায় লিগ্যাসী। তবে কোন কোন পরিবর্তন এত মৌলিক যে পুরো ইন্ডাস্ট্রী নিজেকে রিশাফল করতে বাধ্য হয়। নব্বই এর শেষে যেমন ডেস্কটপ মার্কেট থেকে ওয়েবভিত্তিক অর্থনীতি, আবার এর পাচ বছরেই আবার সার্ভিস ওরিয়েন্টেড বিজনেস মডেল, সোশাল নেটওয়ার্কিং মডেল, প্রত্যকেটাই বড় বড় পরিবর্তন। ইন্টারনেট আসার পর একসময় যেমন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ওয়েব ডেভেলপারদের ভীষন চাহিদা ছিল, আবার ডটকম বাস্টের পর এরাই হাজারে হাজারে বেকার হয়ে পড়ল। ওয়েবডেভেলপমেন্ট এক অর্থে এখানে আর কখনই চাঙা হয় নি। সবচেয়ে অদ্ভুত হচ্ছে এসব প্যারাডাইম শিফট যখন হয় তখন গতবারের বিদ্্রোহী এবারের স্বৈরশাসক হয়ে বসে।

আমাদের লাইফস্টাইলেও প্যারাডাইম শিফট হচ্ছে। সবচেয়ে মজার হচ্ছে মুল্যবোধের পরিবর্তন। 60 এর দশকে আমাদের বাবা-মারা তাদের বাবা মায়ের সাথে যুদ্ধ করেছেন তখনকার পরিবর্তনের অধিকার নিয়ে। আবার 90 এ এসে তারাই আবার তাদের ছেলেমেয়েদের ওপর 30 বছরের পুরোনো মুল্যবোধ চাপিয়ে দিতে চাইলেন। কে জানে এক প্রজন্ম পরে আমরাও হয়তো তাই করব, বেকে বসব নতুনকে মেনে নিতে।

এজন্য ইদানিং মনে হয় গ্যালিলিওকে যে পোপ ইনকুইজিশনের সামনে দাড়াতে বাধ্য করেছিলেন, হয়তো পোপ মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলেন না। কেবল প্যারাডাইম শিফট টা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। গ্যালিলিও প্রমান করলেন যে পৃথিবী আসলে বিশ্বের কেন্দ ্রথাক দুরের কথা সৌরজগতের সেন্টারেও না। এতদিনের বিশ্বাস স্রেফ গ্যালিলিওর প্রমানের ওপর ভিত্তি করে ছুড়ে ফেলা মুস্কিল, হয়তো একদিক থেকে ঠিকও আছে। আসলে মানুষ নিজেকে যেমন সৃষ্টির সেরা ভাবে সেখান থেকে তাকে সরালে মেনে নেবেই বা কেন। একই অবস্থা হলো কয়েকশ বছর পর ডারউইন যখন বললেন বানর আর মানুষের পূর্বপূরুষ একই ছিল। আবার মানুষকে তার অবস্থান থেকে সরানোর চেষ্টা। দেড়শ বছর পর এখনও বহু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ডারউইনের সুত্রের সরাসরি প্রমান থাকার পরও মেনে নিতে পারছে না। আসলে মানুষ তার বিশ্বাসকে সত্যের সাথে গুলিয়ে ফেলে, বিশ্বাস যে কেউ যত খুশী করতে পারে, এক বিলিয়ন লোক নিয়ে করতে পারে, কিন্তু তাই বলে বিশ্বাস করলেই সত্য হয় না। এই নিয়ে আমার একটা পোস্টও আছে, গ্যালিলিওর সময় কোটি কোটি লোক বিশ্বাস করত সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, তাই বলে মানুষের বিশ্বাসকে মুল্য দিয়ে সূর্য কিন্তু পৃথিবীর চারদিকে ঘোরা শুরু করে নি। সত্যি কথা বলতে কয়জন কিভাবে কি বিশ্বাস করছে এর সাথে সত্যমিথ্যার কোন সম্পর্ক নেই।

ঐদিন মুখফোড়ের সাথে চ্যাট হচ্ছিল। মুখফোড় ব্লগের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড ব্লগার সন্দেহ নেই। তাকে বল্লাম 25 বছর পর মানুষের তৈরী যন্ত্রের বুদ্ধি মানুষের চেয়ে বেশী হবে। কিন্তু এই ঘটনা হঠাৎ করে ঘটবে না। তার আগে আমরা নিজেরাই যন্ত্রের সাথে ইন্টিগ্রেটেড হয়ে যাব। এ প্রক্রিয়া এখন অল্প অল্প করে শুরু হয়েছে। যেমন পকেটে আইপড বা পিডিএ হচ্ছে এর প্রথম ধাপ। উন্নতবিশ্বে মোবাইল ডিভাইস এখন এমন পার্ভেসিভ যে ক্রমশ ডেস্কটপের ওপর নির্ভশীলতা কমে যাচ্ছে। 2009 এ মোবাইল কম্পিউটারের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ডেস্কটপের চেয়ে বেশী হবে। তবে 2030 এর পরিবর্তনের তুলনায় এগুলো এখনও আদিম যুগে আছে। এখনও কম্পিউটারের সাথে মানুষ বায়োলজিকালী ইন্টিগ্রেট করে নি। হয়তো আর 5/7 বছর লাগবে তার জন্য। এর একটা সুবিধা হচ্ছে আমরা সিলিকন চিপ ইম্প্ল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। শরীরের ভেতর এরকম মেমরী চিপ থাকলে যেমন কোন কিছু মনে রাখার জন্য শুধু বায়োলজিকাল নিউরনের ওপর নির্ভর না করে চিপে ঘটনা স্মৃতি সেভ করে রাখা যাবে। যেমন হঠাৎ কিছু দেখলাম, ডিজিটাল ক্যামেরা নেই সাথে, কিন্তু তাতে কি, যা দেখছি সরাসরি চোখ থেকে ইম্প্ল্যান্টেড চিপে লিখে রাখব, পরে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারব। সবচেয়ে মজার হচ্ছে অনুভুতি সেভ করে রাখা গেলে কি হবে। যেমন কেউ যদি তার প্রেমিকাকে চুমু দিয়ে কেমন লাগছে এটা সেভ করে রাখে, তাহলে পরে অন্যরা একই অনুভুতি তাদের ব্রেইনে রিলোড করতে পারবে। আসলে সবচেয়ে বড় যে সামাজিক পরিবর্তন সে টা আসছে, 2020 দশক থেকে শুরু হয়ে যাবে।

মুখফোড়কে ব্লল্লাম একটা পর্যায়ের পরে আমাদের শরীরকে রিডিজাইন করতে হবে। কারন প্রকৃতির দেয়া শরীরটার ডিজাইন ভুলে ভরা। এজন্য আমরা বেশীদিন বাচতে পারি না। কিন্তু রিডিজাইন করেও বেশীদুর যাওয়া যাবে না। বড় জোড় 200 বছর বেচে থাকা সম্ভব। এর চেয়ে বেশী চাইলে শরীরটা ফেলেই দিয়ে পুরোপুরি সিলিকন সাবস্ট্রেটে ট্রান্সফার হয়ে যেতে হবে। মুখফোর এটুকু শুনে বেশ দুঃখ পেল, এক পর্যায়ে বলেই বসল "future looks grim"।

তবে মুখফোড় আসলে খুব স্মার্ট মুহুর্তেই সামলে নিয়ে বল্লো , আসলে আমাকে যদি কেউ বলে জেনেটিক অস্তিত্ব চাও, না কি মেমেটিক অস্তিত্ব চাও, তাহলে আমি মেমেটিক টাই নেব। আসলেই তাই। 2030 বেশ দুরে এখনও। তখন আমাদের বেশীরভাগই মেমেটিক অস্তিত্বের জন্য পাগল হয়ে যাবো। ঠিক যেমন আজকের সাইবার ওয়ার্লড 25 বছর আগে অকল্পনীয় ছিল, অথচ এখন এক মুহুর্ত ইন্টারনেট ছাড়া থাকলে মনে হয় কি যেন নেই।

কিন্তু গ্যালিলিও বা ডারউইনের মতো 2030 এর দশকেও একটা ম্যাসিভ প্যারাডাইম শিফট হতে যাচ্ছে। মানুষের তৈরী যন্ত্র মানুষকে বিদ্যা, বুদ্ধি আর ক্ষমতায় মানুষকেই হারিয়ে দেবে, তবে ভয়ের কোন কারন নেই, ঘটনাটা ম্যাট্রিক্সের মতো হবে না, বরঞ্চ আমরাই transcend করব সিলিকন সাবস্ট্রেটে।

No comments:

 
eXTReMe Tracker