কে যেন অমরত্ব নিয়ে লেখা দিচ্ছিল এখানে, ভাস্করদা মনে হয়, পিতৃত্বে অমরত্ব বা এরকম বিষয়ে৷ অমরত্বের আকাঙ্খা আসলে বেশ পুরোনো, হয়তো সবচেয়ে পুরোনো৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে সবসময়ই মনে হয় মানুষের মৃত্যু একটা চরম অপচয়৷ পরকাল আছে ভেবে নিজের সাথে প্রতারনা করা যায়, কিন্তু সমস্যার সমাধান তাতে হয় না৷ একটা প্রশ্ন করা যায়, বুড়িয়ে যাই কেন? অথবা আমরা কেন ৫০০ বছর বেঁচে থাকতে পারি না?
সংক্ষেপে উত্তরটা হচ্ছে এরকম, আমাদের শরীরের ফান্ডামেন্টাল ডিজাইনে আসলে অনেক bug আছে৷ আমাদের জিনে যে ইন্সট্রাকশন সেট আছে সেগুলোও নানা security hole এ ভরা৷ যে বা যারা এগুলো প্রোগ্রাম করেছে, তারা এই কাজে ভীষন দক্ষ নয় (মানে পাঁচশ বা হাজার বছর বাচিয়ে রাখার জন্য যে দক্ষতা দরকার)৷ আমাদের জিনের সেই অদক্ষ প্রোগ্রামার কারা, সেসব আলোচনায় যাওয়ার আগে কিছু চর্বিত চর্বন পুরাবৃতি করি, যেন এই লেখাটা সেল্ফ কন্টেইন্ড হয়৷
এই যেমন আপনি যখন মনিটরের দিকে তাকিয়ে লেখাটি পড়ছেন, আপনার শরীর কিন্তু বসে নেই৷ বিলিয়ন কোষের সবাই ব্যস্ত, কেউ ভেঙ্গে গিয়ে দুটো হচ্ছে, কেউ মরে যাচ্ছে, কেউ নানা রকম রাসায়নিক উপাদান তৈরী করছে, যেমন ইনসুলিন, কেউ অক্সিজেন পরিবহন করছে ইত্যাদি৷ কিন্তু কোষগুলো ঠিক বুঝে কিভাবে কোন কাজটা কিভাবে করতে হবে? যেমন ইনসুলিন কিভাবে বানাতে হবে এই সুত্রটা ওরা জানে কোত্থেকে৷ প্রতিটা কোষের কাছে একটা বড় লাইব্রেরী আছে, নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম গুলোতে৷ এই লাইব্রেরীতে আসলে ডিএনএ দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে সব সুত্র৷ যদি লাইব্রেরীর সব বইয়ের অক্ষর সংখ্যা হিসেব করি তাহলে কয়েক বিলিয়ন অক্ষর আছে এখানে৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে সব কোষের কাছেই সব সুত্র আছে (অল্প কয়েক ধরনের কোষ বাদে যাদের নিউক্লিয়াস নেই), মানে ইনসুলিন বানানোর সু্ত্র অগ্নাশয়ে যেমন আছে (যেখানে ইনসুলিন তৈরী হয়) তেমন হাতের চামড়ার কোষেও আছে, তবে হাতের চামড়ার কোষ সুত্র জানলেও ইনসুলিন বানায় না, কেন বানায় না সে আলোচনা আরেকদিন৷ তো যখন ইনসুলিন বানানোর প্রয়োজন হয় তখন অগ্নাশয়ের কোষ লাইব্রেরী থেকে ১১ নম্বর বইটা নিয়ে বসে (মানুষের ৪৬ টা ক্রোমোজোম, বা বই বলতে পারি)৷ ওখান থেকে খুজে বের করে ইনসুলিনের চ্যাপ্টার (বা gene)৷ এর পরের প্রক্রিয়া অনেকটা Lego সেট দিয়ে খেলনা বানানোর মতো৷ প্রোটিনের অনেক অনু আছে যেগুলোকে বিভিন্ন ভাবে সাজিয়ে বিভিন্ন বড় সাইজের প্রোটিন অনু বানানো যায়৷ ঠিক যেমন লেগো’র ক্ষেত্রে ছোট ছোট বিল্ডিং ব্লকগুলো থেকে গাড়ী, ট্রেন, বাড়ী, প্লেন, ব্রীজ এরকম অনেক কিছু বানানো যেতে পারে৷ কোষের ক্ষেত্রে যেটা হয় রাইবোজোম নামে কোষের একটা ছোট প্রিন্টারের মতো মেশিন আছে, যেটা জিন দেখে দেখে ছোট ছোট প্রোটিনের অনুগুলোকে সাজায়, ওরকম সাজিয়ে ইনসুলিনের অনু তৈরী করে৷ একইভাবে হিমোগ্লোবিন, আরও অন্যান্য নানা জিনিষ তৈরী করতে পারে, জিনের ফর্মুলা অনুযায়ী৷ একটা প্রুফ রিডারও আছে, বানানোর পরে যদি দেখা যায় ভুল হয়েছে তখন আবার পুরোটা ভেঙ্গে নতুন করে তৈরী করে৷ চমৎকার নিঃসন্দেহে, তবে মনে রাখতে হবে প্রকৃতি কয়েক বিলিয়ন বছর সময় পেয়েছে এই মেশিনারী উদ্ভাবন করতে৷
এবং প্রকৃতির উদ্ভাবন প্রক্রিয়া কোন ডিজাইন বোর্ড বসিয়ে করা হয় নি৷ বিশাল কোন মহা আবিস্কারকের কাজেরও প্রমান নেই৷ বরং উল্টোটা, প্রকৃতি একটা সহজিয়া পন্থা বের করছে এজন্য, সহজিয়া বুদ্ধির দিক থেকে, যদিও সময়ের বা রিসোর্সের কথা ভাবলে ভীষন ব্যয়বহুল৷ পন্থাটা হলো evolution৷ প্রতিবার random কিছু পরিবর্তন করা হয় আগের ডিজাইনে, তারপর যদি নতুন পরিবর্তিত ডিজাইন আগের চেয়ে পরিবেশের সাথে বেশী খাপ খাওয়াতে পারে (not necessarily it has to be an improvement) তাহলে সেটাকে রেখে দেয়া হবে৷ হয়তো হাজার হাজার ট্রায়াল/এরর এর পরে একটা সুবিধাজনক ডিজাইন পাওয়া যায়৷ এজন্যই প্রকৃতির বিলিয়ন বছর লেগেছে এটুকু আসতে৷
সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রকৃতির যেহেতু লক্ষ্যহীনভাবে random পরিবর্তন করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, অবধারিতভাবে নানা রকম ভুলভাল ঢুকে পড়ছে ডিজাইনের ভেতরে, এক্ষেত্রে ঐ লাইব্রেরীতে৷ পরিস্থিতি এতদুর গড়িয়েছে যে আগেই যেমন বল্লাম লাইব্রেরীর ৯৫% লেখা আর পাঠযোগ্য নেই, বা পড়তে পারলেও ব্যবহারযোগ্যতা হারিয়েছে৷ এমনকি কার্যকরী যেসব ফর্মুলা আছে সেগুলো শর্ট টার্মে কাজ করলেও, লংটার্মে মঘা ইউনানী দাওয়াই শ্রেনীর৷ যদি কেউ ভুল খুজতে বসে তাহলে আমাদের জিন লাইব্রেরীর প্রতি পাতায় লাল কালির দাগ পড়বে৷ এর ওপর আছে চলমান মিউটেশন, জন্মানোর সময় লাইব্রেরীর যে কপি নিয়ে জন্মেছিলেন, আজকে ৩০ বছর পর বার বার ফটোকপি করতে করতে যেগুলোর অনেকগুলোই ঝাপসা হয়ে গেছে৷ এক পর্যায়ে রাইবোজোম টুকটাক ভুল করা শুরু করবে, কারন অনেক জায়গায় সু্ত্রে হয়তো ভুল ঢুকে পড়েছে৷ দুঃখজনকভাবে ক্যান্সারের কারন হচ্ছে এই ফটোকপি জনিত ভুল (মিউটেশন)৷
বয়স যতো বাড়বে তত এসব ভুল জমতে থাকবে, এবং তত বুড়িয়ে যেতে থাকবো, রোগশোকের কাছে ততটাই vulnerable হয়ে যাবো৷ আবার অনেক সময় মুলসুত্রটাই গোজামিল দেওয়া সুত্র৷ যেমন আমরা যে খাবার খাই তার মধ্যে যত শক্তি থাকে পুরোটা কিন্তু বের করে নিতে পারি না, বলতে গেলে অধিকাংশ অপচয় করে বসি৷ কারন প্রকৃতি তার উদ্ভাবনী ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার জন্য বের করতে পারে নি৷ এরকম আরো উদাহরন আছে, আমাদের রক্তের লোহিত কনিকা অক্সিজেন পরিবহন করে খুব inefficient পদ্ধতিতে৷ যে কারনে শরীরে শক্তি থাকার পরও ট্রান্সপোর্টেশন যানজটে আমরা পুরোটা ব্যবহার করতে পারি না৷
সংক্ষেপে, আমরা কেন হাজার বছর বেচে থাকতে পারি না, তার কারন আমাদের শরীরের ডিজাইনটা অতটা ভালো হয় নি৷ এই সুত্রগুলোর প্রোগ্রামিংটা ঠিক সেরকম ভাবে করা হয় নি৷ এজন্য চল্লিশেই শরীরটা হেলে যেতে থাকে, ষাটে গিয়ে মোটামুটি যুদ্ধ করে বাচতে হয়৷ তবে উপায় আছে, অথবা তৈরী করা হচ্ছে, কয়েকবছর আগে জিনোম প্রজেক্টের সমাপ্তির পর মানুষের পুরো লাইব্রেরী এখন আমাদের হাতের মুঠোয়৷ যদিও পুরো কোডের সবটা এখনও ব্যাখ্যা করা হয় নি৷ আশার কথা হচ্ছে যেসব বাগ আছে এগুলো কিভাবে ফিক্স করা যায় তা নিয়ে তুমুল গবেষনা শুরু হচ্ছে৷ বেশ বড়সড় ফান্ডিং পাওয়া যাচ্ছে এসব কাজের জন্য৷ আমার ধারনা ২০১০ এর দশকে এটা একটা হট সাবজেক্ট হবে ডিগ্রী নেয়ার জন্য৷
Saturday, June 9, 2007
ইমাজিনেশন
আবার ট্রান্সলিটারেটেড টাইটেল দেয়ার জন্য দুঃখিত, অবশ্য আত্মীকরণ প্রক্রিয়ায় এগুলোর অনেকগুলোই হয়তো বাংলা ভাষার শব্দ, কে জানে৷ এখানে স্পেন্সার ওয়েলসের একটা লেকচার শুনতে গিয়েছিলাম চার পাচ মাস আগে৷ লোকটাকে আমার খুব পছন্দ, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ডকুমেন্টারীতে আপনারাও দেখেছেন হয়তো৷ তারপর থেকে অনেকদিন ধরেই মনের একটা অংশ প্রাগৈতিহাসিক যুগে পড়ে আছে৷ ব্যাপারটা এমন, অনেক সময় রাতে একটা নাড়া দেয়ার মতো সিনেমা দেখলে তারপর ২/১ দিন ঐ কাহিনীটা মনের মধ্যে ঘুরঘুর করতে থাকে, কেমন একটা ইমার্সিভ ফিলিং, আমার প্রস্তর যুগে পড়ে থাকাও অনেকটা কাছাকাছি, ইন্টেন্সিটি কম, কিন্তু অনেকদিন ধরে হচ্ছে৷ ঐ সংক্রান্ত কিছু দেখলেই আগ্রহ লাগে৷ ওয়েবে খুজি, টিভিতে দেখি পেলে কাজ বাদ দিয়ে দেখি, নানা রকম আদিবাসিদের গান শুনি কয়েক মাস ধরে৷ গাড়ীতে সবার কান ঝালাপালা করে দিয়েছি এসব গান শুনিয়ে৷
এখন নাড়াচাড়া করছি প্রিহিস্টরিক আর্ট নিয়ে একটা বই৷ দিনে মাত্র ৩০-৪০ মিনিট পড়ার সুযোগ পাই এজন্য শেষ করে উঠতে পারছি না৷ ওখানে দেখলাম এই কথাটা, আগেও জানতাম, আসলে সবাই শুনেছি কখনও না কখনও৷ প্রশ্নটা এমন, সভ্যতা কেন শুধু মানুষ তৈরী করেছে, অথবা আরেক ভাবে সভ্যতার চালিকাশক্তি কোথায়? হয়তো অন্য প্রানীদের সাথে এটাই আমাদের একটা দৃশ্যমান পার্থক্য৷ সায়েন্টিফিক আবিস্কার হোক, অস্ত্র/হাতিয়ার বানানো হোক, গল্প লেখা হোক আর গুহা চিত্র হোক৷ সৃজনশীলতা আমাদের সহজাত গুন, শেখাতে হয় না, হয়তো ধারালো করা যায় চর্চার মাধ্যমে৷ প্রাগৈতিহাসিক মানুষের ফেলে যাওয়া অলঙ্কার, পাথরে খোদাই করা ছবি, বর্শার হাতল সবজায়গায় মানুষ পরিস্কার ভাবে তার মনের ভেতরের আরেকটা মানুষের উপস্থিতির ছাপ রেখে গেছে৷
অনেক সময় প্রায়োগিক উদ্দ্যেশ্য বোঝা মুস্কিল৷ যেমন ২০-৩০ হাজার বছর আগের বর্শা বা এরকম কোন হাতিয়ারে খোদাই করা চিত্রকর্মের কার্যকারিতা প্রথম দেখায় বোঝা মুস্কিল৷ কারন বর্শা নিক্ষেপ করা, বা শিকার করায় এসব চিত্রকর্মের সত্যিকার কোন মুল্য নেই৷ কোন কোন ক্ষেত্রে চিত্র কর্ম করতে গিয়ে এসব হাতিয়ারের আকৃতি এতটা বদলে গেছে যে সত্যি সত্যি ওগুলো শিকারে ব্যবহার হতো কি না সন্দেহ৷
তাহলে ৩০ হাজার বছর আগে সময় নষ্ট করে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ এগুলো কেন করেছে৷ কেবল মাত্র সিম্বলিক ভ্যাল্যুর জন্য? এসবের পেছনে যে মানুষ মারাত্মক রকম সময় দিতো তার আরো প্রমান আছে৷ কিন্তু কেন? বরফ যুগে যখন বেচে থাকাটাই মুখ্য তখন এসব বিলাসিতা বলে যে এ ধরনের শিল্প কর্মের পেছনে জটিল এবং শক্তিশালী কোন চালিকা শক্তি আছে৷
ইউরোপে যেমন আধুনিক মানুষ (ক্রোম্যানিয়ন) আফ্রিকা থেকে আসার আগে আরেক প্রজাতির মানুষ ছিল, নিয়ান্ডার্থাল৷ নিয়ান্ডার্থালরা কয়েক লাখ বছর ধরেই ইউরোপের অধিবাসি, শক্ত গড়নের, শ্বেতকায়, বরফ যুগের উপযোগি শরীর৷ অন্যদিকে ক্রোম্যানিয়নরা হালকা পাতলা, লম্বাটে, কৃষ্ঞকায় গড়নের৷ নিয়ান্ডার্থালরা এত লক্ষ বছর পৃথিবীতে থাকলেও ওদের তৈরী কোন ছবি বা অলঙ্কারের উদাহরন পাওয়া যায় না (বিচ্ছিন্ন কিছু ক্ষেত্রে যেগুলো আছে সেগুলোর স্রষ্টা অনিশ্চিত, বা সন্দেহমুক্ত নয়)৷ নিয়ান্ডার্টালরা কেনো ছবি আকে নি, বা আকার প্রয়োজন বোধ করে নি, সেখানেই লুকিয়ে আছে কেন শুধু আমরাই সভ্যতা তৈরী করেছি তার উত্তর৷ সম্ভবত একই কারনে নিয়ান্ডার্টালরা প্রতিযোগিতায় না টিকতে পেরে বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ কারন? ইমাজিনেশন৷
আসলে সিম্বলিক চিন্তা করার ক্ষমতা থেকেই কিন্তু প্রতিনিয়ত নানা রকম আবিস্কার করছি৷ এখনকার টেকনোলজিকাল সভ্যতার ভিত্তিও এ্যাবস্ট্রাক্ট চিন্তা করার ক্ষমতা৷ হয়তো আরো দুচারটা প্রানীর এরকম ক্ষমতা আছে, কিন্তু আমাদের মতো এত ওয়েল ডেভেলপড নয়৷ নানা সময় আবার মানুষেরই সমাজ নানাভাবে এই চিন্তা করার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে৷ কারন ইমাজিনেশন একটা টুল, সমাজের দৃষ্টিতে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়, খারাপ কাজেও করা যায়৷ যদিও ভালো, খারাপের সংজ্ঞা পরিবর্তনশীল, আসলে ভিত্তিহীন এবং মুল্যহীন৷ ধর্ম যেমন আমাদের একটা আবিস্কার, আবার ধর্ম নিজেই সৃজনশীলতাকে ভীষনভাবে ম্যানিপুলেট করতে চায়, এই জন্যই ধর্ম আর সংস্কৃতিকে কে আমি খুব ভয় পাই, দুটোই অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাড়াতে চায় এবং পারেও৷
সে যাকগে প্রাগৈতিহাসিক আর্ট নিয়ে আরো কয়েকটা লেখা দিতে চাই, আজকে বাজারে যেতে হবে …
এখন নাড়াচাড়া করছি প্রিহিস্টরিক আর্ট নিয়ে একটা বই৷ দিনে মাত্র ৩০-৪০ মিনিট পড়ার সুযোগ পাই এজন্য শেষ করে উঠতে পারছি না৷ ওখানে দেখলাম এই কথাটা, আগেও জানতাম, আসলে সবাই শুনেছি কখনও না কখনও৷ প্রশ্নটা এমন, সভ্যতা কেন শুধু মানুষ তৈরী করেছে, অথবা আরেক ভাবে সভ্যতার চালিকাশক্তি কোথায়? হয়তো অন্য প্রানীদের সাথে এটাই আমাদের একটা দৃশ্যমান পার্থক্য৷ সায়েন্টিফিক আবিস্কার হোক, অস্ত্র/হাতিয়ার বানানো হোক, গল্প লেখা হোক আর গুহা চিত্র হোক৷ সৃজনশীলতা আমাদের সহজাত গুন, শেখাতে হয় না, হয়তো ধারালো করা যায় চর্চার মাধ্যমে৷ প্রাগৈতিহাসিক মানুষের ফেলে যাওয়া অলঙ্কার, পাথরে খোদাই করা ছবি, বর্শার হাতল সবজায়গায় মানুষ পরিস্কার ভাবে তার মনের ভেতরের আরেকটা মানুষের উপস্থিতির ছাপ রেখে গেছে৷
অনেক সময় প্রায়োগিক উদ্দ্যেশ্য বোঝা মুস্কিল৷ যেমন ২০-৩০ হাজার বছর আগের বর্শা বা এরকম কোন হাতিয়ারে খোদাই করা চিত্রকর্মের কার্যকারিতা প্রথম দেখায় বোঝা মুস্কিল৷ কারন বর্শা নিক্ষেপ করা, বা শিকার করায় এসব চিত্রকর্মের সত্যিকার কোন মুল্য নেই৷ কোন কোন ক্ষেত্রে চিত্র কর্ম করতে গিয়ে এসব হাতিয়ারের আকৃতি এতটা বদলে গেছে যে সত্যি সত্যি ওগুলো শিকারে ব্যবহার হতো কি না সন্দেহ৷
তাহলে ৩০ হাজার বছর আগে সময় নষ্ট করে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ এগুলো কেন করেছে৷ কেবল মাত্র সিম্বলিক ভ্যাল্যুর জন্য? এসবের পেছনে যে মানুষ মারাত্মক রকম সময় দিতো তার আরো প্রমান আছে৷ কিন্তু কেন? বরফ যুগে যখন বেচে থাকাটাই মুখ্য তখন এসব বিলাসিতা বলে যে এ ধরনের শিল্প কর্মের পেছনে জটিল এবং শক্তিশালী কোন চালিকা শক্তি আছে৷
ইউরোপে যেমন আধুনিক মানুষ (ক্রোম্যানিয়ন) আফ্রিকা থেকে আসার আগে আরেক প্রজাতির মানুষ ছিল, নিয়ান্ডার্থাল৷ নিয়ান্ডার্থালরা কয়েক লাখ বছর ধরেই ইউরোপের অধিবাসি, শক্ত গড়নের, শ্বেতকায়, বরফ যুগের উপযোগি শরীর৷ অন্যদিকে ক্রোম্যানিয়নরা হালকা পাতলা, লম্বাটে, কৃষ্ঞকায় গড়নের৷ নিয়ান্ডার্থালরা এত লক্ষ বছর পৃথিবীতে থাকলেও ওদের তৈরী কোন ছবি বা অলঙ্কারের উদাহরন পাওয়া যায় না (বিচ্ছিন্ন কিছু ক্ষেত্রে যেগুলো আছে সেগুলোর স্রষ্টা অনিশ্চিত, বা সন্দেহমুক্ত নয়)৷ নিয়ান্ডার্টালরা কেনো ছবি আকে নি, বা আকার প্রয়োজন বোধ করে নি, সেখানেই লুকিয়ে আছে কেন শুধু আমরাই সভ্যতা তৈরী করেছি তার উত্তর৷ সম্ভবত একই কারনে নিয়ান্ডার্টালরা প্রতিযোগিতায় না টিকতে পেরে বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ কারন? ইমাজিনেশন৷
আসলে সিম্বলিক চিন্তা করার ক্ষমতা থেকেই কিন্তু প্রতিনিয়ত নানা রকম আবিস্কার করছি৷ এখনকার টেকনোলজিকাল সভ্যতার ভিত্তিও এ্যাবস্ট্রাক্ট চিন্তা করার ক্ষমতা৷ হয়তো আরো দুচারটা প্রানীর এরকম ক্ষমতা আছে, কিন্তু আমাদের মতো এত ওয়েল ডেভেলপড নয়৷ নানা সময় আবার মানুষেরই সমাজ নানাভাবে এই চিন্তা করার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে৷ কারন ইমাজিনেশন একটা টুল, সমাজের দৃষ্টিতে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়, খারাপ কাজেও করা যায়৷ যদিও ভালো, খারাপের সংজ্ঞা পরিবর্তনশীল, আসলে ভিত্তিহীন এবং মুল্যহীন৷ ধর্ম যেমন আমাদের একটা আবিস্কার, আবার ধর্ম নিজেই সৃজনশীলতাকে ভীষনভাবে ম্যানিপুলেট করতে চায়, এই জন্যই ধর্ম আর সংস্কৃতিকে কে আমি খুব ভয় পাই, দুটোই অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাড়াতে চায় এবং পারেও৷
সে যাকগে প্রাগৈতিহাসিক আর্ট নিয়ে আরো কয়েকটা লেখা দিতে চাই, আজকে বাজারে যেতে হবে …
Wednesday, June 6, 2007
ভারত প্রসঙ্গে
বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভারত আসলে একটা ইন্টারেস্টিং ইস্যু৷ দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠি, অনুমান করি হয়তো অর্ধেকের চেয়ে বেশী, ভারতকে বন্ধুভাবাপন্ন দেশের চেয়ে বরং সন্দেহজনক প্রতিবেশী হিসেবে দেখে থাকে৷ না আমি জামাত পন্থি ৩/৪% লোকের কথা বলছি না, তাদের ক্যালকুলেশন আলাদা৷ গত কয়েকদিন ব্লগে বেশ কয়েকজন ব্লগার ভারতের ব্যাপারটা সামনে আনতে চাচ্ছেন, তা আনাই উচিত৷ গত এক বছরে ব্লগের একটা গুনগত পরিবর্তন হয়েছে৷ বলতে গেলে অনেক বড় পরিবর্তন, যারা আমার মতো গত বছর এই ব্লগে ছিলেন এবং সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন, তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ব্লগটা ছিল পুরোপুরো জামাত শিবিরদের আখড়া৷ এদেরকে ঠিক কারা খবর দিয়েছে জানি না, তবে এরা শুরু থেকেই আছে, আবার সবাই সবার সাথে লিংক্ড৷ মানে সবাই এক নেটওয়ার্কের, ওদের জালের বাইরের জামাতি কম৷ তো পরিবর্তনটা হচ্ছে জামাতি আস্ফালন আর নেই বললেই চলে, ওরা স্থায়ীভাবে সাইডলাইন্ড হয়েছে, যেমনটা হওয়ার কথা৷ এটা সম্ভব হতো না, যদি না আমরা সমস্যাটা সরাসরি মোকাবেলা না করতাম৷
ভারতের প্রসঙ্গটাও এরকম খোলামেলা আলোচনা করা উচিত৷ কারন এখানে ইনফরমেশনের সহজলভ্যতা এবং স্বচ্ছতার জন্য রাজনৈতিক কুট কৌশল বেশ কঠিন৷ যেটা সত্য সেটা লুকিয়ে ধানাই পানাই করে পার পাওয়া অসম্ভব৷ তবে ভারতের ইস্যুটা বেশ জটিল, কারন ভারতের সব কাজকর্ম একজন বাংলাদেশীর কাছে বন্ধুসুলভ বলে মেনে নেয়া কঠিন৷ মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুর মতো সাদাকালোতে ভাগ করা যায় না৷ যেমন ফারাক্কা বা হালের টিপাই বাধ সন্দেহ নাই বাংলাদেশের জন্য হুমকি, এবং একদম কিছু না করলে সেটাও ভুল হবে৷
তবে কি করা উচিত সে আলোচনার আগে, ভারত বিরোধিতা নিয়ে কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা যেতে পারে৷ যেমন ভারত যদি একটা মুসলিম প্রধান দেশ হতো তাহলেও কি ভারতের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম থাকতো? মনে হয় না৷ আবার যদি এমন হতো ভারত মুসলিম দেশ কিন্তু আমরা হিন্দুপ্রধান দেশ হতাম, তাহলে? ভারত বিরোধিতার সুত্রপাত পাকিস্তান আমলে, ভারতের জন্য যতটা না ভারত বিরোধিতা তার চেয়ে বেশী বিরোধিতা ভারত হিন্দু প্রধান দেশ বলে৷ এখনকার পাকিস্তান নিয়ে একটা মন্তব্য দেখেছিলাম (সম্ভবত টাইম ম্যাগাজিনে) নানা জাতি উপজাতিতে বিভক্ত সমস্যাসঙ্কুল পাকিস্তানের একমাত্র ইউনিফায়িং উপাদান হচ্ছে ভারত বিরোধিতা অথবা হিন্দু বিরোধিতা৷ হতেও পারে৷ এটা ঐ দেশের এবং আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটা ভীষন গুরুত্বপুর্ন উপাদান, কারন এদুদেশের মানুষ আসলেই ভারতকে অপছন্দ করে৷ এর পেছনে কারনও আছে, ৪৭ এ স্বাধীন হওয়ার আগে বেশ রক্তারক্তি হয়েছিল, তখন যে একটা তিক্ততা তৈরী হয়েছিল সেটা কখনই কাটেনি, আবার সাময়িক পলিটিকাল গেইনের জন্য রাজনৈতিক/সামাজিক নেতারাও তিক্ততা/বিতৃষ্ঞা ধরে রাখতে চেয়েছেন৷ ভারতেও মুসলিম বিরোধিতা কাজে দেয়, বিজেপির এই মুলধন এতই কাজে দেয় যে, গত কয়েকবছর ধরে ওরা ক্রমাগত প্রচার চালাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে মুসলিম অনুপ্রবেশ নিয়ে৷ পশ্চিম বঙ্গের চেয়েও এই প্রচারগুলো বেশী চলে মহারাস্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে৷ ভোটের রাজনীতিতে কংগ্রেস বা বামপন্থিদের ঘায়েল করার জন্য এটা একটা দরকারী ইস্যু হিন্দু জাতিয়তাবাদী দলগুলোর, ঠিক যেমন ভারত ইস্যু জামাত-বিএনপি (আগে মুসলিম লীগ) কাজে লাগায়৷
রাজানীতিবিদরা ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন এজন্য তাদের দোষ দেই না, কারন এটা তাদের পেশা৷ কিন্তু জনগনের জন্য সমস্যাগুলোর সমাধান কিভাবে সম্ভব? যেমন ফারাক্কা ইস্যু নিয়ে আমরা যদি ভীষন আন্দোলন লংমার্চ করি, তাতে ওরা ফারাক্কা বাধ ভেঙ্গে ফেলবে? ওদের দেশে যে বাংলাদেশী মুসলিম অনুপ্রবেশ নিয়ে এত তুলকালাম কান্ড হচ্ছে, প্রায়ই পত্রিকার শিরোনামে আসছে, সেই খবর আমরা কয়জন পাই৷ সত্যিকার অর্থে এটা যে একটা ইস্যু হওয়ার যোগ্যতা রাখতে পারে, আমি দেশের বাইরে না আসলে বিশ্বাস করতাম না৷ কারন এমনিতে হাস্যকর একটা ব্যপার যে বাংলাদেশ থেকে লাখে লাখে মুসলিম ভারতে অনুপ্রবেশ করছে, যেটা ওদের দাবী, বাংলাদেশ থেকে লোকে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়শিয়া যায় কামলা দিতে, তাই বলে কাতারে কাতারে ভারতে যাচ্ছে, এমন রিপোর্ট কোনদিন বাংলাদেশী পত্রিকায়ও দেখিনি৷ অথচ আমার পরিচিত অনেক দক্ষিন ভারতীয়রা এটাকে সত্য বলেই বিশ্বাস করে৷ সুতরাং মিডিয়াতে ভারত বিরোধি আস্ফালন করলেই যদি সমাধান হয়ে যেত তাহলে পরিস্থিতি এতদুর গড়াতো না৷
সমাধান কিভাবে করা যেতে পারে? ধরা যাক ত্রিপুরা একটা স্বাধীন দেশ আর আমাদের সিলেট জেলা থেকে কয়েকটা নদী ত্রিপুরাতে গিয়েছে৷ আমরা সিলেটে বাধ দিয়ে ওদের বারোটা বাজিয়ে দিলাম৷ তো এখন কি করলে ত্রিপুরাবাসি এই সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে পারে?
- প্রথমে বলে রাখি আমাদের বাধের জন্য ত্রিপুরায় যে এত সমস্যা হচ্ছে এটা আমাদের জানার সম্ভাবনা বেশ কম৷ কোন রাজনৈতিক দল এটা জানানোর দ্বায়িত্ব নেবে না ভোট হারানোর ভয়ে৷ যেমন বাস্তবে কাপ্তাই বাধ দিয়ে যে আমরা চাকমাদের অসংখ্য জমি জমা, চাকমা রাজার প্রাসাদ, আরও অন্যান্য পুরাকীর্তি ধ্বংস করেছি এটা আমরা কয়জনে জানি? আমি জানতাম না, কারো মুখে কখনও শুনিও নাই৷ এইজন্য বাংলাদেশের মুলভুখন্ডের কেউ সরব প্রতিবাদ করেছে বা এখন করছে তাও কানে আসে নি৷ দেশের ভেতরেই যদি এই অবস্থা হয়, অন্য দেশে হলে কি হতে পারে বলাই বাহুল্য৷
- এখন ত্রিপুরায় এই নিয়ে যদি আন্দোলন, মিডিয়াতে বাংলাদেশ ব্যাশিং হয় তাতে আমাদের সহানুভুতি বাড়বে?
- পাল্টা আন্দোলন আমাদের দেশেও চলতে পারে৷ এবং পাল্টা-পাল্টির এই খেলায় সমাধানের সম্ভাবনা কম৷
যেটা করা যেতে পারে তা হলো অন্যদেশটাতে জনমত তৈরী করা৷ যেমন ফারাক্কা, টিপাই, বিএসএফ এসব সমস্যাগুলো ভারতের জনগনের কাছে আমাদের দৃষ্টিকোন থেকে প্রকাশ করা৷ ওখানকার সাধারন মানুষ, বুদ্ধিজীবি এবং রাজনৈতিক মহলে এগুলোর গুরুত্ব নিয়ে জনমত তৈরী করা৷ বেশীরভাগ ভারতীয় এমনকি পশ্চিম বঙ্গের লোকজন জানেই না যে ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশে কি রকম পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে৷ আমরা অনেকে হয়তো জানি না কলকাতার বুদ্ধিজীবি সমাজ সচরাচর বাংলাদেশের পক্ষে থাকে৷ সেই একাত্তর থেকে শুরু৷ অল্প কিছু বিজেপির লোকজন ছাড়া বেশীরভাগকে বাংলাদেশের পাশে পাওয়ার কথা৷ কিন্তু আমরা কি কখনও নদী সমস্যার ভয়াবহতা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করেছি? বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক নেতাদেরকে বাংলাদেশে ডেকে এনে সরেজমিনে দেখিয়ে দেয়া যায় রাজশাহী, পাবনা বা কুষ্টিয়া এলাকায় কিভাবে নদী শুকিয়ে যাচ্ছে৷ ভারতীয় মিডিয়াতে এই নিয়ে কলাম লেখা যেতে পারে৷ ভারতে গিয়ে ডকুমেন্টারি দেখানো যেতে পারে, সংবাদ সম্মেলন করে জনসাধারনকে জানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে৷ মোদ্দা কথা হচ্ছে বাধ-ফাদে যে আমাদের ভীষন সমস্যা হচ্ছে এটা ঐ দেশের আমজনতাকে জানানো দরকার, বাংলাদেশের সমস্যাটার গুরুত্ব বুঝিয়ে সিম্প্যাথি তৈরী করা দরকার৷
ঘরে বসে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে বোকামি করার মানে হয় না৷ তাও যদি ভারতের সাথে যুদ্ধ করে পোষাতো৷ একটা চড় মারতে গেলে দুটো লাথি খেয়ে আসার সম্ভাবনা আছে৷ দুদেশের শুধু রাজনৈতিক নেতা নয় বরং জনসাধারনের মধ্যে বোঝাপড়া দরকার৷ একটা সুবিধা হচ্ছে ভারত গনতান্ত্রিক দেশ, রাজনীতিবিদরা যতই কৌশলি হোক ওখানে, বাংলাদেশের পক্ষে সেন্টিমেন্ট তৈরী করতে পারলে সমস্যার সমাধান না করে উপায় নেই৷ দুঃখজনক হচ্ছে সেই চেষ্টাটা না করে আমরা ঢিল ছোড়া ছুড়ির পন্থাটা নিতে চাই৷
অবশ্য ভারতের সাথে সমস্যাগুলো না থাকলে বিএনপি জামাতের একটু অসুবিধা হবে৷ এজন্য গত ৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও তারা না ফারাক্কা না টিপাই নিয়ে কোন আলোচনা করেছে৷ আওয়ামী লীগ আমলে একবার সাময়িক কিছু সমাধান পাওয়া গিয়েছিল, তাও পরে আওয়ামী লীগের আগ্রহের অভাবে বা ইচ্ছা করেই হয়তো পুরোটা সমাধান হয় নি৷ তবে যেটা লক্ষ্যনীয় তা হলো, একবার যতটুকু সমাধান পেয়েছিলাম সেটাও আলোচনার মাধ্যমে ঘরে বসে লংমার্চ আন্দোলন করে নয়৷
ভারতের প্রসঙ্গটাও এরকম খোলামেলা আলোচনা করা উচিত৷ কারন এখানে ইনফরমেশনের সহজলভ্যতা এবং স্বচ্ছতার জন্য রাজনৈতিক কুট কৌশল বেশ কঠিন৷ যেটা সত্য সেটা লুকিয়ে ধানাই পানাই করে পার পাওয়া অসম্ভব৷ তবে ভারতের ইস্যুটা বেশ জটিল, কারন ভারতের সব কাজকর্ম একজন বাংলাদেশীর কাছে বন্ধুসুলভ বলে মেনে নেয়া কঠিন৷ মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুর মতো সাদাকালোতে ভাগ করা যায় না৷ যেমন ফারাক্কা বা হালের টিপাই বাধ সন্দেহ নাই বাংলাদেশের জন্য হুমকি, এবং একদম কিছু না করলে সেটাও ভুল হবে৷
তবে কি করা উচিত সে আলোচনার আগে, ভারত বিরোধিতা নিয়ে কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা যেতে পারে৷ যেমন ভারত যদি একটা মুসলিম প্রধান দেশ হতো তাহলেও কি ভারতের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম থাকতো? মনে হয় না৷ আবার যদি এমন হতো ভারত মুসলিম দেশ কিন্তু আমরা হিন্দুপ্রধান দেশ হতাম, তাহলে? ভারত বিরোধিতার সুত্রপাত পাকিস্তান আমলে, ভারতের জন্য যতটা না ভারত বিরোধিতা তার চেয়ে বেশী বিরোধিতা ভারত হিন্দু প্রধান দেশ বলে৷ এখনকার পাকিস্তান নিয়ে একটা মন্তব্য দেখেছিলাম (সম্ভবত টাইম ম্যাগাজিনে) নানা জাতি উপজাতিতে বিভক্ত সমস্যাসঙ্কুল পাকিস্তানের একমাত্র ইউনিফায়িং উপাদান হচ্ছে ভারত বিরোধিতা অথবা হিন্দু বিরোধিতা৷ হতেও পারে৷ এটা ঐ দেশের এবং আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটা ভীষন গুরুত্বপুর্ন উপাদান, কারন এদুদেশের মানুষ আসলেই ভারতকে অপছন্দ করে৷ এর পেছনে কারনও আছে, ৪৭ এ স্বাধীন হওয়ার আগে বেশ রক্তারক্তি হয়েছিল, তখন যে একটা তিক্ততা তৈরী হয়েছিল সেটা কখনই কাটেনি, আবার সাময়িক পলিটিকাল গেইনের জন্য রাজনৈতিক/সামাজিক নেতারাও তিক্ততা/বিতৃষ্ঞা ধরে রাখতে চেয়েছেন৷ ভারতেও মুসলিম বিরোধিতা কাজে দেয়, বিজেপির এই মুলধন এতই কাজে দেয় যে, গত কয়েকবছর ধরে ওরা ক্রমাগত প্রচার চালাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে মুসলিম অনুপ্রবেশ নিয়ে৷ পশ্চিম বঙ্গের চেয়েও এই প্রচারগুলো বেশী চলে মহারাস্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে৷ ভোটের রাজনীতিতে কংগ্রেস বা বামপন্থিদের ঘায়েল করার জন্য এটা একটা দরকারী ইস্যু হিন্দু জাতিয়তাবাদী দলগুলোর, ঠিক যেমন ভারত ইস্যু জামাত-বিএনপি (আগে মুসলিম লীগ) কাজে লাগায়৷
রাজানীতিবিদরা ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন এজন্য তাদের দোষ দেই না, কারন এটা তাদের পেশা৷ কিন্তু জনগনের জন্য সমস্যাগুলোর সমাধান কিভাবে সম্ভব? যেমন ফারাক্কা ইস্যু নিয়ে আমরা যদি ভীষন আন্দোলন লংমার্চ করি, তাতে ওরা ফারাক্কা বাধ ভেঙ্গে ফেলবে? ওদের দেশে যে বাংলাদেশী মুসলিম অনুপ্রবেশ নিয়ে এত তুলকালাম কান্ড হচ্ছে, প্রায়ই পত্রিকার শিরোনামে আসছে, সেই খবর আমরা কয়জন পাই৷ সত্যিকার অর্থে এটা যে একটা ইস্যু হওয়ার যোগ্যতা রাখতে পারে, আমি দেশের বাইরে না আসলে বিশ্বাস করতাম না৷ কারন এমনিতে হাস্যকর একটা ব্যপার যে বাংলাদেশ থেকে লাখে লাখে মুসলিম ভারতে অনুপ্রবেশ করছে, যেটা ওদের দাবী, বাংলাদেশ থেকে লোকে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়শিয়া যায় কামলা দিতে, তাই বলে কাতারে কাতারে ভারতে যাচ্ছে, এমন রিপোর্ট কোনদিন বাংলাদেশী পত্রিকায়ও দেখিনি৷ অথচ আমার পরিচিত অনেক দক্ষিন ভারতীয়রা এটাকে সত্য বলেই বিশ্বাস করে৷ সুতরাং মিডিয়াতে ভারত বিরোধি আস্ফালন করলেই যদি সমাধান হয়ে যেত তাহলে পরিস্থিতি এতদুর গড়াতো না৷
সমাধান কিভাবে করা যেতে পারে? ধরা যাক ত্রিপুরা একটা স্বাধীন দেশ আর আমাদের সিলেট জেলা থেকে কয়েকটা নদী ত্রিপুরাতে গিয়েছে৷ আমরা সিলেটে বাধ দিয়ে ওদের বারোটা বাজিয়ে দিলাম৷ তো এখন কি করলে ত্রিপুরাবাসি এই সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে পারে?
- প্রথমে বলে রাখি আমাদের বাধের জন্য ত্রিপুরায় যে এত সমস্যা হচ্ছে এটা আমাদের জানার সম্ভাবনা বেশ কম৷ কোন রাজনৈতিক দল এটা জানানোর দ্বায়িত্ব নেবে না ভোট হারানোর ভয়ে৷ যেমন বাস্তবে কাপ্তাই বাধ দিয়ে যে আমরা চাকমাদের অসংখ্য জমি জমা, চাকমা রাজার প্রাসাদ, আরও অন্যান্য পুরাকীর্তি ধ্বংস করেছি এটা আমরা কয়জনে জানি? আমি জানতাম না, কারো মুখে কখনও শুনিও নাই৷ এইজন্য বাংলাদেশের মুলভুখন্ডের কেউ সরব প্রতিবাদ করেছে বা এখন করছে তাও কানে আসে নি৷ দেশের ভেতরেই যদি এই অবস্থা হয়, অন্য দেশে হলে কি হতে পারে বলাই বাহুল্য৷
- এখন ত্রিপুরায় এই নিয়ে যদি আন্দোলন, মিডিয়াতে বাংলাদেশ ব্যাশিং হয় তাতে আমাদের সহানুভুতি বাড়বে?
- পাল্টা আন্দোলন আমাদের দেশেও চলতে পারে৷ এবং পাল্টা-পাল্টির এই খেলায় সমাধানের সম্ভাবনা কম৷
যেটা করা যেতে পারে তা হলো অন্যদেশটাতে জনমত তৈরী করা৷ যেমন ফারাক্কা, টিপাই, বিএসএফ এসব সমস্যাগুলো ভারতের জনগনের কাছে আমাদের দৃষ্টিকোন থেকে প্রকাশ করা৷ ওখানকার সাধারন মানুষ, বুদ্ধিজীবি এবং রাজনৈতিক মহলে এগুলোর গুরুত্ব নিয়ে জনমত তৈরী করা৷ বেশীরভাগ ভারতীয় এমনকি পশ্চিম বঙ্গের লোকজন জানেই না যে ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশে কি রকম পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে৷ আমরা অনেকে হয়তো জানি না কলকাতার বুদ্ধিজীবি সমাজ সচরাচর বাংলাদেশের পক্ষে থাকে৷ সেই একাত্তর থেকে শুরু৷ অল্প কিছু বিজেপির লোকজন ছাড়া বেশীরভাগকে বাংলাদেশের পাশে পাওয়ার কথা৷ কিন্তু আমরা কি কখনও নদী সমস্যার ভয়াবহতা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করেছি? বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক নেতাদেরকে বাংলাদেশে ডেকে এনে সরেজমিনে দেখিয়ে দেয়া যায় রাজশাহী, পাবনা বা কুষ্টিয়া এলাকায় কিভাবে নদী শুকিয়ে যাচ্ছে৷ ভারতীয় মিডিয়াতে এই নিয়ে কলাম লেখা যেতে পারে৷ ভারতে গিয়ে ডকুমেন্টারি দেখানো যেতে পারে, সংবাদ সম্মেলন করে জনসাধারনকে জানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে৷ মোদ্দা কথা হচ্ছে বাধ-ফাদে যে আমাদের ভীষন সমস্যা হচ্ছে এটা ঐ দেশের আমজনতাকে জানানো দরকার, বাংলাদেশের সমস্যাটার গুরুত্ব বুঝিয়ে সিম্প্যাথি তৈরী করা দরকার৷
ঘরে বসে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে বোকামি করার মানে হয় না৷ তাও যদি ভারতের সাথে যুদ্ধ করে পোষাতো৷ একটা চড় মারতে গেলে দুটো লাথি খেয়ে আসার সম্ভাবনা আছে৷ দুদেশের শুধু রাজনৈতিক নেতা নয় বরং জনসাধারনের মধ্যে বোঝাপড়া দরকার৷ একটা সুবিধা হচ্ছে ভারত গনতান্ত্রিক দেশ, রাজনীতিবিদরা যতই কৌশলি হোক ওখানে, বাংলাদেশের পক্ষে সেন্টিমেন্ট তৈরী করতে পারলে সমস্যার সমাধান না করে উপায় নেই৷ দুঃখজনক হচ্ছে সেই চেষ্টাটা না করে আমরা ঢিল ছোড়া ছুড়ির পন্থাটা নিতে চাই৷
অবশ্য ভারতের সাথে সমস্যাগুলো না থাকলে বিএনপি জামাতের একটু অসুবিধা হবে৷ এজন্য গত ৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও তারা না ফারাক্কা না টিপাই নিয়ে কোন আলোচনা করেছে৷ আওয়ামী লীগ আমলে একবার সাময়িক কিছু সমাধান পাওয়া গিয়েছিল, তাও পরে আওয়ামী লীগের আগ্রহের অভাবে বা ইচ্ছা করেই হয়তো পুরোটা সমাধান হয় নি৷ তবে যেটা লক্ষ্যনীয় তা হলো, একবার যতটুকু সমাধান পেয়েছিলাম সেটাও আলোচনার মাধ্যমে ঘরে বসে লংমার্চ আন্দোলন করে নয়৷
পোষা নেকড়ে
কালকে পিবিএস-এ একটা প্রোগ্রাম দেখাচ্ছিল কুকুর আর মানুষের সিম্বায়োটিক সম্পর্ক নিয়ে৷ নিকোলাস ওয়েডের “Before the dawn” পড়ার সময়েও এরকম তথ্য দেখেছিলাম যে গত ২০ হাজার বছরে আমাদের সভ্যতার গড়ে ওঠার সাথে কুকুরের একটা গুরুত্বপুর্ন সম্পর্ক আছে৷ আবার উল্টোটাও সত্যি কুকুরের আজকের যে চেহারা আমরা দেখি এটা কিন্তু মানুষের হাতে গড়া৷ এই জায়গাটাই অদ্ভুত মনে হয়, কারন অন্যান্য পোষা প্রানীর চেয়ে বোধ হয় কুকুরের ক্ষেত্রেই মানুষের প্রভাবে সবচেয়ে বেশী বিবর্তন হয়েছে৷
বিবর্তন কেন? কারন কুকুর আসলে এক ধরনের নেকড়ে৷ জংলী নেকড়ের বেশীরভাগ বৈশিষ্ট্যই আছে, কিন্তু কয়েকটা ক্ষেত্রে পার্থক্যও আছে, আর এই পার্থক্যগুলো তৈরীতে মানুষের সরাসরি ভুমিকা আছে, মানে দাড়াচ্ছে এগুলো প্রকৃতি থেকে অটোমেটিক বিবর্তিত হয়ে তৈরী হয় নি বরং মানুষের কৃত্রিম সিলেক্টিভ প্রেশারের কারনে গত ১৫-২০ হাজার বছরে এই পরিবর্তনগুলো হয়েছে৷ ২০ হাজার বছর আসলে বিবর্তনের জন্য খুব কম সময়, বলতে গেলে ২০ হাজার বছর আগের একজন মানুষের চেয়ে আমাদের পার্থক্য খুব কম (যদিও ধরা হয়ে থাকে বর্তমানে মানুষের মধ্যে সাদা-কালো-বাদামি যে বর্ন তৈরী হয়েছে তা মুলত গত ২০-৩০ হাজার বছরের মিউটেশনের ফলাফল)৷
পোষা কুকুরের সাথে নেকড়ের (এক্ষেত্রে Gray Wolf) মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তুলনা করলে দেখা যায় ওদের পার্থক্য মাত্র ০.২%৷ যেখানে নেকড়ের সাথে কায়োটির (Coyote – শেয়ালের মতো দেখতে উত্তর আমেরিকাতে আছে) পার্থক্য ৪%৷ জেনেটিক এভিডেন্স থেকে মনে হয় কুকুর আসলে গ্রে উল্ফ থেকেই এসেছে, শেয়াল/খেক শিয়ালের সাথে তাদের পার্থক্য তুলনামুলক ভাবে বেশী৷
কিন্তু গ্রে উল্ফকে কুকুর বানালো কে? কালকের প্রোগ্রামে দেখাচ্ছিল পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে পোষা কুকুরের ডিএনএ নিয়ে দেখা হচ্ছিল কুকুর পোষা কোথায় প্রথম শুরু হয়৷ অনেকটা ফরেনসিক সায়েন্সের মতো, অতীতে ফিরে গিয়ে যেহেতু সরাসরি দেখে আসার উপায় নেই, সুতরাং এখনকার এভিডেন্সগুলোকেই বিশ্লেষন করে দেখতে হচ্ছে৷ একটা উপায় হচ্ছে কোন এলাকায় পোষা কুকুরের কেমন ডাইভারসিটি হিসেব করে দেখা৷ ডাইভার্সিটি কারন, উত্স বের করার জন্য ডাইভার্সিটি বেশ গুরুত্বপু্র্ন, একটা উদাহরন দেই৷ ধরা যাক ক, খ, গ তিনটি গ্রাম পাশাপাশি৷ এখন আমি যদি ওখানকার মানুষের last name নিয়ে একটা জরীপ চালিয়ে দেখি ক গ্রামে “তালুকদার” ৪০%, খ গ্রামে ২০% আর গ গ্রামে ১৫%৷ তালুকদারদের আদিনিবাস যদি এ তিনটি গ্রামের যে কোন একটা হয় তাহলে কোনটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? নিশ্চয়ই “ক”৷ যেমন মানুষের ক্ষেত্রে আমাদের জেনেটিক ডাইভার্সিটি সবচেয়ে বেশি আফ্রিকাতে৷ হিসেব করলে বোঝা যায় সবচেয়ে পুরোনো জিন আছে এরকম লোকেরা দক্ষিন পুর্ব আফ্রিকাতে থাকে৷ এরকম একটা গোষ্ঠি হচ্ছে Khoisan-রা ৷ জেনেটিক প্রমান ছাড়া আলাদা ভাবে ফসিল এভিডেন্স থেকেও বোঝা যায় আফ্রিকার রিফ্ট ভ্যালী বা তারপাশের এলাকা আমাদের আদিনিবাস৷
তো কুকুরদের ক্ষেত্রে এরকম ডাইভার্সিটি স্টাডি করে দেখা গেল যে পোষা কুকুরদের ডাইভার্সিটি চীনে সবচেয়ে বেশী৷ মোটামুটি ধারনা করা যায় বর্তমান চীন বা সাইবেরিয়াতে কুকুর পোষা সবার আগে শুরু হয়েছিল৷ সম্ভবত হঠাত্ করেই বিচ্ছিন্নভাবে, কোন ধরনের প্ল্যান ছাড়া৷ এমনিতেই মানুষের বসতির আশে পাশে অনেক প্রানী ঘুরঘুর করে৷ ২০ হাজার বছর আগে শিকার নির্ভর যাযাবর মানুষের আশে পাশে গ্রে উল্ফ থাকা খুব স্বাভাবিক৷ কারন উল্ফ অনেক ক্ষেত্রেই opportunistic scavenger এর ভুমিকা নেয়৷ হয়তো কোন এক ক্ল্যানের মানুষ উল্ফের মধ্যে যেগুলো একটু tame সেরকম দু একটা কাছে রাখা শুরু করে৷
এবং নেকড়ে থেকে কুকুর এর পরে বেশ দ্রুত৷ নেকড়ে এমনিতে বন্য এবং হিংস্র প্রানী৷ কিন্তু নেকড়ে আবার গোষ্ঠিবদ্ধ প্রানী, দলের আলফা নেকড়েকে মেনে চলে৷ মানুষ যেটা করেছে প্রতি জেনারেশনে সেই সব নেকড়েকে বেছে নিয়েছে যেগুলোর হিংস্রতা কম, অথচ মানুষকে আলফা নেকড়ে হিসেবে মেনে চলে৷ এভাবে প্রতি জেনারেশনে বাছাই করতে করতে কয়েক হাজার বছরে শুধু সেই নেকড়ে গুলোই সুযোগ পেয়েছে যারা মানুষের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে৷ এমনিতে প্রকৃতি লম্বা সময়ে এ ধরনের সিলেকশন করে (যেটা বিবর্তনের কারন), এক্ষেত্রে মানুষ ইচ্ছাকৃত ভাবে সিলেক্ট করে গ্রে উল্ফকে কুকুর বানিয়ে ছেড়েছে৷
আরো অদ্ভুত হচ্ছে এখন যে এত ধরনের/আকারের কুকুর আমরা দেখি এগুলোর সবগুলোই মানুষের হাতে বানানো৷ অনেকগুলো আছে যেগুলো গত কয়েকশ বছরে বানানো হয়েছে৷ যেমন বুলডগ, গত একশ বছরে এরকম চেহারা পেয়েছে৷ কুইন ভিক্টোরিয়ার আমলেও এখনকার চেহারার বুলডগ ছিল না৷ উনবিংশ শতাব্দির শেষ থেকে শুরু করে সিলেক্টিভ ব্রিডিং এর মাধ্যমে বুলডগের আপাত হিংস্র চেহারা বানানো হয়েছে৷ আবার যেমন টেরিয়ার তৈরী করা হয়েছিল টুকটাক শিকারের জন্য৷ পিকিং এর লায়ন ডগ তৈরী করেছিল চিনের রাজারা, পরে ভিক্টোরিয়ান যুগে ইউরোপে ব্যপক জনপ্রিয় হয় ছোট সাইজের এই কুকুরগুলো৷
তবে মানুষ আর কুকুরের ২০ হাজার বছরের সম্পর্কের একটা ক্রান্তিকাল যাচ্ছে এখন৷ যেসব কারনে মানুষের জন্য কুকুর এত প্রয়োজনীয় ছিল সেগুলো বেশীরভাগই আর নেই এখন৷ আবার অতিরিক্ত ব্রিডিং এ এখন এমন কুকুর তৈরী করা হচ্ছে/হয়েছে যেগুলো বায়োলজিকালী আনফিট৷ এজন্য মনে হয় যেহেতু আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে কুকুরকে তার নিজের রাস্তায় যেতে দেয়াই ভাল৷
বিবর্তন কেন? কারন কুকুর আসলে এক ধরনের নেকড়ে৷ জংলী নেকড়ের বেশীরভাগ বৈশিষ্ট্যই আছে, কিন্তু কয়েকটা ক্ষেত্রে পার্থক্যও আছে, আর এই পার্থক্যগুলো তৈরীতে মানুষের সরাসরি ভুমিকা আছে, মানে দাড়াচ্ছে এগুলো প্রকৃতি থেকে অটোমেটিক বিবর্তিত হয়ে তৈরী হয় নি বরং মানুষের কৃত্রিম সিলেক্টিভ প্রেশারের কারনে গত ১৫-২০ হাজার বছরে এই পরিবর্তনগুলো হয়েছে৷ ২০ হাজার বছর আসলে বিবর্তনের জন্য খুব কম সময়, বলতে গেলে ২০ হাজার বছর আগের একজন মানুষের চেয়ে আমাদের পার্থক্য খুব কম (যদিও ধরা হয়ে থাকে বর্তমানে মানুষের মধ্যে সাদা-কালো-বাদামি যে বর্ন তৈরী হয়েছে তা মুলত গত ২০-৩০ হাজার বছরের মিউটেশনের ফলাফল)৷
পোষা কুকুরের সাথে নেকড়ের (এক্ষেত্রে Gray Wolf) মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তুলনা করলে দেখা যায় ওদের পার্থক্য মাত্র ০.২%৷ যেখানে নেকড়ের সাথে কায়োটির (Coyote – শেয়ালের মতো দেখতে উত্তর আমেরিকাতে আছে) পার্থক্য ৪%৷ জেনেটিক এভিডেন্স থেকে মনে হয় কুকুর আসলে গ্রে উল্ফ থেকেই এসেছে, শেয়াল/খেক শিয়ালের সাথে তাদের পার্থক্য তুলনামুলক ভাবে বেশী৷
কিন্তু গ্রে উল্ফকে কুকুর বানালো কে? কালকের প্রোগ্রামে দেখাচ্ছিল পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে পোষা কুকুরের ডিএনএ নিয়ে দেখা হচ্ছিল কুকুর পোষা কোথায় প্রথম শুরু হয়৷ অনেকটা ফরেনসিক সায়েন্সের মতো, অতীতে ফিরে গিয়ে যেহেতু সরাসরি দেখে আসার উপায় নেই, সুতরাং এখনকার এভিডেন্সগুলোকেই বিশ্লেষন করে দেখতে হচ্ছে৷ একটা উপায় হচ্ছে কোন এলাকায় পোষা কুকুরের কেমন ডাইভারসিটি হিসেব করে দেখা৷ ডাইভার্সিটি কারন, উত্স বের করার জন্য ডাইভার্সিটি বেশ গুরুত্বপু্র্ন, একটা উদাহরন দেই৷ ধরা যাক ক, খ, গ তিনটি গ্রাম পাশাপাশি৷ এখন আমি যদি ওখানকার মানুষের last name নিয়ে একটা জরীপ চালিয়ে দেখি ক গ্রামে “তালুকদার” ৪০%, খ গ্রামে ২০% আর গ গ্রামে ১৫%৷ তালুকদারদের আদিনিবাস যদি এ তিনটি গ্রামের যে কোন একটা হয় তাহলে কোনটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? নিশ্চয়ই “ক”৷ যেমন মানুষের ক্ষেত্রে আমাদের জেনেটিক ডাইভার্সিটি সবচেয়ে বেশি আফ্রিকাতে৷ হিসেব করলে বোঝা যায় সবচেয়ে পুরোনো জিন আছে এরকম লোকেরা দক্ষিন পুর্ব আফ্রিকাতে থাকে৷ এরকম একটা গোষ্ঠি হচ্ছে Khoisan-রা ৷ জেনেটিক প্রমান ছাড়া আলাদা ভাবে ফসিল এভিডেন্স থেকেও বোঝা যায় আফ্রিকার রিফ্ট ভ্যালী বা তারপাশের এলাকা আমাদের আদিনিবাস৷
তো কুকুরদের ক্ষেত্রে এরকম ডাইভার্সিটি স্টাডি করে দেখা গেল যে পোষা কুকুরদের ডাইভার্সিটি চীনে সবচেয়ে বেশী৷ মোটামুটি ধারনা করা যায় বর্তমান চীন বা সাইবেরিয়াতে কুকুর পোষা সবার আগে শুরু হয়েছিল৷ সম্ভবত হঠাত্ করেই বিচ্ছিন্নভাবে, কোন ধরনের প্ল্যান ছাড়া৷ এমনিতেই মানুষের বসতির আশে পাশে অনেক প্রানী ঘুরঘুর করে৷ ২০ হাজার বছর আগে শিকার নির্ভর যাযাবর মানুষের আশে পাশে গ্রে উল্ফ থাকা খুব স্বাভাবিক৷ কারন উল্ফ অনেক ক্ষেত্রেই opportunistic scavenger এর ভুমিকা নেয়৷ হয়তো কোন এক ক্ল্যানের মানুষ উল্ফের মধ্যে যেগুলো একটু tame সেরকম দু একটা কাছে রাখা শুরু করে৷
এবং নেকড়ে থেকে কুকুর এর পরে বেশ দ্রুত৷ নেকড়ে এমনিতে বন্য এবং হিংস্র প্রানী৷ কিন্তু নেকড়ে আবার গোষ্ঠিবদ্ধ প্রানী, দলের আলফা নেকড়েকে মেনে চলে৷ মানুষ যেটা করেছে প্রতি জেনারেশনে সেই সব নেকড়েকে বেছে নিয়েছে যেগুলোর হিংস্রতা কম, অথচ মানুষকে আলফা নেকড়ে হিসেবে মেনে চলে৷ এভাবে প্রতি জেনারেশনে বাছাই করতে করতে কয়েক হাজার বছরে শুধু সেই নেকড়ে গুলোই সুযোগ পেয়েছে যারা মানুষের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে৷ এমনিতে প্রকৃতি লম্বা সময়ে এ ধরনের সিলেকশন করে (যেটা বিবর্তনের কারন), এক্ষেত্রে মানুষ ইচ্ছাকৃত ভাবে সিলেক্ট করে গ্রে উল্ফকে কুকুর বানিয়ে ছেড়েছে৷
আরো অদ্ভুত হচ্ছে এখন যে এত ধরনের/আকারের কুকুর আমরা দেখি এগুলোর সবগুলোই মানুষের হাতে বানানো৷ অনেকগুলো আছে যেগুলো গত কয়েকশ বছরে বানানো হয়েছে৷ যেমন বুলডগ, গত একশ বছরে এরকম চেহারা পেয়েছে৷ কুইন ভিক্টোরিয়ার আমলেও এখনকার চেহারার বুলডগ ছিল না৷ উনবিংশ শতাব্দির শেষ থেকে শুরু করে সিলেক্টিভ ব্রিডিং এর মাধ্যমে বুলডগের আপাত হিংস্র চেহারা বানানো হয়েছে৷ আবার যেমন টেরিয়ার তৈরী করা হয়েছিল টুকটাক শিকারের জন্য৷ পিকিং এর লায়ন ডগ তৈরী করেছিল চিনের রাজারা, পরে ভিক্টোরিয়ান যুগে ইউরোপে ব্যপক জনপ্রিয় হয় ছোট সাইজের এই কুকুরগুলো৷
তবে মানুষ আর কুকুরের ২০ হাজার বছরের সম্পর্কের একটা ক্রান্তিকাল যাচ্ছে এখন৷ যেসব কারনে মানুষের জন্য কুকুর এত প্রয়োজনীয় ছিল সেগুলো বেশীরভাগই আর নেই এখন৷ আবার অতিরিক্ত ব্রিডিং এ এখন এমন কুকুর তৈরী করা হচ্ছে/হয়েছে যেগুলো বায়োলজিকালী আনফিট৷ এজন্য মনে হয় যেহেতু আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে কুকুরকে তার নিজের রাস্তায় যেতে দেয়াই ভাল৷
আন্দামানে ভিনাস (Venus)
ব্লগার যূথচারীর আর্কিওলজি নিয়ে পোস্টগুলো পড়ছিলাম সকালে৷ আমি নিজেও অনেক সময় ভেবেছি আমাদের দেশে প্রস্তরযুগের আর্কিওলজিকাল ফাইন্ডিংস তুলনামুলক কম কেন? কম বলতে সেরকম স্পেক্টাকুলার আবিস্কার চোখে পড়ে না৷ হয়তো যথেষ্ট খোজা হয় নি? না থাকাটা অস্বাভাবিক মনে হয়৷ কারন ৭০/৮০ হাজার বছর আগে মানুষ আফ্রিকা থেকে বের হয়ে উপকুল বরাবর ছড়িয়ে পড়েছে৷ একসময় অস্ট্রেলিয়াতে পৌছেছে, অন্তত ৬০/৭০ হাজার বছর আগে৷ ঘটনা হচ্ছে সোমালিয়া-ইয়েমেন থেকে বের হয়ে অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে অবশ্যই আজকের যুগের বাংলাদেশ হয়ে যেতে হবে৷ তাহলে মানুষের এই আদিতম মাইগ্রেশনের কিছু প্রমান তো থাকা উচিত আমাদের দেশের কোথাও না কোথাও৷ একটা ব্যপার হতে পারে এগুলো সমুদ্রের নীচে, কারন মাত্র কয়েক হাজার বছর আগেও যখন বরফ যুগ ছিল তখন আমাদের উপকুল এখনকার চেয়ে অনেকখানি দুরে ছিল, মানে আমাদের দেশের আকারটা আরো বড় ছিল৷
এর কারন বরফ যুগে ঠান্ডার জন্য মেরুগুলোতে আইসক্যাপ তৈরী হয়েছিল৷ আইসক্যাপ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা জুড়েই ছিল৷ আর এই আইসক্যাপে প্রচুর পানি আটকে ছিল, যে কারনে সমুদ্রে পানি ছিল কম, মানে দাড়াচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেকখানি কম ছিল৷ সুতরাং তখনকার উপকুল আর এখনকার উপকুল আলাদা, তখনকার উপকুল বরফযুগের শেষে আস্তে আস্তে সমুদ্রের নীচে তলিয়ে গিয়েছে, সেই সাথে যেসব আর্টিফ্যাক্ট ছিল ৭০ হাজার বছর আগের মানুষের সেগুলো ডুবে গেছে বলে মনে হয়৷
এজন্য কৌতুহল হয় বাংলাদেশের সেইসব আদি অধিবাসী কারা? তারা কোথায়? তারা দেখতে কেমন ছিল৷ আসলে ৭০ হাজার বছর আগে যারা আফ্রিকা থেকে বের হয়েছিল তারা দেখতে কেমন ছিল এটা একটা বড় কৌতুহল পৃথিবী জুড়ে অনেকেরই৷ সবচেয়ে পুরোনো মানুষের বানানো মুর্তিগুলোর অনেকগুলোই ইউরোপে পাওয়া গেছে৷ যেমন এখানে যে ছবি দিয়েছি (Venus figurine of Willendorf), এটা ২৫,০০০ বছর আগের৷ এরকম আরো অনেকগুলো নারীমুর্তি আছে যেগুলো ১০ হাজার বা তার চেয়ে বেশী পুরোনো৷ কেন শুধু ওই সব সময়ে মানুষ নারীমুর্তি বানিয়েছে (পুরুষের পরিবর্তে বা সংখ্যায় কম বানিয়েছে) তার পেছনে অনেকগুলো কারন অনুমান করা যায়৷
তবে আজকের বিষয় অন্য৷ এসব মুর্তির অনেকগুলোই ইউরোপে পাওয়া গেলেও সবগুলোর চেহারায় একটা মিল আছে৷ এই নারীদের চেহারা/ফিগার ঠিক আধুনিক ইউরোপয়ান নারীদের মতো নয়৷ এমনকি পৃথিবীর বর্তমান যুগের বেশীরভাগ নারীদের মতো নয়৷ কথা হচ্ছে ২৫ হাজার বছর আগে ইউরোপীয়ানরা এরকম বেঢপ চেহারার নারীমুর্তি কেন বানিয়েছিল৷ অথবা এই বিশেষ চেহারাটা ঠিক কোন জায়গা থেকে নকল করলো৷
পৃথিবীতে অল্প কিছু জায়গা আছে যেখানে মেয়েদের ফিগার আসলেই এই মুর্তিগুলোর মতো৷ যেমন আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ট্রাইবের মেয়েদের ফিগার বেশ মিলে যায় এই ভিনাস ফিগারিন গুলোর সাথে৷ ২৫০০০ বছর আগে যারা ইউরোপে থাকতো তারা বঙ্গোপসাগরের আন্দামানের মেয়েদেরকে রোলমডেল হিসেবে নেয়ার একটাই কারন হতে পারে – ফ্রান্সের/অস্ট্রিয়ার তখনকার অধিবাসীরা আন্দামানের লোকের মতো দেখতে ছিল৷
এটাই খুব সম্ভব৷ ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে আমরা যখন বের হয়েছিলাম তখন আমাদের চেহারা ছিল আফ্রিকার Khoisan বা আন্দামানের Pygmy Negrito দের মতো৷ আমাদের কেউ কেউ আন্দামানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল বলে বিবর্তিত হয়েছে কম৷ বাকীরা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে, ন্যাচারাল সিলেকশনের চাপে আজকের চেহারা পেয়েছে৷ আর বাংলাদেশে আজকে আমরা আসলে তাদেরই বংশধর, আন্দামানিজদের অনেক বৈশিষ্ট্যই আমাদের আছে, কালো চামড়া থেকে শুরু করে, মেয়েদের মোটা নিতম্ব কোনটাই ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্লভ নয়৷ ইউরোপে ক্রোম্যানিয়নরা শুরুতে আন্দামানের লোকের মতই দেখতে ছিল বলে ধারনা করা হয়, অন্তত ২৫/৩০ হাজার বছর আগে৷ তারপর পরিবেশের চাপে বিবর্তিত হয়েছে, এখনও হচ্ছে৷ কিন্তু মুর্তিগুলো আর বিবর্তিত হওয়ার সুযোগ পায় নি, এজনই উইলেনডর্ফের ভিনাসের চেহারা আন্দামানের মেয়েদের মতো (ছবি)৷
এর কারন বরফ যুগে ঠান্ডার জন্য মেরুগুলোতে আইসক্যাপ তৈরী হয়েছিল৷ আইসক্যাপ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা জুড়েই ছিল৷ আর এই আইসক্যাপে প্রচুর পানি আটকে ছিল, যে কারনে সমুদ্রে পানি ছিল কম, মানে দাড়াচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেকখানি কম ছিল৷ সুতরাং তখনকার উপকুল আর এখনকার উপকুল আলাদা, তখনকার উপকুল বরফযুগের শেষে আস্তে আস্তে সমুদ্রের নীচে তলিয়ে গিয়েছে, সেই সাথে যেসব আর্টিফ্যাক্ট ছিল ৭০ হাজার বছর আগের মানুষের সেগুলো ডুবে গেছে বলে মনে হয়৷
এজন্য কৌতুহল হয় বাংলাদেশের সেইসব আদি অধিবাসী কারা? তারা কোথায়? তারা দেখতে কেমন ছিল৷ আসলে ৭০ হাজার বছর আগে যারা আফ্রিকা থেকে বের হয়েছিল তারা দেখতে কেমন ছিল এটা একটা বড় কৌতুহল পৃথিবী জুড়ে অনেকেরই৷ সবচেয়ে পুরোনো মানুষের বানানো মুর্তিগুলোর অনেকগুলোই ইউরোপে পাওয়া গেছে৷ যেমন এখানে যে ছবি দিয়েছি (Venus figurine of Willendorf), এটা ২৫,০০০ বছর আগের৷ এরকম আরো অনেকগুলো নারীমুর্তি আছে যেগুলো ১০ হাজার বা তার চেয়ে বেশী পুরোনো৷ কেন শুধু ওই সব সময়ে মানুষ নারীমুর্তি বানিয়েছে (পুরুষের পরিবর্তে বা সংখ্যায় কম বানিয়েছে) তার পেছনে অনেকগুলো কারন অনুমান করা যায়৷
তবে আজকের বিষয় অন্য৷ এসব মুর্তির অনেকগুলোই ইউরোপে পাওয়া গেলেও সবগুলোর চেহারায় একটা মিল আছে৷ এই নারীদের চেহারা/ফিগার ঠিক আধুনিক ইউরোপয়ান নারীদের মতো নয়৷ এমনকি পৃথিবীর বর্তমান যুগের বেশীরভাগ নারীদের মতো নয়৷ কথা হচ্ছে ২৫ হাজার বছর আগে ইউরোপীয়ানরা এরকম বেঢপ চেহারার নারীমুর্তি কেন বানিয়েছিল৷ অথবা এই বিশেষ চেহারাটা ঠিক কোন জায়গা থেকে নকল করলো৷
পৃথিবীতে অল্প কিছু জায়গা আছে যেখানে মেয়েদের ফিগার আসলেই এই মুর্তিগুলোর মতো৷ যেমন আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ট্রাইবের মেয়েদের ফিগার বেশ মিলে যায় এই ভিনাস ফিগারিন গুলোর সাথে৷ ২৫০০০ বছর আগে যারা ইউরোপে থাকতো তারা বঙ্গোপসাগরের আন্দামানের মেয়েদেরকে রোলমডেল হিসেবে নেয়ার একটাই কারন হতে পারে – ফ্রান্সের/অস্ট্রিয়ার তখনকার অধিবাসীরা আন্দামানের লোকের মতো দেখতে ছিল৷
এটাই খুব সম্ভব৷ ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে আমরা যখন বের হয়েছিলাম তখন আমাদের চেহারা ছিল আফ্রিকার Khoisan বা আন্দামানের Pygmy Negrito দের মতো৷ আমাদের কেউ কেউ আন্দামানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল বলে বিবর্তিত হয়েছে কম৷ বাকীরা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে, ন্যাচারাল সিলেকশনের চাপে আজকের চেহারা পেয়েছে৷ আর বাংলাদেশে আজকে আমরা আসলে তাদেরই বংশধর, আন্দামানিজদের অনেক বৈশিষ্ট্যই আমাদের আছে, কালো চামড়া থেকে শুরু করে, মেয়েদের মোটা নিতম্ব কোনটাই ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্লভ নয়৷ ইউরোপে ক্রোম্যানিয়নরা শুরুতে আন্দামানের লোকের মতই দেখতে ছিল বলে ধারনা করা হয়, অন্তত ২৫/৩০ হাজার বছর আগে৷ তারপর পরিবেশের চাপে বিবর্তিত হয়েছে, এখনও হচ্ছে৷ কিন্তু মুর্তিগুলো আর বিবর্তিত হওয়ার সুযোগ পায় নি, এজনই উইলেনডর্ফের ভিনাসের চেহারা আন্দামানের মেয়েদের মতো (ছবি)৷
ঈশ্বরের সন্ধানে
ঈশ্বর, আর মানুষের সাথে তার/তাদের সম্পর্ক নিয়ে নানারকম ভাববাদী আলোচনা সম্ভব, তাকে তুষ্ট করার জন্য, বা তাদেরকে আনুগত্য দেখিয়ে সুবিধা লাভের জন্য বিভিন্ন প্রথা সভ্যতার সমান পুরোনো, বা তার চেয়ে বেশীই পুরোনো৷ ভাববাদে আমার আগ্রহ নেই, কুসংস্কারকেও ভয় হয় না, রাশিচক্র পড়ার প্রয়োজন বোধ করি না, হাতও দেখাইনা কাউকে৷ কিন্তু প্রশ্ন তবু থেকেই যায়, ঈশ্বরের ঘটনাটা কি? কেউ কি আছে এরকম? থাকলে একজন না অনেকজন? কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমান বা অপ্রমান কি করা যেতে পারে? জ্যামিতির উপপাদ্য বা এ্যালগরিদমের প্রুফ দেয়ার মতো? উত্তরটা যেদিকেই যাক, একটা মেনে নেয়ার মতো সায়েন্টিফিক প্রুফ কি হতে পারে, অথবা এরকম প্রুফ করার জন্য যথেষ্ট ইনফরমেশন আছে কি না আমাদের?
আলকেমিদের উদাহরনটা এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করার মতো মনে হয়৷ মধ্যযুগে আলকেমিদের টার্গেট ছিল লোহা বা এরকম সহজলভ্য ধাতু থেকে স্বর্ন তৈরী করা৷ আলকেমিরা জানতো না আদৌ লোহা থেকে সোনা বানানো যায় কি না৷ সম্ভব না অসম্ভব কোন পক্ষেই সিদ্ধান্তে পৌছার মতো যথেষ্ট তথ্য/জ্ঞান তখন তাদের ছিল না৷ তবে এর ভাল দিকটা হচ্ছে লোহাকে সোনা বানানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আলকেমিরা অনেক গুরুত্বপুর্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া আবিস্কার করে, পরবর্তিতে যেগুলো রসায়ন শাস্ত্রের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতো৷ উনবিংশ শতাব্দিতেই পরিস্কার হতে শুরু করলো আসলে কোন ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়াতেই লোহা থেকে সোনা বানানো সম্ভব নয়৷ বিংশ শতাব্দিতে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের কল্যানে এখন আমরা জানি কেবল মাত্র নিউক্লিয়ার রিএ্যাকশনেই লোহা বা এরকম এক ধরনের মৌলিক পদার্থ থেকে আরেক ধরনের মৌলিক পদার্থ তৈরী করা যেতে পারে, রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়৷ আলকেমিদের কথাটা বললাম এজন্য যে কয়েকশ বছরের পরে অবশেষে বোঝা গেল যে লোহা থেকে সোনা বানানো যায়, তবে এটাও সত্য যে, কোন ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয়, যেটা আলকেমিরা জানলে পন্ডশ্রম না করে অন্য কিছু করতো৷
তো ঈশ্বরের ব্যাপারে ফেরা যাক, এখানে এরকম কিছু কি প্রমান বা অপ্রমান করা যায়? বিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? কিভাবে? অথবা তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর নেই? সেটাই বা কিভাবে? ধরা যাক এরকম একটা যুক্তি দেই এগুলো নিশ্চয়ই কাউকে বানাতে হয়েছে (কেন?) তাহলে সে-ই হয়তো ঈশ্বর, কিন্তু মাত্র একজনে বানিয়েছে তার প্রমান কি? হতে পারে না কয়েকজনে বানিয়েছে? এরকম আরো বলা যায়, যেমন গত সপ্তাহে আমাদের পাশের গ্যালাক্সিতে বিশাল বড় সুপারনোভা বিস্ফোরন হলো, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? অথবা নেই? দিনে দুবার জোয়ার ভাটা হচ্ছে তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? নাকি নেই? জন্মালে সব প্রানী মারা যায়, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? অথবা নেই? কিন্তু না সব প্রানী মারা যায় না, কারন বিলিয়ন বছর আগের যে এ্যামিবাটা জন্মেছিল সে কেবল কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যা বাড়িয়েছে, এখনকার সব এ্যামিবাই সেই আদি এ্যামিবার ভাঙ্গা টুকরো, তার মানে এ্যামিবা এক অর্থে কখনই মরে যাচ্ছে না৷ তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর নেই, অথবা আছে, থাকলে কয়জন?
সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখলাম গাছের একটা শুকনা পাতা অদ্ভুতভাবে ঘুরে ঘুরে পড়ছে, তাতে কি প্রমান হয় আমার বস আজকে অফিসে আসবে না, অথবা আসবে? এসে মহাবিরক্তিকর একটা কাজ দেবে৷ নাহ আসলে এগুলোর কোনটাই কোনটাকে প্রমান করে না, অপ্রমানও করে না৷ ঈশ্বর আছে বা কতজন তার দ্ব্যার্থহীন সায়েন্টিফিক কোন প্রমান নেই, ঈশ্বর নেই তারও কোন সায়েন্টিফিক প্রমান নেই৷ ঈশ্বর থাকতেও পারে, হয়তো একজন আছে, হয়তো দশজন আছে, হয়তো ঈশ্বরদের একটা কমিটি আছে, সেখান থেকেই তারা ডিজাইন করে, হয়তো কয়েক শ্রেনীর ঈশ্বর আছে, কেউ পিয়ন ঈশ্বর, কেউ মহাজন৷
হয়তো এখানেই লেখাটা শেষ করা যেত, কিন্তু এই প্যারাটা না লিখলেই নয়৷ যেজন্য আলকেমিদের উদাহরন দিলাম৷ ঈশ্বর আছে বা নেই প্রমান করতে পারবো না৷ তবে এছাড়া বেশ কিছু জিনিষ আছে যেগুলো প্রমান করতে পারবো৷ যেমন আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত ছিল সম্ভবত সাতমাথা কচ্ছপ দেবতার মাথার ওপর পুরো পৃথিবীটা আর কচ্ছপ যখন মাথা বদলায় তখন ভুমিকম্প হয়৷ নাহ যে ঈশ্বর এই কাহিনী ফেদে ছিলেন তিনি নেই৷ যেমন আরেক ঈশ্বর দাবী করে সে নুহের বন্যা ঘটিয়েছিলো পৃথিবী ব্যাপী, এরকম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বন্যার কোন ভুতাত্ত্বিক প্রমান নেই, তার মানে এই ঈশ্বর স্রেফ চাপাবাজ৷ আরেকজন দাবী করে যে পুরুষের বীর্য তৈরী হয় বুকের হাড় থেকে, এটাও চাপা, ভুল, মহাভূল৷ এই ঈশ্বর জানেই না মানুষের শরীর সম্বন্ধে৷ এই ভন্ড ঈশ্বর নেই৷ আরেক জায়গায় বলে যে পর্বতগুলো অনড়, ঈশ্বরের ভুগোল জ্ঞান দেখে আশ্চর্য হতে হয়৷ ধর্ম বইয়ের এই মোল্লা ঈশ্বর যার জ্ঞানের বহর হাইস্কুলের ছাত্রের চেয়েও কম সে আসলে একজন imposter, বেশ ধুরন্ধর con artist, সত্যিকার ঈশ্বর বা ঈশ্বরেরা যদি থেকেও থাকে তাদেরকে বেচে ভালই খেয়ে নিচ্ছে এই বানানো ঈশ্বর৷ এ লোক সে লোক নয় রে ভাই এ লোক সে লোক নয়৷ এজন্য চমকাই না যখন দেখি এ ঈশ্বর তার মন মতো কাজের পুরষ্কার ঘোষনা দেয় অনন্তকাল সুন্দরী সঙ্গমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে৷ যেমন ঈশ্বর তেমন তার পুরষ্কার তেমনই তার বান্দারা৷
আলকেমিদের উদাহরনটা এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করার মতো মনে হয়৷ মধ্যযুগে আলকেমিদের টার্গেট ছিল লোহা বা এরকম সহজলভ্য ধাতু থেকে স্বর্ন তৈরী করা৷ আলকেমিরা জানতো না আদৌ লোহা থেকে সোনা বানানো যায় কি না৷ সম্ভব না অসম্ভব কোন পক্ষেই সিদ্ধান্তে পৌছার মতো যথেষ্ট তথ্য/জ্ঞান তখন তাদের ছিল না৷ তবে এর ভাল দিকটা হচ্ছে লোহাকে সোনা বানানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আলকেমিরা অনেক গুরুত্বপুর্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া আবিস্কার করে, পরবর্তিতে যেগুলো রসায়ন শাস্ত্রের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতো৷ উনবিংশ শতাব্দিতেই পরিস্কার হতে শুরু করলো আসলে কোন ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়াতেই লোহা থেকে সোনা বানানো সম্ভব নয়৷ বিংশ শতাব্দিতে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের কল্যানে এখন আমরা জানি কেবল মাত্র নিউক্লিয়ার রিএ্যাকশনেই লোহা বা এরকম এক ধরনের মৌলিক পদার্থ থেকে আরেক ধরনের মৌলিক পদার্থ তৈরী করা যেতে পারে, রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়৷ আলকেমিদের কথাটা বললাম এজন্য যে কয়েকশ বছরের পরে অবশেষে বোঝা গেল যে লোহা থেকে সোনা বানানো যায়, তবে এটাও সত্য যে, কোন ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয়, যেটা আলকেমিরা জানলে পন্ডশ্রম না করে অন্য কিছু করতো৷
তো ঈশ্বরের ব্যাপারে ফেরা যাক, এখানে এরকম কিছু কি প্রমান বা অপ্রমান করা যায়? বিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? কিভাবে? অথবা তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর নেই? সেটাই বা কিভাবে? ধরা যাক এরকম একটা যুক্তি দেই এগুলো নিশ্চয়ই কাউকে বানাতে হয়েছে (কেন?) তাহলে সে-ই হয়তো ঈশ্বর, কিন্তু মাত্র একজনে বানিয়েছে তার প্রমান কি? হতে পারে না কয়েকজনে বানিয়েছে? এরকম আরো বলা যায়, যেমন গত সপ্তাহে আমাদের পাশের গ্যালাক্সিতে বিশাল বড় সুপারনোভা বিস্ফোরন হলো, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? অথবা নেই? দিনে দুবার জোয়ার ভাটা হচ্ছে তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? নাকি নেই? জন্মালে সব প্রানী মারা যায়, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? অথবা নেই? কিন্তু না সব প্রানী মারা যায় না, কারন বিলিয়ন বছর আগের যে এ্যামিবাটা জন্মেছিল সে কেবল কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যা বাড়িয়েছে, এখনকার সব এ্যামিবাই সেই আদি এ্যামিবার ভাঙ্গা টুকরো, তার মানে এ্যামিবা এক অর্থে কখনই মরে যাচ্ছে না৷ তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর নেই, অথবা আছে, থাকলে কয়জন?
সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখলাম গাছের একটা শুকনা পাতা অদ্ভুতভাবে ঘুরে ঘুরে পড়ছে, তাতে কি প্রমান হয় আমার বস আজকে অফিসে আসবে না, অথবা আসবে? এসে মহাবিরক্তিকর একটা কাজ দেবে৷ নাহ আসলে এগুলোর কোনটাই কোনটাকে প্রমান করে না, অপ্রমানও করে না৷ ঈশ্বর আছে বা কতজন তার দ্ব্যার্থহীন সায়েন্টিফিক কোন প্রমান নেই, ঈশ্বর নেই তারও কোন সায়েন্টিফিক প্রমান নেই৷ ঈশ্বর থাকতেও পারে, হয়তো একজন আছে, হয়তো দশজন আছে, হয়তো ঈশ্বরদের একটা কমিটি আছে, সেখান থেকেই তারা ডিজাইন করে, হয়তো কয়েক শ্রেনীর ঈশ্বর আছে, কেউ পিয়ন ঈশ্বর, কেউ মহাজন৷
হয়তো এখানেই লেখাটা শেষ করা যেত, কিন্তু এই প্যারাটা না লিখলেই নয়৷ যেজন্য আলকেমিদের উদাহরন দিলাম৷ ঈশ্বর আছে বা নেই প্রমান করতে পারবো না৷ তবে এছাড়া বেশ কিছু জিনিষ আছে যেগুলো প্রমান করতে পারবো৷ যেমন আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত ছিল সম্ভবত সাতমাথা কচ্ছপ দেবতার মাথার ওপর পুরো পৃথিবীটা আর কচ্ছপ যখন মাথা বদলায় তখন ভুমিকম্প হয়৷ নাহ যে ঈশ্বর এই কাহিনী ফেদে ছিলেন তিনি নেই৷ যেমন আরেক ঈশ্বর দাবী করে সে নুহের বন্যা ঘটিয়েছিলো পৃথিবী ব্যাপী, এরকম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বন্যার কোন ভুতাত্ত্বিক প্রমান নেই, তার মানে এই ঈশ্বর স্রেফ চাপাবাজ৷ আরেকজন দাবী করে যে পুরুষের বীর্য তৈরী হয় বুকের হাড় থেকে, এটাও চাপা, ভুল, মহাভূল৷ এই ঈশ্বর জানেই না মানুষের শরীর সম্বন্ধে৷ এই ভন্ড ঈশ্বর নেই৷ আরেক জায়গায় বলে যে পর্বতগুলো অনড়, ঈশ্বরের ভুগোল জ্ঞান দেখে আশ্চর্য হতে হয়৷ ধর্ম বইয়ের এই মোল্লা ঈশ্বর যার জ্ঞানের বহর হাইস্কুলের ছাত্রের চেয়েও কম সে আসলে একজন imposter, বেশ ধুরন্ধর con artist, সত্যিকার ঈশ্বর বা ঈশ্বরেরা যদি থেকেও থাকে তাদেরকে বেচে ভালই খেয়ে নিচ্ছে এই বানানো ঈশ্বর৷ এ লোক সে লোক নয় রে ভাই এ লোক সে লোক নয়৷ এজন্য চমকাই না যখন দেখি এ ঈশ্বর তার মন মতো কাজের পুরষ্কার ঘোষনা দেয় অনন্তকাল সুন্দরী সঙ্গমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে৷ যেমন ঈশ্বর তেমন তার পুরষ্কার তেমনই তার বান্দারা৷
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালাঃ অরোরা (৬)
Chena হট স্প্রিং দেখতে যাওয়ার সময় একটু ধীরে চালাচ্ছিলাম, এই রাস্তায় তুলনামূলকভাবে গাড়ী আছে অনেক, মাঝে মাঝে ট্যুরিস্ট বাস৷ ঠিক কেন জানি না জিপিএস সিগনাল ঠিকমত কাজ করছিল না৷ আলাস্কায় এসে এরকম বেশ কয়েকবার হয়েছে যে জিপিএস ঠিক মতো পজিশন বের করতে পারছে না ম্যাপের স্বাপেক্ষে৷ বারোটার দিকে পৌছলাম হটস্প্রিং এর ওখানে, একটা বড় লজিং ছিল, অনেক লোকজন এত রাতেও৷ অবশ্য পথেও অনেককে দেখেছি ক্যাম্পিং করছে৷ হটস্প্রিং লোকজন জামা কাপড় খুলে গোসল করছে, আমরা যখন পৌছেছি ততক্ষনে গোসলের এলাকার ভীড় হালকা হয়ে গেছে৷ তাও আশেপাশে বেশ কিছুক্ষন ঘুরঘুর করলাম, মনে মনে নামতেও ইচ্ছা হচ্ছিল, একা থাকলে হয়তো তাই করতাম, কিন্তু এত পরিচিতদের মধ্যে আর সাহস করলাম না৷
এখানে আসার আসল উদ্দ্যেশ্য হলো অরোরা দেখা৷ অরোরা হচ্ছে সুর্য থেকে আসা সোলার পার্টিকলের সাথে পৃথিবীর ম্যগনেটিক ফিল্ডের সংঘর্ষে এক ধরনের আলোর বিচ্ছুরণ৷ দুই মেরু এলাকাতে দেখা যায়৷ বিশেষ করে আর্কটিক কিংবা এন্টার্কটিক সার্কেলের আশেপাশে৷ যে সময় সোলার এ্যাক্টিভিটি বেশী থাকে যেমন সানস্পট (সৌরকলঙ্ক) গুলো যখন দেখা যায়, তখন অরোরাও বেশী এ্যাক্টিভ থাকে৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমরা যে সময় গিয়েছিলাম ঐ সময় অরোরাল এ্যক্টিভিটি কমের দিকে ছিল৷ সবুজাভ ছাড়া আর কোন রঙের অরোরা দেখার সুযোগ হয় নি, যাওয়ার আগে ছবিতে নানা রঙের অরোরা দেখে ঐরকম দেখবো ভেবেছিলাম৷
অরোরার আশায় মোটেলটার সামনে ঘোরাঘুরি করছিলাম আমরা৷ অন্ধকার কিন্তু অনেক লোকজন, মোটেলের ভাড়াটেরা তো আছেই আমাদের মতো এরকম বহিরাগতও অনেক৷ সবাই অরোরার আশায়, একজায়গায় এক দোকানদার আবার একটা টিভিতে অরোরা দেখাচ্ছিল, প্রথমে ভেবেছিলাম লাইভ বুঝি, পরে দেখি নাহ পুরোনো কোন আমলের একটা মুখস্থ ভিডিও চালাচ্ছে কাস্টমার আকৃষ্ট করার জন্য৷ আলাস্কা আসার অল্প আগেই ক্যাননের নতুন এসএলআর টা কিনেছিলাম, তাড়াহুড়ায় ম্যানুয়ালটা পড়াও হয় নি৷ অপেক্ষা করতে করতে ভাবলাম তাহলে একবার একটা মহড়া দিয়ে নেই৷ ৩০ সেকেন্ডের লম্বা এক্সপোজারে ছবি তুলতে হবে৷
ঠিক তখনই ঝামেলা বাধিয়ে ফেললাম৷ কি যেন একটা সেটিংস চেঞ্জ করার পর দেখি এখন আর ম্যানুয়াল এক্সপোজার হচ্ছে না৷ কয়েকবার এদিক ওদিক ছবি তোলার চেষ্টা করলাম, নাহ কোন ছবিই উঠছে না৷ ঘটনা কি? সেলফোনের আলোতে ম্যানুয়াল পড়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম, কোথায় গন্ডগোল হলো৷ এর মধ্যে দেখি লোকজনের চিৎকার অরোরা দেখা যাচ্ছে৷ পাহাড় ঘেষে অল্প অল্প করে সবুজাভ ঢেউ ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, ক্রমশ বেশী৷ ঢেউটা একসময় মাঝ আকাশে চলে এলো, দুঃখে-কষ্টে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসছিল, শালার ক্যামেরা এই সময় গোলমাল শুরু করছে৷
দেখতে দেখতে মিলিয়ে গেল অরোরা৷ দৌড়ে মোটেলের লবিতে গেলাম, ম্যানুয়ালটা এখন বুঝতে হবে, নিশ্চয়ই কোথাও আছে৷ লবিতে একটা স্টাফড বল্গা হরিন, ওটার দিকে ক্যামেরা রেখে চেষ্টা করতে দেখি এখন ঠিক হয়েছে৷ আবার আকাশের দিকে তাক করলে সেই একই সমস্যা৷ কোথায় যে ঘাপলা হয়েছে বুঝলাম না৷ হুম, কম আলোতে ছবি তুলতে গেলেই সমস্যাটা হচ্ছে, কিন্তু প্লেনে বসেও তো এভাবে ছবি তুলেছি তখন সমস্যাটা হয় নি৷ একজন বুদ্ধি দিল সব অটোমেটিক মোড বন্ধ করে দিতে, ম্যানুয়াল ঘেটে ঘটে তাই করলাম, কাজ হয়েছে বলতে হবে৷ এখন ছবি উঠছে৷
এবার খুব সিরিয়াসলি অপেক্ষা করতে লাগলাম অরোরার জন্য৷ মাঝে মাঝে সামান্য দেখা গিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে কিন্তু বড় আকারে আর হচ্ছে না৷ তবুও যা দেখা যাচ্ছে ছবি তুলে নিলাম৷ ফেরা দরকার, ঘড়িতে রাত দুটো বাজে৷ বাসে যে সব লোক এসেছিল তারা ফিরে যাচ্ছে৷ আমরাও গোছগাছ করে রওনা হলাম, অনেকে এর মধ্যে প্রথম দফা অরোরা দেখে গাড়ীতেই ঘুমিয়ে গেছে৷
হট স্প্রিং এলাকার গেট থেকে বের হয়ে ৫/১০ মিনিট আসতেই দেখি আবার বড় করে অরোরা দেখা যাচ্ছে৷ তাড়াহুড়ো করে রাস্তার পাশে গাড়ী দাড় করালাম, এমন ঘুটঘুটি অন্ধকার রাস্তার পাশে ঠিক কতটুকু জায়গা আছে বোঝা যাচ্ছে না৷ রেন্টাল কার নিয়ে খাদে পড়লে এখানে উদ্ধার পেতে সকাল হয়ে যাবে৷ একজন গাড়ী থেকে নেমে ছবি তোলা শুরু করলো (ছবিগুলো দিয়েছি এখানে)৷ বাকীরা গাড়ীতে বসে রইলাম৷ আমার একটু ভয় ভয় করছিল, বেয়ার কান্ট্রি, রাস্তার দুপাশেই খোলা জঙ্গল, কোন লোকালয়ের চিহ্ন নেই৷ অনেক ডাকাডাকির আমাদের বন্ধু ফেরৎ আসলো গাড়ীতে, একটু ওভার এক্সাইটেড হয়ে গেছে অরোরা দেখতে গিয়ে৷ ঠিক তখনই খেয়াল করলাম আমাদের গাড়ীর একটু সামনেই বাছুরের সমান সাইজের একটা সাদা নেকড়ে৷ হেড লাইটের আলোতে চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে৷
বাকী রাস্তা নেকড়েটা আক্রমন করলে কি হত তা নিয়ে আর আমাদের বন্ধুর নির্বুদ্ধিতার জন্য সবাই মিলে কি বিপদে পড়তে যাচ্ছিলাম এই নিয়ে আলোচনা করতে করতে সময় কেটে গেল৷
এখানে আসার আসল উদ্দ্যেশ্য হলো অরোরা দেখা৷ অরোরা হচ্ছে সুর্য থেকে আসা সোলার পার্টিকলের সাথে পৃথিবীর ম্যগনেটিক ফিল্ডের সংঘর্ষে এক ধরনের আলোর বিচ্ছুরণ৷ দুই মেরু এলাকাতে দেখা যায়৷ বিশেষ করে আর্কটিক কিংবা এন্টার্কটিক সার্কেলের আশেপাশে৷ যে সময় সোলার এ্যাক্টিভিটি বেশী থাকে যেমন সানস্পট (সৌরকলঙ্ক) গুলো যখন দেখা যায়, তখন অরোরাও বেশী এ্যাক্টিভ থাকে৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমরা যে সময় গিয়েছিলাম ঐ সময় অরোরাল এ্যক্টিভিটি কমের দিকে ছিল৷ সবুজাভ ছাড়া আর কোন রঙের অরোরা দেখার সুযোগ হয় নি, যাওয়ার আগে ছবিতে নানা রঙের অরোরা দেখে ঐরকম দেখবো ভেবেছিলাম৷
অরোরার আশায় মোটেলটার সামনে ঘোরাঘুরি করছিলাম আমরা৷ অন্ধকার কিন্তু অনেক লোকজন, মোটেলের ভাড়াটেরা তো আছেই আমাদের মতো এরকম বহিরাগতও অনেক৷ সবাই অরোরার আশায়, একজায়গায় এক দোকানদার আবার একটা টিভিতে অরোরা দেখাচ্ছিল, প্রথমে ভেবেছিলাম লাইভ বুঝি, পরে দেখি নাহ পুরোনো কোন আমলের একটা মুখস্থ ভিডিও চালাচ্ছে কাস্টমার আকৃষ্ট করার জন্য৷ আলাস্কা আসার অল্প আগেই ক্যাননের নতুন এসএলআর টা কিনেছিলাম, তাড়াহুড়ায় ম্যানুয়ালটা পড়াও হয় নি৷ অপেক্ষা করতে করতে ভাবলাম তাহলে একবার একটা মহড়া দিয়ে নেই৷ ৩০ সেকেন্ডের লম্বা এক্সপোজারে ছবি তুলতে হবে৷
ঠিক তখনই ঝামেলা বাধিয়ে ফেললাম৷ কি যেন একটা সেটিংস চেঞ্জ করার পর দেখি এখন আর ম্যানুয়াল এক্সপোজার হচ্ছে না৷ কয়েকবার এদিক ওদিক ছবি তোলার চেষ্টা করলাম, নাহ কোন ছবিই উঠছে না৷ ঘটনা কি? সেলফোনের আলোতে ম্যানুয়াল পড়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম, কোথায় গন্ডগোল হলো৷ এর মধ্যে দেখি লোকজনের চিৎকার অরোরা দেখা যাচ্ছে৷ পাহাড় ঘেষে অল্প অল্প করে সবুজাভ ঢেউ ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, ক্রমশ বেশী৷ ঢেউটা একসময় মাঝ আকাশে চলে এলো, দুঃখে-কষ্টে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসছিল, শালার ক্যামেরা এই সময় গোলমাল শুরু করছে৷
দেখতে দেখতে মিলিয়ে গেল অরোরা৷ দৌড়ে মোটেলের লবিতে গেলাম, ম্যানুয়ালটা এখন বুঝতে হবে, নিশ্চয়ই কোথাও আছে৷ লবিতে একটা স্টাফড বল্গা হরিন, ওটার দিকে ক্যামেরা রেখে চেষ্টা করতে দেখি এখন ঠিক হয়েছে৷ আবার আকাশের দিকে তাক করলে সেই একই সমস্যা৷ কোথায় যে ঘাপলা হয়েছে বুঝলাম না৷ হুম, কম আলোতে ছবি তুলতে গেলেই সমস্যাটা হচ্ছে, কিন্তু প্লেনে বসেও তো এভাবে ছবি তুলেছি তখন সমস্যাটা হয় নি৷ একজন বুদ্ধি দিল সব অটোমেটিক মোড বন্ধ করে দিতে, ম্যানুয়াল ঘেটে ঘটে তাই করলাম, কাজ হয়েছে বলতে হবে৷ এখন ছবি উঠছে৷
এবার খুব সিরিয়াসলি অপেক্ষা করতে লাগলাম অরোরার জন্য৷ মাঝে মাঝে সামান্য দেখা গিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে কিন্তু বড় আকারে আর হচ্ছে না৷ তবুও যা দেখা যাচ্ছে ছবি তুলে নিলাম৷ ফেরা দরকার, ঘড়িতে রাত দুটো বাজে৷ বাসে যে সব লোক এসেছিল তারা ফিরে যাচ্ছে৷ আমরাও গোছগাছ করে রওনা হলাম, অনেকে এর মধ্যে প্রথম দফা অরোরা দেখে গাড়ীতেই ঘুমিয়ে গেছে৷
হট স্প্রিং এলাকার গেট থেকে বের হয়ে ৫/১০ মিনিট আসতেই দেখি আবার বড় করে অরোরা দেখা যাচ্ছে৷ তাড়াহুড়ো করে রাস্তার পাশে গাড়ী দাড় করালাম, এমন ঘুটঘুটি অন্ধকার রাস্তার পাশে ঠিক কতটুকু জায়গা আছে বোঝা যাচ্ছে না৷ রেন্টাল কার নিয়ে খাদে পড়লে এখানে উদ্ধার পেতে সকাল হয়ে যাবে৷ একজন গাড়ী থেকে নেমে ছবি তোলা শুরু করলো (ছবিগুলো দিয়েছি এখানে)৷ বাকীরা গাড়ীতে বসে রইলাম৷ আমার একটু ভয় ভয় করছিল, বেয়ার কান্ট্রি, রাস্তার দুপাশেই খোলা জঙ্গল, কোন লোকালয়ের চিহ্ন নেই৷ অনেক ডাকাডাকির আমাদের বন্ধু ফেরৎ আসলো গাড়ীতে, একটু ওভার এক্সাইটেড হয়ে গেছে অরোরা দেখতে গিয়ে৷ ঠিক তখনই খেয়াল করলাম আমাদের গাড়ীর একটু সামনেই বাছুরের সমান সাইজের একটা সাদা নেকড়ে৷ হেড লাইটের আলোতে চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে৷
বাকী রাস্তা নেকড়েটা আক্রমন করলে কি হত তা নিয়ে আর আমাদের বন্ধুর নির্বুদ্ধিতার জন্য সবাই মিলে কি বিপদে পড়তে যাচ্ছিলাম এই নিয়ে আলোচনা করতে করতে সময় কেটে গেল৷
Subscribe to:
Posts (Atom)