ঈশ্বর, আর মানুষের সাথে তার/তাদের সম্পর্ক নিয়ে নানারকম ভাববাদী আলোচনা সম্ভব, তাকে তুষ্ট করার জন্য, বা তাদেরকে আনুগত্য দেখিয়ে সুবিধা লাভের জন্য বিভিন্ন প্রথা সভ্যতার সমান পুরোনো, বা তার চেয়ে বেশীই পুরোনো৷ ভাববাদে আমার আগ্রহ নেই, কুসংস্কারকেও ভয় হয় না, রাশিচক্র পড়ার প্রয়োজন বোধ করি না, হাতও দেখাইনা কাউকে৷ কিন্তু প্রশ্ন তবু থেকেই যায়, ঈশ্বরের ঘটনাটা কি? কেউ কি আছে এরকম? থাকলে একজন না অনেকজন? কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমান বা অপ্রমান কি করা যেতে পারে? জ্যামিতির উপপাদ্য বা এ্যালগরিদমের প্রুফ দেয়ার মতো? উত্তরটা যেদিকেই যাক, একটা মেনে নেয়ার মতো সায়েন্টিফিক প্রুফ কি হতে পারে, অথবা এরকম প্রুফ করার জন্য যথেষ্ট ইনফরমেশন আছে কি না আমাদের?
আলকেমিদের উদাহরনটা এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করার মতো মনে হয়৷ মধ্যযুগে আলকেমিদের টার্গেট ছিল লোহা বা এরকম সহজলভ্য ধাতু থেকে স্বর্ন তৈরী করা৷ আলকেমিরা জানতো না আদৌ লোহা থেকে সোনা বানানো যায় কি না৷ সম্ভব না অসম্ভব কোন পক্ষেই সিদ্ধান্তে পৌছার মতো যথেষ্ট তথ্য/জ্ঞান তখন তাদের ছিল না৷ তবে এর ভাল দিকটা হচ্ছে লোহাকে সোনা বানানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আলকেমিরা অনেক গুরুত্বপুর্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া আবিস্কার করে, পরবর্তিতে যেগুলো রসায়ন শাস্ত্রের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতো৷ উনবিংশ শতাব্দিতেই পরিস্কার হতে শুরু করলো আসলে কোন ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়াতেই লোহা থেকে সোনা বানানো সম্ভব নয়৷ বিংশ শতাব্দিতে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের কল্যানে এখন আমরা জানি কেবল মাত্র নিউক্লিয়ার রিএ্যাকশনেই লোহা বা এরকম এক ধরনের মৌলিক পদার্থ থেকে আরেক ধরনের মৌলিক পদার্থ তৈরী করা যেতে পারে, রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়৷ আলকেমিদের কথাটা বললাম এজন্য যে কয়েকশ বছরের পরে অবশেষে বোঝা গেল যে লোহা থেকে সোনা বানানো যায়, তবে এটাও সত্য যে, কোন ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয়, যেটা আলকেমিরা জানলে পন্ডশ্রম না করে অন্য কিছু করতো৷
তো ঈশ্বরের ব্যাপারে ফেরা যাক, এখানে এরকম কিছু কি প্রমান বা অপ্রমান করা যায়? বিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? কিভাবে? অথবা তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর নেই? সেটাই বা কিভাবে? ধরা যাক এরকম একটা যুক্তি দেই এগুলো নিশ্চয়ই কাউকে বানাতে হয়েছে (কেন?) তাহলে সে-ই হয়তো ঈশ্বর, কিন্তু মাত্র একজনে বানিয়েছে তার প্রমান কি? হতে পারে না কয়েকজনে বানিয়েছে? এরকম আরো বলা যায়, যেমন গত সপ্তাহে আমাদের পাশের গ্যালাক্সিতে বিশাল বড় সুপারনোভা বিস্ফোরন হলো, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? অথবা নেই? দিনে দুবার জোয়ার ভাটা হচ্ছে তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? নাকি নেই? জন্মালে সব প্রানী মারা যায়, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? অথবা নেই? কিন্তু না সব প্রানী মারা যায় না, কারন বিলিয়ন বছর আগের যে এ্যামিবাটা জন্মেছিল সে কেবল কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যা বাড়িয়েছে, এখনকার সব এ্যামিবাই সেই আদি এ্যামিবার ভাঙ্গা টুকরো, তার মানে এ্যামিবা এক অর্থে কখনই মরে যাচ্ছে না৷ তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর নেই, অথবা আছে, থাকলে কয়জন?
সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখলাম গাছের একটা শুকনা পাতা অদ্ভুতভাবে ঘুরে ঘুরে পড়ছে, তাতে কি প্রমান হয় আমার বস আজকে অফিসে আসবে না, অথবা আসবে? এসে মহাবিরক্তিকর একটা কাজ দেবে৷ নাহ আসলে এগুলোর কোনটাই কোনটাকে প্রমান করে না, অপ্রমানও করে না৷ ঈশ্বর আছে বা কতজন তার দ্ব্যার্থহীন সায়েন্টিফিক কোন প্রমান নেই, ঈশ্বর নেই তারও কোন সায়েন্টিফিক প্রমান নেই৷ ঈশ্বর থাকতেও পারে, হয়তো একজন আছে, হয়তো দশজন আছে, হয়তো ঈশ্বরদের একটা কমিটি আছে, সেখান থেকেই তারা ডিজাইন করে, হয়তো কয়েক শ্রেনীর ঈশ্বর আছে, কেউ পিয়ন ঈশ্বর, কেউ মহাজন৷
হয়তো এখানেই লেখাটা শেষ করা যেত, কিন্তু এই প্যারাটা না লিখলেই নয়৷ যেজন্য আলকেমিদের উদাহরন দিলাম৷ ঈশ্বর আছে বা নেই প্রমান করতে পারবো না৷ তবে এছাড়া বেশ কিছু জিনিষ আছে যেগুলো প্রমান করতে পারবো৷ যেমন আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত ছিল সম্ভবত সাতমাথা কচ্ছপ দেবতার মাথার ওপর পুরো পৃথিবীটা আর কচ্ছপ যখন মাথা বদলায় তখন ভুমিকম্প হয়৷ নাহ যে ঈশ্বর এই কাহিনী ফেদে ছিলেন তিনি নেই৷ যেমন আরেক ঈশ্বর দাবী করে সে নুহের বন্যা ঘটিয়েছিলো পৃথিবী ব্যাপী, এরকম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বন্যার কোন ভুতাত্ত্বিক প্রমান নেই, তার মানে এই ঈশ্বর স্রেফ চাপাবাজ৷ আরেকজন দাবী করে যে পুরুষের বীর্য তৈরী হয় বুকের হাড় থেকে, এটাও চাপা, ভুল, মহাভূল৷ এই ঈশ্বর জানেই না মানুষের শরীর সম্বন্ধে৷ এই ভন্ড ঈশ্বর নেই৷ আরেক জায়গায় বলে যে পর্বতগুলো অনড়, ঈশ্বরের ভুগোল জ্ঞান দেখে আশ্চর্য হতে হয়৷ ধর্ম বইয়ের এই মোল্লা ঈশ্বর যার জ্ঞানের বহর হাইস্কুলের ছাত্রের চেয়েও কম সে আসলে একজন imposter, বেশ ধুরন্ধর con artist, সত্যিকার ঈশ্বর বা ঈশ্বরেরা যদি থেকেও থাকে তাদেরকে বেচে ভালই খেয়ে নিচ্ছে এই বানানো ঈশ্বর৷ এ লোক সে লোক নয় রে ভাই এ লোক সে লোক নয়৷ এজন্য চমকাই না যখন দেখি এ ঈশ্বর তার মন মতো কাজের পুরষ্কার ঘোষনা দেয় অনন্তকাল সুন্দরী সঙ্গমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে৷ যেমন ঈশ্বর তেমন তার পুরষ্কার তেমনই তার বান্দারা৷
Wednesday, June 6, 2007
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment