Tuesday, December 19, 2006

ঐতিহাসিক ইতিহাস

বিষয় হিসেবে ইতিহাসের দিকে আমার সেরকম আগ্রহ নেই, আবার বিতৃ্ষ্ণাও নেই৷ টিভির কল্যানে অনেক সময় জোর করে হলেও বেশ পরিমান ইতিহাস গিলতে হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে এরকম একটা আলোচনা শুনছিলাম বেশ আগে, এক পর্যায়ে একজন বক্তা উল্লেখ করলেন, জার্মানী-জাপানের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটেনও অনেকটা পরাস্ত হয়েছিল! বৃটেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাস্ত হয়েছিল শুনে নড়েচড়ে বসলাম, আলোচকের যুক্তি ছিল বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতিতেই বৃটেনকে একে একে উপনিবেশগুলো হারাতে হয়৷ বিশ্বের এক চতুর্থাংশের অধিকর্তা শেষমেশ তার দ্বীপরাজ্যে গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়৷ হমম, একদিক থেকে চিন্তা করলে কথায় যুক্তি আছে, আসলে শুধু বৃটেন না, ইউরোপের ঔপনেবেশিক দেশগুলোর হাত থেকে তাদের অধিকৃত পরের কয়েক দশকে মুক্তি পেয়ে যায়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী, জাপানের পরাজয় যতটা দৃশ্যমান তৃতীয় বিশ্বের শোষিত জনগোষ্ঠির মুক্তি ততটা প্রচার পায় না৷ আবার যেমন বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের উথ্থানও বিশ্বযুদ্ধের কারনে সম্ভব হয়েছে৷ সুতরাং ইতিহাসের মোড়ঘোরানো এসব ঘটনায় জয় পরাজয় নির্ধারন আসলে এতটা সহজ না৷ জার্মানী আর জাপান যেমন যুদ্ধের ২০ বছরেই বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিনত হয়েছে, কিন্তু বৃটেন, ফ্রান্স বা হল্যান্ড তাদের হারানো অবস্থান আর ফিরে পায় নি৷

তবে এরকমটা হয়ত নতুন কিছু না৷ আমি বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে একবার এনালজি খোজার চেষ্টা করলাম৷ হয়ত অনেক আছে৷ যেমন আমার ধারনা ৭৫ এর পট পরিবর্তনে আসলে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশের বামপন্থি শক্তি৷ আপাত দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ আক্রান্ত হলেও, নিশ্চিহ্ন হয় নি, বরং বিশ বছরের মাথায় আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে৷ অন্যদিকে স্বাধীনতার পর থেকে বামপন্থী শক্তিদের ভুমিকা সন্দেহজনক৷ পরবর্তি মিলিটারী সরকার গুলোতে বামওয়ালাদের অনেকেই অংশ নিয়েছেন, সামরিক শাসকদের পা চেটেছেন৷ আজকে ৩০ বছর পর এসবদলের নেতা পাওয়া যায়, সমর্থক পাওয়া মুস্কিল৷

৭৫ এর আরেকটা ফসল হচ্ছে মুসলীম লীগের রূপান্তর৷ পাকিস্তানীদের সমর্থক হিসেবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটা বাজে অবস্থায় পড়ে যায় ওরা৷ কৌশলে ব্র্যান্ড নেইম বদলে মুসলীম লীগ আসলে আজকের বিএনপি৷ মুসলিম লীগ নেতাদের অথবা তাদের ছেলেপেলে নাতি-নাতনীদের খুজলে এখন বিএনপিতে পাওয়া যাবে৷ জিয়াউর রহমান আমার ধারনা একটা উপলক্ষ্য কেবল এসব মুসলীম লীগ সমর্থকদের জন্য৷

তো আজকে ২০০৬ এ যা ঘটছে ২০২৬ এ গিয়ে বা ২০৩৬ গিয়ে আমরা কিভাবে বিশ্লেষন করব৷ সব দেশে বেশীরভাগ সময় অন্তত একটা রক্ষনশীল, একটা উদারপন্থী মোর্চা থাকে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান (রক্ষনশীল), আর ডেমোক্র্যাটিক (উদারপন্থী) পার্টি৷ কারন দেশের মানুষকে মোটামুটি ভাবে এই দুই কাতারে ভাগ করা যায়৷ স্কুল-কলেজে বসে যারা উদারপন্থী তারাই আবার এক জেনারেশন পরে যখন চাকরীজীবি, ছেলেমেয়ের বাবা-মা হয়ে বসে রক্ষনশীল দলে নাম লেখায়৷ বাংলাদেশে এজন্য ক্যু বা অন্য কোন ভাবে এই ধারার কোন একটাকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না৷ ৭১ এ মুসলীম লীগ মরে গিয়ে যেমন ৭৫ এর পটভুমিতে বিএনপি হয়েছে, তেমন ৭৫ এ আওয়ামী লীগ আহত হলেও কয়েক বছরেই আবার ফিরে এসেছে৷ ২০০৬ এ এসে মনে হয় বিএনপি দুর্নীতি নিয়ে একটু বেশী খারাপ রেকর্ড করে ফেলেছে৷ বিশেষ করে তারেক রহমানের ট্র্যাক রেকর্ড ফিক্স করতে বহুদিন লাগবে, যদি আদৌ সম্ভব হয়৷ যেমন আওয়ামী লীগের ২১ বছর লেগেছে বাকশালী দুর্গন্ধ ছাড়াতে৷ সেক্ষেত্রে এলডিপির একটা সুযোগ আছে, যদি তারা পলিটিক্যাল ভ্যাকুয়ামটা ঠিকমত ব্যবহার করতে পারে৷ কারন রক্ষনশীল সমর্থক সব সময়ই আছে, সংখ্যায় বেশীই আছে প্রশ্ন হচ্ছে ২০২৬ এ লীড দেবে কারা? জামায়াত ৭০ বছরে যেহেতু পারে নাই, আরো ২০ বছর যোগ করে লাভ হবে বলে মনে হয় না৷

No comments:

 
eXTReMe Tracker