কয়েক বছর আগের ঘটনা, বছরের শেষাশেষি কোথায় যাওয়া যায় ভাবছিলাম৷ ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার অনেকগুলো বন্ধ একসাথে৷ তখন একটু অর্থ সংকটে ছিলাম, প্লেনে উঠে দুরে যাবো না তাই, ধারে কাছেই বা কোথায় যাই চিন্তা করতে করতে দুদিন নষ্ট হয়ে গেল৷ মাঝে মাঝে আমি খুব সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি৷ প্রায় দেড়শ মাইল দুরে (আড়াইশ কিমি) মাউন্টেন রেঞ্জের অপর পাশে একটা ভ্যালী আছে, মুলত আপেল বা চেরী চাষ হয়, আর কিছু কিছু ছোট ছোট শহর আছে৷ জার্মান ইমিগ্রান্টদের একটা শহরের খ্যাতি আগে শুনেছি, কিন্তু কখনও যাওয়া হয় নি৷ ভাবলাম এবেলা ওখান থেকেই ঘুরে আসি, বিশেষ করে আমার বাজেট যেহেতু সংক্ষিপ্ত৷
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম অংশে বড় বড় কিছু পর্বতমালা আছে, নর্থ আমেরিকান টেকটোনিক প্লেটের সাথে, প্যাসিফিক, হুয়ান ডি ফুকা ইত্যাদি প্লেটের যেখানে সংঘর্ষ হচ্ছে৷ অনেকগুলো জীবন্ত আগ্নেয়গিরিও আছে এখানে৷ এর মধ্যে মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স এ ১৯৮০ তে বেশ বড় বিস্ফোরণ হয়েছিল৷ আমি তখন থাকতাম যেখানে ওটা ছিল প্লেটের পশ্চিমাংশে, আর জার্মান শহরটা পুর্বাংশে৷ মাঝে ক্যাসকেড পর্বতমালা৷ পর্বতমালার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি গিরিপথ তৈরী করেছে এরা, (যেমন ভুগোল বইয়ে আমরা পড়তাম পাকিস্তানের খাইবার গিরিপথ), গিরিপথগুলো বেশীরভাগই পুর্ব-পশ্চিম হাইওয়ের ওপরে৷ কত বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে কে জানে, কারণ একটা স্টপেজে সাইনবোর্ড দেখলাম লেখা, আগে মাইন্টেন পাস থেকে কাছের শহরে যেতে লাগত একদিন, এখন হাইওয়ে আর পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর পর লাগে এক ঘন্টা৷
সকালে ক্যামেরা, কিছু কাপড়-চোপড় নিয়ে রওনা হওয়ার প্ল্যান ছিল৷ নানা আলসেমীতে রওনা দিতে দিতে দুপুর হয়ে গেল৷ এমনিতেই বেশ শীত, তার ওপর গিরিপথের ওপাশে আরও বেশী ঠান্ডা৷ পাহাড়ের ওপর শীতকালে মেঘগুলো একটু কম উচুতে থাকে, প্রায়ই রাস্তার ওপরে মেঘের কুয়াশা তৈরী হয়৷ ঘন্টাখানেক গাড়ি চালানোর পর যখন পাহাড় চড়তে শুরু করলাম, দেখি কুয়াশায় অবস্থা খারাপ৷ রাস্তার পাশে অল্প বিস্তর শক্ত হয়ে যাওয়া বরফ৷ তুষারের চেয়ে শক্ত বরফ বেশী বিপদজনক, কারন চাকা পিছলে যেতে পারে৷ আর আমার গাড়ি 4WDও না যে একচাকা আটকে গেলেও অসুবিধা নাই৷ ডিসেম্বরের হলিডে সিজনে এখানে সবচেয়ে বেশী এক্সিডেন্ট হয়, কারন বোঝাই যাচ্ছিল, এত কুয়াশার মধ্যেও স্থানীয় লোকজন বেশ দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছে৷
ঠান্ডায় চারপাশে কেমন একটা মৃত অবস্থা, মাঝে মাঝে ছোট শহর, গ্যাস স্টেশন দেখা যায়, তারাও জীবন্মৃত৷ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখব ভাবছিলাম, কিন্তু প্রকৃতির মনে হয় মন ভালো নাই৷ ভ্যালীতে আসতে আসতে সন্ধ্যা নেমে এল, এখানে শীতকালে ৪টার মধ্যেই রাত হয়ে যায়, আর ওইদিন কুয়াশা আর মেঘের জন্য মনে হয় রাত একটু তাড়াহুড়া করেই চলে এল৷ রাস্তার ওপরে বেশ ভালই বরফ পড়েছিল, দেখলাম কিছুটা পরিস্কার করেছে, তবে প্রতি রাতেই মনে হয় নতুন করে পড়ে৷ বেশ ভয় ভয় করছিল ফেরত যাবো কিভাবে এটা চিন্তা করে৷
গন্তব্যে পৌছলাম রাত নামার পরেই৷ শহরের লোকজন বেশ নিরাসক্ত মনে হল৷ আমারও আগ্রহ শেষ, বিশেষ করে প্রথম ৫০ মাইল রাস্তার যে দশা, কেন আসলাম, আর কেন দেরী করে আসলাম এই ভেবে নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছিল৷ এরকম বেঘোরে দুর্ঘটনায় পড়ার কোন মানেই হয় না৷ ১০-১৫ মিনিট এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে জার্মান টাউন দেখা শেষ, গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার পথ ধরলাম৷ মাইল বিশেক আসতে আসতেই ঘন কুয়াশা চেপে ধরল৷ হেডলাইটের আলোতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, ফগ লাইট জ্বালালেও তেমন উন্নতি নাই৷ এদিকে রাস্তার স্পিড লিমিট ৫০ মাইল৷ সাথে যেসব গাড়ি ছিল তারা বহু আগে আমাকে পার হয়ে গেছে, বিরান এলাকায় আমি একা৷ ১৫-২০ মাইলের মধ্যে কোন জনবসতি আছে কিনা সন্দেহ৷ অনেকক্ষন পরপর উল্টো দিক থেকে দুএকটা গাড়ি আসে, তখন আরো ভয় লাগে যে ভালোমতো না দেখে না মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়ে যায়৷ কুয়াশায় যে পরিস্থিতি এত খারাপ হতে পারে কোন অনুমান ছিল না৷ এর মধ্যে দেখি উপরে ঘোলাটে পুর্নিমার চাদ দেখা যাচ্ছে, ভয়াবহ চেহারা৷ ৪০ মিনিটের রাস্তা ঘন্টাখানেকের বেশী লাগল, লোকালয়ে পৌছে কি যে ভালো লাগলো৷ কুয়াশাও এদিকে হালকা৷ তাও দেখলাম অনেক পুলিশের গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স, জায়গায় জায়গায় গাড়ি উল্টে আছে৷ আমার সাথের গাড়ি গুলোর কোনটা কি না কে জানে, এরা তো আমাকে কুয়াশার মধ্যে একা ফেলে এসেছিল৷ ফ্রিওয়েতে উঠে বেশ ভালো লাগলো, ফ্রিওয়েতে অনেক গাড়ি, কুয়াশা কিছুটা থাকলেও নির্জন না অন্তত৷
আরও ঘন্টাখানেক পর বাসায় ফিরলাম, আহত-নিহত না হয়ে যে ফিরলাম এজন্য নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছিল৷ কুয়াশায় ড্রাইভিং আর না, পাহাড়ে তো নাই৷ ঘরের ছেলে ছুটিতে ঘরেই ভালো আছি৷
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম অংশে বড় বড় কিছু পর্বতমালা আছে, নর্থ আমেরিকান টেকটোনিক প্লেটের সাথে, প্যাসিফিক, হুয়ান ডি ফুকা ইত্যাদি প্লেটের যেখানে সংঘর্ষ হচ্ছে৷ অনেকগুলো জীবন্ত আগ্নেয়গিরিও আছে এখানে৷ এর মধ্যে মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স এ ১৯৮০ তে বেশ বড় বিস্ফোরণ হয়েছিল৷ আমি তখন থাকতাম যেখানে ওটা ছিল প্লেটের পশ্চিমাংশে, আর জার্মান শহরটা পুর্বাংশে৷ মাঝে ক্যাসকেড পর্বতমালা৷ পর্বতমালার মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি গিরিপথ তৈরী করেছে এরা, (যেমন ভুগোল বইয়ে আমরা পড়তাম পাকিস্তানের খাইবার গিরিপথ), গিরিপথগুলো বেশীরভাগই পুর্ব-পশ্চিম হাইওয়ের ওপরে৷ কত বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে কে জানে, কারণ একটা স্টপেজে সাইনবোর্ড দেখলাম লেখা, আগে মাইন্টেন পাস থেকে কাছের শহরে যেতে লাগত একদিন, এখন হাইওয়ে আর পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর পর লাগে এক ঘন্টা৷
সকালে ক্যামেরা, কিছু কাপড়-চোপড় নিয়ে রওনা হওয়ার প্ল্যান ছিল৷ নানা আলসেমীতে রওনা দিতে দিতে দুপুর হয়ে গেল৷ এমনিতেই বেশ শীত, তার ওপর গিরিপথের ওপাশে আরও বেশী ঠান্ডা৷ পাহাড়ের ওপর শীতকালে মেঘগুলো একটু কম উচুতে থাকে, প্রায়ই রাস্তার ওপরে মেঘের কুয়াশা তৈরী হয়৷ ঘন্টাখানেক গাড়ি চালানোর পর যখন পাহাড় চড়তে শুরু করলাম, দেখি কুয়াশায় অবস্থা খারাপ৷ রাস্তার পাশে অল্প বিস্তর শক্ত হয়ে যাওয়া বরফ৷ তুষারের চেয়ে শক্ত বরফ বেশী বিপদজনক, কারন চাকা পিছলে যেতে পারে৷ আর আমার গাড়ি 4WDও না যে একচাকা আটকে গেলেও অসুবিধা নাই৷ ডিসেম্বরের হলিডে সিজনে এখানে সবচেয়ে বেশী এক্সিডেন্ট হয়, কারন বোঝাই যাচ্ছিল, এত কুয়াশার মধ্যেও স্থানীয় লোকজন বেশ দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছে৷
ঠান্ডায় চারপাশে কেমন একটা মৃত অবস্থা, মাঝে মাঝে ছোট শহর, গ্যাস স্টেশন দেখা যায়, তারাও জীবন্মৃত৷ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখব ভাবছিলাম, কিন্তু প্রকৃতির মনে হয় মন ভালো নাই৷ ভ্যালীতে আসতে আসতে সন্ধ্যা নেমে এল, এখানে শীতকালে ৪টার মধ্যেই রাত হয়ে যায়, আর ওইদিন কুয়াশা আর মেঘের জন্য মনে হয় রাত একটু তাড়াহুড়া করেই চলে এল৷ রাস্তার ওপরে বেশ ভালই বরফ পড়েছিল, দেখলাম কিছুটা পরিস্কার করেছে, তবে প্রতি রাতেই মনে হয় নতুন করে পড়ে৷ বেশ ভয় ভয় করছিল ফেরত যাবো কিভাবে এটা চিন্তা করে৷
গন্তব্যে পৌছলাম রাত নামার পরেই৷ শহরের লোকজন বেশ নিরাসক্ত মনে হল৷ আমারও আগ্রহ শেষ, বিশেষ করে প্রথম ৫০ মাইল রাস্তার যে দশা, কেন আসলাম, আর কেন দেরী করে আসলাম এই ভেবে নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছিল৷ এরকম বেঘোরে দুর্ঘটনায় পড়ার কোন মানেই হয় না৷ ১০-১৫ মিনিট এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে জার্মান টাউন দেখা শেষ, গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার পথ ধরলাম৷ মাইল বিশেক আসতে আসতেই ঘন কুয়াশা চেপে ধরল৷ হেডলাইটের আলোতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না, ফগ লাইট জ্বালালেও তেমন উন্নতি নাই৷ এদিকে রাস্তার স্পিড লিমিট ৫০ মাইল৷ সাথে যেসব গাড়ি ছিল তারা বহু আগে আমাকে পার হয়ে গেছে, বিরান এলাকায় আমি একা৷ ১৫-২০ মাইলের মধ্যে কোন জনবসতি আছে কিনা সন্দেহ৷ অনেকক্ষন পরপর উল্টো দিক থেকে দুএকটা গাড়ি আসে, তখন আরো ভয় লাগে যে ভালোমতো না দেখে না মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়ে যায়৷ কুয়াশায় যে পরিস্থিতি এত খারাপ হতে পারে কোন অনুমান ছিল না৷ এর মধ্যে দেখি উপরে ঘোলাটে পুর্নিমার চাদ দেখা যাচ্ছে, ভয়াবহ চেহারা৷ ৪০ মিনিটের রাস্তা ঘন্টাখানেকের বেশী লাগল, লোকালয়ে পৌছে কি যে ভালো লাগলো৷ কুয়াশাও এদিকে হালকা৷ তাও দেখলাম অনেক পুলিশের গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স, জায়গায় জায়গায় গাড়ি উল্টে আছে৷ আমার সাথের গাড়ি গুলোর কোনটা কি না কে জানে, এরা তো আমাকে কুয়াশার মধ্যে একা ফেলে এসেছিল৷ ফ্রিওয়েতে উঠে বেশ ভালো লাগলো, ফ্রিওয়েতে অনেক গাড়ি, কুয়াশা কিছুটা থাকলেও নির্জন না অন্তত৷
আরও ঘন্টাখানেক পর বাসায় ফিরলাম, আহত-নিহত না হয়ে যে ফিরলাম এজন্য নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছিল৷ কুয়াশায় ড্রাইভিং আর না, পাহাড়ে তো নাই৷ ঘরের ছেলে ছুটিতে ঘরেই ভালো আছি৷
No comments:
Post a Comment