Monday, August 20, 2007

আলাস্কাঃ পঞ্চম দিনে


আলাস্কা নিয়ে আমার ভ্রমন কাহিনীটা আর শেষ হচ্ছে না৷ নানা কারনে লেখা হয়ে ওঠে না, লিখতে ভালোও লাগে না, আবার ওদিকে লিখে রাখতে চাই৷ টাইম ক্যাপসুল৷ যদিও বেশীরভাগ উল্লেখযোগ্য ঘটনা, ডায়ালগ ভিডিওতে তুলে রেখেছি, তাও লিখিত অবস্থায় রাখলে পরে অল্টারনেট সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷

পঞ্চম দিনটা বোধহয় সবচেয়ে কম ঘটনা বহুল দিন৷ বেশীরভাগ সময় গেছে ড্রাইভ করতে করতে৷ ফেয়ারবব্যাংক্স থেকে অ্যাংকরেজে আবার ফিরে আসলাম আমরা ওইদিন৷ আগের রাতে অরোরা দেখে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল, ঘুমোতে ঘুমোতে আড়াইটা তিনটা৷ সকালে বেশ বেলা করে উঠলাম৷ ডেনী’স এ পেট পুরে ব্রাঞ্চ (সকাল আর দুপুরের খাওয়া একসাথে) খেয়ে রওনা দিতে দিতে ১১টার বেশী বেজে গেল৷ গোটা রাস্তা ৪২৮ মাইল (প্রায় ৭০০ কিমি)৷ একটানা চালালেও ৮ ঘন্টার বেশী লাগার কথা৷ হাইওয়ে ২ ধরলাম, গন্তব্য ডেল্টা জাংশন৷ ডেল্টা জাংশন থেকে একটা রাস্তা চলে গেছে দক্ষিন পশ্চিমে কানাডার ইউকন টেরিটরির দিকে, আর আরেকটা ভালডেজ/অ্যাংকরেজের দিকে৷ দিনটা বেশ পরিস্কার ছিল৷ সামনে দক্ষিন দিগন্ত বরাবর মাতানুষ্কা-সাস্তিনা পর্বতমালা৷ তিনটি চুড়া মাউন্ট ডেবরা, মাউন্ট হেস, আর মাউন্ট মোফিট বেশ পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল৷ এরকম আকাশ থাকলে কে জানে হয়তো মাউন্ট ম্যকিনলীও দেখতে পেতাম৷ ম্যাকিনলী না দেখতে পাওয়াটা বেশ দুঃখজনক ছিল সেবার৷

ডেল্টা জাংশন পর্যন্ত রাস্তায় অনেক গাড়ী৷ কাছেই কোথাও আর্মিদের ক্যাম্প আছে৷ আর বেশ স্বাস্থ্যবান তানানা নদী৷ অনেক জায়গায় থামলাম আমরা৷ আমি ছাড়া সবাই বেশ আপবিট৷ আমি একটু টেনশনে ছিলাম দেরী হয়ে যাচ্ছে কি না৷ ওই দিনের আমার একটা টার্গেট ছিল বিকাল পাচটার আগে Wrangell-St Elias National Park এ পৌছুনো৷ যেভাবে যাত্রা বিরতি হচ্ছিল, ইলিয়াস মিস হতে পারে ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলাম৷ দুটোর দিকে বা আরও পরে ডেল্টা জাংশনে পৌছলাম৷ হাইওয়ে-২ কানাডার দিকে গিয়েছে, আমরা নেবো হাইওয়ে-৪৷ রাস্তায় উঠেই বুঝলাম এ রাস্তায় লোকজন তেমন নেই৷ অথবা একদমই নেই৷ কোন লোকালয় বা জনবসতিও নেই৷ সাস্তিনা পর্বতমালা পার হয়ে গেলাম এক সময়৷ দুপাশে প্রাকৃতিক দৃশ্য বলতে হয় মারাত্মক৷ পুরো ট্যুরের সবচেয়ে ভালো ছবিগুলোর কয়েকটা তুলেছি এখানে৷ মেয়েদের অনেকের বাথরুম চেপে বসলো এর মধ্যে৷ কোন বসতি নিদেনপক্ষে কোন গ্যাসস্টেশনও নেই৷ অনেকক্ষন পর একটা ট্রেলারের মধ্যে দোকানের দেখা পাওয়া গেল৷ এই বিরান এলাকায় এই লোক থাকে কিভাবে কে জানে৷ কোন ইলেক্ট্রিসিটি কানেকশনও নেই৷ নিজেরা জেনারেটর দিয়ে যতটুকু পারে৷
দিগন্তে আস্তে আস্তে Wrangell-St Elias এর দেখা পাওয়া গেল৷ বেশ কয়েকটা উচু চুড়া আছে এখানে৷ মাউন্ট Wrangell নিজে ১৪,১৬৩ ফিট, মাউন্ট স্যানফোর্ড ১৬,২৩৭ ফিট আর মাউন্ট ব্ল্যাকবার্ন ১৬,৩৯০ ফিট৷ মেঘের জন্য একটু কষ্ট হচ্ছিল দেখতে৷ ঘড়িতে পাচটা এর মধ্যে বেজে গেছে৷ তাও একটা ক্ষীন আশা ছিল হয়তো ট্যুরিস্ট সিজন বলে সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকতে পারে৷ ফাকা রাস্তা পেয়ে বেশ দ্রুত চালিয়ে নিলাম ভ্যানটা৷ ম্যাপে দেখাচ্ছে পরবর্তি শহর গুলকানা, গুলকানা নদীর ধারে৷ অনেকক্ষন গিয়ে শুধু একজায়গায় একটা গ্যাসস্টেশন আর একটা ছোট দোকান দেখলাম৷ এইটুকুই মনে হয় গুলকানা৷ একশ মাইলের মধ্যে এতটুকুই জনবসতি আছে মনে হয়৷

পার্কের ভিজিটর সেন্টারে যখন পৌছলাম সাতটা বেজে গেছে তখন৷ নাহ, পার্ক ৫ টাতেই বন্ধ হয়ে গেছে৷ এখানে একটা ন্যাচার ট্রেইল ছিল যেটা অনেকে রেকমেন্ড করেছে, সেটাও মিস৷ একটু হা হুতাশ করলাম৷ এই দুঘন্টা বাচানো যেত৷ আরো মিস হলো কপার রিভার৷ কপার নদীর স্যামন খুব বিখ্যাত৷ আমাদের ওখানে বেশ দাম দিয়ে কিনতে হয়৷ কি আর করা, একটু উল্টো দিকে গিয়ে অ্যাংকরেজের পথ ধরলাম৷ রাস্তার এ অংশের নাম গ্লেন হাইওয়ে৷ জনবসতি বিহীন রাস্তা, পথে একটা এয়ারপোর্ট দেখলাম শুধু, তাজলিনা এয়ারপোর্ট৷ দশটার দিকে সুর্যটা আস্তে আস্তে ডুবে যেতে লাগলো৷ টুকটাক ছবি তুললাম৷ যাত্রীরা সবাই ক্লান্ত, বিরক্তও কিছুটা৷

শীপ (ভেড়া) পর্বত পার হওয়ার পর আজকে দিনে আমার শেষ দর্শনীয় স্থান৷ অনেক দেরী হয়ে গেছে অবশ্য৷ মাতানুষ্কা গ্লেসিয়ার৷ একদম রাস্তার পাশেই৷ বেশ বড়, আর হাইওয়ে থেকে শরীরের অনেকটাই দেখা যাচ্ছিল৷ গ্লেসিয়ার পার্কে এসে থামলাম, ততক্ষনে একটু অন্ধকার হয়ে গেছে৷ হেটে গিয়ে গ্লেসিয়ারে ওঠা যায়, মাইল খানেক হাটতে হবে৷ গ্রিজলী ভালুকের দেশ৷ বাঙালী মন ঠিক সায় দিল না৷ আবার যেতেও মন চায়, দিনে এমনিতেই দিনভর অনেক ব্যর্থতা আছে৷ শেষমেশ গাড়ী নিয়ে যতদুর যাওয়া যায় গেলাম, কাচা রাস্তা, শেষমাথায় এসে আর উপায় নেই৷ বাকীটুকু হেটে যেতে হবে৷ আমি ছাড়া কেউই হাইকিং এ রাজী না৷ এমনকিও আমিও ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছি৷ ফিরেই এলাম৷ ড্রাইভার বদলালাম এক পর্যায়ে, এখনো অনেক রাস্তা বাকী, কিন্তু অন্ধকার হয়ে যাওয়ার আর কিছু দেখা যাচ্ছে না৷

মধ্যে একটা শহর ছিল, পামার, বড় আকারের মেলা হয় এখানে৷ বিশাল সাইজের মিষ্টি কুমড়া, আর ফুলকপি নিয়ে আসে লোকে৷ সময় নেই তাই দাড়ালাম না৷ মাঝরাতে গিয়ে অ্যাংকরেজ পৌছলাম৷ ভালো হোটেল নিয়েছি এবার, সুতরাং চিন্তা নেই৷

Sunday, August 19, 2007

বই পড়লামঃ The God Delusion/Richard Dawkins

গত দু সপ্তাহে পড়ে শেষ করলাম ডকিন্সের গড ডিল্যুশন, মারাত্মক লাগলো৷ এ বছরে পড়া বইগুলোর মধ্যে সেরা নিঃসন্দেহে৷ নিয়মিত ব্লগালে অন্তত ২০টা পোস্ট লেখা যেতে পারে স্রেফ এই বইটার বক্তব্য আর আমার ধারনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে৷ ডকিন্স আর কুর্যওয়াইল মনে হয় দুজন লেখক যাদের লেখায় গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়েছি৷ কিছুদিন আগে বিল ওরাইলি শো’তে ডকিন্সকে দেখলাম এই বইটা নিয়ে বিলের সাথে কথা বলছে৷ বিল ওরাইলি যুক্তরাষ্ট্রে বেশ জনপ্রিয় ডানপন্থি টক শো হোস্ট৷ ওরাইলি সবচেয়ে জনপ্রিয় টক শো হোস্টও হতে পারে, নানারকম গরম গরম কথা বলার জন্য৷ ওইদিন অবশ্য ওরাইলি ডকিন্সের সাথে তুলনামুলকভাবে ভালো ব্যবহার করলো দেখলাম৷ আসলে ডকিন্সের লেখা সিরিয়াসলি না নিয়ে উপায় নেই৷ ভুয়া নাস্তিকদের সাথে ডকিন্সের অনেক পার্থক্য আছে৷ তো সে যাই হোক দেখি ডকিন্সের লেখা কতটুকু তুলে আনা যায় এখানে৷ তবে হাতে সময় থাকলে বইটা পড়ে নেয়াটা খুবই জরুরী৷

Thursday, July 12, 2007

বিপ্লবী থেকে রাষ্ট্রনায়ক

রবার্ট মুগাবের দেশ জিম্বাবুয়ে নিয়ে প্রতিবেদন দেখছিলাম৷ হালে জিম্বাবুয়ের অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে৷ বিশেষ করে অর্থনৈতিক অবস্থার৷ কয়েক দশক আগের প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপুর্ণ সম্ভাবনাময় আফ্রিকান দেশ জিম্বাবুয়ে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে৷ মুগাবে বৃটিশদের খেদিয়ে রোডেশিয়া থেকে জিম্বাবুয়ে স্বাধীন করেন৷ তখনকার ভুমিকার জন্য মুগাবে মুক্তিকামী জনতার নেতা হিসেবে পুরো বিশ্বে নন্দিত ছিলেন৷ সেই মুগাবে এখন তিন দশক পরেও জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায়৷ বিরোধিরা মুগাবের কঠোর দমন নীতির পর এখন জান নিয়ে পালাতেই ব্যস্ত৷ দেশের মানুষও পালাচ্ছে যে যেভাবে পারে৷

অনেকসময় মনে হয় বঙ্গবন্ধু বেচে থাকলেও কি এরকম ফলাফল হতো৷ ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট না হলে বঙ্গবন্ধু কি এখনও বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকতেন? তিন বছরেই জাতির জনক থেকে তার আচার আচরন অনেকটাই স্বৈরাচারদের মতো হয়ে উঠছিল, বিশেষ করে বাকশাল গঠন, পত্র পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া৷ ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছেন এরকম অনেককে চিনি, তাদের ভাষায় বঙ্গবন্ধুর মতো উদার মনের রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশে কম এসেছে৷ কিন্তু বাকশালটাও তো সত্যি৷ আর বঙ্গবন্ধু যে প্রশাসক হিসেবে ভীষনভাবে ব্যর্থ সন্দেহ নেই৷ কে জানে আমরা একজন মুগারের হাত থেকে বেচে গেছি কি না৷

মোটরসাইকেল ডায়েরী সিনেমাটা দেখে তরুন চে’গুয়েভারাকে ভালো না লাগার কারন নেই৷ তরুন ফিদেল ক্যাস্ট্রোকেও হয়তো তাই লাগবে৷ কিন্তু চারদশক ধরে ক্ষমতা আকড়ে ধরে থাকা, লৌহমানব ফিদেলের দেশের এত দুরবস্থা কেন৷ মায়ামী, ফ্লোরিডাতে গিয়েছিলাম ঘুরতে, পথে ঘাটে কিউবা থেকে পালিয়ে আসা লোকজন৷ হায়রে চে, আর ফিদেল, এই ছিল তাদের স্বপ্ন৷

জর্জ ওয়াশিংটন, বা জেফারসন একটু ভিন্ন ধরনের৷ তারা মুগাবে, শেখমুজিব বা চে’র মতো অতটা ক্যারিসমাটিক নন৷ কিন্তু আড়াইশ বছর আগে জর্জ ওয়াশিংটন যেটা করেছিলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু বলতেই হয় ততটা পারতেন না, পারেন নি৷ জর্জ ওয়াশিংটনের সুযোগ ছিল বৃটিশদের হারিয়ে নিজেকে রাজা ঘোষনা করার৷ জেফারসনও হয়তো করতে পারতেন৷ আধুনিক গনতন্ত্র তখনও অপ্রচলিত৷ তা না করে তারা নিশ্চিত করলেন তাদের সদ্য স্বাধীনকৃত দেশে সবার অধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা হবে সর্বোচ্চ৷ তাদের দেশ আজকের মহা পরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷

ঈশ্বরের নিরাপত্তার অভাব

ওইদিন একজায়গায় পড়ছিলাম তালেবান আমলে কিভাবে হাজার বছরের পুরোনো বৌদ্ধ মুর্তিগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল আফগানিস্থানে (বামিয়ান ২০০১)৷ বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও মোল্লাদের সে নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না৷ তবে ব্রোঞ্জের বিশালাকার মুর্তিগুলোর উপর আক্রমন এই প্রথম নয়৷ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবও তার আমলে ওগুলোর ক্ষয়ক্ষতি করেছেন৷ সম্ভবত তার আমলেই মুর্তি থেকে হাত কেটে নেয়া হয়৷ মুসলিমরা ছাড়াও মুর্তি ধ্বংস, স্থাপত্য কীর্তি ধ্বংস এগুলো ঐতিহাসিকভাবে আরো অনেকে করেছে৷

বেশীরভাগ ধর্মের ঈশ্বর অন্য ধর্মের ঈশ্বরের ধর্মের মুর্তি বা অন্য কোন সিম্বল সহ্য করতে পারেন না৷ তারা তাদের প্রেরিত গ্রন্থে একথাটা বারবার ভালো করে মনে করিয়ে দিয়েছেন (I, the Lord your God, am a jealous god)৷ পৌত্তলিক মুর্তি ভাঙ্গাটা একরকম পবিত্র দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ আমার শুধু খটকা লাগে মহা পরাক্রমশালী ঈশ্বর ঠুনকো কাদামাটির/পিতলের মুর্তিকে এত ভয় পান কেন৷ এটা কি তার ট্যাবু? উত্তম তো অধমের সাথে নিশ্চিন্তে চলে, তাহলে কি ঈশ্বর কোনভাবে মধ্যম যে ওনাকে তফাত রাখতে হচ্ছে৷ নাকি insecurityর কারন ঈশ্বরের শৈশবকালিন কোন ঘটনা৷ কখনো কি উনি অন্য ঈশ্বরদের হাতে নিগৃহিত হয়েছিলেন৷ আবার হওয়ার ভয় পাচ্ছেন৷ দ্বিতীয় স্বামীর মতো প্রথম স্বামীর সব চিহ্ন মুছে ফেলতে চান৷ ঈশ্বর বোধহয় একটু ভীতু টাইপের৷ এত ক্ষমতা থাকতেও এত ভয়৷

ঈশ্বর লোকটা আসলে মজার৷ মাঝে মাঝে মনে হয় লোকটা হয়তো কমেডিয়ান ছিল প্রথম জীবনে৷

জিনোগ্রাফিক প্রজেক্ট

নানা রকম উদ্দ্যেশ্য ডিএনএ এনালাইসিস করা যেতে পারে৷ এখন যেমন এখানে পুলিশি তদন্তে ডিএনএ এভিডেন্স বহুল ব্যবহৃত হয়৷ আবার অনেকে সন্তানের প্যাটার্নিটি টেস্ট করে (আসল বাবা কে বের করার জন্য)৷ তবে আমি টেস্ট করিয়েছিলাম আমার অরিজিন জানার জন্য৷ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক আর IBM মিলে একটা প্রজেক্ট করছে ওদের মাধ্যমে, জিনোগ্রাফিক প্রজেক্ট৷ একশ ডলারের মত লাগে৷ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা এগুলো করে থাকে, কিন্ত ন্যাটজিও কে আমার কাছে নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে৷ এছাড়া এই প্রজেক্টের কর্ণধার স্পেন্সার ওয়েলসের বই পড়েছি, ডকুমেন্টারী দেখেছি, আমাদের এখানে উনি যখন এসেছিলেন তখন ওনার লেকচার সামনাসামনি শোনার সুযোগও হয়েছিল৷ ওখানেই উনি বলছিলেন জিনোগ্রাফিক প্রজেক্ট নিয়ে, এবং এ নিয়ে ওনারা কি কি কাজ করছেন৷ বাংলাদেশ থেকেও টেস্ট কিট অর্ডার দেয়া যেতে পারে৷ তবে পোস্ট অফিস যদি মেরে না দেয়৷

টেস্ট করার জন্য গালের ভেতর থেকে কিছু কোষ দিতে হবে৷ মোটামুটি কয়েক সপ্তাহ লাগে ফলাফলের জন্য৷ টেস্ট দুরকম হতে পারে৷ Mitochondrial DNA অথবা Y-chromosome৷ মাইটোকন্ড্রিয়া আমরা আমাদের মায়ের কাছ থেকে পাই৷ সুতরাং এই টেস্ট মায়ের মায়ের মায়ের … মায়ের ইতিহাস বের করতে সাহায্য করবে৷ অন্য দিকে ওয়াই ক্রোমোজোম শুধু বাবার কাছে থেকে আসে৷ এজন্য এই টেস্ট হচ্ছে বাবার বাবার বাবার … বাবার ইতিহাস বের করবে৷ ছেলেরা দুরকম টেস্টই করতে পারে৷ কিন্তু মেয়েদের কাছে ওয়াই ক্রোমোজোম না থাকায় শুধু মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ টেস্ট করা সম্ভব৷

আমার টেস্টের যে ফলাফল এখানে বলেছি, ওটা আমার ওয়াই ক্রোমোজোম ডিএনএর৷ মানে আমার পিতৃপুরুষ বরাবর৷ এর মানে এই না যে আমার পিতৃপুরুষদের সবাই M130৷ যেমন আমার দাদীর বাবা হয়তো M20৷ আবার আমার দাদার নানা হয়তো M69৷ মানে আমার মধ্যে আসলে অসংখ্য লোকের জিন আছে বা থাকতে পারে৷ সমস্যা হচ্ছে এরা সবাই আমার পূর্বপুরুষ হলেও এদের উপস্থিতি প্রমান করাটা বেশ জটিল৷ এসব টেকনোলজী যতদিন না সহজলভ্য হচ্ছে ততদিন অপেক্ষা করতে হবে৷ সুতরাং আমার পূর্বপুরুষদের বলা যায় একটা অংশ (হয়তো সামান্য অংশ) M130৷ আমি যদি আমার দাদার দাদার … দাদা বরাবর যেতে থাকি এবং এভাবে ৬০ হাজার বছর পিছনে চলে যাই তাহলে যে লোকটিকে পাবো সে নিশ্চিতভাবেই একজন M130৷ এতটুকুই প্রমান পেয়েছি৷ M130 নিয়ে আরো আলোচনা পরে আসছে৷

নব্য বর্নবাদঃ বাংলাদেশে আমি অনেক দিন ধরে আছি

আমি আর আমার পূর্বপুরুষরা অনেক অনেক দিন ধরে বাংলাদেশ৷ দেশের ৯৫ ভাগ লোকের চেয়ে বেশী দিন ধরে৷ হয়তো ৯৯.৯৯% লোকের চেয়ে বেশী দিন ধরে৷ কে বললো? স্পেন্সার ওয়েলস, আর তার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের দলবল৷ আমি কম করে হলেও ৫০ হাজার বছর এ দেশে৷ আধুনিক মানুষ হিসেবে সবার আগে আমাদের পা পড়েছে৷ দেশে যারা অফিশিয়ালী আদিবাসী তাদের চেয়েও বহু বহু গুনে আদিবাসি আমি৷ কিন্তু আমার দলের লোকজন এত কম কেনো৷ ৫% এর চেয়ে কম৷ হয়তো ১% এর চেয়ে কম৷ হয়তো আরো অনেক কম৷ তাহলে ওরা কই? কে মারলো? কে জমি দখল করলো? হিমু জবাব দাও৷ আমাদের পুরুষদেরকে কে মেরেছে৷ মেয়েদেরকে চুরি করেছে কারা? নিশ্চয়ই তোমরা৷ অবশ্যই তোমরা৷

(এটাও চলবে)

আমার ডিএনএ’র পথচলা

ডিএনএ সংক্রান্ত নানা লেখা লিখেছি গত দেড় বছরে৷ এমনিতে আমি বায়োলজির ছাত্র নই৷ কিন্তু স্কুলে থাকতে মানুষের উৎস নিয়ে খুব আগ্রহ ছিল৷ দেশে সেরকম ভালো বইপত্র পাওয়া যেত না৷ শিশু একাডেমি পাতাবাহার নামে একটা বই বের করেছিল, ওখানে একটা প্রবন্ধ ছিল, “মানুষ কি করে মানুষ হলো”৷ টু’তে থাকতে কিনেছিলাম মনে হয়৷ তখন ঠিক বিষয়টা ধরতে পারি নি, কিন্তু কৌতুহলটা তৈরী হয়েছিল৷ এরশাদ বিবর্তনবাদ থাকার জন্য “জ্ঞানের কথা” বইটি ব্যান করে দেয় আশির দশকের মাঝামাঝিতে৷ ওই বইটাতেও অনেকগুলো ভালো প্রবন্ধ ছিল এরকম বিষয়ে৷ শৈশবের কৌতুহল কালক্রমে দানাপানি পেয়ে আরো বেড়ে উঠলে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসি তখনই ঠিক করে রেখেছিলাম আমার নিজের ইতিহাসটা আমার জানতে হবে৷

ইতিহাসের সাথে ডিএনএর একটা ভালো সম্পর্ক আছে৷ পুনরাবৃত্তি তবুও সংক্ষেপে আবার বলি ডিএনএ আর ইতিহাস কিভাবে জড়িত৷ আমাদের সবার শরীরে বেশীরভাগ কোষে একরকম সূত্র দেয়া আছে আমাদের শরীরটা কিভাবে বানাতে হবে, বা শরীরের দৈনন্দিন কাজ কর্ম কিভাবে করতে হবে৷ সূত্রটা আছে এভাবে “ATTCTAATTTAAACTATTCTCTGTTCTTTC…”৷ A,T,C,G গুলো আসলে লেখা আছে ছোট ছোট অনু আকারে সাজিয়ে৷ আমাদের জন্মের সময় এই সুত্রগুলো দেখে দেখে আমাদের শরীরটা তৈরী হয়েছে মায়ের পেটের ভেতরে৷ আবার এখনও আমাদের শরীরে নানা কাজকর্ম এগুলো ধরে হচ্ছে, যেমন রক্ত বানানো, পেশী, হাড়গোড় বানানো, রিপেয়ার করা ইত্যাদি৷ তবে এই সূত্রগুলো শুধু মানুষের শরীরেই না, সমস্ত প্রানী, উদ্ভিদ, ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস সবার মধ্যেই আছে৷ সবাই তাদের কাজকর্ম চালাচ্ছে এগুলোর ওপর ভিত্তি করে৷ ঘটনা হচ্ছে এসব সুত্র একেকজনের একেকরকম৷ যেমন গাছের কাছে সূত্র আছে কিভাবে পাতা বানাতে হবে, আবার আমাদের কাছে সুত্র আছে কিভাবে হাত, মুখ বানাতে হবে৷ আবার অনেক সূত্র একই রকম, বা কাছাকাছি৷ আমাদের শরীরে খাবার থেকে শক্তি তৈরী করার যে সূত্র, বহু প্রানীর কাছে একই সুত্র হবহু আছে৷

যেটা করা যায় তাহলো এই মিল আর অমিলের ওপর ভিত্তি করে বের করা যেতে পারে কার সাথে কার কি সম্পর্ক৷ কারন সূত্রগুলো আমরা পাই বাবা-মার কাছ থেকে৷ বাবা ৫০%, মা ৫০%৷ তবে এর মধ্যে ব্যাপার আছে৷ বাবা আর মার কাছে এসব সূত্র যখন কপি করা হয় তখন টুকটাক ভুল ঢুকে যায় সূত্রের মধ্যে৷ যে কারনে বাবা-মার কাছ থেকে সবসূত্র একদম একই না হয়ে একটু আধটু এদিক-ওদিক হয়ে যায়৷ সাধারন নাম হচ্ছে মিউটেশন৷ সেকারনে অনেক দুরের আত্মীয় যারা তাদের সাথে ধরা যায় আমার অনেক পার্থক্য থাকবে সূত্র গুলোয়, আবার কাছের যারা তাদের সাথে তুলনামুলক কম পার্থক্য থাকবে৷ আবার অন্যদেশের মানুষের সাথে বেশ পার্থক্য হওয়ার কথা৷ বলতে গেলে ডিএনএ থেকে বেশ ভালোভাবে বোঝা যায় কে কার কতটুকু কাছাকাছি৷ অন্য প্রানীর সাথে যেমন আমাদের অনেক পার্থক্য৷ যত দুরের প্রানী তত বেশী পার্থক্য (অন্য প্রানীর মধ্যে শিম্পাঞ্জি সবচেয়ে কাছাকাছি)৷

গত কয়েকবছর ধরে বিজ্ঞানীরা একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন পৃথিবী বিভিন্ন জাতির মধ্যে কার সাথে কার কি সম্পর্ক বের করার৷ ফলাফল মারাত্মক৷ বারবার আমার শুধু রবীন্দ্রনাথের “গোরা” উপন্যাসটার কথা মনে আসে৷ প্রজেক্টের আরেকটা ফলাফল হচ্ছে বের করতে পারা কে কিভাবে কোন দেশে গিয়েছে৷ প্রজেক্ট এখনও শেষ হয় নি, হয়তো অনেক বছর লাগবে৷ তবে এখন পর্যন্ত এসব নানা গবেষনার ফলাফল হচ্ছে এরকমঃ আমরা যারা Homo Sapiens Sapiens, মানে আধুনিক মানুষ (কারা আধুনিক না হিমুকে জিজ্ঞাসা করেন), ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকি৷ খুব সম্ভব এখনকার সোমালিয়া, ইয়েমেন হয়ে আফ্রিকা থেকে আমাদের পুর্বপুরুষ বের হয়েছিল৷ ধারনা করা হয় মানুষের এ দলটি Beach Combing (মাছ ধরে, শামুক, ঝিনুক খেয়ে) করে জীবনধারন করত৷ এদের সংখ্যা ১৫০-২০০র বেশী হবে না৷ আজকে পৃথিবীতে আফ্রিকার বাইরে যত মানুষ আছে (ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকাতে) তারা সবাই এই কয়েকজন লোকের বংশধর৷ এরা উপকুল বরাবার আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে৷ উপকুল ধরে কয়েক হাজার বছর পরে এরা ছড়াতে ছড়াতে ভারত হয়ে মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া পার হয়ে, অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে পৌছেছে৷ তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের লেভেল বেশ নীচে ছিল, এখন যেখানে সমুদ্র ওগুলো হেটেই পার হওয়া যেত৷ তবে সবাই উপকুল ধরে ধরে ছড়ায়নি, অনেকে খাবারের সন্ধানে মেইন ল্যান্ডে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে৷

ডিএনএ দেখে যেটা বোঝা যায় তাহলো কারা কখন কোথায় ছিল৷ কিভাবে? ধরা যাক আজকের দুনিয়াতে কারো এরকম ডিএনএ সিরিজ “AAACTATTCTCT”, আরেকজনের “CAACTATTCTCT”, আবার আরেকজনের “ACACTATTCTCT”, খেয়াল করলে দেখবো প্রথমজনের সিরিজের প্রথম অক্ষরটা পাল্টে দিলে দ্বিতীয়টা পাওয়া যাচ্ছে৷ আবার প্রথমজনের ২য় অক্ষরটা পাল্টে দিলে ৩য় জনেরটা পাওয়া যাচ্ছে৷ এখন যদি বলি এদের যে কোন একটা হচ্ছে আদি ডিএনএ আর বাকী দুটো ওখান থেকে একটু অদলবদল করে বানানো হয়ছে৷ তাহলে আদি ডিএনএ কোনটা হতে পারে৷ যদিও যেকোনটাই হতে পারে, তবে যদি মিনিমাম পরিবর্তন চাই তাহলে প্রথমটা অবশ্যই আদি ডিএনএ৷ বাস্তবের পরীক্ষা গুলো এর চেয়ে অনেক জটিল, তবে মোটামুটি ধারনা নেয়া যেতে পারে এখান থেকে৷ তো পৃথিবীর বিভিন্ন মানুষের ডিএনএ নিয়ে এরকম টেস্ট করলে পরিস্কার ভাবে বোঝা যায় দক্ষিন/দক্ষিন-পূর্ব আফ্রিকার লোকদের কাছে আদি ডিএনএ সিরিজগুলো (মার্কার) আছে৷ এরকম অনেকগুলো মার্কার দিয়ে বোঝা সম্ভব কে কার আগে বা কতটুকু আগে ইত্যাদি৷ এরকম একটা মার্কারের নাম হচ্ছে M130৷ এই মার্কারটি বেশ পুরোনো, অন্তত ৬০ হাজার বছর আগের৷ এতে মনে হয় উপকুল বরাবর যারা আফ্রিকা থেকে বের হয়ে এসেছিল তাদের মার্কার এটি৷ এখন খুজলে সবচেয়ে বেশী আছে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে৷ এছাড়া জাপান, মালয়শিয়া, আমেরিকার উপকুলবর্তি এলাকার অল্প কিছু মানুষের মধ্যে আছে৷ এদের অরিজিনাল জনগোষ্ঠি অন্যান্য জায়গা থেকে মোটামুটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, অথবা এদের থেকেই নতুন মার্কারের উদ্ভব ঘটেছে পরবর্তিতে (নতুন মার্কার মানে আদি মার্কারটি মিউটেশনে বদলে গিয়ে অন্য কিছু হয়েছে)৷ ভারতীয় উপমহাদেশে খুব অল্প কিছু লোকের মধ্যে আদি M130 আছে৷ ভারতীয়রা বেশীর ভাগই অন্যান্য মার্কারের লোকজন, যেমন M20, M52, M69, M201, M124 ইত্যাদি৷

আমি একজন আদি M130, কোন পরিবর্তন ছাড়া৷

দিন কেটে যায় (২)

দিন কাটছে তবে ভালো ভাবে যাচ্ছে না৷ মঙ্গলবার যে কাজগুলো শেষ করা দরকার ছিল, আজকেও শেষ হয় নি৷ নানা রকম উটকো ঝামেলা এসে যোগ দিচ্ছে৷ এ সপ্তাহে শরীরটা খুব খারাপ সার্ভিস দিল৷ তিন বেলা খাওয়াই, গোসল করাই, বাথরুমে নিয়ে যাই তারপরও কাজের সময় টায়ার্ড লাগে জ্বর ওঠার পর থেকে৷ এখানে ইদানিং তাপমাত্রা খুব ওঠানামা করছে৷ সকালে এখন যেমন ১৭ ডিগ্রী৷ রাতে ৮-৯ এর মধ্যে থাকে৷ দুপুরের পর গিয়ে দাড়াবে ৩০ এ৷ বাঙালী শরীর এত ধকল নিতে চায় না৷

একটা ভিডিও রেন্টাল ক্লাবের সদস্য হলাম মাস খানেক আগে৷ প্রতি ছয়মাসে একবার হই৷ এরা দিনে ৩টা মুভি ফ্রী নিতে দেয় সদস্য হলে৷ আমি মেকানিকাল ওয়েতে মুভি দেখি৷ কাজের মতো করে৷ প্রতি দুইদিনে তিনটা দেখা হয়৷ ভালো লাগুক না লাগুক টেনেটুনে দেখি ফেলি৷ এবার একটা অভ্যাস হয়েছে তিনটার মধ্যে অন্তত একটা পর্ন মুভি দেখা৷ ভালো পর্ন, মানে যেগুলো ভালো করে বানানো হয়েছে৷ প্রচলিত হার্ডকোর পর্ন দেখতে ভালো লাগে না, অনেক বেশী দেখা হয়ে গেছে মনে হয়৷ এই সিনেমাগুলোতে স্ক্রিন রাইটারের খুব অভাব৷ দেখতে দেখতে মনে হয় এর চেয়ে আমাদের মুখফোড় বা লালমিয়া ঢের ভালো লিখতে পারবে৷ এদের দুইজনকে নিয়ে একটা সামাজিক পর্ন মুভি প্রোডিউস করার ইচ্ছা আছে৷ বাকি মুভিগুলো (যেগুলোকে পর্ন হিসেবে দেখিনি) নিয়ে রিভিউ পোস্ট দেব কয়েকদিন পরে৷

আমাদের অফিস থেকে employee morale event গেলাম বুধবার৷ আসলে এজন্যই কাজে একটু পিছিয়ে গেলাম৷ পুরো দিনটা নষ্ট৷ সচরাচর যাই না৷ গত দুবছর যাই নাই৷ ফ্রী খাবারের লোভে কিভাবে কিভাবে এবার চলে গেলাম৷ সিদ্ধান্ত না নিয়েই৷ সকালে অফিসে গিয়ে দেখি সবাই বাসে উঠছে, আগাপিছু না ভেবে উঠে গেলাম, ৫টার সময় অফিসে এসে আর কোন কাজ করা হয় নি৷ এখানে একটা 3D রাইড আছে, সেরকম ভালো না, এর চেয়ে ঢের ভালো রাইডে উঠেছি আমি৷ তখন মনে পড়লো ইমার্সিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে একটা লেখা দেয়া যায়৷

রজনীকান্তের একটা সিনেমার এই ভিডিওটা আছে ইউটিউবে৷ এখানকার টিভিতে ফানিয়েস্ট ভিডিওর মধ্যে এর নাম দেখলাম৷ দেখেন তাহলে আপনারা -
http://www.youtube.com/watch?v=gx-NLPH8JeM৷

লাইফ হ্যাকিং

এই সংখ্যা টাইম ম্যাগাজিনে পড়লাম লেখাটা৷ এর আগেও অল্পবিস্তর শুনেছি৷ হ্যাকিং শব্দটা অবশ্য Geek (এগুলোর বাংলা করা হয়েছে কখনো?) জগতে অনেক আগে থেকে পরিচিত৷ মোটামুটি মানে হচ্ছে দুর্বোধ্য কোন সমস্যার শর্টকাট বের করা৷ অথবা বাইরে থেকে সমস্যার সাময়িক সমাধান বের করা৷ অনেক সময় নিগেটিভ অর্থে ব্যবহার হয়৷

টেক ওয়ার্ল্ডে জীবনের দর্শন বেশ পাল্টে গেছে৷ আসলে কথাটা একটু ভুল হলো৷ বলতে গেলে সব জায়াগাতেই পাল্টে গেছে, আরো যাচ্ছে৷ এক জেনারেশন আগে আমার বাবা-মা তাদের বিশের বা ত্রিশের কোঠায় যেভাবে দেখতেন এখন আর সেরকম সুযোগ নেই৷ আমাদের এখানে এখন যেমন দেখি৷ সুখের সাথে সাফল্যের জন্য চেষ্টা বেশী৷ হয়তো সুখ একমাত্র টার্গেট না এখন৷ নিরন্তর self improvement এর চেষ্টা, নিজেকে পার হয়ে যাওয়ার যে ভীষন প্রেরনা এটা আমার বাবা-মার সময়ে তাদের মধ্যে এমন ভাবে ছিল না৷ বিশেষ করে সিলিকন ভ্যালীতে এটা এখন একটা রোগ, অথবা ডিজিটাল সাবকালচার৷

ওখানে যেমন কয়েকটা বুদ্ধি দেওয়া আছে, ঘন্টায় একবারের বেশী ইমেইল চেক না করা অথবা মিটিং এ বসার ব্যবস্থা না করে লোকজনকে দাড় করিয়ে রাখা ইত্যাদি৷ তবে ইমেইল বা ইন্সট্যান্ট মেসেজিং যে মনোসংযোগ নষ্ট করে এটা আরো কয়েকবছর ধরে আমি লক্ষ্য করছি৷ ফোন আসলে যেমন আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়৷ আমি ইদানিং যেটা করি, কিছুক্ষন কাজ করি, যেমন আধাঘন্টা তারপর ৫ মিনিট ব্রেক নেই৷ হয়তো কফি খাই নাহলে ইন্টারনেট ঘাটি, যেমন সচলায়তন পড়ি৷ নাহলে দিনে ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করাটা কঠিন হয়ে দাড়ায়৷ লাইফ হ্যাকিং এর একটা মুল টার্গেট মনে হয় efficiency৷ ১২ ঘন্টা কাজের চেয়ে বড় লক্ষ্য মনে হয় ১২ ঘন্টার আনুপাতিক throughput৷ সবচেয়ে কঠিন অবশ্য সৃষ্টিশীলতা ধরে রাখা৷ দিন শেষে পরিশ্রান্ত হয়ে সবকিছুই হ্যাক করতে মন চায়৷

যাহোক সকাল বেলা ব্লগ লিখে মাথা গোলমাল করতে চাই না৷ লাইফ হ্যাকিং নিয়ে অনেক ওয়েবসাইট, ব্লগ আছে, টায়ার্ড লাগলে ঘুরে দেখতে পারেন৷

আমিত্ব বনাম প্যাটার্ন

এরকম বিষয় নিয়ে লেখা দেব প্ল্যান করছিলাম অনেক দিন ধরে৷ ভেতরটা ঠিক সাজানোর সুযোগ হয় নি৷ আজকে বেশ কিছুটা randomized হয়ে আছি, সেভাবে লেখার মত কোন কিছু মাথায় আসছে না৷ এক অর্থে বিষয়টা (topic) অনেক ভালো ছিল৷ ভালো মতো লিখতে পারলে একটা গূঢ় সত্য নিয়ে ভালো আলোচনার সুত্রপাত করা যায়৷ মানুষের ভাষার (natural language) একটা সমস্যা হচ্ছে এর ডাটা ট্রান্সফার রেট এখনকার যুগের জন্য যথেষ্ট নয়৷ হওয়ার কথাও না৷ ভাষা প্রস্তরযুগের হাতিয়ার (tool), অনেকখানি বিস্তৃত করে ইনফরমেশন যুগেও এর ব্যবহার হচ্ছে৷ এজন্য লিখতে চাই একরকম, লেখার পর যারা পড়বে তাদের মনের মধ্যে বিষয়টা ধরা দেবে হয়তো আরেকভাবে৷ Copy fideltity বেশ খারাপ বলতে হয়৷ আমার ধারনা এসব কারনে শীঘ্রই ভাষার একটা আপগ্রেড দরকার৷

প্রসঙ্গটা ছিল, আমিত্ব নিয়ে৷ মানে “আমি” আসলে কোথায় থাকে৷ নানা রকম ভাববাদী চিন্তাভাবনা আছে এ নিয়ে, তবে এখন ওপথ মাড়াচ্ছি না৷ সায়েন্টিফিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমাদের মাথায় থাকে “আমি”৷ সমস্যা হচ্ছে সচরাচর “আমি”কে যেরকম কেন্দ্রিভুত একটা সত্তা ভাবতে আমরা অভ্যস্ত, আমাদের মস্তিষ্কে ঠিক সেরকম কেন্দ্রীভুত কোনকিছুর অস্তিত্ব নেই৷ এরকম কোন বিশেষ স্থান বলা যাবে না যেখান থেকে সমস্ত সিদ্ধান্ত, চিন্তাভাবনা বের হয়ে আসছে৷ “আমি” আসলে একটা illusion, “আমি” কোথাও নেই৷

মস্তিষ্কের নিউরনগুলো অটোমেটিক “আমি”কে তৈরী করে৷ যেমন কোন কারনে যদি ব্রেইনের মধ্যে একটা পার্টিশন তৈরী হয় (এক্সিডেন্ট কিংবা টিউমার অপারেশনের পর) তখন একাধিক “আমি” তৈরী হয়ে বসতে পারে৷ বেশ বাজে অবস্থা, এক মাথার ভেতর দুজন “আমি”৷ কিন্তু “আমি”র ইল্যুশনটা এত চমৎকার যে হঠাৎ করে বোঝা মুস্কিল৷

মস্তিষ্কের নিউরন (কোষ) গুলো সবসময় পরিবর্তন হচ্ছে৷ প্রতিটা চিন্তা নিউরন গুলোর কানেকশনের physical পরিবর্তন করছে৷ ব্যাপারটা এরকম যে এই এক লাইন যখন পড়ছেন তখন পড়ার জন্য বেশ কিছু কোষ তাদের কানেকশনের অবস্থান বদলে নিল৷ চিন্তাগুলো যতই দ্রুত, আর হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার মতো মনে হোক না কেন তাদের বাস্তব অস্তিত্ব আছে মাথার ভেতর৷ কে জানে অচিরেই হয়তো এমন যন্ত্র আবিস্কার হবে যা বাইরে থেকে স্ক্যান করতে পারবে আপনি কি ভাবছেন৷ মনে মনে গালি দিয়ে পার যাওয়ার সুবিধাটা হয়তো তখন নাও থাকতে পারে৷

আবার স্মৃতি (memory) গুলোও নিউরনের কানেকশনের মাধ্যমে রক্ষিত৷ যেমন পুরোনো ঘটনা, লোকজনের চেহারা এসব৷ আমি যেমন ২০ বছর আগের দুএকটা ঘটনা এখনও বেশ নিখুত ভাবে মনে করতে পারি৷ কিন্তু ২০ বছর আগের যেসব অনুপরমানু দিয়ে আমার স্মৃতিটা তৈরী হয়েছিল, সেগুলোর কোনটাই এখন আর নেই৷ সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে স্মৃতিটা থাকলো কিভাবে৷ আসলে যেটা হচ্ছে প্রতি নিয়ত আমাদের শরীরে পার্টসগুলো বদলানো হচ্ছে৷ পুরোনো কোষ মরে গিয়ে নতুন কোষ জন্মাচ্ছে৷ এজন্য পুরোনো নিউরন আর তাদের কানেকশনের উপাদানগুলো কোনটাই নেই৷

ঘটনাটা তুলনা করা যায় এভাবে, ধরা যাক আপনাকে এক পাতা লেখা দিলাম আমি৷ আপনি সেটা ফটোকপি করলেন৷ এখন আমার দেয়া লেখা আর আপনার ফটোকপি করা লেখার ভেতরের বক্তব্য হবহু এক৷ অথচ তারা ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরী৷ অর্থাৎ দুটোর মধ্যে মিল হচ্ছে তাদের প্যাটার্ন একই, একটাতে যে প্যাটার্ন আছে অন্যটাতেও তাই৷ যদিও উপাদান আলাদা৷

স্মৃতির ব্যপারটাও তাই৷ ২০ বছরে বহুবার উপাদান বদলেছে আমার নিউরন গুলোর৷ যেটা রয়ে গেছে সেটা হচ্ছে ওদের কানেকশনের প্যাটার্নটা৷ ব্রেইনের মধ্যে নিউরনের প্যাটার্নগুলোই আমাদের স্মৃতি, আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার মেকানিজম, আমাদের চিন্তাভাবনা অথবা আমাদের “আমি”৷ “আমি” অবশ্য অনেকগুলো প্যাটার্নের একটা জটিল কম্বিনেশন৷ আর দশটা প্যাটার্নের মতো এটাও ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে৷ যেমন ২০ বছর আগের “আমি” আর এখনকার “আমি”তে ভীষন তফাৎ৷ এক বছর আগের “আমি”র সাথেও অনেক পার্থক্য৷ “আমি”র প্যাটার্নটা কিছুটা বদলে দেওয়া তেমন কঠিন না৷ এই যেমন এই লেখাটা পুরো যদি পড়ে থাকেন, তাহলে আমি আমার মাথা থেকে বেশ কিছু প্যাটার্ন আপনাদের মাথায় ট্রান্সফার করলাম, তাতে আপনাদের মাথার ভেতরের প্যাটার্ন একটু হলেও বদলে গেল৷ (তবে বিশেষ কোন প্রক্রিয়ার প্যাটার্নটা বেশী বদলালে তাকে বোধহয় বলে ব্রেইনওয়াশ)৷

লিখতে লিখতে ভালো মাথা ধরে গেল, জ্বর আসতে পারে, বাকী বক্তব্য পরে আসছে৷

Coolness factor

গত বছর ক্রিসমাসের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার কম্পানী মাইক্রোসফট একটা পোর্টেবল মিডিয়া ডিভাইস নিয়ে আসে বাজারে৷ আমি জানি না আপনারা নাম শুনেছেন কি না, Zune৷ এই মার্কেট টা আগে থেকেই এপল তার আইপড দিয়ে দখল করে রেখেছিল৷ সম্ভবত মাইক্রোসফটের একটা চেষ্টা ছিল এপলের শেয়ারে ভাগ বসানোর৷ কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে এমনিতেই প্রতিযোগিতা মারাত্মক৷ মাইক্রোসফটের দুর্ভাগ্য জুন সুবিধা করতে পারে নি, যদিও দামের তুলনায়, একই ধরনের অন্যান্য ডিভাইসের চেয়ে সুযোগ সুবিধা খানিকটা বেশীই ছিল জুনে৷ বিশেষ করে Wi-fi কানেক্টিভিটি৷ ইলেকট্রনিক্স নিয়ে ম্যাগাজিন, ব্লগ বা নানারকম টেক ফোরামে জানুয়ারীর দিকে আলোচনা চলতো জুন এতটা ফ্লপ করলো কেন৷ বিশাল পরিমান মিডিয়া ক্যাম্পেইন করা হয়েছিল জুনের জন্য, রিলিজের আগে, কিন্তু কাজ হয় নি৷

আসলে মব সাইকোলজি বেশ জটিল৷ ভালো হওয়াটাই যথেষ্ট নয় (জুন ভালো কিনা সেটা উহ্য রেখে)৷ পাব্লিক এডপশনের জন্য আরেকটা গুরুত্বপুর্ন উপাদান আছে৷ আমি ঠিক মনে করতে পারছি না Cool এর যথাযথ বাংলা প্রতিশব্দ কি হতে পারে? কোন কনজিউমার আইটেম থেকে শুরু করে গান, টিভি সিরিজ, মতবাদ এসবের জনপ্রিয়তার পেছনে coolness factor কে ঠিক উপেক্ষা করা যায় না৷ ভালো হলেই আসলে ভালোবাসা পাওয়া যায় না৷ ভালো হওয়ার সাথে সাথে ফ্যাশনেবল হওয়া জরুরী৷

এই যেমন ব্লগে এরকম আলোচনা দেখেছি শিবিরের attrition এত বেশী কেন৷ ছোট বাচ্চারা বড় হয়ে কেন শিবির ছেড়ে যায়, এত সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও৷ হয়তো প্রত্যেকের জন্য আলাদা কারন দেখানো যেতে পারে৷ কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয়, শিবির নানাভাবে বাচ্চাদেরকে সাহায্য করলেও শিবিরের coolness এর বড় অভাব৷ স্রেফ একটা জিন্স প্যান্টের coolness-ও শিবিরের চেয়ে বেশী৷ হয়তো প্রচ্ছন্ন এই coolness এর ঘাটতি শিবির ছাড়তে সাহায্য করে (? মতামত দিন)৷

আরেকটা কৌতুহল আমার, ঢাকায় একদশক আগে আমরা বিদায় নেয়ার সময় বলতাম “খোদা হাফেজ”, কিভাবে যেন এখন “আল্লাহ হাফেজ” টাই বেশী প্রচলিত মনে হয়৷ আল্লাহ হাফেজ কি বেশী cool? স্কার্ফ পড়া মেয়েদের সংখ্যা যে বেড়েছে এটা আরো অনেকের মুখে শুনেছি, coolness anyone? তবে এর বাইরেও আছে৷ আমাদের সময় মেটাল গান শোনা ছিল কুল৷ হিন্দী শব্দ “ঝাক্কাস” বা বন্ধুদের আড্ডায় এসবের ব্যবহার হয়তো cool? ঝাক্কাস মানেই মনে হয় cool৷ যখন যেটা ফ্যাশনেবল, দোষের কিছু নেই৷

“মুক্তিযুদ্ধ” কি তার coolness হারিয়েছে কোনভাবে? মুক্তিযুদ্ধের সাথে আদৌ coolness এর সম্পর্ক আছে কি না৷ ওইদিন তো একজনের প্রশ্নের উত্তরে জানালাম আমাদের পরিবারের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা, আগারতলা মামলার আসামীসহ৷ কিন্তু আরো আত্মীয় স্বজন আছে৷ দক্ষিনবঙ্গের তখনকার একজন নামকরা মুসলিম লীগ নেতা, রাস্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও আমাদের আত্মীয়৷ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মারা না পড়লে এতদিনে বিএনপির উপরের সারির নেতা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল৷ তো তার ১৮-১৯ বছরের ভাতিজা ৭১ এর জুন-জুলাইয়ের দিকে পাক বাহিনীর লঞ্চ রেইডের সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে ধরা পড়ে৷ পাক আর্মির সাথে থাকা রাজাকারদের কারনে বাকী মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের তখনই মেরে ফেলা হলেও ভাতিজা তখনকার মতো বেচে যান, কয়েক ঘন্টার জন্য আসলে৷ লঞ্চের কোথাও লুকানো অস্ত্র ছিল, ভাতিজা ওখান থেকে অস্ত্র এনে আর্মির যে কমান্ডার (ক্যাপ্টেন, মেজর এরকম কিছু) ছিল তাকে গুলি করে পানিতে ঝাপ দেয়৷ তবে কতক্ষন আর ডুবে থাকা যায়, লঞ্চে ওপর থেকে সৈন্যদের গুলিতে ভাতিজা নিহত হন৷ বহুবার নানা বাড়ীতে গিয়ে এই কাহিনী শুনেছি, নানাজনে নানাভাবে এদিক সেদিক করে বলেছে৷ গোড়া পাকিস্তান পন্থী পরিবারে বড় হওয়া ১৮-১৯ বছরের যে ছেলে এই কান্ড করলো, সে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, দেশের জন্য মহান দ্বায়িত্ববোধ থেকে একাজ করেছে, আমার কাছে একটু বেশী বেশী মনে হয়৷ ১৫-২০ বছর বয়সী আর যে কয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনি, তাদের সবার ক্ষেত্রেই আমার গাঢ় বিশ্বাস মুক্তিবাহিনীর coolness টাই বড় ছিল৷

এখন যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মরচে ধরেছে৷ জোর করে গিলিয়ে দিতে হচ্ছে লোকজনকে, তখন সন্দেহ হয় মুক্তিযুদ্ধ বোধ হয় আর ফ্যাশনেবল নেই, সামি ইউসুফের গান এখন মুক্তিযুদ্ধের ডাকের চেয়ে বেশী cool৷ এই সমস্যা সমাধানের দায় আমাদেরই৷ মুক্তিযুদ্ধকে ফ্যাশন হিসেবে ধরে রাখতে পারি নি এজন্য মুক্তিযুদ্ধ পিছনে পড়ে গিয়েছে, ঠিক এজন্যই অনেকে বলার সুযোগ পায় ৩০ বছর পেছনে গিয়ে লাভ কি, আসুন সামনে তাকাই৷ গাছের পাতা দেখে বোঝা মুষ্কিল তার মুলটা কোথায়, কিন্তু মাঝে মাঝে সমস্যার মুলে যাওয়ার চেষ্টাটা বোধ হয় করা উচিত৷

Saturday, June 9, 2007

ডিজাইন ফল্ট

কে যেন অমরত্ব নিয়ে লেখা দিচ্ছিল এখানে, ভাস্করদা মনে হয়, পিতৃত্বে অমরত্ব বা এরকম বিষয়ে৷ অমরত্বের আকাঙ্খা আসলে বেশ পুরোনো, হয়তো সবচেয়ে পুরোনো৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে সবসময়ই মনে হয় মানুষের মৃত্যু একটা চরম অপচয়৷ পরকাল আছে ভেবে নিজের সাথে প্রতারনা করা যায়, কিন্তু সমস্যার সমাধান তাতে হয় না৷ একটা প্রশ্ন করা যায়, বুড়িয়ে যাই কেন? অথবা আমরা কেন ৫০০ বছর বেঁচে থাকতে পারি না?

সংক্ষেপে উত্তরটা হচ্ছে এরকম, আমাদের শরীরের ফান্ডামেন্টাল ডিজাইনে আসলে অনেক bug আছে৷ আমাদের জিনে যে ইন্সট্রাকশন সেট আছে সেগুলোও নানা security hole এ ভরা৷ যে বা যারা এগুলো প্রোগ্রাম করেছে, তারা এই কাজে ভীষন দক্ষ নয় (মানে পাঁচশ বা হাজার বছর বাচিয়ে রাখার জন্য যে দক্ষতা দরকার)৷ আমাদের জিনের সেই অদক্ষ প্রোগ্রামার কারা, সেসব আলোচনায় যাওয়ার আগে কিছু চর্বিত চর্বন পুরাবৃতি করি, যেন এই লেখাটা সেল্ফ কন্টেইন্ড হয়৷

এই যেমন আপনি যখন মনিটরের দিকে তাকিয়ে লেখাটি পড়ছেন, আপনার শরীর কিন্তু বসে নেই৷ বিলিয়ন কোষের সবাই ব্যস্ত, কেউ ভেঙ্গে গিয়ে দুটো হচ্ছে, কেউ মরে যাচ্ছে, কেউ নানা রকম রাসায়নিক উপাদান তৈরী করছে, যেমন ইনসুলিন, কেউ অক্সিজেন পরিবহন করছে ইত্যাদি৷ কিন্তু কোষগুলো ঠিক বুঝে কিভাবে কোন কাজটা কিভাবে করতে হবে? যেমন ইনসুলিন কিভাবে বানাতে হবে এই সুত্রটা ওরা জানে কোত্থেকে৷ প্রতিটা কোষের কাছে একটা বড় লাইব্রেরী আছে, নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম গুলোতে৷ এই লাইব্রেরীতে আসলে ডিএনএ দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে সব সুত্র৷ যদি লাইব্রেরীর সব বইয়ের অক্ষর সংখ্যা হিসেব করি তাহলে কয়েক বিলিয়ন অক্ষর আছে এখানে৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে সব কোষের কাছেই সব সুত্র আছে (অল্প কয়েক ধরনের কোষ বাদে যাদের নিউক্লিয়াস নেই), মানে ইনসুলিন বানানোর সু্ত্র অগ্নাশয়ে যেমন আছে (যেখানে ইনসুলিন তৈরী হয়) তেমন হাতের চামড়ার কোষেও আছে, তবে হাতের চামড়ার কোষ সুত্র জানলেও ইনসুলিন বানায় না, কেন বানায় না সে আলোচনা আরেকদিন৷ তো যখন ইনসুলিন বানানোর প্রয়োজন হয় তখন অগ্নাশয়ের কোষ লাইব্রেরী থেকে ১১ নম্বর বইটা নিয়ে বসে (মানুষের ৪৬ টা ক্রোমোজোম, বা বই বলতে পারি)৷ ওখান থেকে খুজে বের করে ইনসুলিনের চ্যাপ্টার (বা gene)৷ এর পরের প্রক্রিয়া অনেকটা Lego সেট দিয়ে খেলনা বানানোর মতো৷ প্রোটিনের অনেক অনু আছে যেগুলোকে বিভিন্ন ভাবে সাজিয়ে বিভিন্ন বড় সাইজের প্রোটিন অনু বানানো যায়৷ ঠিক যেমন লেগো’র ক্ষেত্রে ছোট ছোট বিল্ডিং ব্লকগুলো থেকে গাড়ী, ট্রেন, বাড়ী, প্লেন, ব্রীজ এরকম অনেক কিছু বানানো যেতে পারে৷ কোষের ক্ষেত্রে যেটা হয় রাইবোজোম নামে কোষের একটা ছোট প্রিন্টারের মতো মেশিন আছে, যেটা জিন দেখে দেখে ছোট ছোট প্রোটিনের অনুগুলোকে সাজায়, ওরকম সাজিয়ে ইনসুলিনের অনু তৈরী করে৷ একইভাবে হিমোগ্লোবিন, আরও অন্যান্য নানা জিনিষ তৈরী করতে পারে, জিনের ফর্মুলা অনুযায়ী৷ একটা প্রুফ রিডারও আছে, বানানোর পরে যদি দেখা যায় ভুল হয়েছে তখন আবার পুরোটা ভেঙ্গে নতুন করে তৈরী করে৷ চমৎকার নিঃসন্দেহে, তবে মনে রাখতে হবে প্রকৃতি কয়েক বিলিয়ন বছর সময় পেয়েছে এই মেশিনারী উদ্ভাবন করতে৷

এবং প্রকৃতির উদ্ভাবন প্রক্রিয়া কোন ডিজাইন বোর্ড বসিয়ে করা হয় নি৷ বিশাল কোন মহা আবিস্কারকের কাজেরও প্রমান নেই৷ বরং উল্টোটা, প্রকৃতি একটা সহজিয়া পন্থা বের করছে এজন্য, সহজিয়া বুদ্ধির দিক থেকে, যদিও সময়ের বা রিসোর্সের কথা ভাবলে ভীষন ব্যয়বহুল৷ পন্থাটা হলো evolution৷ প্রতিবার random কিছু পরিবর্তন করা হয় আগের ডিজাইনে, তারপর যদি নতুন পরিবর্তিত ডিজাইন আগের চেয়ে পরিবেশের সাথে বেশী খাপ খাওয়াতে পারে (not necessarily it has to be an improvement) তাহলে সেটাকে রেখে দেয়া হবে৷ হয়তো হাজার হাজার ট্রায়াল/এরর এর পরে একটা সুবিধাজনক ডিজাইন পাওয়া যায়৷ এজন্যই প্রকৃতির বিলিয়ন বছর লেগেছে এটুকু আসতে৷

সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রকৃতির যেহেতু লক্ষ্যহীনভাবে random পরিবর্তন করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, অবধারিতভাবে নানা রকম ভুলভাল ঢুকে পড়ছে ডিজাইনের ভেতরে, এক্ষেত্রে ঐ লাইব্রেরীতে৷ পরিস্থিতি এতদুর গড়িয়েছে যে আগেই যেমন বল্লাম লাইব্রেরীর ৯৫% লেখা আর পাঠযোগ্য নেই, বা পড়তে পারলেও ব্যবহারযোগ্যতা হারিয়েছে৷ এমনকি কার্যকরী যেসব ফর্মুলা আছে সেগুলো শর্ট টার্মে কাজ করলেও, লংটার্মে মঘা ইউনানী দাওয়াই শ্রেনীর৷ যদি কেউ ভুল খুজতে বসে তাহলে আমাদের জিন লাইব্রেরীর প্রতি পাতায় লাল কালির দাগ পড়বে৷ এর ওপর আছে চলমান মিউটেশন, জন্মানোর সময় লাইব্রেরীর যে কপি নিয়ে জন্মেছিলেন, আজকে ৩০ বছর পর বার বার ফটোকপি করতে করতে যেগুলোর অনেকগুলোই ঝাপসা হয়ে গেছে৷ এক পর্যায়ে রাইবোজোম টুকটাক ভুল করা শুরু করবে, কারন অনেক জায়গায় সু্ত্রে হয়তো ভুল ঢুকে পড়েছে৷ দুঃখজনকভাবে ক্যান্সারের কারন হচ্ছে এই ফটোকপি জনিত ভুল (মিউটেশন)৷

বয়স যতো বাড়বে তত এসব ভুল জমতে থাকবে, এবং তত বুড়িয়ে যেতে থাকবো, রোগশোকের কাছে ততটাই vulnerable হয়ে যাবো৷ আবার অনেক সময় মুলসুত্রটাই গোজামিল দেওয়া সুত্র৷ যেমন আমরা যে খাবার খাই তার মধ্যে যত শক্তি থাকে পুরোটা কিন্তু বের করে নিতে পারি না, বলতে গেলে অধিকাংশ অপচয় করে বসি৷ কারন প্রকৃতি তার উদ্ভাবনী ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার জন্য বের করতে পারে নি৷ এরকম আরো উদাহরন আছে, আমাদের রক্তের লোহিত কনিকা অক্সিজেন পরিবহন করে খুব inefficient পদ্ধতিতে৷ যে কারনে শরীরে শক্তি থাকার পরও ট্রান্সপোর্টেশন যানজটে আমরা পুরোটা ব্যবহার করতে পারি না৷

সংক্ষেপে, আমরা কেন হাজার বছর বেচে থাকতে পারি না, তার কারন আমাদের শরীরের ডিজাইনটা অতটা ভালো হয় নি৷ এই সুত্রগুলোর প্রোগ্রামিংটা ঠিক সেরকম ভাবে করা হয় নি৷ এজন্য চল্লিশেই শরীরটা হেলে যেতে থাকে, ষাটে গিয়ে মোটামুটি যুদ্ধ করে বাচতে হয়৷ তবে উপায় আছে, অথবা তৈরী করা হচ্ছে, কয়েকবছর আগে জিনোম প্রজেক্টের সমাপ্তির পর মানুষের পুরো লাইব্রেরী এখন আমাদের হাতের মুঠোয়৷ যদিও পুরো কোডের সবটা এখনও ব্যাখ্যা করা হয় নি৷ আশার কথা হচ্ছে যেসব বাগ আছে এগুলো কিভাবে ফিক্স করা যায় তা নিয়ে তুমুল গবেষনা শুরু হচ্ছে৷ বেশ বড়সড় ফান্ডিং পাওয়া যাচ্ছে এসব কাজের জন্য৷ আমার ধারনা ২০১০ এর দশকে এটা একটা হট সাবজেক্ট হবে ডিগ্রী নেয়ার জন্য৷

ইমাজিনেশন

আবার ট্রান্সলিটারেটেড টাইটেল দেয়ার জন্য দুঃখিত, অবশ্য আত্মীকরণ প্রক্রিয়ায় এগুলোর অনেকগুলোই হয়তো বাংলা ভাষার শব্দ, কে জানে৷ এখানে স্পেন্সার ওয়েলসের একটা লেকচার শুনতে গিয়েছিলাম চার পাচ মাস আগে৷ লোকটাকে আমার খুব পছন্দ, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ডকুমেন্টারীতে আপনারাও দেখেছেন হয়তো৷ তারপর থেকে অনেকদিন ধরেই মনের একটা অংশ প্রাগৈতিহাসিক যুগে পড়ে আছে৷ ব্যাপারটা এমন, অনেক সময় রাতে একটা নাড়া দেয়ার মতো সিনেমা দেখলে তারপর ২/১ দিন ঐ কাহিনীটা মনের মধ্যে ঘুরঘুর করতে থাকে, কেমন একটা ইমার্সিভ ফিলিং, আমার প্রস্তর যুগে পড়ে থাকাও অনেকটা কাছাকাছি, ইন্টেন্সিটি কম, কিন্তু অনেকদিন ধরে হচ্ছে৷ ঐ সংক্রান্ত কিছু দেখলেই আগ্রহ লাগে৷ ওয়েবে খুজি, টিভিতে দেখি পেলে কাজ বাদ দিয়ে দেখি, নানা রকম আদিবাসিদের গান শুনি কয়েক মাস ধরে৷ গাড়ীতে সবার কান ঝালাপালা করে দিয়েছি এসব গান শুনিয়ে৷

এখন নাড়াচাড়া করছি প্রিহিস্টরিক আর্ট নিয়ে একটা বই৷ দিনে মাত্র ৩০-৪০ মিনিট পড়ার সুযোগ পাই এজন্য শেষ করে উঠতে পারছি না৷ ওখানে দেখলাম এই কথাটা, আগেও জানতাম, আসলে সবাই শুনেছি কখনও না কখনও৷ প্রশ্নটা এমন, সভ্যতা কেন শুধু মানুষ তৈরী করেছে, অথবা আরেক ভাবে সভ্যতার চালিকাশক্তি কোথায়? হয়তো অন্য প্রানীদের সাথে এটাই আমাদের একটা দৃশ্যমান পার্থক্য৷ সায়েন্টিফিক আবিস্কার হোক, অস্ত্র/হাতিয়ার বানানো হোক, গল্প লেখা হোক আর গুহা চিত্র হোক৷ সৃজনশীলতা আমাদের সহজাত গুন, শেখাতে হয় না, হয়তো ধারালো করা যায় চর্চার মাধ্যমে৷ প্রাগৈতিহাসিক মানুষের ফেলে যাওয়া অলঙ্কার, পাথরে খোদাই করা ছবি, বর্শার হাতল সবজায়গায় মানুষ পরিস্কার ভাবে তার মনের ভেতরের আরেকটা মানুষের উপস্থিতির ছাপ রেখে গেছে৷

অনেক সময় প্রায়োগিক উদ্দ্যেশ্য বোঝা মুস্কিল৷ যেমন ২০-৩০ হাজার বছর আগের বর্শা বা এরকম কোন হাতিয়ারে খোদাই করা চিত্রকর্মের কার্যকারিতা প্রথম দেখায় বোঝা মুস্কিল৷ কারন বর্শা নিক্ষেপ করা, বা শিকার করায় এসব চিত্রকর্মের সত্যিকার কোন মুল্য নেই৷ কোন কোন ক্ষেত্রে চিত্র কর্ম করতে গিয়ে এসব হাতিয়ারের আকৃতি এতটা বদলে গেছে যে সত্যি সত্যি ওগুলো শিকারে ব্যবহার হতো কি না সন্দেহ৷

তাহলে ৩০ হাজার বছর আগে সময় নষ্ট করে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ এগুলো কেন করেছে৷ কেবল মাত্র সিম্বলিক ভ্যাল্যুর জন্য? এসবের পেছনে যে মানুষ মারাত্মক রকম সময় দিতো তার আরো প্রমান আছে৷ কিন্তু কেন? বরফ যুগে যখন বেচে থাকাটাই মুখ্য তখন এসব বিলাসিতা বলে যে এ ধরনের শিল্প কর্মের পেছনে জটিল এবং শক্তিশালী কোন চালিকা শক্তি আছে৷

ইউরোপে যেমন আধুনিক মানুষ (ক্রোম্যানিয়ন) আফ্রিকা থেকে আসার আগে আরেক প্রজাতির মানুষ ছিল, নিয়ান্ডার্থাল৷ নিয়ান্ডার্থালরা কয়েক লাখ বছর ধরেই ইউরোপের অধিবাসি, শক্ত গড়নের, শ্বেতকায়, বরফ যুগের উপযোগি শরীর৷ অন্যদিকে ক্রোম্যানিয়নরা হালকা পাতলা, লম্বাটে, কৃষ্ঞকায় গড়নের৷ নিয়ান্ডার্থালরা এত লক্ষ বছর পৃথিবীতে থাকলেও ওদের তৈরী কোন ছবি বা অলঙ্কারের উদাহরন পাওয়া যায় না (বিচ্ছিন্ন কিছু ক্ষেত্রে যেগুলো আছে সেগুলোর স্রষ্টা অনিশ্চিত, বা সন্দেহমুক্ত নয়)৷ নিয়ান্ডার্টালরা কেনো ছবি আকে নি, বা আকার প্রয়োজন বোধ করে নি, সেখানেই লুকিয়ে আছে কেন শুধু আমরাই সভ্যতা তৈরী করেছি তার উত্তর৷ সম্ভবত একই কারনে নিয়ান্ডার্টালরা প্রতিযোগিতায় না টিকতে পেরে বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ কারন? ইমাজিনেশন৷

আসলে সিম্বলিক চিন্তা করার ক্ষমতা থেকেই কিন্তু প্রতিনিয়ত নানা রকম আবিস্কার করছি৷ এখনকার টেকনোলজিকাল সভ্যতার ভিত্তিও এ্যাবস্ট্রাক্ট চিন্তা করার ক্ষমতা৷ হয়তো আরো দুচারটা প্রানীর এরকম ক্ষমতা আছে, কিন্তু আমাদের মতো এত ওয়েল ডেভেলপড নয়৷ নানা সময় আবার মানুষেরই সমাজ নানাভাবে এই চিন্তা করার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে৷ কারন ইমাজিনেশন একটা টুল, সমাজের দৃষ্টিতে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়, খারাপ কাজেও করা যায়৷ যদিও ভালো, খারাপের সংজ্ঞা পরিবর্তনশীল, আসলে ভিত্তিহীন এবং মুল্যহীন৷ ধর্ম যেমন আমাদের একটা আবিস্কার, আবার ধর্ম নিজেই সৃজনশীলতাকে ভীষনভাবে ম্যানিপুলেট করতে চায়, এই জন্যই ধর্ম আর সংস্কৃতিকে কে আমি খুব ভয় পাই, দুটোই অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাড়াতে চায় এবং পারেও৷

সে যাকগে প্রাগৈতিহাসিক আর্ট নিয়ে আরো কয়েকটা লেখা দিতে চাই, আজকে বাজারে যেতে হবে …

Wednesday, June 6, 2007

ভারত প্রসঙ্গে

বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভারত আসলে একটা ইন্টারেস্টিং ইস্যু৷ দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠি, অনুমান করি হয়তো অর্ধেকের চেয়ে বেশী, ভারতকে বন্ধুভাবাপন্ন দেশের চেয়ে বরং সন্দেহজনক প্রতিবেশী হিসেবে দেখে থাকে৷ না আমি জামাত পন্থি ৩/৪% লোকের কথা বলছি না, তাদের ক্যালকুলেশন আলাদা৷ গত কয়েকদিন ব্লগে বেশ কয়েকজন ব্লগার ভারতের ব্যাপারটা সামনে আনতে চাচ্ছেন, তা আনাই উচিত৷ গত এক বছরে ব্লগের একটা গুনগত পরিবর্তন হয়েছে৷ বলতে গেলে অনেক বড় পরিবর্তন, যারা আমার মতো গত বছর এই ব্লগে ছিলেন এবং সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন, তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ব্লগটা ছিল পুরোপুরো জামাত শিবিরদের আখড়া৷ এদেরকে ঠিক কারা খবর দিয়েছে জানি না, তবে এরা শুরু থেকেই আছে, আবার সবাই সবার সাথে লিংক্ড৷ মানে সবাই এক নেটওয়ার্কের, ওদের জালের বাইরের জামাতি কম৷ তো পরিবর্তনটা হচ্ছে জামাতি আস্ফালন আর নেই বললেই চলে, ওরা স্থায়ীভাবে সাইডলাইন্ড হয়েছে, যেমনটা হওয়ার কথা৷ এটা সম্ভব হতো না, যদি না আমরা সমস্যাটা সরাসরি মোকাবেলা না করতাম৷

ভারতের প্রসঙ্গটাও এরকম খোলামেলা আলোচনা করা উচিত৷ কারন এখানে ইনফরমেশনের সহজলভ্যতা এবং স্বচ্ছতার জন্য রাজনৈতিক কুট কৌশল বেশ কঠিন৷ যেটা সত্য সেটা লুকিয়ে ধানাই পানাই করে পার পাওয়া অসম্ভব৷ তবে ভারতের ইস্যুটা বেশ জটিল, কারন ভারতের সব কাজকর্ম একজন বাংলাদেশীর কাছে বন্ধুসুলভ বলে মেনে নেয়া কঠিন৷ মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুর মতো সাদাকালোতে ভাগ করা যায় না৷ যেমন ফারাক্কা বা হালের টিপাই বাধ সন্দেহ নাই বাংলাদেশের জন্য হুমকি, এবং একদম কিছু না করলে সেটাও ভুল হবে৷

তবে কি করা উচিত সে আলোচনার আগে, ভারত বিরোধিতা নিয়ে কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা যেতে পারে৷ যেমন ভারত যদি একটা মুসলিম প্রধান দেশ হতো তাহলেও কি ভারতের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম থাকতো? মনে হয় না৷ আবার যদি এমন হতো ভারত মুসলিম দেশ কিন্তু আমরা হিন্দুপ্রধান দেশ হতাম, তাহলে? ভারত বিরোধিতার সুত্রপাত পাকিস্তান আমলে, ভারতের জন্য যতটা না ভারত বিরোধিতা তার চেয়ে বেশী বিরোধিতা ভারত হিন্দু প্রধান দেশ বলে৷ এখনকার পাকিস্তান নিয়ে একটা মন্তব্য দেখেছিলাম (সম্ভবত টাইম ম্যাগাজিনে) নানা জাতি উপজাতিতে বিভক্ত সমস্যাসঙ্কুল পাকিস্তানের একমাত্র ইউনিফায়িং উপাদান হচ্ছে ভারত বিরোধিতা অথবা হিন্দু বিরোধিতা৷ হতেও পারে৷ এটা ঐ দেশের এবং আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটা ভীষন গুরুত্বপুর্ন উপাদান, কারন এদুদেশের মানুষ আসলেই ভারতকে অপছন্দ করে৷ এর পেছনে কারনও আছে, ৪৭ এ স্বাধীন হওয়ার আগে বেশ রক্তারক্তি হয়েছিল, তখন যে একটা তিক্ততা তৈরী হয়েছিল সেটা কখনই কাটেনি, আবার সাময়িক পলিটিকাল গেইনের জন্য রাজনৈতিক/সামাজিক নেতারাও তিক্ততা/বিতৃষ্ঞা ধরে রাখতে চেয়েছেন৷ ভারতেও মুসলিম বিরোধিতা কাজে দেয়, বিজেপির এই মুলধন এতই কাজে দেয় যে, গত কয়েকবছর ধরে ওরা ক্রমাগত প্রচার চালাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে মুসলিম অনুপ্রবেশ নিয়ে৷ পশ্চিম বঙ্গের চেয়েও এই প্রচারগুলো বেশী চলে মহারাস্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে৷ ভোটের রাজনীতিতে কংগ্রেস বা বামপন্থিদের ঘায়েল করার জন্য এটা একটা দরকারী ইস্যু হিন্দু জাতিয়তাবাদী দলগুলোর, ঠিক যেমন ভারত ইস্যু জামাত-বিএনপি (আগে মুসলিম লীগ) কাজে লাগায়৷

রাজানীতিবিদরা ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন এজন্য তাদের দোষ দেই না, কারন এটা তাদের পেশা৷ কিন্তু জনগনের জন্য সমস্যাগুলোর সমাধান কিভাবে সম্ভব? যেমন ফারাক্কা ইস্যু নিয়ে আমরা যদি ভীষন আন্দোলন লংমার্চ করি, তাতে ওরা ফারাক্কা বাধ ভেঙ্গে ফেলবে? ওদের দেশে যে বাংলাদেশী মুসলিম অনুপ্রবেশ নিয়ে এত তুলকালাম কান্ড হচ্ছে, প্রায়ই পত্রিকার শিরোনামে আসছে, সেই খবর আমরা কয়জন পাই৷ সত্যিকার অর্থে এটা যে একটা ইস্যু হওয়ার যোগ্যতা রাখতে পারে, আমি দেশের বাইরে না আসলে বিশ্বাস করতাম না৷ কারন এমনিতে হাস্যকর একটা ব্যপার যে বাংলাদেশ থেকে লাখে লাখে মুসলিম ভারতে অনুপ্রবেশ করছে, যেটা ওদের দাবী, বাংলাদেশ থেকে লোকে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়শিয়া যায় কামলা দিতে, তাই বলে কাতারে কাতারে ভারতে যাচ্ছে, এমন রিপোর্ট কোনদিন বাংলাদেশী পত্রিকায়ও দেখিনি৷ অথচ আমার পরিচিত অনেক দক্ষিন ভারতীয়রা এটাকে সত্য বলেই বিশ্বাস করে৷ সুতরাং মিডিয়াতে ভারত বিরোধি আস্ফালন করলেই যদি সমাধান হয়ে যেত তাহলে পরিস্থিতি এতদুর গড়াতো না৷

সমাধান কিভাবে করা যেতে পারে? ধরা যাক ত্রিপুরা একটা স্বাধীন দেশ আর আমাদের সিলেট জেলা থেকে কয়েকটা নদী ত্রিপুরাতে গিয়েছে৷ আমরা সিলেটে বাধ দিয়ে ওদের বারোটা বাজিয়ে দিলাম৷ তো এখন কি করলে ত্রিপুরাবাসি এই সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে পারে?
- প্রথমে বলে রাখি আমাদের বাধের জন্য ত্রিপুরায় যে এত সমস্যা হচ্ছে এটা আমাদের জানার সম্ভাবনা বেশ কম৷ কোন রাজনৈতিক দল এটা জানানোর দ্বায়িত্ব নেবে না ভোট হারানোর ভয়ে৷ যেমন বাস্তবে কাপ্তাই বাধ দিয়ে যে আমরা চাকমাদের অসংখ্য জমি জমা, চাকমা রাজার প্রাসাদ, আরও অন্যান্য পুরাকীর্তি ধ্বংস করেছি এটা আমরা কয়জনে জানি? আমি জানতাম না, কারো মুখে কখনও শুনিও নাই৷ এইজন্য বাংলাদেশের মুলভুখন্ডের কেউ সরব প্রতিবাদ করেছে বা এখন করছে তাও কানে আসে নি৷ দেশের ভেতরেই যদি এই অবস্থা হয়, অন্য দেশে হলে কি হতে পারে বলাই বাহুল্য৷
- এখন ত্রিপুরায় এই নিয়ে যদি আন্দোলন, মিডিয়াতে বাংলাদেশ ব্যাশিং হয় তাতে আমাদের সহানুভুতি বাড়বে?
- পাল্টা আন্দোলন আমাদের দেশেও চলতে পারে৷ এবং পাল্টা-পাল্টির এই খেলায় সমাধানের সম্ভাবনা কম৷

যেটা করা যেতে পারে তা হলো অন্যদেশটাতে জনমত তৈরী করা৷ যেমন ফারাক্কা, টিপাই, বিএসএফ এসব সমস্যাগুলো ভারতের জনগনের কাছে আমাদের দৃষ্টিকোন থেকে প্রকাশ করা৷ ওখানকার সাধারন মানুষ, বুদ্ধিজীবি এবং রাজনৈতিক মহলে এগুলোর গুরুত্ব নিয়ে জনমত তৈরী করা৷ বেশীরভাগ ভারতীয় এমনকি পশ্চিম বঙ্গের লোকজন জানেই না যে ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশে কি রকম পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে৷ আমরা অনেকে হয়তো জানি না কলকাতার বুদ্ধিজীবি সমাজ সচরাচর বাংলাদেশের পক্ষে থাকে৷ সেই একাত্তর থেকে শুরু৷ অল্প কিছু বিজেপির লোকজন ছাড়া বেশীরভাগকে বাংলাদেশের পাশে পাওয়ার কথা৷ কিন্তু আমরা কি কখনও নদী সমস্যার ভয়াবহতা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করেছি? বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক নেতাদেরকে বাংলাদেশে ডেকে এনে সরেজমিনে দেখিয়ে দেয়া যায় রাজশাহী, পাবনা বা কুষ্টিয়া এলাকায় কিভাবে নদী শুকিয়ে যাচ্ছে৷ ভারতীয় মিডিয়াতে এই নিয়ে কলাম লেখা যেতে পারে৷ ভারতে গিয়ে ডকুমেন্টারি দেখানো যেতে পারে, সংবাদ সম্মেলন করে জনসাধারনকে জানানোর চেষ্টা করা যেতে পারে৷ মোদ্দা কথা হচ্ছে বাধ-ফাদে যে আমাদের ভীষন সমস্যা হচ্ছে এটা ঐ দেশের আমজনতাকে জানানো দরকার, বাংলাদেশের সমস্যাটার গুরুত্ব বুঝিয়ে সিম্প্যাথি তৈরী করা দরকার৷

ঘরে বসে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে বোকামি করার মানে হয় না৷ তাও যদি ভারতের সাথে যুদ্ধ করে পোষাতো৷ একটা চড় মারতে গেলে দুটো লাথি খেয়ে আসার সম্ভাবনা আছে৷ দুদেশের শুধু রাজনৈতিক নেতা নয় বরং জনসাধারনের মধ্যে বোঝাপড়া দরকার৷ একটা সুবিধা হচ্ছে ভারত গনতান্ত্রিক দেশ, রাজনীতিবিদরা যতই কৌশলি হোক ওখানে, বাংলাদেশের পক্ষে সেন্টিমেন্ট তৈরী করতে পারলে সমস্যার সমাধান না করে উপায় নেই৷ দুঃখজনক হচ্ছে সেই চেষ্টাটা না করে আমরা ঢিল ছোড়া ছুড়ির পন্থাটা নিতে চাই৷

অবশ্য ভারতের সাথে সমস্যাগুলো না থাকলে বিএনপি জামাতের একটু অসুবিধা হবে৷ এজন্য গত ৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও তারা না ফারাক্কা না টিপাই নিয়ে কোন আলোচনা করেছে৷ আওয়ামী লীগ আমলে একবার সাময়িক কিছু সমাধান পাওয়া গিয়েছিল, তাও পরে আওয়ামী লীগের আগ্রহের অভাবে বা ইচ্ছা করেই হয়তো পুরোটা সমাধান হয় নি৷ তবে যেটা লক্ষ্যনীয় তা হলো, একবার যতটুকু সমাধান পেয়েছিলাম সেটাও আলোচনার মাধ্যমে ঘরে বসে লংমার্চ আন্দোলন করে নয়৷

পোষা নেকড়ে

কালকে পিবিএস-এ একটা প্রোগ্রাম দেখাচ্ছিল কুকুর আর মানুষের সিম্বায়োটিক সম্পর্ক নিয়ে৷ নিকোলাস ওয়েডের “Before the dawn” পড়ার সময়েও এরকম তথ্য দেখেছিলাম যে গত ২০ হাজার বছরে আমাদের সভ্যতার গড়ে ওঠার সাথে কুকুরের একটা গুরুত্বপুর্ন সম্পর্ক আছে৷ আবার উল্টোটাও সত্যি কুকুরের আজকের যে চেহারা আমরা দেখি এটা কিন্তু মানুষের হাতে গড়া৷ এই জায়গাটাই অদ্ভুত মনে হয়, কারন অন্যান্য পোষা প্রানীর চেয়ে বোধ হয় কুকুরের ক্ষেত্রেই মানুষের প্রভাবে সবচেয়ে বেশী বিবর্তন হয়েছে৷

বিবর্তন কেন? কারন কুকুর আসলে এক ধরনের নেকড়ে৷ জংলী নেকড়ের বেশীরভাগ বৈশিষ্ট্যই আছে, কিন্তু কয়েকটা ক্ষেত্রে পার্থক্যও আছে, আর এই পার্থক্যগুলো তৈরীতে মানুষের সরাসরি ভুমিকা আছে, মানে দাড়াচ্ছে এগুলো প্রকৃতি থেকে অটোমেটিক বিবর্তিত হয়ে তৈরী হয় নি বরং মানুষের কৃত্রিম সিলেক্টিভ প্রেশারের কারনে গত ১৫-২০ হাজার বছরে এই পরিবর্তনগুলো হয়েছে৷ ২০ হাজার বছর আসলে বিবর্তনের জন্য খুব কম সময়, বলতে গেলে ২০ হাজার বছর আগের একজন মানুষের চেয়ে আমাদের পার্থক্য খুব কম (যদিও ধরা হয়ে থাকে বর্তমানে মানুষের মধ্যে সাদা-কালো-বাদামি যে বর্ন তৈরী হয়েছে তা মুলত গত ২০-৩০ হাজার বছরের মিউটেশনের ফলাফল)৷

পোষা কুকুরের সাথে নেকড়ের (এক্ষেত্রে Gray Wolf) মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তুলনা করলে দেখা যায় ওদের পার্থক্য মাত্র ০.২%৷ যেখানে নেকড়ের সাথে কায়োটির (Coyote – শেয়ালের মতো দেখতে উত্তর আমেরিকাতে আছে) পার্থক্য ৪%৷ জেনেটিক এভিডেন্স থেকে মনে হয় কুকুর আসলে গ্রে উল্ফ থেকেই এসেছে, শেয়াল/খেক শিয়ালের সাথে তাদের পার্থক্য তুলনামুলক ভাবে বেশী৷

কিন্তু গ্রে উল্ফকে কুকুর বানালো কে? কালকের প্রোগ্রামে দেখাচ্ছিল পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে পোষা কুকুরের ডিএনএ নিয়ে দেখা হচ্ছিল কুকুর পোষা কোথায় প্রথম শুরু হয়৷ অনেকটা ফরেনসিক সায়েন্সের মতো, অতীতে ফিরে গিয়ে যেহেতু সরাসরি দেখে আসার উপায় নেই, সুতরাং এখনকার এভিডেন্সগুলোকেই বিশ্লেষন করে দেখতে হচ্ছে৷ একটা উপায় হচ্ছে কোন এলাকায় পোষা কুকুরের কেমন ডাইভারসিটি হিসেব করে দেখা৷ ডাইভার্সিটি কারন, উত্স বের করার জন্য ডাইভার্সিটি বেশ গুরুত্বপু্র্ন, একটা উদাহরন দেই৷ ধরা যাক ক, খ, গ তিনটি গ্রাম পাশাপাশি৷ এখন আমি যদি ওখানকার মানুষের last name নিয়ে একটা জরীপ চালিয়ে দেখি ক গ্রামে “তালুকদার” ৪০%, খ গ্রামে ২০% আর গ গ্রামে ১৫%৷ তালুকদারদের আদিনিবাস যদি এ তিনটি গ্রামের যে কোন একটা হয় তাহলে কোনটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? নিশ্চয়ই “ক”৷ যেমন মানুষের ক্ষেত্রে আমাদের জেনেটিক ডাইভার্সিটি সবচেয়ে বেশি আফ্রিকাতে৷ হিসেব করলে বোঝা যায় সবচেয়ে পুরোনো জিন আছে এরকম লোকেরা দক্ষিন পুর্ব আফ্রিকাতে থাকে৷ এরকম একটা গোষ্ঠি হচ্ছে Khoisan-রা ৷ জেনেটিক প্রমান ছাড়া আলাদা ভাবে ফসিল এভিডেন্স থেকেও বোঝা যায় আফ্রিকার রিফ্ট ভ্যালী বা তারপাশের এলাকা আমাদের আদিনিবাস৷

তো কুকুরদের ক্ষেত্রে এরকম ডাইভার্সিটি স্টাডি করে দেখা গেল যে পোষা কুকুরদের ডাইভার্সিটি চীনে সবচেয়ে বেশী৷ মোটামুটি ধারনা করা যায় বর্তমান চীন বা সাইবেরিয়াতে কুকুর পোষা সবার আগে শুরু হয়েছিল৷ সম্ভবত হঠাত্ করেই বিচ্ছিন্নভাবে, কোন ধরনের প্ল্যান ছাড়া৷ এমনিতেই মানুষের বসতির আশে পাশে অনেক প্রানী ঘুরঘুর করে৷ ২০ হাজার বছর আগে শিকার নির্ভর যাযাবর মানুষের আশে পাশে গ্রে উল্ফ থাকা খুব স্বাভাবিক৷ কারন উল্ফ অনেক ক্ষেত্রেই opportunistic scavenger এর ভুমিকা নেয়৷ হয়তো কোন এক ক্ল্যানের মানুষ উল্ফের মধ্যে যেগুলো একটু tame সেরকম দু একটা কাছে রাখা শুরু করে৷

এবং নেকড়ে থেকে কুকুর এর পরে বেশ দ্রুত৷ নেকড়ে এমনিতে বন্য এবং হিংস্র প্রানী৷ কিন্তু নেকড়ে আবার গোষ্ঠিবদ্ধ প্রানী, দলের আলফা নেকড়েকে মেনে চলে৷ মানুষ যেটা করেছে প্রতি জেনারেশনে সেই সব নেকড়েকে বেছে নিয়েছে যেগুলোর হিংস্রতা কম, অথচ মানুষকে আলফা নেকড়ে হিসেবে মেনে চলে৷ এভাবে প্রতি জেনারেশনে বাছাই করতে করতে কয়েক হাজার বছরে শুধু সেই নেকড়ে গুলোই সুযোগ পেয়েছে যারা মানুষের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে৷ এমনিতে প্রকৃতি লম্বা সময়ে এ ধরনের সিলেকশন করে (যেটা বিবর্তনের কারন), এক্ষেত্রে মানুষ ইচ্ছাকৃত ভাবে সিলেক্ট করে গ্রে উল্ফকে কুকুর বানিয়ে ছেড়েছে৷

আরো অদ্ভুত হচ্ছে এখন যে এত ধরনের/আকারের কুকুর আমরা দেখি এগুলোর সবগুলোই মানুষের হাতে বানানো৷ অনেকগুলো আছে যেগুলো গত কয়েকশ বছরে বানানো হয়েছে৷ যেমন বুলডগ, গত একশ বছরে এরকম চেহারা পেয়েছে৷ কুইন ভিক্টোরিয়ার আমলেও এখনকার চেহারার বুলডগ ছিল না৷ উনবিংশ শতাব্দির শেষ থেকে শুরু করে সিলেক্টিভ ব্রিডিং এর মাধ্যমে বুলডগের আপাত হিংস্র চেহারা বানানো হয়েছে৷ আবার যেমন টেরিয়ার তৈরী করা হয়েছিল টুকটাক শিকারের জন্য৷ পিকিং এর লায়ন ডগ তৈরী করেছিল চিনের রাজারা, পরে ভিক্টোরিয়ান যুগে ইউরোপে ব্যপক জনপ্রিয় হয় ছোট সাইজের এই কুকুরগুলো৷

তবে মানুষ আর কুকুরের ২০ হাজার বছরের সম্পর্কের একটা ক্রান্তিকাল যাচ্ছে এখন৷ যেসব কারনে মানুষের জন্য কুকুর এত প্রয়োজনীয় ছিল সেগুলো বেশীরভাগই আর নেই এখন৷ আবার অতিরিক্ত ব্রিডিং এ এখন এমন কুকুর তৈরী করা হচ্ছে/হয়েছে যেগুলো বায়োলজিকালী আনফিট৷ এজন্য মনে হয় যেহেতু আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে কুকুরকে তার নিজের রাস্তায় যেতে দেয়াই ভাল৷

আন্দামানে ভিনাস (Venus)


ব্লগার যূথচারীর আর্কিওলজি নিয়ে পোস্টগুলো পড়ছিলাম সকালে৷ আমি নিজেও অনেক সময় ভেবেছি আমাদের দেশে প্রস্তরযুগের আর্কিওলজিকাল ফাইন্ডিংস তুলনামুলক কম কেন? কম বলতে সেরকম স্পেক্টাকুলার আবিস্কার চোখে পড়ে না৷ হয়তো যথেষ্ট খোজা হয় নি? না থাকাটা অস্বাভাবিক মনে হয়৷ কারন ৭০/৮০ হাজার বছর আগে মানুষ আফ্রিকা থেকে বের হয়ে উপকুল বরাবর ছড়িয়ে পড়েছে৷ একসময় অস্ট্রেলিয়াতে পৌছেছে, অন্তত ৬০/৭০ হাজার বছর আগে৷ ঘটনা হচ্ছে সোমালিয়া-ইয়েমেন থেকে বের হয়ে অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে অবশ্যই আজকের যুগের বাংলাদেশ হয়ে যেতে হবে৷ তাহলে মানুষের এই আদিতম মাইগ্রেশনের কিছু প্রমান তো থাকা উচিত আমাদের দেশের কোথাও না কোথাও৷ একটা ব্যপার হতে পারে এগুলো সমুদ্রের নীচে, কারন মাত্র কয়েক হাজার বছর আগেও যখন বরফ যুগ ছিল তখন আমাদের উপকুল এখনকার চেয়ে অনেকখানি দুরে ছিল, মানে আমাদের দেশের আকারটা আরো বড় ছিল৷

এর কারন বরফ যুগে ঠান্ডার জন্য মেরুগুলোতে আইসক্যাপ তৈরী হয়েছিল৷ আইসক্যাপ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা জুড়েই ছিল৷ আর এই আইসক্যাপে প্রচুর পানি আটকে ছিল, যে কারনে সমুদ্রে পানি ছিল কম, মানে দাড়াচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেকখানি কম ছিল৷ সুতরাং তখনকার উপকুল আর এখনকার উপকুল আলাদা, তখনকার উপকুল বরফযুগের শেষে আস্তে আস্তে সমুদ্রের নীচে তলিয়ে গিয়েছে, সেই সাথে যেসব আর্টিফ্যাক্ট ছিল ৭০ হাজার বছর আগের মানুষের সেগুলো ডুবে গেছে বলে মনে হয়৷

এজন্য কৌতুহল হয় বাংলাদেশের সেইসব আদি অধিবাসী কারা? তারা কোথায়? তারা দেখতে কেমন ছিল৷ আসলে ৭০ হাজার বছর আগে যারা আফ্রিকা থেকে বের হয়েছিল তারা দেখতে কেমন ছিল এটা একটা বড় কৌতুহল পৃথিবী জুড়ে অনেকেরই৷ সবচেয়ে পুরোনো মানুষের বানানো মুর্তিগুলোর অনেকগুলোই ইউরোপে পাওয়া গেছে৷ যেমন এখানে যে ছবি দিয়েছি (Venus figurine of Willendorf), এটা ২৫,০০০ বছর আগের৷ এরকম আরো অনেকগুলো নারীমুর্তি আছে যেগুলো ১০ হাজার বা তার চেয়ে বেশী পুরোনো৷ কেন শুধু ওই সব সময়ে মানুষ নারীমুর্তি বানিয়েছে (পুরুষের পরিবর্তে বা সংখ্যায় কম বানিয়েছে) তার পেছনে অনেকগুলো কারন অনুমান করা যায়৷

তবে আজকের বিষয় অন্য৷ এসব মুর্তির অনেকগুলোই ইউরোপে পাওয়া গেলেও সবগুলোর চেহারায় একটা মিল আছে৷ এই নারীদের চেহারা/ফিগার ঠিক আধুনিক ইউরোপয়ান নারীদের মতো নয়৷ এমনকি পৃথিবীর বর্তমান যুগের বেশীরভাগ নারীদের মতো নয়৷ কথা হচ্ছে ২৫ হাজার বছর আগে ইউরোপীয়ানরা এরকম বেঢপ চেহারার নারীমুর্তি কেন বানিয়েছিল৷ অথবা এই বিশেষ চেহারাটা ঠিক কোন জায়গা থেকে নকল করলো৷

পৃথিবীতে অল্প কিছু জায়গা আছে যেখানে মেয়েদের ফিগার আসলেই এই মুর্তিগুলোর মতো৷ যেমন আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ট্রাইবের মেয়েদের ফিগার বেশ মিলে যায় এই ভিনাস ফিগারিন গুলোর সাথে৷ ২৫০০০ বছর আগে যারা ইউরোপে থাকতো তারা বঙ্গোপসাগরের আন্দামানের মেয়েদেরকে রোলমডেল হিসেবে নেয়ার একটাই কারন হতে পারে – ফ্রান্সের/অস্ট্রিয়ার তখনকার অধিবাসীরা আন্দামানের লোকের মতো দেখতে ছিল৷

এটাই খুব সম্ভব৷ ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে আমরা যখন বের হয়েছিলাম তখন আমাদের চেহারা ছিল আফ্রিকার Khoisan বা আন্দামানের Pygmy Negrito দের মতো৷ আমাদের কেউ কেউ আন্দামানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল বলে বিবর্তিত হয়েছে কম৷ বাকীরা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে, ন্যাচারাল সিলেকশনের চাপে আজকের চেহারা পেয়েছে৷ আর বাংলাদেশে আজকে আমরা আসলে তাদেরই বংশধর, আন্দামানিজদের অনেক বৈশিষ্ট্যই আমাদের আছে, কালো চামড়া থেকে শুরু করে, মেয়েদের মোটা নিতম্ব কোনটাই ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্লভ নয়৷ ইউরোপে ক্রোম্যানিয়নরা শুরুতে আন্দামানের লোকের মতই দেখতে ছিল বলে ধারনা করা হয়, অন্তত ২৫/৩০ হাজার বছর আগে৷ তারপর পরিবেশের চাপে বিবর্তিত হয়েছে, এখনও হচ্ছে৷ কিন্তু মুর্তিগুলো আর বিবর্তিত হওয়ার সুযোগ পায় নি, এজনই উইলেনডর্ফের ভিনাসের চেহারা আন্দামানের মেয়েদের মতো (ছবি)৷

ঈশ্বরের সন্ধানে

ঈশ্বর, আর মানুষের সাথে তার/তাদের সম্পর্ক নিয়ে নানারকম ভাববাদী আলোচনা সম্ভব, তাকে তুষ্ট করার জন্য, বা তাদেরকে আনুগত্য দেখিয়ে সুবিধা লাভের জন্য বিভিন্ন প্রথা সভ্যতার সমান পুরোনো, বা তার চেয়ে বেশীই পুরোনো৷ ভাববাদে আমার আগ্রহ নেই, কুসংস্কারকেও ভয় হয় না, রাশিচক্র পড়ার প্রয়োজন বোধ করি না, হাতও দেখাইনা কাউকে৷ কিন্তু প্রশ্ন তবু থেকেই যায়, ঈশ্বরের ঘটনাটা কি? কেউ কি আছে এরকম? থাকলে একজন না অনেকজন? কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমান বা অপ্রমান কি করা যেতে পারে? জ্যামিতির উপপাদ্য বা এ্যালগরিদমের প্রুফ দেয়ার মতো? উত্তরটা যেদিকেই যাক, একটা মেনে নেয়ার মতো সায়েন্টিফিক প্রুফ কি হতে পারে, অথবা এরকম প্রুফ করার জন্য যথেষ্ট ইনফরমেশন আছে কি না আমাদের?

আলকেমিদের উদাহরনটা এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করার মতো মনে হয়৷ মধ্যযুগে আলকেমিদের টার্গেট ছিল লোহা বা এরকম সহজলভ্য ধাতু থেকে স্বর্ন তৈরী করা৷ আলকেমিরা জানতো না আদৌ লোহা থেকে সোনা বানানো যায় কি না৷ সম্ভব না অসম্ভব কোন পক্ষেই সিদ্ধান্তে পৌছার মতো যথেষ্ট তথ্য/জ্ঞান তখন তাদের ছিল না৷ তবে এর ভাল দিকটা হচ্ছে লোহাকে সোনা বানানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আলকেমিরা অনেক গুরুত্বপুর্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া আবিস্কার করে, পরবর্তিতে যেগুলো রসায়ন শাস্ত্রের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতো৷ উনবিংশ শতাব্দিতেই পরিস্কার হতে শুরু করলো আসলে কোন ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়াতেই লোহা থেকে সোনা বানানো সম্ভব নয়৷ বিংশ শতাব্দিতে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের কল্যানে এখন আমরা জানি কেবল মাত্র নিউক্লিয়ার রিএ্যাকশনেই লোহা বা এরকম এক ধরনের মৌলিক পদার্থ থেকে আরেক ধরনের মৌলিক পদার্থ তৈরী করা যেতে পারে, রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়৷ আলকেমিদের কথাটা বললাম এজন্য যে কয়েকশ বছরের পরে অবশেষে বোঝা গেল যে লোহা থেকে সোনা বানানো যায়, তবে এটাও সত্য যে, কোন ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয়, যেটা আলকেমিরা জানলে পন্ডশ্রম না করে অন্য কিছু করতো৷

তো ঈশ্বরের ব্যাপারে ফেরা যাক, এখানে এরকম কিছু কি প্রমান বা অপ্রমান করা যায়? বিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? কিভাবে? অথবা তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর নেই? সেটাই বা কিভাবে? ধরা যাক এরকম একটা যুক্তি দেই এগুলো নিশ্চয়ই কাউকে বানাতে হয়েছে (কেন?) তাহলে সে-ই হয়তো ঈশ্বর, কিন্তু মাত্র একজনে বানিয়েছে তার প্রমান কি? হতে পারে না কয়েকজনে বানিয়েছে? এরকম আরো বলা যায়, যেমন গত সপ্তাহে আমাদের পাশের গ্যালাক্সিতে বিশাল বড় সুপারনোভা বিস্ফোরন হলো, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? অথবা নেই? দিনে দুবার জোয়ার ভাটা হচ্ছে তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? নাকি নেই? জন্মালে সব প্রানী মারা যায়, তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর আছে? থাকলে কয়জন? অথবা নেই? কিন্তু না সব প্রানী মারা যায় না, কারন বিলিয়ন বছর আগের যে এ্যামিবাটা জন্মেছিল সে কেবল কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যা বাড়িয়েছে, এখনকার সব এ্যামিবাই সেই আদি এ্যামিবার ভাঙ্গা টুকরো, তার মানে এ্যামিবা এক অর্থে কখনই মরে যাচ্ছে না৷ তাতে কি প্রমান হয় ঈশ্বর নেই, অথবা আছে, থাকলে কয়জন?

সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখলাম গাছের একটা শুকনা পাতা অদ্ভুতভাবে ঘুরে ঘুরে পড়ছে, তাতে কি প্রমান হয় আমার বস আজকে অফিসে আসবে না, অথবা আসবে? এসে মহাবিরক্তিকর একটা কাজ দেবে৷ নাহ আসলে এগুলোর কোনটাই কোনটাকে প্রমান করে না, অপ্রমানও করে না৷ ঈশ্বর আছে বা কতজন তার দ্ব্যার্থহীন সায়েন্টিফিক কোন প্রমান নেই, ঈশ্বর নেই তারও কোন সায়েন্টিফিক প্রমান নেই৷ ঈশ্বর থাকতেও পারে, হয়তো একজন আছে, হয়তো দশজন আছে, হয়তো ঈশ্বরদের একটা কমিটি আছে, সেখান থেকেই তারা ডিজাইন করে, হয়তো কয়েক শ্রেনীর ঈশ্বর আছে, কেউ পিয়ন ঈশ্বর, কেউ মহাজন৷

হয়তো এখানেই লেখাটা শেষ করা যেত, কিন্তু এই প্যারাটা না লিখলেই নয়৷ যেজন্য আলকেমিদের উদাহরন দিলাম৷ ঈশ্বর আছে বা নেই প্রমান করতে পারবো না৷ তবে এছাড়া বেশ কিছু জিনিষ আছে যেগুলো প্রমান করতে পারবো৷ যেমন আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত ছিল সম্ভবত সাতমাথা কচ্ছপ দেবতার মাথার ওপর পুরো পৃথিবীটা আর কচ্ছপ যখন মাথা বদলায় তখন ভুমিকম্প হয়৷ নাহ যে ঈশ্বর এই কাহিনী ফেদে ছিলেন তিনি নেই৷ যেমন আরেক ঈশ্বর দাবী করে সে নুহের বন্যা ঘটিয়েছিলো পৃথিবী ব্যাপী, এরকম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বন্যার কোন ভুতাত্ত্বিক প্রমান নেই, তার মানে এই ঈশ্বর স্রেফ চাপাবাজ৷ আরেকজন দাবী করে যে পুরুষের বীর্য তৈরী হয় বুকের হাড় থেকে, এটাও চাপা, ভুল, মহাভূল৷ এই ঈশ্বর জানেই না মানুষের শরীর সম্বন্ধে৷ এই ভন্ড ঈশ্বর নেই৷ আরেক জায়গায় বলে যে পর্বতগুলো অনড়, ঈশ্বরের ভুগোল জ্ঞান দেখে আশ্চর্য হতে হয়৷ ধর্ম বইয়ের এই মোল্লা ঈশ্বর যার জ্ঞানের বহর হাইস্কুলের ছাত্রের চেয়েও কম সে আসলে একজন imposter, বেশ ধুরন্ধর con artist, সত্যিকার ঈশ্বর বা ঈশ্বরেরা যদি থেকেও থাকে তাদেরকে বেচে ভালই খেয়ে নিচ্ছে এই বানানো ঈশ্বর৷ এ লোক সে লোক নয় রে ভাই এ লোক সে লোক নয়৷ এজন্য চমকাই না যখন দেখি এ ঈশ্বর তার মন মতো কাজের পুরষ্কার ঘোষনা দেয় অনন্তকাল সুন্দরী সঙ্গমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে৷ যেমন ঈশ্বর তেমন তার পুরষ্কার তেমনই তার বান্দারা৷

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালাঃ অরোরা (৬)











Chena হট স্প্রিং দেখতে যাওয়ার সময় একটু ধীরে চালাচ্ছিলাম, এই রাস্তায় তুলনামূলকভাবে গাড়ী আছে অনেক, মাঝে মাঝে ট্যুরিস্ট বাস৷ ঠিক কেন জানি না জিপিএস সিগনাল ঠিকমত কাজ করছিল না৷ আলাস্কায় এসে এরকম বেশ কয়েকবার হয়েছে যে জিপিএস ঠিক মতো পজিশন বের করতে পারছে না ম্যাপের স্বাপেক্ষে৷ বারোটার দিকে পৌছলাম হটস্প্রিং এর ওখানে, একটা বড় লজিং ছিল, অনেক লোকজন এত রাতেও৷ অবশ্য পথেও অনেককে দেখেছি ক্যাম্পিং করছে৷ হটস্প্রিং লোকজন জামা কাপড় খুলে গোসল করছে, আমরা যখন পৌছেছি ততক্ষনে গোসলের এলাকার ভীড় হালকা হয়ে গেছে৷ তাও আশেপাশে বেশ কিছুক্ষন ঘুরঘুর করলাম, মনে মনে নামতেও ইচ্ছা হচ্ছিল, একা থাকলে হয়তো তাই করতাম, কিন্তু এত পরিচিতদের মধ্যে আর সাহস করলাম না৷

এখানে আসার আসল উদ্দ্যেশ্য হলো অরোরা দেখা৷ অরোরা হচ্ছে সুর্য থেকে আসা সোলার পার্টিকলের সাথে পৃথিবীর ম্যগনেটিক ফিল্ডের সংঘর্ষে এক ধরনের আলোর বিচ্ছুরণ৷ দুই মেরু এলাকাতে দেখা যায়৷ বিশেষ করে আর্কটিক কিংবা এন্টার্কটিক সার্কেলের আশেপাশে৷ যে সময় সোলার এ্যাক্টিভিটি বেশী থাকে যেমন সানস্পট (সৌরকলঙ্ক) গুলো যখন দেখা যায়, তখন অরোরাও বেশী এ্যাক্টিভ থাকে৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমরা যে সময় গিয়েছিলাম ঐ সময় অরোরাল এ্যক্টিভিটি কমের দিকে ছিল৷ সবুজাভ ছাড়া আর কোন রঙের অরোরা দেখার সুযোগ হয় নি, যাওয়ার আগে ছবিতে নানা রঙের অরোরা দেখে ঐরকম দেখবো ভেবেছিলাম৷

অরোরার আশায় মোটেলটার সামনে ঘোরাঘুরি করছিলাম আমরা৷ অন্ধকার কিন্তু অনেক লোকজন, মোটেলের ভাড়াটেরা তো আছেই আমাদের মতো এরকম বহিরাগতও অনেক৷ সবাই অরোরার আশায়, একজায়গায় এক দোকানদার আবার একটা টিভিতে অরোরা দেখাচ্ছিল, প্রথমে ভেবেছিলাম লাইভ বুঝি, পরে দেখি নাহ পুরোনো কোন আমলের একটা মুখস্থ ভিডিও চালাচ্ছে কাস্টমার আকৃষ্ট করার জন্য৷ আলাস্কা আসার অল্প আগেই ক্যাননের নতুন এসএলআর টা কিনেছিলাম, তাড়াহুড়ায় ম্যানুয়ালটা পড়াও হয় নি৷ অপেক্ষা করতে করতে ভাবলাম তাহলে একবার একটা মহড়া দিয়ে নেই৷ ৩০ সেকেন্ডের লম্বা এক্সপোজারে ছবি তুলতে হবে৷

ঠিক তখনই ঝামেলা বাধিয়ে ফেললাম৷ কি যেন একটা সেটিংস চেঞ্জ করার পর দেখি এখন আর ম্যানুয়াল এক্সপোজার হচ্ছে না৷ কয়েকবার এদিক ওদিক ছবি তোলার চেষ্টা করলাম, নাহ কোন ছবিই উঠছে না৷ ঘটনা কি? সেলফোনের আলোতে ম্যানুয়াল পড়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম, কোথায় গন্ডগোল হলো৷ এর মধ্যে দেখি লোকজনের চিৎকার অরোরা দেখা যাচ্ছে৷ পাহাড় ঘেষে অল্প অল্প করে সবুজাভ ঢেউ ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, ক্রমশ বেশী৷ ঢেউটা একসময় মাঝ আকাশে চলে এলো, দুঃখে-কষ্টে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসছিল, শালার ক্যামেরা এই সময় গোলমাল শুরু করছে৷

দেখতে দেখতে মিলিয়ে গেল অরোরা৷ দৌড়ে মোটেলের লবিতে গেলাম, ম্যানুয়ালটা এখন বুঝতে হবে, নিশ্চয়ই কোথাও আছে৷ লবিতে একটা স্টাফড বল্গা হরিন, ওটার দিকে ক্যামেরা রেখে চেষ্টা করতে দেখি এখন ঠিক হয়েছে৷ আবার আকাশের দিকে তাক করলে সেই একই সমস্যা৷ কোথায় যে ঘাপলা হয়েছে বুঝলাম না৷ হুম, কম আলোতে ছবি তুলতে গেলেই সমস্যাটা হচ্ছে, কিন্তু প্লেনে বসেও তো এভাবে ছবি তুলেছি তখন সমস্যাটা হয় নি৷ একজন বুদ্ধি দিল সব অটোমেটিক মোড বন্ধ করে দিতে, ম্যানুয়াল ঘেটে ঘটে তাই করলাম, কাজ হয়েছে বলতে হবে৷ এখন ছবি উঠছে৷

এবার খুব সিরিয়াসলি অপেক্ষা করতে লাগলাম অরোরার জন্য৷ মাঝে মাঝে সামান্য দেখা গিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে কিন্তু বড় আকারে আর হচ্ছে না৷ তবুও যা দেখা যাচ্ছে ছবি তুলে নিলাম৷ ফেরা দরকার, ঘড়িতে রাত দুটো বাজে৷ বাসে যে সব লোক এসেছিল তারা ফিরে যাচ্ছে৷ আমরাও গোছগাছ করে রওনা হলাম, অনেকে এর মধ্যে প্রথম দফা অরোরা দেখে গাড়ীতেই ঘুমিয়ে গেছে৷

হট স্প্রিং এলাকার গেট থেকে বের হয়ে ৫/১০ মিনিট আসতেই দেখি আবার বড় করে অরোরা দেখা যাচ্ছে৷ তাড়াহুড়ো করে রাস্তার পাশে গাড়ী দাড় করালাম, এমন ঘুটঘুটি অন্ধকার রাস্তার পাশে ঠিক কতটুকু জায়গা আছে বোঝা যাচ্ছে না৷ রেন্টাল কার নিয়ে খাদে পড়লে এখানে উদ্ধার পেতে সকাল হয়ে যাবে৷ একজন গাড়ী থেকে নেমে ছবি তোলা শুরু করলো (ছবিগুলো দিয়েছি এখানে)৷ বাকীরা গাড়ীতে বসে রইলাম৷ আমার একটু ভয় ভয় করছিল, বেয়ার কান্ট্রি, রাস্তার দুপাশেই খোলা জঙ্গল, কোন লোকালয়ের চিহ্ন নেই৷ অনেক ডাকাডাকির আমাদের বন্ধু ফেরৎ আসলো গাড়ীতে, একটু ওভার এক্সাইটেড হয়ে গেছে অরোরা দেখতে গিয়ে৷ ঠিক তখনই খেয়াল করলাম আমাদের গাড়ীর একটু সামনেই বাছুরের সমান সাইজের একটা সাদা নেকড়ে৷ হেড লাইটের আলোতে চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে৷

বাকী রাস্তা নেকড়েটা আক্রমন করলে কি হত তা নিয়ে আর আমাদের বন্ধুর নির্বুদ্ধিতার জন্য সবাই মিলে কি বিপদে পড়তে যাচ্ছিলাম এই নিয়ে আলোচনা করতে করতে সময় কেটে গেল৷

Friday, April 27, 2007

বাংলাদেশ ২.০ (সত্ ও যোগ্য প্রার্থীর খোজে)

দেশের খ্যাতনামা কিছু বুদ্ধিজীবি, প্রাক্তন আমলা, কলামিস্টরা মিলে একটা প্ল্যাটফর্ম করে এর নাম দিয়েছেন সুশীল সমাজ৷ বোঝা মুস্কিল ঠিক কারা এর সদস্য আর এর বাইরে কারা, মানে যারা সুশীল সমাজের বাইরে তারা কুশীল বা অন্য কিছু কি না৷ তো সুশীল সমাজের মুখপাত্রদের একটা দাবী ছিল সত্ ও যোগ্য প্রার্থী খুজে বের করতে হবে, তাদেরকে নির্বাচিত করতে হবে, তাহলে যদি দেশের ভাগ্য ফেরে৷ সুশীল সমাজের সমর্থক/বিরোধী নির্বিশেষে মোটামুটি আমরা এই স্টেটমেন্ট (সত্ ও যোগ্য প্রার্থীই বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান) মেনে নেই বা নিয়েছি৷


কিন্তু আসলেই কি তাই৷ সত্ আর যোগ্য প্রার্থী হলেই সমস্যার সমাধান হবে৷ তারওপর সত্ আর যোগ্য বিচারের মাপকাঠি কি? যদি দুজন প্রার্থী পাই একজন ৯০% সত্ কিন্তু ৫০% যোগ্য, আর আরেকজন ৫০% সত্ এবং ৯০% যোগ্য কাকে বেছে নেব৷ মতিয়া চৌধুরী আর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কে বেশী সত্ আর কে বেশী যোগ্য? কিভাবে বেছে নেব৷ আসলে এসব প্রশ্নের কোন সোজা সাপ্টা সমাধান নেই, পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক৷ আবার পারসেপশনের ব্যাপারও আছে৷ তারেক রহমান যে এত বড় দুর্নীতিবাজ হবে ২০০১ এ কয়জন ভবিষ্যদ্বানী করেছিল? এজন্য সত্ আর যোগ্য প্রার্থীর পিছনে দৌড়ঝাপ করাকে কেন যেন আমার মনে হয় পরশ পাথরের পেছনে দৌড়ানোর মতো৷


যেসব দেশ গনতান্ত্রায়নের মাধ্যমে উন্নতির মুখ দেখেছে, এবং সে উন্নতি ধরে রেখেছে, ধরা যাক যুক্তরাষ্ট্র, জাপান বা জার্মানী, এদের উন্নতির পেছনে সত্ বা যোগ্য লোকের নির্বাচিত হয়ে আসা কতটা ভুমিকা রেখেছে৷ ঠিক জানি না সুশীল সমাজ এসব কেস স্টাডি করেছে কি না৷ একটা ব্যাপার পরিস্কার যে যুক্তরাষ্ট্রের যে ইকোনমিক এঞ্জিন তা আসলে কে কোথায় নির্বাচিত হলো তার ওপর ভীষন ভাবে নির্ভর করে না৷ কিছু নির্ভরশীলতা তো আছেই, কিন্তু মোটের ওপর যেই আসুক না কেন দেশটা চলতেই থাকবে৷ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশকে চালাতে মোটেই হাই আই কিউ, নোবেল লরেট বা রকেট সায়েন্টিস্টের দরকার হয় না৷ কারন দেশটা আসলে চালায় সিস্টেম, কোন এক ব্যাক্তি বা ব্যক্তি গোস্ঠি না৷ দেশের ব্যবস্থাটা এমন যে কোন খারাপ লোক ক্ষমতায় গেলেও নিয়মের খুব বেশী বাইরে যাওয়া কঠিন৷


আর কংগ্রেসম্যান, সিনেটরদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এসব লেগেই আছে, তাই বলে দেশের চাকা ঘোরা বন্ধ নেই যুক্তরাষ্ট্রে৷ ভিশনারী কোন নেতা থাকলে ভালো, না থাকলেও, বা ভিশনটা যদি ভুলও হয় দেশের ভীষন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম, বা আসলে এখন যেমন দেখতে পাচ্ছি এত বড় ইরাক যুদ্ধের পরও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ধ্বসে পড়ে নি৷ আসলে ভালই চলছে৷


তো এসব কারনে আমার মতামত হচ্ছে সত্ আর যোগ্য প্রার্থী খোজার মতো গোলমেলে, গোজামিলে ভরা লক্ষ্যের চেয়ে জরূরী হচ্ছে এমন একটা সিস্টেম দাড় করানো যেখানে অসত্ আর অযোগ্য লোকও যদি নির্বাচিত হয়ে আসে তাহলেও দেশের যেন বিচ্যুতি না ঘটে, যেমন গত ৫ বছর হয়েছে৷ ভিশনওয়ালা নেতা খোজার আসলে কোন দরকার নেই, নেতার ভিশনে কিছু যায় আসে না, কারন গনতন্ত্রের লক্ষ্য জনগনের ভিশন বাস্তবায়ন করা, কোন নেতা কোন আমলে কি স্বপ্ন দেখে রেখেছেন তা নিয়ে আমাদের নষ্ট করার মত সময় নেই৷ ভিশনবাজ নেতা ঘুরে ফিরে আবার সেই ব্যক্তিপুজার জন্ম দেবে, নিকট অতীতে ড ইউনুসকে নিয়েও তো আমরা সেরকমই দেখলাম৷


আসলে আমাদের দেশের ব্যবস্থা যদি এরকম করা যায় যে, পুরো প্রশাসনিক, এবং বিচার প্রক্রিয়া ভীষনভাবে স্বচ্ছ, এবং রেসপন্সিভ হয় তাহলে ঠিক কে দেশ চালাচ্ছে সেটা কোন ব্যপারই না৷ জবাবদীহীতার প্রক্রিয়াটা ৫ বছরের মতো বড় সাইকেলে আটকে আছে বলেই পিন্টু/লালু/ফালু রা দুর্নীতি করার সুযোগ পায়৷ কারন যদি এমন হতো ফালুকে প্রতি সপ্তাহে তার কর্মকান্ডের জন্য সরাসরি জনগনের প্রশ্নোত্তরের মুখোমুখি হতে হতো এবং সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে সাংসদকে সাময়িক অব্যহতি দেয়া হতো, তাহলে আমার সন্দেহ হয় ফালুর পক্ষে কতটা দুর্নীতি করা সম্ভব হতো৷


ঠিক কি কি পরিবর্তন করলে বাংলাদেশকে সামন্ততান্ত্রিক ফাদ থেকে মুক্ত করা যাবে বলা মুস্কিল, তবে উপরে যেমন বল্লাম সরকারের ভেতর স্বচ্ছতা এবং যেকোন সময় দ্রুততার সাথে (ধরা যাক ২৪ ঘন্টা টার্নএরাউন্ড টাইম) জনগনের কাছে উত্তর দিতে পারার যোগ্যতাটা আসলে খুব জরুরী৷ হিমু বেশ কিছু প্রস্তাব রাখছে তার লেখায় ইদানিং, হাতে সময় থাকলে আপনাদের পড়ে দেখা উচিত, এবং বিতর্কে অংশ নেয়া উচিত৷ হিমুর লেখার লিংক - http://jongli.wordpress.com/

দিন্কালঃ যদি প্রধান উপদেষ্টা বা জেনারেল হইতাম তাইলে কি করতাম

তিন মাসের বেশী হয়ে গেল নতুন তত্ত্বাবধায়ক চলছে৷ প্রথম দু-মাস চমক দিলেও গত কিছুদিন ধরে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে৷ বলা বাহুল্য জনসমর্থনও হয়তো কমে যাচ্ছে৷ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানে সবার মধ্যে যেমন একটা আশার সঞ্চার হয়েছিল, এখন আবার নানা কারনে সেটা নিরাশা হয়ে দুরাশায় পরিনত হচ্ছে৷ আসলে দর্শকদের তুষ্ট করা এত সহজ না, একই জোকস দ্বিতীয়বার শুনলে যেমন কেউ হাসে না, সেরকম এখন আর নেতা ধরে জেলে পুরলেও পাবলিক সন্তষ্ট হতে পারছে না৷ পত্র-পত্রিকায়, ব্লগে ধীরে ধীরে সমালোচনার ধারাটাই জোরালো হচ্ছে প্রশংসার চেয়ে, হয়তো ঠিকই আছে, কারন নীতি নির্ধারকরা ঠিক কি করতে চাইছেন পরিস্কার না, আমরা কয়েকবারের ঘর পোড়া গরু, মেঘ দেখতে হয় না, অন্য কেউ দেখছে শুনলেও ভয় পাই৷


ঐদিন সাধক, আর মুখফোড় MSN-এ আসছিল৷ কথা হচ্ছিল সরকার আসলে এরকম অবস্থায় কি করতে পারে৷ কারন বাঙালী আমরা সহজেই সমালোচনা করি, কোনটা ভুল তা ধরিয়ে দিতে লোকের অভাব নেই, কিন্তু কোনটা সঠিক, বা কি করলে সঠিক হবে সেই পরামর্শ দেয়ার মতো লোক কম৷ আসলে হয়তো দর্শকের ভুমিকায় থাকতে থাকতে হাততালি আর দুয়ো ধ্বনি দিতেই আমরা অভ্যস্ত, স্টেজে উঠে অভ্যস্ত নই৷ তো মুখফোড় আর শঙ্কুকে বল্লাম, যদি আপনাদেরকে দ্বায়িত্ব দেয়ার হতো বাংলাদেশের ঠিক এই মুহুর্তে তাহলে কি করতেন৷


সাধক আর মুখফোড় দুইজনের জানাশোনা যেমন বেশী, আবার ওরা মেধাবীও৷ ওদের লেখা থেকেই বোঝা যায়৷ তো আমার প্রশ্ন একটু হঠাত্ করেই ছিল, ওরা বিভিন্ন সমাধানের কথা বললো, আমিও বললাম কি করা যেতে পারে৷ ইন্টারেস্টিং হচ্ছে প্রাথমিক যে সমাধান গুলো বলতে লাগলাম সেগুলো ঘুরে ফিরে পরিচিত একনায়কদের কাজের মতো মনে হতে লাগলো৷ একজন আরেকজনের প্রস্তাবে সহসাই অনেক দুর্বলতা খুজে পেলাম, যেমন ঠিক কি ভাবে রাজনীতিতে শুদ্ধিকরন অভিযান চালানো যায়, দেখা গেল আমরা যেসব সমাধান দিচ্ছি এগুলো স্টালিন, বা হিটলারের মতো লোকেরা আরও ৫০ বছর আগে করে গেছে, এবং আমরা সবাই এখন জানি তার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হয়েছিল৷


আসলে ঘটনা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার কোন সহজ সমাধান নেই৷ যত সহজে আমরা সমালোচনা করি, তত সহজে এর সমাধান বের করা সম্ভব না৷ তো এখন ব্লগারদের কাছে প্রশ্ন, আপনি যদি ফখরুদ্দিন বা জে মঈনের জায়গায় থাকতেন তাহলে কি করতেন? চলুন বিতর্ক করি৷ একজন আরেকজনের প্ল্যানের দুর্বল দিকগুলো বের করি৷ হয়তো কোন সমাধান বের হয়েও আসতে পারে৷

Friday, April 20, 2007

প্যারাডাইম শিফট

হাইটেকের একটা ব্যাপার আমার কাছে ভালো লাগে যে এখানে পরিবর্তন খুব দ্্রুত, আর বেশীরভাগ সময়ই যুগান্তকারী। বছর ঘুরতেই অনেক সময় ব্যপক পরিবর্তন হয়ে যায়, গত বছরের লেখা কোড এবছর হয়ে যায় লিগ্যাসী। তবে কোন কোন পরিবর্তন এত মৌলিক যে পুরো ইন্ডাস্ট্রী নিজেকে রিশাফল করতে বাধ্য হয়। নব্বই এর শেষে যেমন ডেস্কটপ মার্কেট থেকে ওয়েবভিত্তিক অর্থনীতি, আবার এর পাচ বছরেই আবার সার্ভিস ওরিয়েন্টেড বিজনেস মডেল, সোশাল নেটওয়ার্কিং মডেল, প্রত্যকেটাই বড় বড় পরিবর্তন। ইন্টারনেট আসার পর একসময় যেমন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ওয়েব ডেভেলপারদের ভীষন চাহিদা ছিল, আবার ডটকম বাস্টের পর এরাই হাজারে হাজারে বেকার হয়ে পড়ল। ওয়েবডেভেলপমেন্ট এক অর্থে এখানে আর কখনই চাঙা হয় নি। সবচেয়ে অদ্ভুত হচ্ছে এসব প্যারাডাইম শিফট যখন হয় তখন গতবারের বিদ্্রোহী এবারের স্বৈরশাসক হয়ে বসে।

আমাদের লাইফস্টাইলেও প্যারাডাইম শিফট হচ্ছে। সবচেয়ে মজার হচ্ছে মুল্যবোধের পরিবর্তন। 60 এর দশকে আমাদের বাবা-মারা তাদের বাবা মায়ের সাথে যুদ্ধ করেছেন তখনকার পরিবর্তনের অধিকার নিয়ে। আবার 90 এ এসে তারাই আবার তাদের ছেলেমেয়েদের ওপর 30 বছরের পুরোনো মুল্যবোধ চাপিয়ে দিতে চাইলেন। কে জানে এক প্রজন্ম পরে আমরাও হয়তো তাই করব, বেকে বসব নতুনকে মেনে নিতে।

এজন্য ইদানিং মনে হয় গ্যালিলিওকে যে পোপ ইনকুইজিশনের সামনে দাড়াতে বাধ্য করেছিলেন, হয়তো পোপ মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলেন না। কেবল প্যারাডাইম শিফট টা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। গ্যালিলিও প্রমান করলেন যে পৃথিবী আসলে বিশ্বের কেন্দ ্রথাক দুরের কথা সৌরজগতের সেন্টারেও না। এতদিনের বিশ্বাস স্রেফ গ্যালিলিওর প্রমানের ওপর ভিত্তি করে ছুড়ে ফেলা মুস্কিল, হয়তো একদিক থেকে ঠিকও আছে। আসলে মানুষ নিজেকে যেমন সৃষ্টির সেরা ভাবে সেখান থেকে তাকে সরালে মেনে নেবেই বা কেন। একই অবস্থা হলো কয়েকশ বছর পর ডারউইন যখন বললেন বানর আর মানুষের পূর্বপূরুষ একই ছিল। আবার মানুষকে তার অবস্থান থেকে সরানোর চেষ্টা। দেড়শ বছর পর এখনও বহু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ডারউইনের সুত্রের সরাসরি প্রমান থাকার পরও মেনে নিতে পারছে না। আসলে মানুষ তার বিশ্বাসকে সত্যের সাথে গুলিয়ে ফেলে, বিশ্বাস যে কেউ যত খুশী করতে পারে, এক বিলিয়ন লোক নিয়ে করতে পারে, কিন্তু তাই বলে বিশ্বাস করলেই সত্য হয় না। এই নিয়ে আমার একটা পোস্টও আছে, গ্যালিলিওর সময় কোটি কোটি লোক বিশ্বাস করত সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, তাই বলে মানুষের বিশ্বাসকে মুল্য দিয়ে সূর্য কিন্তু পৃথিবীর চারদিকে ঘোরা শুরু করে নি। সত্যি কথা বলতে কয়জন কিভাবে কি বিশ্বাস করছে এর সাথে সত্যমিথ্যার কোন সম্পর্ক নেই।

ঐদিন মুখফোড়ের সাথে চ্যাট হচ্ছিল। মুখফোড় ব্লগের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড ব্লগার সন্দেহ নেই। তাকে বল্লাম 25 বছর পর মানুষের তৈরী যন্ত্রের বুদ্ধি মানুষের চেয়ে বেশী হবে। কিন্তু এই ঘটনা হঠাৎ করে ঘটবে না। তার আগে আমরা নিজেরাই যন্ত্রের সাথে ইন্টিগ্রেটেড হয়ে যাব। এ প্রক্রিয়া এখন অল্প অল্প করে শুরু হয়েছে। যেমন পকেটে আইপড বা পিডিএ হচ্ছে এর প্রথম ধাপ। উন্নতবিশ্বে মোবাইল ডিভাইস এখন এমন পার্ভেসিভ যে ক্রমশ ডেস্কটপের ওপর নির্ভশীলতা কমে যাচ্ছে। 2009 এ মোবাইল কম্পিউটারের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ডেস্কটপের চেয়ে বেশী হবে। তবে 2030 এর পরিবর্তনের তুলনায় এগুলো এখনও আদিম যুগে আছে। এখনও কম্পিউটারের সাথে মানুষ বায়োলজিকালী ইন্টিগ্রেট করে নি। হয়তো আর 5/7 বছর লাগবে তার জন্য। এর একটা সুবিধা হচ্ছে আমরা সিলিকন চিপ ইম্প্ল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। শরীরের ভেতর এরকম মেমরী চিপ থাকলে যেমন কোন কিছু মনে রাখার জন্য শুধু বায়োলজিকাল নিউরনের ওপর নির্ভর না করে চিপে ঘটনা স্মৃতি সেভ করে রাখা যাবে। যেমন হঠাৎ কিছু দেখলাম, ডিজিটাল ক্যামেরা নেই সাথে, কিন্তু তাতে কি, যা দেখছি সরাসরি চোখ থেকে ইম্প্ল্যান্টেড চিপে লিখে রাখব, পরে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারব। সবচেয়ে মজার হচ্ছে অনুভুতি সেভ করে রাখা গেলে কি হবে। যেমন কেউ যদি তার প্রেমিকাকে চুমু দিয়ে কেমন লাগছে এটা সেভ করে রাখে, তাহলে পরে অন্যরা একই অনুভুতি তাদের ব্রেইনে রিলোড করতে পারবে। আসলে সবচেয়ে বড় যে সামাজিক পরিবর্তন সে টা আসছে, 2020 দশক থেকে শুরু হয়ে যাবে।

মুখফোড়কে ব্লল্লাম একটা পর্যায়ের পরে আমাদের শরীরকে রিডিজাইন করতে হবে। কারন প্রকৃতির দেয়া শরীরটার ডিজাইন ভুলে ভরা। এজন্য আমরা বেশীদিন বাচতে পারি না। কিন্তু রিডিজাইন করেও বেশীদুর যাওয়া যাবে না। বড় জোড় 200 বছর বেচে থাকা সম্ভব। এর চেয়ে বেশী চাইলে শরীরটা ফেলেই দিয়ে পুরোপুরি সিলিকন সাবস্ট্রেটে ট্রান্সফার হয়ে যেতে হবে। মুখফোর এটুকু শুনে বেশ দুঃখ পেল, এক পর্যায়ে বলেই বসল "future looks grim"।

তবে মুখফোড় আসলে খুব স্মার্ট মুহুর্তেই সামলে নিয়ে বল্লো , আসলে আমাকে যদি কেউ বলে জেনেটিক অস্তিত্ব চাও, না কি মেমেটিক অস্তিত্ব চাও, তাহলে আমি মেমেটিক টাই নেব। আসলেই তাই। 2030 বেশ দুরে এখনও। তখন আমাদের বেশীরভাগই মেমেটিক অস্তিত্বের জন্য পাগল হয়ে যাবো। ঠিক যেমন আজকের সাইবার ওয়ার্লড 25 বছর আগে অকল্পনীয় ছিল, অথচ এখন এক মুহুর্ত ইন্টারনেট ছাড়া থাকলে মনে হয় কি যেন নেই।

কিন্তু গ্যালিলিও বা ডারউইনের মতো 2030 এর দশকেও একটা ম্যাসিভ প্যারাডাইম শিফট হতে যাচ্ছে। মানুষের তৈরী যন্ত্র মানুষকে বিদ্যা, বুদ্ধি আর ক্ষমতায় মানুষকেই হারিয়ে দেবে, তবে ভয়ের কোন কারন নেই, ঘটনাটা ম্যাট্রিক্সের মতো হবে না, বরঞ্চ আমরাই transcend করব সিলিকন সাবস্ট্রেটে।

Monday, April 9, 2007

বাংলাদেশ ২.০ (নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অথবা অপ্রয়োজনীয়তা)

সকালে তর্ক হচ্ছিল এমএসএনএ, এক পর্যায়ে বাংলাদেশের নেক্সট ভার্শনে নেতা আর নেতৃত্বের কতখানি গুরুত্ব থাকবে বা থাকা উচিত এই নিয়ে প্রসঙ্গ গড়াল৷ বেশ গুরুত্বপুর্ন বিষয়, কারন নির্বাচন ভিত্তিক যে গনতন্ত্র এখন বিশ্বে প্রচলিত তার একটা মূল লক্ষ্য থাকে নেতা খুজে বের করা৷ আবার যেমন বাংলাদেশের ব্যর্থতার জন্য সুযোগ পেলেই আমরা নেতা-নেত্রীদের অযোগ্যতা, সুযোগসন্ধানী চরিত্র এবং দুর্ণীতিপরায়নতাকে দায়ী করে বসি৷ আমার মনে প্রশ্ন জাগে গনতন্ত্র নিজে কতখানি নেতৃত্বভিত্তিক, অথবা নেতার প্রয়োজনীয়তা গনতন্ত্রে কতটুকু৷

লিংকন বা এ্যরিষ্টটলের সংজ্ঞায় ঠিক নেতা নেতৃত্বের সাথে গনতন্ত্রের সম্পর্কটা পরিস্কার হয় না, অথবা যতটুকু হয় তাতে মনে হয় নেতা বিহীন অবস্থাই বরং বেশী গনতান্ত্রিক৷ যেমন যেখানে নেতার গুরুত্ব বেশী সবচেয়ে বেশী তাদের মধ্যে আছে রাজতন্ত্র/স্বৈরতন্ত্র বা বিভিন্ন ধরনের ধর্মভিত্তিক তন্ত্র৷ এগুলোতে একজন বিশেষ ব্যক্তির মতামতের গুরুত্ব অন্য সবার চেয়ে বেশী, অনেক ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত৷ আবার এরিস্টোক্র্যাসিতে যেমন একদল কূলীন লোকের মতামতের গুরুত্ব বেশী, কার্যক্ষেত্রে তারা নেতৃস্থানীয়৷ অন্যদিকে গনতন্ত্রে সবাই সমান, এবং সবার মতামতের গুরুত্বও সমান হওয়ার কথা, আর তাই যদি হয় তাহলে গনতন্ত্রে নেতার প্রয়োজনীয়তা তো না থাকারই কথা৷ কারন এমন যদি হয় নেতা গাড়ি ছুটিয়ে বাসায় যাবেন বলে সব রাস্তা বন্ধ রাখতে হবে, এমনকি মরনাপন্ন যাত্রিকে নিয়ে এম্বুলেন্সও নড়তে পারবে না, তাহলে ঠিক কিভাবে গনতন্ত্র হলো বোঝা মুস্কিল (এই ঘটনাটা ঘটেছিল কয়েক মাস আগে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর যাওয়ার সময়)৷ রাজার রথ যাত্রা রাজতন্ত্রে মানানসই, কিন্তু গনতন্ত্রে নয়৷

এটুকু ভেবে আমার মনে হলো যে, গনতন্ত্রের ১০০% প্রয়োগে আসলে কোন নেতা থাকার কথা নয়৷ বরং নেতা না থাকাটাই (নিদেনপক্ষে এইসব নেতাদের গুরুত্ব কম থাকা) গনতন্ত্রের লক্ষন৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অবশ্য ভিন্ন৷ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সব গনতান্ত্রিক দেশেই নেতা নির্বাচন গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটা অংশ৷ কিন্তু কেন? এতে কি গনতান্ত্রিক চেতনা ব্যহত হচ্ছে না৷ হচ্ছে বলেই তো মনে হয়৷ যেমন বৃটেনের জনগোষ্ঠির একটা বড় অংশ ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করলেও ওদের নেতা ব্লেয়ার ইরাকে সৈন্য পাঠান৷ দেখা যাচ্ছে নেতার ইচ্ছা অনিচ্ছার গুরুত্ব সাধারনের ইচ্ছার চেয়ে বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে, যেটা গনতন্ত্রে হওয়ার কথা নয়৷ এরকম আরো উদাহরন দেয়া যেতে পারে৷

তাহলে গনতান্ত্রিক দেশগুলোতে কেন নেতা নির্বাচনের ব্যাপারটা আছে, যদি নেতা থাকলে ঘুরে ফিরে গনতান্ত্রিক চেতনা ব্যহতই হয়৷ আমার ধারনা এর একটা কারন টেকনিকাল প্রবলেম৷ যখন দেশের জনসংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে লক্ষ বা কোটিতে যায় তখন সমস্ত সিদ্ধান্তের জন্য বারবার জনগনের কাছে যাওয়া মুস্কিল৷ আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, যেমন বৃটেনে তাদের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা কয়েকশ বছরের পুরোনো৷ সুতরাং যুদ্ধে যাবো কি না এর জন্য, জনে জনে ভোট নেয়া কঠিন, অন্তত দুশ বছর আগে চিন্তা করলে কঠিন বা অসম্ভব ছিল৷ সুতরাং ব্লেয়ার সম্ভবত পার্লামেন্ট থেকে অনুমোদন নিয়েই তার কাজ সেরেছেন৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে জনে জনে মতামত নেয়ার সমস্যা থেকে ঊদ্ধার পাওয়ার জন্য যে সমাধান তা ঘুরে ফিরে গনতন্ত্রের মৌলিক চেতনাকে আঘাত করছে৷

আমাদের দেশের ইতিহাসে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ৷ সাংসদরা প্রথম অধিবেশনেই নিজেদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে নেন৷ তারপর ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি আমাদানী থেকে শুরু করে রিলিফের বন্দোবস্ত কোনটাই বাদ যায় না৷ দু’দলের মধ্যে সব ক্ষেত্রে সাপে-নেঊলে সম্পর্ক থাকলেও এসব ব্যাপারে ভিন্নমত দেখা যায় না৷ সুতরাং দেখা যাচ্ছে টেকনিকালিটির সে সমস্যা আছে তার বর্তমান সমাধান (নেতা নির্বাচন) গনতন্ত্রকেই ধ্বংস করছে৷

কিন্তু অন্য আর কি সমাধান আছে, বা আদৌ কোন সমাধান কি আছে৷ আমার ধারনা আছে৷ আসলে নেতাবিহীন ব্যবস্থা খুবই সম্ভব৷ তবে তার জন্য বেশ কিছু ইনফ্রাস্ট্রাকচার দরকার যা একবিংশ শতাব্দিতে মানুষের পুরোটাই আছে৷ আমাদের ব্যাক্তিপুজা মানসিকতা যে আমাদের কত ক্ষতি করছে আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না৷ দেশের দুর্নীতি যে এরকম মহামারী আকার নিল তার পেছনেও নেতাভক্তি দায়ী, যে দল সমর্থন করি সে দলের নেতাদের দোষ দেখেও দেখতে চাই না, ঠিক এ কারনেই নেতারা মাথায় উঠে বসেছে৷ আরেকটা আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা হচ্ছে সত্যই যদি এরকম অধিকতর গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা যেতে পারি আমরা অদুর ভবিষ্যতে পাশ্চাত্যকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার একটা রিয়েলিস্টিক প্ল্যান করতে পারি৷ কারন আগের লেখাতেই আমি দেখিয়েছি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রগতির জন্য গনতন্ত্র একটা পুর্বশর্ত৷ যত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা যেতে পারব তত বেশী আমাদের উন্নয়নের চাকা ঘুরতে থাকবে৷ আসলে ৫ বছরে একবার ৩০০ আসনে ইলেকশন হলেই যে দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না এটা এতদিনে নিশ্চয়ই পরিস্কার হয়েছে৷

বাংলাদেশে পদে পদে যে কত ধরনের অসাম্য/বর্ণবাদ তা আমাদের চোখে সহজে ধরা পড়তে চায় না৷ আমাদের অনেকে যারা ভাগ্যক্রমে অবস্থাপন্ন পরিবারে জন্মেছি তাদের হয়তো কমই এসবের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ আমার মনে আছে শিক্ষা বোর্ড অফিসে একবার মার্কশিট ইংরেজীতে ট্রান্সলেট করতে গিয়েছিলাম৷ কোথায় পড়ি শুনে বোর্ডের কর্মকর্তা লাইন ভেঙ্গে আরো ৫০ জনের আগে আমার মার্কশীট দিয়ে দিলেন৷ অথচ জামালপুর, নেত্রকোনার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেকে সকাল থেকে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে ছিল৷ শুধু খালেদা হাসিনাকে বদলে লাভ হবে বলে মনে হয় না, সমাজে এবং আমাদের মানসিকতায় গনতন্ত্র দরকার৷ এরকম ব্যবস্থা দরকার যেখানে পটুয়াখালীর আমতলী, বা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার একজন তরুন, ঢাকা শহরের একজন তরুনের সমান সুযোগ পায়৷ আর এর শুরুটা করতে হবে বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রথা বাদ দিয়ে, ব্যক্তি পুজা, বংশ পুজা, কৌলিন্যবাদ ছেড়ে দিতে হবে, রাজা-রানী, রাজপুত্র, যুবরাজদের বিদায় দিতে হবে, কারন গনতান্ত্রিক দেশে আমরা সবাই রাজা৷

নেতা বিহীন, অথবা নিদেন পক্ষে নেতাদের গুরুত্ব কমিয়ে ঠিক কি রকম গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্ভব, এসব নিয়ে পরের লেখাগুলোতে লিখব, আর হিমু তো লিখছেই৷

Saturday, April 7, 2007

বাংলাদেশ ২.০ (গনতন্ত্র আর প্রযুক্তি)

বাংলাদেশে গনতন্ত্রের ইম্প্লিমেন্টেশন কেমন হলে ভাল হয়, এ নিয়ে একটা লেখা শুরু করেছিলাম গত সপ্তাহে৷ ঘটনাচক্রে তার কয়েকদিন পরেই দেশের আর্মি প্রধান বললেন বাংলাদেশের জন্য নতুন গনতন্ত্র দরকার৷ তারা ঠিক কি করবেন এটা পরিস্কার না৷ এর আগে সামরিক শাসক জিয়া বা এরশাদ এসেও তাদের ব্র্যন্ডের হ্যা-না ভোট ওয়ালা গনতন্ত্র চালু করেছিলেন, যদিও ফলাফল শুভ হয় নি৷ তবে আপাতত পেসিমিজমে না গিয়ে আরো কিছুদিন দেখা দরকার শেষমেশ কি হয়৷ জিয়া বা এরশাদ যেমন ক্ষমতাদখল করেছিলেন সরাসরি তার চেয়ে এখনকার অবস্থার পার্থক্য আছে৷ পৃথিবী যেমন বদলেছে, বাংলাদেশও ভীষন ভাবে বদলেছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আর মানুষের সচেতনতার কারনে জিয়া/এরশাদ স্টাইল দখলতন্ত্র এখন অসম্ভব৷ আর বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এখন অনেক পেশাদার এজন্য ৭০ বা ৮০র দশকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে একদমই মনে হয় না আমার কাছে৷ আবার অন্যভাবে চিন্তা করলে মনে হয় বেশ ভালো কিছুও বের হয়ে আসার সম্ভাবনা এই প্রচেষ্টা থেকে৷ কারন অস্বীকার করা যাবে না যেভাবে নামকাওয়াস্তে গনতন্ত্র চলছিল দেশে তা বহন করা দেশের মানুষের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে দাড়াচ্ছিল৷

আমরা একটা পোষা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি যে সত্যিই যদি বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা পাল্টানোর সুযোগ আসে তাহলে আমরা ঠিক কি করতাম৷ অথবা আরেকভাবে বললে যদি স্ক্র্যাচ থেকে ডিজাইন করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে বর্তমান অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা কেমন ব্যবস্থা চাই, যেন দেশের প্রগতির চাকাকে ত্বরান্বিত করা যায়, একুশ শতকে প্রথমার্ধেই (যেমন ২০২০ এর আগে) আমরা স্বল্পোন্নত দুর্নাম ঘোচাতে পারি৷ হিমু তার লেখাগুলো এখানে পোস্ট করছে, http://jongli.wordpress.com/, প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে৷

তো আজকের লেখার মূল প্রসঙ্গে আসি৷ বেশ কিছুদিন ধরেই আমার ধারনা হচ্ছে গনতন্ত্র আর প্রযুক্তিগত উন্নতির মধ্যে একটা সিম্বায়োটিক রিলেশনশীপ আছে৷ তার আগে বলে নেই আমরা উন্নয়ন বলতে যা বুঝি তা আসলে ঘুরে ফিরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন৷ যেমন গ্রামে বেড়াতে গিয়ে যদি দেখি গতবছরের কাচা রাস্তা এবার পাকা হয়েছে তখন মনে হয় কিছু উন্নতি হয়েছে, আবার যেমন ৭০ দশকে আমাদের যে খাদ্য ঘাটতি ছিল টা আর এখন নেই, যদিও দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে, এটাও সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির জন্য৷ আসলে মানুষ হিসেবে অন্য প্রানীর সাথে আমাদের একটা মৌলিক পার্থক্য প্রযুক্তির ব্যবহার আর তার মাধ্যমে পরিবেশকে ক্রমশ নিজের অনুকুলে ব্যবহার করার ক্ষমতা৷ জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার আসলে সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি, বা আরো সংক্ষেপে বললে উন্নয়নের মূল ঊপকরন হচ্ছে knowledge৷

খেয়াল করলে দেখব আধুনিক বিশ্বে যেসব দেশ তাদের knowledge base বাড়িয়েছে তারাই আসলে ঊন্নতি করছে৷ উদাহরন দেই, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর ৫% লোক থাকে, কিন্তু বিশ্বের ২৫% বা তারও বেশী রিসার্চ হয় যুক্তরাষ্ট্রে, ফলাফল হিসেবে সমসাময়িক সমস্ত বড় বড় যুগান্তকারী আবিস্কার, আর প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ার ঊদ্ভাবন গুলো ঘুরে ফিরে বেশীরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে হয়৷ যেমন এই যে ইন্টারনেট প্রযুক্তি, ইনফরমেশন টেকনোলজি প্রায় পুরোটার জন্যই কৃতিত্ত্ব পাবে যুক্তরাষ্ট্র আর তার গবেষকরা৷ আমাদের দেশে খাদ্য বিপ্লবের কথা যে বললাম একটু আগে (এবং জেনেটিকালী পরিবর্তিত শস্য), তাও কিন্তু শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পরে তাদের অর্থায়নে৷ বড় বড় টেকনোলজি কম্পানী যেমন ইন্টেল, মাইক্রোসফ্ট বা গুগলও ওখান থেকেই শুরু করে৷ আবার মুসলিম দেশগুলোতে যেমন বিশ্বের জনসংখ্যার ২৫% বা তারও হয়তো বেশী আছে৷ কিন্তু বর্তমান বিশ্বের অগ্রগতিতে এসব দেশের অবদান ৫%ও কিনা সন্দেহ৷

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিছু কিছু দেশ কেন সভ্যতার knowledge base অনেক অবদান রাখছে আবার কেউ কেউ কিছুই করছে না৷ যেমন বাংলাদেশ, গত ৩৫ বছরে বিশ্বের দরবারে আমাদের অবদান কি? আমরা যদি এই ৩৫ বছর না থাকতাম দুনিয়ার ভীষন কোন ক্ষতি হতো বলে মনে হয় না৷ আমাদের দেশে কেন টমাস এডিসন, বিল গেটস, বা রিচার্ড ডকিনসরা জন্মায় না, যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি তাও পাশ্চাত্য থেকে ধার করা জ্ঞান দিয়ে৷ আমাদের ঊদ্ভাবনী ক্ষমতা কি এতই কম৷

এর ঊত্তর ঘাটতে গিয়ে মনে হলো, মধ্যযুগে ইউরোপেও বহুদিন সভ্যতা আটকে ছিল৷ আবার ঠিক রেনেসার পরেই ওদের চাকা তরতর করে ঘুরতে লাগলো৷ অসংখ্য নতুন আবিস্কার হলো, নিঊটন, হাইগেন্স, হুক এসময়েরই লোক৷ এর পর একে একে স্টীম এঞ্জিনের আবিস্কার, আর তার পর ম্যাসিভ ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালাইজেশন৷ হঠাত্ করে এই যে ফ্লাড গেট খুললো এর পেছনে আসলে ছিল ইউরোপে মুক্তচিন্তার আবির্ভাব, রেনেসার মাধ্যমে, চার্চের প্রভাব ক্রমশ কমে যেতে থাকলো, ধর্ম যে শেকল দিয়ে মানুষকে বেধে রেখেছিল তা আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যেতে বাধ্য হলো৷ আর মুক্তচিন্তার শেকড় জন্মদিলো গনতন্ত্রের৷ রাজতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র, ঈশ্বরতন্ত্রের তিরোধানে গনতন্ত্রের আবির্ভাবেই কিন্তু ইউরোপ বাকি বিশ্বকে যোজন যোজন পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল৷ আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র গনতন্ত্রের দ্বিতীয় দফার পুরোনো দেশগুলোর একটা (বাকীগুলোর মধ্যে আছে বৃটেন, ফ্রান্স ইত্যাদি)৷

এমনকি এখনকার বিশ্বের ধনী এবং ঊন্নত দেশগুলোর সবগুলোই গনতান্ত্রিক৷ মুসলিম বিশ্বের ঊদাহরন দিলাম যে একটু আগে, এই দেশগুলোতেই গনতন্ত্রের খুব অভাব, আবার এগুলোর অনেকেই বিশ্বের দরিদ্রদেশগুলোর এক একটা৷ অনেকে তেল বিক্রি করে সাময়িকভাবে সম্পদশালী হয়েছে, তেল শেষ হলে এরা যে কোথায় যাবে বলার অপেক্ষা রাখে না৷

তো দেখা যাচ্ছে পরিস্কারভাবেই অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য উন্নতির সাথে মুক্তচিন্তা করার সুযোগ এবং গনতন্ত্রের ভীষন সরাসরি সম্পর্ক৷ আবার ঊল্টোটাও সত্যি৷ কারন গনতন্ত্র একটা ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া৷ রাজতন্ত্র বা হারেমতন্ত্র সে তুলনায় সহজ, এবং অবভিয়াস৷ মানুষ ছাড়া অন্যপ্রানীদের সামাজিক ব্যবস্থাতেও তাই, জোর যার মুল্লুক তার, সবার সমান অধিকারের ধারনা, এবং বাস্তবে সেটা নিশ্চিত করা আসলে অনেক কঠিন৷ একটা নির্দিষ্ট পরিমান প্রযুক্তিগত সাপোর্ট না থাকলে গনতন্ত্র ধরে রাখা কঠিন৷

ঠিক যে রকম হয়েছিল গ্রীক নগর সভ্যতার গনতন্ত্রের যুগে৷ আসলে এমনকি মধ্যযুগেও গনতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য, বিশ্বের করে বড় বড় সাম্রাজ্যে কোন ধরনের ইনফ্রস্ট্রাকচার ছিল না৷ সুতরাং কেউ তখন গনতন্ত্র নিয়ে হাজির হলেও কতদিন ধরে রাখতে পারত সন্দেহ আছে৷ এমনকি দু’শ বছর আগের ইউরোপের গনতন্ত্রের সাথে এখনকার ইউরোপের গনতন্ত্রের গুনগত পার্থক্য আছে৷ বিশেষ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে৷ এখন পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক স্বচ্ছ এবং তার কারন প্রযুক্তির সুবিধা৷ যেমন রেডিও-টিভি একাই গনতন্ত্রের জন্য ভীষন সহায়ক শক্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ বিভিন্ন দেশে যখন ক্যু হয় তখন আর্মি সবার আগে রেডিও টিভি দখল করে৷

সুতরাং দেখা যাচ্ছে গনতন্ত্রের প্রাথমিক সহায়ক শক্তি হচ্ছে প্রযুক্তি৷ প্রযুক্তির যতই প্রসার হচ্ছে গনতন্ত্রও তত ছড়িয়ে পড়ছে, এর একটা কারন বোধহয় প্রযুক্তি সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করে দিচ্ছে, কারন প্রযুক্তির প্রসারের একটা ফলাফল হচ্ছে, এটা সাধারন মানুষের ক্রমশ নাগালের মধ্যে চলে এসে সবাইকে সুযোগ করে দিচ্ছে জানার, বোঝার এবং মতামত প্রকাশ করার৷

এজন্য আমার ধারনা আমরা যখন নতুন কিছু করব বাংলাদেশকে নিয়ে, তখন প্রযুক্তিগত অবস্থানের দিকটা সবার আগে মাথায় রাখতে হবে৷ যেমন গনতন্ত্র নিজে কিন্তু বলে দিচ্ছে না যে ৪/৫ বছর পর পর আমাদেরকে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে, যাদের হাতে আমাদের ভাগ্য সমর্পন করতে হবে৷ বরং ঊল্টোটাই সত্যি গুটিকয়েক লোকের হাতেই যদি আমাদের ভাগ্য নির্ভর করে, তাহলে তো ঘুরে ফিরে সেই জমিদারী প্রথাই হচ্ছে, গনতন্ত্র থাকলো কই৷ পার্লামেন্টারী ব্যবস্থাটা অষ্টাদেশ শতাব্দির জন্য বেশী ঊপযোগী, বিশেষ করে রেডিও, টিভি, ফোন এসব প্রযুক্তি যখন ছিল না৷ ১৪ কোটি লোক নিয়ে তো আর সংসদ বসানো যায় না৷ সংসদ প্রথাটা সেজন্য একধরনের শর্টকাট৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে, সুতরাং কাঊকে প্রতিনিধি বানিয়ে সর্বেসর্বা করার প্রয়োজন নেই৷ গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি বেড়া কিভাবে আমাদের দেশে ক্ষেত খেয়ে ফেলে৷ সুতরাং সময় এসেছে অষ্টাদশ শতাব্দির প্রথা বাদ দিয়ে ২১শতকের ঊপযোগী একটা সিস্টেম দাড় করানো৷

Tuesday, April 3, 2007

আর্ট লাইফ-১




সিঙ্গুলারিটি নিয়ে লেখা শুরু করেছি হালে, কিন্তু পুরো ব্যাপারটা আসলে বেশ জটিল, এখন মনে হচ্ছে টেকনিকাল অংশগুলো বাদ দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে লেখা বেশ কঠিন৷ সে যাক, আগে একটা সময় ছিল ব্লগে আমরা বিবর্তন বাদ নিয়ে প্রচুর ঘাপলা করতাম, এখন সে ধরনের বিতর্ক কম, অনেক নতুন লেখক এসে ফ্রন্টপেজ কেমন বাজারের মতো অবস্থা৷ আর সেই শোমচৌ, অপবাক, মুখফোড়ও নাই, অন্তত দিনান্তে তাদের পোস্ট দেখা যায় না৷ তো যখন ঐ বিতর্ক হতো তখন একটা প্ল্যান ছিল বিবর্তন বাদের প্রক্রিয়াটা হাতে কলমে করে দেখানো, আসলে এটা নতুন কিছু না, আর্টিফিশিয়াল লাইফ নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ হচ্ছে, আর প্রকৃতির বিবর্তনবাদের সূত্র এমন গোপন কিছু না যে রিক্রিয়েট করা যাবে না৷

কার্ল সিমস মনে হয় প্রথম দিককার একজন যারা আর্টিফিশিয়াল লাইফ নিয়ে প্রজেক্ট করেছেন সেই ৮০র দশকে৷ তবে এখনকার সময়ে জেনেটিক আ্যলগরিদমের প্রয়োগ অবশ্য অন্য জায়গায়, যেমন জেট ইঞ্জিন ডিজাইন করা, স্টক মার্কেট এনালাইসিস ইত্যাদি৷ আগের লেখায় লিখছি হিমু আর আমি একটা প্ল্যান করতেছি GA দিয়ে ছড়া লেখানো যায় কি না৷

তবে তার আগে আরও কিছু ছোট প্রজেক্ট করে হাত মকশো করছি৷ যেমন এখানে যেটা দিলাম, চাইলে ডাউনলোড করতে পারবেন
এখান থেকে৷ আর্টলাইফ আসলে একটা লিমিটেড এনভায়রনমেন্টে বিবর্তনবাদের এক্সপেরিমেন্ট৷ প্রোগ্রামটা চালিয়ে সিমুলেশন শুরু করলে randomly বেশ কিছু খাবারের সোর্স তৈরী হবে (ধরা যাক এগুলো সালফার প্রস্রবন, ছবিতে বেগুনী রঙের) আর শুরুতে বেশ কয়েকটি প্রানী ছেড়ে দেয়া হবে৷ শুরুর প্রানীগুলো বেশ সহজিয়া একটা মাথা, একটা পাকস্থলী, আর একজোড়া পা৷ ওরা চোখ দিয়ে বেশ কিছু দুর দেখতে পারে৷ শুরুতে সবার ক্রোমোজোম ১০ টি করে, প্রত্যেক ব্লকের জন্য তিনটি আর একটা মাস্টার ক্রোমোজোম৷ খাবার খেয়ে একটা পরিমানের বেশী পেট ভরলে প্রানীগুলো বংশ বিস্তার করে, বংশ বিস্তার অযৌন, মানে ক্লোনিং যেমন ব্যাক্টেরিয়া বা এমিবা করে থাকে৷ তবে প্রতি প্রজন্মেই বেশ কিছু জিন এ মিউটেশন হবে (এখানে আমি ঠিক করেছি ১০%, একটু বেশী অবশ্য)৷ মিউটেশন হচ্ছে বিবর্তনের চালিকাশক্তি৷ আর যেহেতু খাবারের উত্স সীমিত ন্যাচারাল সিলেকশন অটোমেটিক শুরু হয়ে যাবে৷ আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে বেশ কিছুক্ষন না খেয়ে থাকলে প্রানীগুলো মারা যায়৷

তো এভাবে মিনিটখানেক চালালেই দেখা যাবে এভ্যুলুশন ইন এ্যাকশন৷ কখনও এমন প্রানী তৈরী হয় যাদের অনেক জোড়া পা, এরা খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে খাবার খেয়ে আসে, আরেকদল আবার একাধিক পাকস্থলী বানিয়ে নিয়েছে যাতে একবারে অনেক খাবার খাওয়া যায়, আরেক দল একাধিক মাথা বানিয়েছে যেন অনেক দুর থেকে খাবার খুজে পায় ইত্যাদি৷ সবচেয়ে মজার হচ্ছে এর মধ্যে আরেকদল পা ঝেড়ে ফেলে শুধু মাথা আর পেট নিয়ে জন্মেছে, এবং এরা বেশ সফল, এরা যেটা করছে ঠিক একটা প্রস্রবনের সামনে ঘাটি গেরে খাবার খাচ্ছে আর সংখ্যা বাড়াচ্ছে, যেহেতু নড়াচড়ার দরকার নেই তাই পা বাদ দিয়ে দিয়েছে, সুবিধাটা হচ্ছে ছোট শরীর হওয়ায় খাবার লাগে কম, আর জন্মায় তাড়াতাড়ি ইফেক্টিভলি এরা হচ্ছে একধরনের উদ্ভিদ, আসলে আমার অজান্তেই এগুলো তৈরী হয়েছে৷ আমার ধারনা ছিল সবচেয়ে সফল প্রানী হবে ভীষন জটিল কোনটা, দেখা যাচ্ছে আসলে তা না, বরং অনেকে সরলীকৃত হয়ে বেশী সফল হচ্ছে৷

পরের উইকএন্ডে প্ল্যান হচ্ছে আরো জেনেটিক ডাইভার্সিটি যোগ করা, একই সাথে ওদের সারভাইভাল আরো কঠিন করে দিতে হবে যেন জেনেটিক এ্যালগরিদম আরো সৃজনশীল সমাধান বের করতে পারে৷

Monday, April 2, 2007

সিঙ্গুলারিটি

একটা লেখায় আগে মৃত্যু নিয়ে লিখেছিলাম, বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বানী, অথবা আশার কথা ছিল, কিন্তু কিসের ভিত্তিতে লিখলাম সেটা পরিষ্কার ছিল না৷ আসলে পুরোটা সময় নিয়ে লেখা দরকার, ভালভাবে লেখার আগে আশে পাশের আরো কয়েকটা ব্যপার আলোচনা না করলে অসম্পুর্ন থেকে যাবে৷ আপাত দৃষ্টিতে সম্পর্কহীন কয়েকটা বিষয়ের মধ্যে সংযোগটা দেখানো দরকার, তাহলে হয়তো পরবর্তি কয়েক দশকে আমাদের সম্ভাব্য গতিবিধি নিয়ে যেগুলো তুলে ধরব সেটা যুক্তিসঙ্গত মনে হবে৷

সায়েন্সের বেশ কিছু আলাদা ধারা অনেক সময় অভিন্ন লক্ষে গিয়ে পৌছায়, যদিও প্রাথমিক ঊদ্দ্যেশ্য ভিন্ন ছিল৷ ঠিক আজকে ২০০৭ এ যদি বিশ্নেষন করি তাহলে জেনেটিক্স, ন্যানো এঞ্জিনিয়ারিং আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে যথেষ্ট আলাদা মনে হবে৷ সত্যিকার অর্থে খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক্স বিষয়টি এঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে৷ আবার ন্যানোটেকনোলজি যেমন সচরাচর সরাসরি কম্পিউটার সায়েন্সের বিষয় হিসেবে ধরা হয় না৷ রোবোটিক্স সে তুলনায় কম্পিউটার সায়েন্সের পুরোনো বিষয়গুলোর একটা, একসময় বিশেষ করে ৭০ এর দশকে যতটা প্রমিজিং ফিল্ড ছিল হয়তো এখন পাবলিক পারসেপশনে এর জৌলুশ কিছুটা কমে গিয়েছে বলেই মনে হয়৷ পাবলিকের কথা যখন চলেই আসল আরও কিছু কথা না বললেই নয়৷ যেমন স্পেস (মহাশুন্য) এক্সপ্লোরেশন, ষাট আর সত্তুর দশকে আমেরিকা, রাশিয়ার মধ্যে যখন প্রতিযোগিতা যখন তুঙ্গে তখন সাধারন ধারনা ছিল কয়েক দশকেই মানুষ গ্রহে গ্রহে বসতি স্থাপন করবে৷ আজকে ৩০ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি এখনও মঙ্গল গ্রহেই যাওয়া হয়নি৷ আবার ৭০ দশকে ইনফরমেশন টেকনোলজি যে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিল পরের ২০ বছর গোটা পৃথিবী দখলে নেয়ার জন্য সেটা কিন্তু পরিস্কার ছিল না৷

আবার যেমন ইন্টারনেট, ৩০ বছরের বেশী সময় ধরেই আছে, মুলত মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু ইন্টারনেট যে এমন বিপ্লব ঘটাবে গোটা দুনিয়া জুড়ে বেশীরভাগের ধারনায় ছিল না৷ ৭০ বা ৮০র দশকে তৈরী তেমন কোন সায়েন্স ফিকশনেই ইন্টারনেটের উল্লেখ নেই৷ প্রথমে বিপ্লবটা ছিল গবেষকদের জন্য, তারপর ৯০ এর দশকে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য আর এখন ইন্টারনেট স্মরনকালের সবচেয়ে বড় সামাজিক বিপ্লব ঘটাচ্ছে৷ তবে দুএকজন লোক আছেন যারা তাদের ভবিষ্যদ্বানী মিলাতে পেরেছেন৷ অবশ্য এরা কোন ওরাকল নন (ম্যাট্রিক্সে ছিল), যেমন রে কুর্যওয়াইল৷ অবশ্য সিঙ্গুলারিটির সম্ভাব্যতা বোঝার জন্য সবসময় ফুলটাইম গবেষক হওয়ার দরকার নেই৷ রে’র স্পেকুলেশন পুরোটা হয়তো মিলবে না, প্রয়োজনও নেই, কিন্তু যেটা পরিস্কার তা হচ্ছে সিঙ্গুলারিটি আসছে, আমাদের বেশীর ভাগের জীবদ্দশাতেই ঘটবে, হয়তো ২০৩০ এ, হয়তো এর আগেই, নাহলে এর অল্প পরে৷

৯০এর দশকে ঠিক যেমন বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য হঠাত্ করেই কয়েকদশকের পুরোনো ইন্টারনেট দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল, সিঙ্গুলারিটিও ঠিক এরকম সায়েন্সের আলাদা কয়েকটা শাখার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে৷ তার মধ্যে প্রধান তিনটি হচ্ছে Genetics, Nanotechnology, আর Robotics (GNR)৷ আমার ধারনা শেষমেশ GNR এর R মুলধারায় পরিনত হবে৷

এখন বলা যাক সিঙ্গুলারিটি আসলে কি৷ সিঙ্গুলারিটি আসলে আসলে টেকনোলজির এমন একটা পর্যায় যখন মানুষের তৈরী যন্ত্রের বুদ্ধি মানুষের চেয়ে বেশী হবে৷ একটু অস্বাভাবিক শোনায় বটে, তবে ভয়ের কিছু নেই৷ অবশ্য যন্ত্র এর মধ্যেই অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ আমাদের চেয়ে ভালোভাবে করে৷ যেকোন ক্যালকুলেটর আমাদের যে কারও চেয়ে নির্ভুলভাবে এবং দ্রুতগতিতে হিসাব করতে পারে৷ একটা সময় ছিল দাবার মতো বুদ্ধির খেলা শুধু মানুষ করতে পারে বলে কল্পনা করা হতো৷ IBM এই উপলক্ষে একটা বড় প্রজেক্ট হাতে নেয় (
Deep Blue), ১৯৯৭ এ তখনকার চ্যাম্পিয়ন গ্যারী কাসপারভ ডীপ ব্লুর কাছে হেরে যান৷ পরিস্থিতি এখন এমন যে পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে দাবাতে কম্পিউটারকে (ডীপ ব্লু) হারাতে পারে৷ কাসপারভ ম্যাচের পরে বলেছিলেন যে মেশিন এমন সব ক্রিয়েটিভ চাল দিচ্ছিল যে কাসপারভ বুঝতে পারছিলেন না৷ এর পর অবশ্য আরও ১০ বছর পার হয়েছে, মুরের সুত্র অনুযায়ী মেশিন জ্যামিতিক গতিতে তার বুদ্ধি বাড়িয়েছে৷ মেশিন নিয়মিত এমন সব সার্কিট ডিজাইন করে যা মানুষের পক্ষে ঊদ্ভাবন করা দুঃসাধ্য৷ তবে সব ব্যাপারে মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে আরও সময় লাগবে, হয়তো আরো ২৫ বছর, ওই সময়টাই আমাদের সভ্যতা সিঙ্গুলারিটিতে পৌছবে৷ মানুষের ১০ হাজার বছরের সভ্যতার সবচেয়ে বড় ঘটনা হবে সিঙ্গুলারিটি৷ মানব সভ্যতার একটা বস্তুগত পরিবর্তন হবে, হয়তো পরবর্তি অংশ বায়োলজিকাল মানুষের চেয়ে যন্ত্রের সভ্যতা হিসেবে অভাবনীয় গতিতে সামনে যেতে থাকবে৷ তবে পরিবর্তনটা হঠাত করে হবে না, আস্তে আস্তে হতে হতে আমাদের গা সহা হয়ে যাবে, যে যেদিন হবে তার আগেই বুঝে যাব যে এটা অবধারিত ছিল৷

পরের লেখা গুলোয় আমি বিস্তৃত করব সিঙ্গুলারিটিতে কিভাবে পৌছানো যায়, আমাদের কি লাভ৷ তার আগ পর্যন্ত অবশ্য বেচে থাকা খুবই জরুরী, ২৫ বছর এমন দুরে নয়, সুতরাং জীবনের যত্ন নেয়া দরকার৷ আর প্রস্তুতিও নেয়া দরকার৷ হিমু আর আমি একটা প্রজেক্ট হাতে নিলাম এবার, মেশিনকে দিয়ে বাংলা ছড়া লেখাব, ৪/৫ লাইনের, সৃজনশীল ছড়া, পুরোপুরি মেশিনের লেখা৷ অবশ্য এখন মনে হচ্ছে ৪/৫ লাইন বের করতে আমার ডুয়াল কোর আড়াই গিগা হার্জের মেশিনের কয়েকদিন লাগবে৷ তাতে অসুবিধা নেই, আমার হাতে সময় আছে৷

Sunday, April 1, 2007

বাংলাদেশের জন্য গনতন্ত্র ২.০

বাংলাদেশ এখন একটা অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, ভালো না খারাপ তা এখন বলা মুস্কিল হয়তো আগামী বছর বা তারও পরের বছর বলতে পারব৷ কিন্তু দেশের জন্য বিশেষ করে সাধারন মানুষের জন্য soul searching এর সুযোগ যে এসেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়৷ ৭১ এ স্বাধীন হয়ে ৩ বছর গনতন্ত্র তার পর ১৫ বছর সামরিক শাসন তারপর আবার ১৫ বছর গনতন্ত্র৷ বিশ্বের অন্যান্য গনতান্ত্রিক দেশগুলো যেমন অর্থনৈতিক, সামাজিক সাফল্যের মুখ দেখেছে, কোন কারনে আমরা ঠিক অতটা পারিনি৷ একদম হয় নি তাও না৷ আসলে এত সমস্যার মধ্যেও গত ১৫ বছরেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে, আগের ২০ বছরে এর ধারে কাছেও হয় নি৷ কিন্তু ১৫ বছরে যখন প্রবৃদ্ধি ৫ রাখতে আমরা হিমশিম খাচ্ছিলাম তখন পাশের দেশ ভারত ১০ ছুই ছুই করছিল৷ অন্যদিকে দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের দ্বিমুখী আক্রমনে জনগন হিসেবে আমরা সন্তষ্ট যে না বলাই বাহুল্য৷

যুক্তরাজ্যের চেয়ে আমাদের গনতন্ত্র সাংবিধানিক ভাবে ভীষনভাবে আলাদা নয়, ভারতের সাথেও মিল আছে৷ আসলে সব গনতান্ত্রিক দেশগুলোর শাসন ব্যবস্থা ঘুরেফিরে কাছাকাছি৷ কিন্তু তাহলে ফলাফলে এত পার্থক্য কেন? আমাদের জনপপ্রতিনিধি হয় পিন্টু, লালু, ফালু, হাজারী, শামীম ওসমানরা৷ এরা নিজেরা গনতন্ত্র কতটুকু বুঝে বা বিশ্বাস করে বলা মুস্কিল৷

আসলে গনতন্ত্রের সংজ্ঞায় ঠিক পরিস্কার করে বলা নেই গনতন্ত্র কিভাবে implement করতে হবে৷ হতে পারে সরাসরি মতামত নিয়ে (যেমন ভোট), হতে পারে প্রতিনিধির মাধ্যমে (যেমন সাংসদ একজন প্রতিনিধি)৷ তার মানে গনতন্ত্রে সাধারন মানুষের মনোভাবের প্রতিফলনটাই ঊদ্দ্যেশ্য হলেও ঠিক কিভাবে সেটা করা হবে তা নিয়ে অনেক টেকনিকাল সমস্যা আছে৷

টেকনিকাল সমস্যা নিয়ে আরেকটু গভীরে যাই৷ যেমন আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো গনতান্ত্রিক দেশগুলোর একটা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, এখানে ২০০০ সালের নির্বাচনে আল গোর সবচেয়ে বেশী ভোট পেলেও ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেমের মার প্যাচে বুশকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়৷ যদিও গনতন্ত্রের সংজ্ঞা অনুযায়ী আল গোরেরই নির্বাচিত হওয়া উচিত ছিল৷ এটা ঠিক নতুন কিছু না বাংলাদেশেও ১৯৯১ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট ভোটে সবচেয়ে বেশী পেয়েছিল, কিন্তু আসন ছিল বিএনপির বেশী৷ অন্যান্য দেশের ঊদাহরণও টানা যেতে পারে৷ আবার নির্বাচন ছাড়াও অনেক সময় টেকনিকালিটির কারনে গনতান্ত্রিক দেশে জনগনের মতামতের বিরুদ্ধে শাসক গোষ্ঠী অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বৈধ ভাবেই৷ আমাদের দেশে তো হরহামেশাই সেটা হয়, বা হয়েছে যেমন সাংসদদের কোটায় শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানীর আইন, আইন হিসেবে সম্পুর্ন বৈধ, কিন্তু দেশের মানুষের সমর্থন কি ছিল? মনে হয় না৷ তাহলে এ ধরনের আইনকে নিশ্চয়ই লিংকনের গনতন্ত্রের মুল চেতনার সাথে সংগতিপুর্ন ধরা যায় না, অথচ সাংবিধানিক ভাবে এসব আইন সম্পুর্ন বৈধ৷ লিংকনের দেশেও এরকম উদাহরন আছে৷

এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এসব আপাত অগনতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুযোগ কেন আছে৷ যেমন যুক্তরাষ্ট্রে কেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি ভোটে না হয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ দিয়ে হচ্ছে৷ কারণ হচ্ছে টেকনিকাল সমস্যা৷ আড়াইশ বছর আগে টেলিফোন, ক্যালকুলেটর বা কম্পিঊটার ছিল না৷ যুক্তরাষ্ট্রের মত বড় দেশে এত রাজ্যের সবার ভোট সরাসরি হিসাব করা কঠিন ছিল৷ সে জন্য শর্টকাট হিসেবে ইলেক্টোরাল কলেজ৷ আবার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য জনগনের মতামত বারবার নেয়া কঠিন ছিল, বিশেষ করে টেলিফোন/কম্পিউটারের অনুপস্থিতিতে, সুতরাং গনতন্ত্র কাটছাট করে এমনভাবে implement করা হল যেখানে সরাসরি জন গনের বদলে তাদের প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নেবেন (যেমন কংগ্রেসম্যান বা সিনেটর)৷

ঠিক এইখানেই সমস্যা৷ বাংলাদেশের মতো দেশে জনপ্রতিনিধি (সাংসদ) নির্বাচিত হয়ে আসলে বুঝতেই পারেন না তার দ্বায়িত্ব কি? তাদের অনেকের ধারনা তারা এলাকার ইজারা পেয়েছেন ৫ বছরের জন্য৷ সুতরাং জন গনের মতামত সংসদে প্রতিফলিত করার প্রয়োজনও বোধ করেন না৷ এমনকি আমরা যদি ভাল সব সাংসদ ভবিষ্যতে খুজেও পাই তাহলেও এর সমাধান হবে না৷ একটা সংসদীয় এলাকায় যদি ৫ লাখ লোক থাকে, আইন প্রনয়নের সময় এই ৫ লাখ লোকের মতামত নেয়া আসলে কঠিন৷ সত্ ও যোগ্য সাংসদ থাকলেও যেটা হবে তারা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের যেটা ভাল মনে হবে সেই সিদ্ধান্তই নেবেন, অথবা পার্টি লাইনে ভোট দেবেন (যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সময়ই যেটা হয়), সুতরাং জন গনের মতামত সরাসরি প্রতিফলনের সুযোগ আসলে কম৷

আসলে ঘটনা হচ্ছে এই জনপ্রতিনিধি ব্যবস্থার মধ্যেই গন্ডগোল আছে৷ যেমন লিখেছি আগে, এখানে এমন টেকনিকাল প্রবলেম আছে যেটা সারিয়ে তোলা অসম্ভব, ভালো লোককে সংসদে পাঠালেও৷ তাহলে কি করা যায়? আমার ধারনা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য যেখানে গনতান্ত্রিক মুল্যবোধ অগভীর, জনগন নিজেই অনেক সময় গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সেখানে হয়তো অন্যভাবে গনতন্ত্রকে implement করতে হবে৷

সমস্যাটা আরেক দিক থেকে যদি দেখি৷ দেশের উন্নতি করা দরকার, lean-mean পাবলিক কম্পানি গুলো যেমন করে৷ ধরে নেই বাংলাদেশ একটা পাবলিক কম্পানি, এর ১৪কোটি শেয়ার হোল্ডার৷ শেয়ার ননট্রান্সফারেবল, দেশের মাটিতে জন্মালে অটোমেটিক একটা শেয়ার পাওয়া যায়, মরলে শেয়ার বাতিল হয়ে যায়, লোকপ্রতি মাত্র একটা শেয়ার৷ যেহেতু দেশের জনগন এর ইনভেস্টর সুতরাঙ তাদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত৷ প্রতিনিধি বা এরকম মধ্যসত্ত্বভোগী কোন দালাল গোষ্ঠির দরকার নেই৷ আরেকটা ব্যাপার, আমরা ধরে নেব এই ব্যবস্থা একবিংশ শতাব্দিতে হচ্ছে, যেখানে টেলিফোন/মোবাইল সুলভ, সবার টেলিভিশন দেখার সুযোগ আছে বা করা যাবে৷ তাহলে যেটা করা যায়ঃ
১৷ প্রতি নববর্ষে আমরা দেশের জন্য CEO নিয়োগ দেব, বা hire করব৷
২৷ আগ্রহী প্রার্থিরা তাদের Resume জমা দেবে আগেই, টিভিতে লাইভ ইন্টারভিউ হবে৷ জনগন, সাংবাদিক এরা প্রশ্ন করবে৷
৩৷ তারপর ঠিক করা কাকে একবছরের জন্য দ্বায়িত্ব দেয়া যায়৷
৪৷ অন্যান্য পোস্টগুলোতেও (এখন যেখানে একজন করে ঊপদেষ্টা আছেন) এভাবে সরাসরি জনগনের সামনে ইন্টারভ্যু দিয়ে নিয়োগ দেয়া হবে৷
৫৷ প্রতি দুমাসে পারফর্মেন্স এভাল্যুয়েট করা হবে, খারাপ CEO যেকোন সময় fire করা যাবে৷ বিশেষ করে যদি দেশ লাভের মুখ না দেখে৷
৬৷ যে কোন ব্যাক্তি পরপর ৪ বছরের বেশী একই পোস্টে আসতে পারবে না৷ আর টোটাল ৮ বছর হয়ে গেলে অটোমেটিক অযোগ্য হয়ে যাবে৷

এসব CEO বা অন্যান্য ঊপদেষ্টারা যেহেতু জনগনের এম্প্লয়ী এবং প্রতি দুমাসে পারফর্মেন্স ঘেটে যেহেতু তাদের সেটা মনে করিয়ে দেয়া হবে, সুতরাং তারা মাথায় চড়ে বসার সুযোগ পাবে না৷

ধরা যেতে পারে এটা হচ্ছে ডেমোক্রেসি ভার্সন ২.0 বাংলাদেশের জন্য৷ আর কোন দালাল সাংসদ চাই না, দেশের মানুষ যেহেতু দেশের মালিক, তারাই সরাসরি তাদের চাকুরেদের নিয়োগ দেবে৷ রানী মৌমাছি প্রথা বাতিল করা দরকার অবিলম্বে৷ আরো কিছু আইডিয়া আছে, লিখব, আগে আপনাদের প্রতিক্রিয়া দেখি তারপর৷

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালাঃ অ্যাংকরেজ, আলাস্কা (২)



মাঝরাতে গিয়ে পৌছলাম অ্যাংকরেজে৷ রেন্টাল কার নিতে গিয়ে দেখি গাড়ি নাই৷ মিড সাইজ গাড়ি রিজার্ভেশন দিয়েছিলাম, অনেক ঘাটাঘাটি করে বললো এত রাতে ৭ সিটের ভ্যান ছাড়া আর কিছু দিতে পারবে না৷ মডেল ডজ ক্যারাভান৷ মনে মনে খুশীই হলাম, যদিও মুখে প্রকাশ করলাম না, কারন বড় গাড়িতে একটু আরাম করে ঘোরা যায়৷ ডজের গাড়ি গাড়িটায় পেছনের সিটে চাইলে একজন শুয়ে ঘুমাতেও পারে৷ একটা সিদ্ধান্ত আমার প্রায়ই ভুল হতো, সেট হচ্ছে খুজে খুজে একদম সস্তা মোটেলে ওঠা৷ আসলে সামান্য একটু বেশী খরচ করলে তুলনামুলক ভাবে অনেক ভাল হোটেলে থাকা যায়৷ যাইহোক অলাস্কায় নির্জন রাতে গাড়ি নিয়ে মোটেলের দিকে রওনা হলাম৷ বেশ একটু ভয় ভয় করছিল৷ এয়ারপোর্ট থেকে মোটেল ৫-৭ মাইল দুরে, রাস্তায় কোন লোকজন থাক দুরের কথা, গাড়িও খুব কম৷



মোটেলের রিসেপশনিস্ট বিরক্তভাবে আমার জন্য অপেক্ষা করছিল৷ বাইরে যেমন ভাঙাচোরা অবস্থা ভিতরে আরও খারাপ৷ এসব মোটেলে বিছানায় প্রায়ই মানুষের লোম পড়ে থাকে, এজন্য এবার বাসা থেকে চাদর নিয়ে এসেছি৷ ব্যাগ থেকে ক্যামেরা, ফোন, ল্যাপটপ বের করে চার্জে দিয়ে দিলাম৷ প্লেনে তোলা অরোরার ছবিগুলো ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে দেখার চেষ্টা করলাম, পুরান ল্যাপটপের এলসিডিতে দেখাই যাচ্ছিল না, মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল৷ আলাস্কা GMT-9 টাইম জোনে, রাত দুটার দিকে যখন ঘুমাতে যাচ্ছি তখন আমার বায়োলজিকাল ঘড়িতে প্রায় ভোর হয় হয়৷



ফোনের চি্তকারে ঘুম ভাঙ্গলো, আমার বন্ধু তার দল নিয়ে রওনা দিচ্ছে৷ রওনা দেয়ার খবর এত ঘটা করে জানানোর দরকার ছিল না, কাচা ঘুমটা ভেঙ্গে শরীর খারাপ লাগছিল৷ বাথরুমে বসে একটু কসরত করলাম, আসলে এত নোংরা মনে হচ্ছিল যে ছেলে হয়েও খুব বেশীক্ষন বসে থাকতে ভাল লাগছিল না৷ আরেকটু গড়াগড়ি করে গোসল করে ব্যাগট্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলাম৷



এই মোটেলে কোন ব্রেকফাস্ট নেই৷ বিল দিয়ে বের হয়ে আসলাম৷ একটা বিশাল বড় লিস্ট নিয়ে আসছি আলাস্কায় কি কি করব, আসলে বলতে গেলে ৭০-৮০ পৃষ্ঠার চোথা৷ নানা রকম অল্টারনেট হিসাব করা আছে ওখানে৷ অ্যাংকরেজ ঠিক সরাসরি প্যাসিফিকের (এক্ষেত্রে গাল্ফ অফ আলাস্কা) পাড়ে না, বরং বাংলাদেশে বরিশাল যেমন কিছুটা ভেতরে অনেকটা ওরকম৷ ওরা নাম দিয়েছে কুক ইনলেট৷ এর আবার দুটা শাখা নিক আর টার্নএগেইন আর্ম৷ একটা দেড় ঘন্টার লঞ্চ (এখানকার ভাষায় Ferry) ট্যুর আছে আশে পাশের গ্লেসিয়ার গুলোতে, সকালে দেখি ঐটা ধরা যায় কি না৷



প্রচুর ওয়ান ওয়ে রাস্তা এইখানে, এম্নিতেই নতুন জায়গায় আমি পথঘাট চিনতে পারি না৷ আমার চোথা অনুযায়ী যেখানে লঞ্চঘাট হওয়ার কথা সেখানে এসে দেখি একটা বড় হোটেল, আশে পাশে কোন নদী বা এরকম কিছু নেই৷ ব্যপার কি৷ ফোন করার পর টিকেট বিক্রেতা মহিলা বলল আসলে হোটেলটা হচ্ছে টিকেট কাঊন্টার, সত্যিকার লঞ্চঘাট এখান থেকে এক ঘন্টার ড্রাইভ (৫০ মাইল দুরে)৷ বলে কি এই মহিলা৷ ফেরী ছাড়তে আর সময় আছে ১৫ মিনিট৷ মনটা খারাপ হয়ে গেল, প্ল্যান করে আসছি কুক ইনলেট ঘুরে দেখব, ধুত্তোর৷



অ্যংকরেজ মিউজিয়ামে গেলাম৷ চমত্কার করে সাজানো৷ আলাস্কার আদিবাসীদের মধ্যে আছে এস্কিমো (ইনুইট), আথাবাস্কান আর আলিউট৷ ১৫/১৬ হাজার বছর আগে সাইবেরিয়া থেকে বেরিঙ প্রনালী, আলাস্কা হয়ে মানুষ প্রথম আমেরিকা তে আসে৷ এদের বংশধররাই এখনো আলাস্কায় আছে, আর যারা আরো দক্ষিনে গিয়েছিল তাদের থেকে কালক্রমে আজটেক, মায়া, বা ইনকাদের জন্ম হয়েছে৷ যাদুঘরে চমত্কার সব নিদর্শন আছে এই মাইগ্রেশনের৷ প্রাগৈতিহাসিক সময়ে (১০ হাজার বছর বা তার আগে) এসব এলাকায় ম্যামথ, ঊলি রাইনো (লোমশ গন্ডার) ছিল৷ ইনুইটদের তৈরী ম্যমথের (বরফ যুগের লোমশ হাতি) দাত বা হাড় থেকে বানানো অনেক সরঞ্জাম দেখলাম৷



দুপুরে আমাদের দলের বাকীরা এলে আবার এয়ারপোর্ট যেতে হলো৷ পথে যেতে যেতে দিগন্তে চুগাছ (Chugach) পর্বতমালা দেখা যাচ্ছিল, হঠাত্ কেন যেন ঠিক রাঙামাটির পাহাড়গুলোর মতো মনে হচ্ছিল৷ এতদিন এখানে পাহাড় বলতে রকি মাউন্টেইন স্টাইলটাই মনে হতো, আলাস্কার পাহাড়গুলো কোনভাবে মেইনল্যান্ডের চেয়ে আলাদা৷ পরের দিন গুলোতে ডেনালী বা্ Wrangle-St Elias এও একই ব্যাপার খেয়াল করেছি৷ যাহোক পুরো দল একসাথে হয়ে পেট ভরে খেয়ে নিলাম, এক ফাকে আমি ওয়ালমার্ট থেকে ব্ল্যাংক সিডি কিনে নিলাম, প্রতিদিনের ছবি প্রতিদিন সিডিতে লিখে রাখব, নাহলে কখন ল্যাপটপের হার্ডড্রাইভ ক্র্যাশ করে কে জানে৷



এখন গন্তব্য ডেনালী ন্যাশনাল পার্ক৷ ডেনালীতে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে ঊচু পর্বতের চুড়া আছে (মাউন্ট ম্যাকিনলী ২০,৩২০ ফিট, এভারেস্ট ২৯,০০০) কিন্তু ম্যাকিনলী দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার, কারন বছরের বেশীরভাগ সময়েই মেঘে ঢাকা থাকে, বিশেষ করে বছরের এই সময়ে তো দেখা আরো কঠিন৷ আলাস্কাতে ফ্রীওয়ে কম, বা সেভাবে নাই বল্লেই চলে৷ কে চালাবে এই নিয়ে একটু বিতন্ডা হচ্ছিল, সবাই টায়ার্ড, ঝামেলা কমাতে রাজী হয়ে গেলাম৷



বন্ধুদের কারো কারো সাথে বেশ অনেকদিন পরেই দেখা৷ সবাই সবার ব্যাপারে আপডেট নিচ্ছিল, কে কি করল, কদ্দুর এগোলো ক্যারিয়ার, কেউ কেউ সংখ্যা বাড়নোর চেষ্টায় আছে, কিন্তু এক আর একে ঠিক তিন হচ্ছে না ইত্যাদি৷ ওয়েবে অনেক ছবি দেখে এসেছি ডেনালীর এবং ডেনালী যাওয়ার পথের৷ শুরুতে খুব একটা সুবিধা হচ্ছিল না, সেই একই ফার, পাইন গাছের সারি, পার্মা ফ্রস্টে রঙচঙা গুল্মের কোন খোজ নেই৷

এ্যাংকরেজ থেকে ডেনালী ৪০০ কিমি, পাচ ঘন্টার রাস্তা৷ রাতে না ঘুমিয়ে চালাতে একটু খারাপ লাগছিল, আবার রাস্তায় সবজায়গায় ডিভাইডার নেই, বিপরীত দিক থেকে লরী আসতে দেখলে একটু ভয়ই লাগে৷ আড়াইটা-তিনটার দিকে রওনা দিয়েছিলাম, একসময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সেখান থেকে সন্ধ্যা হবার জোগাড়, এখনও না কোন উল্লেখযোগ্য প্রানী না সেই রঙিন বেরী (জাম?) গুল্ম৷ ঠিক তখনই দেখি একটা Moose (তাড়াহুড়ায় ছবি তোলা হয় নি) রাস্তা পার হচ্ছে৷ আমাদের দেখে বেচারা দিল দৌড়, দৌড় দিয়েই ভালো করেছে অবশ্য কারন ধাক্কা লাগলে দুর্ঘটনা হতে পারত৷ একবার হরিনের সাথে ধাক্কা লেগে যে অবস্থা হয়েছিল, এরপর আর কোনদিন এসব বোকারামকে ধাক্কা দিতে চাই না৷ এরপরই যেন ভাগ্য খুলে গেল আমাদের৷ পাইন আর ফারের বন পরিষ্কার হয়ে একটু খোলা জায়গায় চলে আসলাম৷ রাস্তার দুপাশেই বেশ দুরে পাহাড়, তার আগে খোলা মাঠের মতো (meadow), আর মাঠ ভর্তি নানা রঙের বেরী জাতীয় গুল্ম৷ আলাস্কায় ঠান্ডার জন্য মাটির নিচে একটু গভীরে যে বরফ থাকে সেটা কখনই গলে না৷ এরা বলে পার্মাফ্রস্ট৷ বরফের জন্য বড় গাছ জন্মাতে পারে না, সে জন্য জন্মায় ঘাস বা নানা জাতের ছোট উদ্ভিদ৷
কি যে অপার্থিব দৃশ্য খালি চোখে না দেখলে বোঝা মুস্কিল৷ ক্যামেরার সাধ্য নেই এই ছবি তুলে ধরার৷ ডেনালী পর্বতমালার ব্যাকড্রপে মনে হচ্ছিল আলাস্কা আসার ৫০% অলরেডি সার্থক৷
 
eXTReMe Tracker